বাতাসে_প্রেমের_আভাস (পর্ব-১) ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

0
460

আধ্রিকার খালাতো বোন তনুর ভাসুর হলো মিসবাহ্। বর্তমানে যার সাথে আধ্রিকার বিয়ের কথা চলছে। আধ্রিকা বেশ রে’গে আছে। তার সব রাগ মিসবাহ্’র উপর গিয়েই পড়ছে। লোকটা বিয়ে করার জন্য আর মেয়ে পায়নি? তাকেই কেন?

সেদিন তনুর ছেলের জন্মদিনে আধ্রিকার পরিবারের সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়। আধ্রিকা সেখানে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ তনু তাকে ডেকে নিয়ে গেল। যেখানে নিয়ে গেল সেখানে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ছিল। তনু একে একে আধ্রিকাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। একদম শেষে এক সৌম্যদর্শন পুরুষের সাথেও পরিচয় করায়। জানা গেল লোকটি তনুর ভাসুর। আমেরিকায় থাকে। আধ্রিকা কোনো রকমে হালকার মধ্যে কুশল বিনিময় করল কেবল। সত্যি বলতে তার মনের মধ্যে তখনিই খটকা লাগছিল। মা খালাদের হাব ভাবে সে এরকম কিছুই ধারণা করেছিল। আজই তার ভাবনাকে সত্যি প্রমাণ করে ওই বাড়ি থেকে খবর এলো তারা আধ্রিকাকে পুত্রবধূ হিসেবে চায়। আর বিয়েটাও এক দুই সপ্তাহের মধ্যেই হয়ে যাক তারা এটাই চাইছে। আধ্রিকা ভার্সিটি থেকে ফিরে যখন জানতে পারল বেশ রা’গারা’গি করল। কিন্তু কেউ তার সেই রা’গ আর না কে পাত্তাই দিল না। তারপর থেকেই রুমে গিয়ে চুপচাপ বসে আছে। কেউ তার কোনো কথা শুনছে না। সবারই এক কথা, আমেরিকান সিটিজেনশিপ পাওয়া একটা ছেলেকে তো আর হাতছাড়া করা যায় না!

সন্ধ্যা বেলায় তার মা এসে তাকে তাড়া দিল ভালো একটা জামা পরে তৈরি হতে। সে চমকে উঠে বলল,

-‘কেন?’

-‘মিসবাহ্ আসছে। তোকে নিয়ে ঘুরতে বের হবে।’

কথাটা শুনে আধ্রিকার রা’গ পা থেকে মাথায় উঠে গেল। এদের সমস্যা কী? সে তো বলেই দিয়েছে বিয়ে শাদি করবে না এখন। তার উপর জোর জবরদস্তি সব চাপিয়ে দিতে চাইছে এরা? আর মিসবাহ্ লোকটাও বা কেমন? বিয়ের কথা উঠেছে মাত্র আর সে তাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চাইছে? কোন সা’হ’সে সে এসব করছে এটাই বুঝে পাচ্ছে না আধ্রিকা।

সে মায়ের কথা শুনল না। বরং রুমের দরজা বন্ধ করি শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর তার মা এসে বেশ কিছুক্ষণ দরজায় কড়া নাড়ে। চেঁচামেচি করে। সে খুলল না। বরং ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমানোর আধঘন্টাও পূর্ণ হয়নি। তার আগে আবারও দরজায় কড়া নাড়ল কেউ। আধ্রিকার কাঁচা ঘুমটা ভেঙে যেতেই তার মাথা গরম হয়ে গেল। শোয়া থেকে উঠে দরজা খুলতে খুলতেই বলল,

-‘সমস্যা কী? বলছি না কেউ ডিস্টার্ব করবা না। যাব না আমি কোথাও ঘুরতে। কোনো মিসবাহ্ টিসবাহ্’র সাথে আমি ঘুরতে যাব না।’

দরজা খুলেই আধ্রিকা থ বনে গেল। কেননা দরজার সামনে মিসবাহ্ দাঁড়িয়ে আছে। আধ্রিকা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। নিজের কাজের জন্যেও আর পোশাকের জন্যেও। সে ধরাম করে মিসবাহ্’র মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিল। এদিকে আধ্রিকার ভাবী মাইমুনা তা দেখে মিসবাহ্’র কাছে এসে কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতে বলতে লাগল,

-‘কিছু মনে করবেন না ভাইয়া। আপনাকে হঠাৎ আশা করেনি তো। মেয়ে মানুষের পোশাক পরিচ্ছদেরও একটা ব্যাপার আছে। সব অবস্থাতে তো আর কারো সামনে যেতে পারে না।’

