বাতাসে_প্রেমের_আভাস (পর্ব-২) লেখনীতে– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

0
289

#বাতাসে_প্রেমের_আভাস (পর্ব-২)
লেখনীতে– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

-‘লোকটা আমার সাথে অস’ভ্যতা করেছে ভাবী!’

কথাটা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ল আধ্রিকা। মাইমুনা অবাক নয়নে ননদের দিকে তাকিয়ে রইল। মিসবাহ্ আধ্রিকার সাথে অস’ভ্যতা করেছে সে ভাবতেই পারছে না। মিসবাহ্’কে যথেষ্ট নম্র, ভদ্র মনে হয়েছে। সে এমন কাজ কীভাবে করবে? বরং নিজের ননদকেই তো তখন সে দেখল কেমন লা’জহীনের মতো এলোমেলো ভাবে শাড়ি পরে মিসবাহ্’র সামনে বসে ছিল। আধ্রিকাকে সে চেনে। ননদের সম্পর্কে বা’জে ভাববে এমন মানুষই নয় মাইমুনা। আধ্রিকা কেমন সে খুব ভালোই জানে। নোং’রা’মি, ন’ষ্টা’মি তার মধ্যে নেই। তবে এখন তাকে অ’বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে। সে বিয়ে করতে চায় না। যে কোনো মূল্যেই বিয়েটা ভাঙার পরিকল্পনা যে সে করছে মাইমুনা সেটাও জানে। হয়তো আর কোনো উপায় না পেয়ে শেষে এই কথাই বলতে হচ্ছে আধ্রিকাকে। মাইমুনা বলল,

-‘দ্যাখো আধু! তুমি কি মনে করে এটা বলছ আমি জানিনা। তবে মিসবাহ্ ভাইকে আমার ভালো মানুষই মনে হয়েছে। সে এমন করবে আমি ভাবতেও পারছি না। বাবা-মা কেউই তোমাকে বিশ্বাস করবে না বরং তোমাকেই কিছু বলবে।’

আধ্রিকা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-‘হ্যাঁ! এখন আমিই তো পর হয়েছি। মিসবাহ্ সব তোমাদের। ভাবতেই অবাক লাগছে তোমরা আমাকে বিশ্বাস করছ না। আমি কখনো ভাবি নি তোমরা এমন পর হয়ে যাবে আমার।’

আধ্রিকা বিছানায় শুয়ে কাঁদতে লাগল। মাইমুনা কি বলবে, কি করবে ভেবে পেল না। সে ঘর ছেড়ে বের হতেই তার শাশুড়ি মাকে দেখতে পায়। তিনি এগিয়ে এসে বললেন,

-‘কি বলছে এখন আবার? বৌমা ওই পাজি মেয়েটাকে বোঝাও! নিজের ভালো তো পা’গ’লও বোঝে।’

কথাটা বেশ জোরেই বললেন তিনি। যার ফলে কথাটা আধ্রিকার কানে পৌঁছায়। সে রুম ছেড়ে বেরিয়ে এসে চিৎকার করে বলে,

-‘ভালো বুঝি দেখেই তো বলছি এই বিয়ে আমি করব না। করব না মানে করবই না। আমার দায়িত্ব আর নিতে পারছ না তাই না! চলে যাব আমি। আর আসব না। তবে বিয়েটাও করব না।’

-‘বে’য়া’দ’ব মেয়ে! গলা কার সাথে উঁচু করছিস? একটা থা’প্প’ড় দিব। আমার পেট থেকে তুই হইছস নাকি তোর পেট থেকে আমি হইছি? কারে তুই হেডম দেখাস!’

কথাটা বলেই তিনি আধ্রিকাকে মা’র’তে তেড়ে আসতে নিলেই তাকে আটকায় মাইমুনা। বুঝিয়ে, শুনিয়ে সেখান থেকে নিয়ে যায়। আধ্রিকার ক’ষ্ট হয়। ভীষণ ক’ষ্ট হয়। জীবনের এই সময়টা কেন এত কঠিন? বিয়ে নামক এই প্রথাটা মনে হয় যেন গ’লা টি’পে মে’রে ফেলছে তাকে। তার শ্বাস নিতে ক’ষ্ট হয়। ভীষণ উত্তে’জিত হয়ে পড়লে আধ্রিকার এই সমস্যা তৈরি হয়। সে হা’সফা’স করতে করতে রুমে ঢুকল। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না ইনহেলারটা। তার এদিকে দমব’ন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সে বিছানায় গা এলিয়ে দিচ্ছিল যখন তখন তার বাবা মোজাম্মেল হক রুমে আসে। মেয়েকে কিছু ক’ড়া কথা শোনাতেই মূলত তার আসা। অথচ এসে দেখেন তার মেয়ে দ’ম’বন্ধ’কর ক’ষ্টে ছটফট করছে। তিনি ছুটে এলেন। তাড়াতাড়ি করে কাবার্ড খুলে নতুন ইনহেলারটা বের করলেন। আধ্রিকার জন্য এখানে সবসময় একটা রাখাই হয়। অথচ আধ্রিকার নিজেরও মনে ছিল না। ইনহেলারটা নিয়ে এসে মোজাম্মেল হক মেয়ের পাশে বসে মাথাটা তুলে ধরে বলতে লাগলেন,

-‘আম্মা! আমার আম্মা!’