মিসবাহ্ বেশ শান্ত স্বরেই বলল,

-‘ইটস্ ওকে। আমি বুঝতে পারছি।’

মাইমুনা স্বস্তির শ্বাস ছাড়ল। তবে ভেতরে ভেতরে এখনও চিন্তা হচ্ছে। ননদের রা’গ সম্পর্কে তার ধারণা আছে। মেয়েটা প্রচন্ড ব’দ’রা’গী আর মে’জা’জী। সে বারবার সবাইকে বলেছে আধ্রিকার সাথে কথা না বলে কিছু ঠিক না করতে। কেউ তার কথা শোনেই নি। বরং আধ্রিকার ভাই আরাফাত তাকে বেশ জোরে এক ধ’ম’ক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি আধ্রিকার রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। দরজায় নক করলেন আলতো ভাবে। দুই বার মৃদু গলায় ডাকেও,

-‘আধু? এই আধু? দরজা খোলো তো!’

ভাবীর গলা পেয়ে আধ্রিকা দরজা খুলল। মাইমুনা ভেতরে ঢুকে দেখল আধ্রিকা আগের পোশাকেই। তিনি একটু হেসে বললেন,

-‘এমন রা’গ করলে চলে? লোকটার সাথে তোমার বিয়ের কথা চলছে হয়ে তো যায়নি। আর তাছাড়া সে তনুর ভাসুর। এখন তার সাথে এরকম ব্যবহার করলে তনুটার উপর অনেক চাপ পড়তেও পারে। ভালো মেয়ে হয়ে থাকো একটু। একটা ভালো ড্রেস পড়ে আসো। প্লিজ! তুমি তো বড় হয়েছ। এত ছোট নও যে বুঝবে না।’

আধ্রিকা হতাশ হলো। সবসময় এভাবেই তাকে সবকিছু মুখ বুজে মেনে নিতে হয়। চুপ করে সয়ে যেতে হয়। তবে এবার আর সে পারবে না। বিয়ে! বিয়ের মতো একটা বড় অধ্যায়ে সে অন্যের কথা শুনে পা রাখবে না। তার নিজেরও কিছু ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। একটু সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। এসব কিছু না ভেবেই তারা তাকে জোর করছে বিয়ের জন্য। কেন? তার কান্না পায়। কেঁদেও দেয়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে। উপরে সে শক্ত। একটা শক্ত বলয় তার আশেপাশে ঘুরছে। এই প্রথম কোনো কিছুর উপর সে অনড়। তার কোনো সিদ্ধান্তের উপর! সে চুল গুলো পেচিয়ে ক্লিপ দিয়ে বেঁধে কাবার্ড থেকে নিজের কালো শাড়িটা বের করল। তা দেখে মাইমুনার চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা হলো। এতক্ষণ সে সাজবেনা, ঘুরবে না বলল আর এখন সরাসরি শাড়ি পরতে যাচ্ছে। তিনি মিনমিন গলায় আধ্রিকাকে বলল,

-‘আধু? শাড়ি পরতে হবে না তো। নরমালি একটা থ্রী পিস পরলেই হবে।’

আধ্রিকা পাত্তা দিল না। সে তার ভাবীকে রুম থেকে চলে যেতে বলল। মাইমুনা ইতিউতি করে রুম ছেড়ে বের হয়ে গেল।

আধ্রিকা তার কালো শাড়ির সাথে মিলিয়ে একটা কালো ব্লাউজ বের করল। ব্লাউজটার পিঠ ভীষণ খোলামেলা। এই খোলামেলা ব্লাউজ শেলানোর জন্য দর্জির সাথে এক দফা কথা কা’টা’কা’টি করেছিল সে। কখনোই এই ব্লাউজটা সে পরেনি। এনেই আলমারিতে তুলে রেখেছিল। আজ পরল। সুন্দর করে সাজল। গয়না বলতে কানের দুল পরল। আর ঠোঁটে ন্যুড লিপস্টিক লাগিয়ে নিল। গায়ে বেশ যত্নের সহিত শানেলের লিমিটেড এডিশন পারফিউম টা মাখে। গত মাসে পারফিউম টা দুবাই থেকে তার বড় মামি এনেছিল তার জন্য। এই পারফিউমের ঘ্রাণটা একটু নে’শা ধরানো টাইপ। সবাইকে আকর্ষণ করে। দুইবার ব্যবহার করে একটু ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল এরপর আর ব্যবহার করেনি। তবে আজ আবারও করল।

আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিয়ে রুমের দরজা খুলল। রুম থেকে বের হতেই দেখল লিভিং এ মিসবাহ্ একা বসে আছে, আশেপাশে কেউ নেই। বাড়ির সবাই নিচে নিশ্চয়। তাদের কথা বলার মধ্যে আর কেউ আসবে না সে জানে। আধ্রিকার একটু অ’স্ব’স্তি বোধ হলো। তবে আশেপাশে কেউ না থাকায় একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। তাছাড়া মিসবাহ্ নিচ তলায় না বসে উপরের লিভিং এ কেন বসল? ঘুরতে যাবেনা নাকি? সে মৃদু পায়ে এগিয়ে গেল লিভিং এড়িয়ার দিকে। মিসবাহ্ একটা ম্যাগাজিন পড়ছিল বসে বসে। হঠাৎ করেই একটা মোহনীয় ঘ্রাণ তার নাকে এসে লাগে। সে মাথা তোলে। পেছন ফিরে দেখল আধ্রিকা হেঁটে আসছে। সে তাকিয়েই রইল আধ্রিকার দিকে। আধ্রিকা তার মুখের দিকে তাকিয়ে মুঁচকি হেসে তার সামনের সোফায় গিয়ে বসল। মিসবাহ্’র সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পিঠে ছড়িয়ে রাখা চুল গুলো এক পাশে এনে রাখল। তাতে তার ফর্সা পিঠটা উঁকি দিল। মিসবাহ্ তা দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল। আধ্রিকা সোফায় বসল খুব আ’বে’দ’ন’ম’য়ী ভঙ্গিতে। শাড়ির আঁচল ভেদ করে তার তুলতুলে পেট দেখা যাচ্ছে। মিসবাহ্’র বুকটা মৃদু কাঁপছে। মেয়েটা এত দুষ্টু করে শাড়ি পরেছে কেন? তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। একটু খেয়াল করতেই বুঝতে পারল বেশ গরম লাগছে। সে নড়চড়ে বসল। সামনে থাকা পানির গ্লাস হাতে নিল। এক ঢোকে অনেকটা পানি পান করল। আধ্রিকা ঠোঁট চেপে মুচকি হাসছে। বাঁচাধনকে আরো না’স্তা’না’বু’দ করবে সে।

-‘ঘুরতে যাবেন না?’

মিসবাহ্ রিনরিনে কন্ঠস্বরটা শুনে সরাসরি আধ্রিকার মুখের দিকে তাকালো। বলল,

-‘আপনি যেতে চাইছিলেন না তাই প্ল্যানটা ক্যান্সেল করে দিয়েছি।’

-‘ওহ। বেশ ভালো করেছেন। আমরা এখানে বসেই গল্প করি। বেশ ভালো হবে!’

মিসবাহ্ আধ্রিকার হাব ভাব বুঝে উঠতে পারছে না। এই মেয়েটাকে সে ওইদিন বেশ শান্ত, নম্র, ভদ্র মেয়ে হিসেবেই তো দেখেছিল। আজ মেয়েটাকে অন্যরকম লাগছে কেন? সে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। তার মন মস্তিষ্ক দুটোই বলছে মেয়েটা কিছু একটা পরিকল্পনা করেই তার সামনে এভাবে এসেছে। সমস্যা নেই। সেও মেয়েটার ফাঁ’দে পা দিচ্ছে না। যেমন কুকুর তেমন মুগুর হতে হবে। সে বেশ আয়েশী ভঙ্গিতে বসল। বলল,

-‘হ্যাঁ। এটাই ভালো।’

আধ্রিকা কথা খুঁজে নিয়ে বলল,

-‘আমেরিকায় কোথায় থাকেন?’