———————————-

পিটপিট করে চোখ খুলতেই নিজের পাশে মাকে বসে থাকতে দেখে অভিমানি মেয়ে অন্যদিকে তাকালো। মেয়ের অভিমান দেখে তার মা আয়না খাতুন মেয়ের একটা হাত ধরলেন। হাতে চুমু খেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

-‘আম্মু আর বকব না বাবু। আর ক’ষ্ট পাইও না। আম্মুরে মা’ফ করে দাও। আম্মু আর কিছুতে জোর করব না তোমারে।’

আধ্রিকা ছলছল নয়নে মায়ের দিকে তাকালো। এই তো তার চিরচেনা সেই কোমল মা। তখনকার পা’ষা’ণ মহিলার সাথে এর কোনো মিল নেই। সে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। আরাফাত এসে বোনকে বলল,

-‘থাক আর কাঁদে না। আর কাঁদা লাগবে না। তোর বিয়ে দিব না আমরা।’

ভাইয়ের কথা শুনে আধ্রিকা সত্যিই অবাক হলো। ভাই কি তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে এখন মি’থ্যে বলছে নাকি সত্যি! সে ভাবীর দিকে তাকালো। মাইমুনা মৃদু হেসে ননদকে বলল,

-‘আব্বা ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। তার মেয়েকে তিনি নাকি আর বিয়েই দিবেন না!’

আধ্রিকার হাসি পায়। আয়না খাতুন মেয়েকে নিজের হাতে ভাত খাইয়ে দিলেন এরপর। মাইমুনা সবটা সময় পাশে বসা ছিল। যদিও তার একটু খা’রা’প লাগছিল বিয়েটা ভে’ঙে দেওয়াতে কিন্তু আধ্রিকার হাসি দেখে তার ভালো লাগছে।

মোজাম্মেল হক মিসবাহ্’কেই প্রথমে ব্যাপারটা জানায়। ছেলেটাকে তার খুব বুঝদার মনে হয়েছে। এই ব্যাপারে তার সাথে কথা বললেই ভালো হবে তিনি বুঝলেন। হলোও তাই। মিসবাহ্ জানালো কোনো সমস্যা নেই। সে তার পরিবারকে বোঝাবে। তনুর যেন কোনো অ’সম্মান না হয় তাই মিসবাহ্ তার পরিবারকে জানালো এখনই বিয়ে করবে না সে। পরের বার দেশে আসলে করবে। মিসবাহ্’র মা কথাটা শোনার পর বেশ রা’গা’রা’গী করলেন। ছেলেটা নিশ্চয়ই বিদেশিনীর খপ্পড়ে পড়েছে। নয়তো এত বলার পরেও বিয়ে করছে না কেন! আধ্রিকার মতো পরী মেয়েকেও নাকি বিয়ে করবে না। ছেলের মা’থা গেছে। রা’গ করে মিসবাহ্’র সাথে তিনি কথা বলা বন্ধ করে দিলেন। তনু ভীষণ অ’প’রা’ধ’বোধে ভূ’গতে থাকে। তার জন্যই মিসবাহ্ সত্যিটা তার মাকে জানাতে পারল না। মা ছেলের এই মনমালিন্য তার স’হ্য হয় না। আধ্রিকার ওপরই তার সব রা’গ গিয়ে পড়ল।

মিসবাহ্’র ছুটি শেষ হতে চলেছে। আর দুই সপ্তাহ আছে। গোটা ছয় দিন ছেলের সাথে কথা বলেননি রাহেলা বেগম। এদিকে ছেলে মা মা করছে। তার ছুটিও শেষ। মায়ের মন তো! বেশিক্ষণ রা’গ, অভিমান করে থাকতে পারল না। ছয়দিনের দিন ছেলেকে ঠিকই বুকে জড়িয়ে নিলেন।

মিসবাহ্ চলে যাবে যেহেতু সেই উপলক্ষে তনুর বাবার বাড়ি থেকে সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হলো। মিসবাহ্’দের পাশাপাশি আধ্রিকাদেরও বলা হলো। আধ্রিকা মোটেও চাইছিল না অ’সভ্য লোকটার সাথে পুনরায় দেখা করতে। কিন্তু না গিয়েও উপায় নেই। খালামণিরা এমনিতেও তার উপর চটে আছে। আর চটিয়ে লাভ নেই কোনো। দুপুর বারোটার দিকে মা-ভাবী সহ সেজেগুজে সে তনুদের বাড়িতে গেল। গিয়ে দেখে মিসবাহ্ রা এখনও আসেনি। সে সবার সাথে মিশে মজা করল, ঘুরল, খাওয়া দাওয়া করল।

দেড়টায় মিসবাহ্’রা আসতেই সে উপরে তনুর ছোট বোন অনুর রুমে ঢুকে পড়ল। অনু তারও ছোট। আধ্রিকাকে দেখে বলল,

-‘কি হলো আপা!’