-‘নিউ ইয়র্ক।’

-‘ওহ। আমার ভার্জিনিয়া ভালো লাগে। ভার্জিনিয়ার সৌন্দর্যের অনেক গল্প শুনেছি। নিউ ইয়র্ক নিয়ে কোনো ইন্টারেস্টই নেই।’ তাচ্ছিল্য করে বলল কথাটা।

মিসবাহ্ ও মৃদু হেসে বলল,
-‘ভার্জিনিয়ায় আমার রেস্ট হাউজ আছে। বিয়ের পর চাইলে ওইখানে শিফ্ট হওয়া যাবে।’

আধ্রিকা কটমট দৃষ্টিতে তাকালো। রেস্টহাউজ আছে! ঢং! টাকার গরম খুব? সে এবার সোফায় দুই পা তুলে ভাজ করে বসল। সেই সময় তার সুন্দর গড়নের পা গুলো এক পলকের জন্য মিসবাহ্ দেখল। আধ্রিকা বলল,

-‘বেশ ভালো। তবে জানেন কি, আজকাল বিদেশ থেকে দেশে আসলে মানুষ এমন এক ভাব করে! মনে হয় যেন কত কি সে। একটু খোঁজ নিলেই জানা যায় সে বিদেশে ম্যাথরের কাজ করে।’

মিসবাহ্ হাসল। মেয়েটা তাকে ইনসাল্ট করতে চাইছে? করুক। সে মজা পাচ্ছে।

মাইমুনা হাতে করে খাবারের ট্রে নিয়ে আসল। ননদের এই রূপ দেখে তার নিজেরই ল’জ্জা লেগে গেল। কোনো মতে টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিয়ে মিসবাহ্ কে উদ্দেশ্য করে বলল,

-‘ভাইয়া! আজকের ডিনারটা আমাদের সাথে করবেন কিন্তু।’

-‘আজ তো সম্ভব নয়। অন্য একদিন করব। আজ আমার এক জায়গায় যেতে হবে।’

আধ্রিকার মুখ কুঁচকে গেল। অন্য এক জায়গায় যেতে হবে তাহলে তাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চাইল কেন? অ’স’ভ্য লোক একটা!

মাইমুনা মিসবাহ্’র কথার জবাবে হেসে বলল,
-‘আমি কিছু জানিনা ভাইয়া। মা আর চাচীরা সব আয়োজন সেড়ে ফেলেছেন। আজ না খাইয়ে ছাড়বে বলে মনে হয় না। তাদের কীভাবে ম্যানেজ করবেন সেটা আপনি ভালো জানেন।’

মাইমুনা চলে যাওয়ার আগে ইশারায় আধ্রিকাকে শাড়িটা ঠিক করতে বলল। আধ্রিকা পাত্তাও দিল না তাকে।

চায়ের কাপ হাতে তুলে নিয়ে আধ্রিকা বলল,

-‘আমার না শ্যাম বর্ণের পুরুষ মানুষ ভালো লাগে। লম্বায় বড়ো জোর পাঁচ ফুট দশ হবে এমন ছেলেই পছন্দ। এর বেশি হলে ভালো লাগে না। আপনিই বলুন! এত লম্বা ছেলে দিয়ে আমি কি করব? সিলিং পরিষ্কার করাবো?’

মিসবাহ্ মৃদু হেসে চায়ে চুমুক দিল। তার উচ্চতা ছয় ফুট দুই ইঞ্চি। ছোট থেকেই ফর্সা ছিল তবে আমেরিকায় যাওয়ার পর গায়ের সেই উজ্জ্বলতা আরো বেড়েছে। আধ্রিকার টন্টটা সে বেশ ভালো করেই ধরতে পারল।

মিসবাহ্ কে চুপ করে কথা হজম করতে দেখে আধ্রিকা পুনরায় বলল,

-‘ছেলেরা হবে হ্যাংলা পাতলা। ঝড়ের গতিতে দৌঁড়ে কাজ কর্ম করবে। এমন! মোটা ছেলে আমার ভালোই লাগে না। মোটা বলতে আবার যাদের ভুঁড়ি আছে তাদের বলিনি। ভুঁড়ি থাকা ছেলেগুলোকে আমার ভালোই লাগে। বরং একটা মায়া লাগে। তারা আমার কাছে রাজপুত্রসম। মোটা বলছি তাদেরকে যারা পাহাড়ের মতো বডি তৈরি করেছে। বডিবিল্ডার গুলোকে বলছি। আমি বুঝি না এরা এত বডি তৈরি করে কি লাভ পায়!’

মিসবাহ্ এবার আধ্রিকার চোখের দিকে তাকায়। আধ্রিকা দেখল মিসবাহ্ হাসছে। তবে দুষ্টু হাসি হাসছি। তার হঠাৎ করেই কেমন কেমন অনুভূতি হলো। আঁচল দিয়ে নিজেকে ঢেকে ফেলল। মিসবাহ্ চোখ নামায়। চায়ে পুনরায় চুমুক দেয়। আধ্রিকার ভালো লাগছিল না। বিরক্ত হয়ে বলল,

-‘উফফ! খুব গরম লাগছে।’

এতক্ষণে মিসবাহ্ কথা বলল। তাও আবার এমন একটি কথা যা শুনে আধ্রিকার মুখটা আপনাআপনি হা হয়ে গেল। মিসবাহ্ তাকে বলল,

-‘শাড়িটা খুলে ফেলুন তাহলে।’

আধ্রিকার বিস্মিত চাহনি দেখে মিসবাহ্ মজা পায়। আধ্রিকা বলল,

-‘আপনার মাথা খারাপ হলো নাকি?’

-‘আমি ভেবেছিলাম আপনি খোলামেলা পোশাকে কমফোর্ট ফিল করেন। তাই বলেছি।’

খোঁচাটা একদম গায়ে এসে লাগল। তবুও একটা অদৃশ্য স্না’য়ুযু’দ্ধে নিজেকে জিতিয়ে দিতে আধ্রিকা বলল,

-‘হ্যাঁ। আসলে এভাবেই আমি থাকতে পছন্দ করি। ইভেন ঘোরাফেরাও করি। আমার ছেলে ফ্রেন্ডগুলো আমাকে শাড়ি পরলে খুব কমপ্লিমেন্ট দেয়।’

-‘তাই?’

-‘অবশ্যই। আপনিই তো দেখলেন এতক্ষণ। আচ্ছা? আমাকে কেমন লাগছে? হ’ট নাকি সে*ক্সী?’

মিসবাহ্ মাথা নিচু করে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসে। আধ্রিকার অন্যরকম লাগছিল। লোকটা এত হাসছে কেন। একবার একরকম হাসি হাসছে। ধুর!

মিসবাহ্ বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আধ্রিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-‘আপনি আমার সাথে বেশ ফ্রী হয়ে কথা বলেছেন। আপনি আর আমি দুজনেই একে অপরের সান্নিধ্যে বেশ কমফোর্ট ফিল করেছি। এটা ভালো লক্ষণ। আশা করা যায় আমরা খুব ভালো যুগল হতে চলেছি। যাদের দেখলে লোকে বলবে মেইড ফর ইচ্ আদার।’

আধ্রিকার মুখটা এত বড় হা হয়ে গেল। লোকটা বলে কি! সে জানত তনুর শ্বশুরবাড়ির লোকদের বেশ রক্ষণশীল একটা পরিবার। উ’গ্রতা, উ’চ্ছৃঙ্খলতা তারা পছন্দ করে না। আধ্রিকা সেদিন ভালো ভাবে তাদের সাথে দেখা করেছে বিধায় হয়তো তাদের তাকে পছন্দ হয়েছে। আজ নিশ্চয়ই তার এমন রূপ আর কথা বলার ধরণ দেখে চটে গিয়ে মিসবাহ্ বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিতো। অথচ মিসবাহ্ যা বলছে তাতে তো উল্টো মনে হচ্ছে। মিসবাহ্ এবার আধ্রিকার দিকে এগিয়ে আসতে আসতেই বলল,

-‘কয়েক বছর আমেরিকা থাকার সুবাদে এসব দেখে আমি অভ্যস্ত। তাই আপনি ফেইল। আপনার ট্রিক্স কাজ করল না। অন্তত আমার উপরে তো নয়।’

মিসবাহ্ আধ্রিকার পাশে বসে আধ্রিকার শাড়ির আঁচলের নিচে হাত গলিয়ে তার পেট স্পর্শ করল। তারপর কোমর ধরে টেনে নিজের দিকে এনে কানে ফিসফিস করে কিছু কথা বলল। তখন যে আধ্রিকা বলেছিল বডি রেখে কি লাভ। সেই লাভের কথাটাই সে আধ্রিকাকে জানাচ্ছে। মিসবাহ্’র এমন আচরণে আধ্রিকা শি’উ’রে উঠল। রীতিমত কাঁ’প’তে লাগল। কানের কাছে মিসবাহ্ কত কথা বলল! তার এখন গা জ্ব’ল’ছে। এতক্ষণ যে অঙ্গ গুলো উন্মুক্ত করে বসে ছিল সেই অঙ্গ গুলো ঝ’ল’সে যাচ্ছে বোধহয়। সে বুঝল রা’গের বশে ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেছে সে। নিজে থেকেই ফুল ফুটিয়ে ভ্রমরকে আহবান করেছে মধু সংগ্রহ করার জন্য।

#বাতাসে_প্রেমের_আভাস (পর্ব-১)
ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

(এটা ছোট গল্প।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here