-‘ভালো লাগছে না একটু ঘুমাবো। আমাকে যেন কেউ ডিস্টার্ব না করে সেদিকে খেয়াল রাখিস।’

-‘আচ্ছা।’

আধ্রিকা শুয়ে পড়ল। আর একসময় সত্যিই তার চোখে ঘুম এলো। ঘুম থেকে উঠল সন্ধ্যার দিকে। উঠেই তার মাথা হ্যাং হয়ে গেল। এতটা সময় ঘুমিয়ে ছিল! যাক ভালোই হয়েছে। মিসবাহ্’রা নিশ্চয়ই চলে গেছে। সে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হতেই কারো সাড়া শব্দ পেল না। তবে মিসবাহ্’রা সত্যিই চলে গেছে। সে ভীষণ খুশি হলো। তা ধিনতা তা ধিনতা করতে করতে সিঁড়ির মুখে আসতেই সদর দরজা দিয়ে একজনকে ঢুকতে দেখে দৌঁড়ে নিচে নামতে থাকে। আর জোরে ডেকে উঠল,

-‘তাহসান ভাইয়া!’

তাহসান হেসে ফেলল আধ্রিকাকে এভাবে দৌঁড়ে আসতে দেখে। গা থেকে কোর্টটা খুলে বলল,

-‘বুড়ি কখন এসেছিস?’

-‘দুপুরে। তুমি যে আসবে আমি জানতাম না!’

-‘আমি নিজেও জানতাম না সকালে। দুপুরে প্রোজেক্টের কাজ শেষ। তাই চলে এসেছি। সবাই কোথায়? বাড়ি যে পুরো ফাঁকা।’

-‘জানিনা। আমিও তো মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম।’

তাহসান হেসে গাল টেনে দিল আধ্রিকার। বলল,

-‘সারাদিন এত ঘুমাস কেন?’

-‘কি করব? সিঙ্গেল মানুষদের তো আর কেউ নেই যে গল্প করবে। তাদের ঘুমিয়েই কাটাতে হয়।’

-‘ওরে! তাই? আচ্ছা চল! মিঙ্গেল হয়ে যা।’

-‘কীভাবে?’

-‘প্রেম কর আমার সাথে।’

-‘করব বলছ?’

-‘করবি বলছিস?’

-‘না বাবা। এসবের শখ নেই আমার।’

-‘আচ্ছা থাক। তবে বিয়েই কর।’

আধ্রিকা হেসে তাহসানের পেটে আলতো করে ঘু’সি মা’রল। তাহসান হেসে তার হাত ধরে ফেলল। হঠাৎ ‘মামা’ বলে চিৎকার করে উঠে তনুর ছেলেটা। তাহসান আর আধ্রিকা দুজনেই পেছন ফিরে দেখল তনুর ছেলে লাবিবকে কোলে নিয়ে মিসবাহ্ দাঁড়িয়ে আছে। আধ্রিকা বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল মিসবাহ্’কে দেখে। তার হঠাৎ করেই মনে হলো মিসবাহ্’র চোখ মুখে সে বোধ হয় অভিমান দেখল। এমন কেন মনে হলো সে নিজেই বুঝতে পারল না।

#চলবে।
টাইপোটা করেছেন Ifrat Akther Popy আপু।

(আমার প্রথম ই-বুক ‘প্রেম এসেছিল নিঃশব্দচরণে’ পড়েছেন? না পড়লে পড়ে নিতে পারেন বইটইতে। বইটার দাম মাত্র ৩০ টাকা। লিঙ্ক নিচে কমেন্টবক্সে দেওয়া আছে। যারা জানেন না কীভাবে ক্রয় করতে হয় তাদের জন্যও ভিডিও দেখে বুঝে নেওয়ার জন্য কমেন্টবক্সে লিঙ্ক দেওয়া আছে। পাঠকরা যারা পড়েছেন বইটইতে মতামত অপশনে আমার লেখাটা নিয়ে নিজেদের মূল্যবান মতামতটি দিবেন। এতে লেখক হিসেবে আমি আমার ভুল ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করতে পারব আর আগামীতে আরো ভালো কিছু দিতে পারব।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here