মায়া পরি #পর্বঃ ০৯ #জুনায়েত

0
213

#মায়া পরি
#পর্বঃ ০৯
#জুনায়েত

কিন্তু আমার একটা বিষয় খুব খটকা লাগছে যে আমার কাকু সোহান এর যদি রাজ্যের লোভ থাকতো তাহলে আমি যে নাগরাজ এটা জানার পর উনি আমাকে বাঁচিয়ে রাখলো কেনো?অবনি বললো তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার একটাই কারন। যদি তুমি মরে যাও তাহলে তিনি নাগমনি হারাবে। একমাত্র তুমি ছাড়া ওটাতে কারো হাত লাগানোর সাহস নেই। আমি আর অবনি আমরা দুজনে ওখান থেকে চলে আসলাম। অবনি তার রাজ্যে ফিরে গেলো।
!
!
!
আমি আর অবনি আমরা দুজনে ৩দিন ধরে আমার চাচা সোহান এর উপর নজর রাখলাম। আমরা শুধু একটা ভালো সুযোগ খুজছিলাম। যেটার সাহায্যে আমরা তার উপর আক্রমন করতে পারবো। একদিন অবনি আমাকে জানালো আমাদের হাতে একটা ভালো সুযোগ আসতে চলেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী সুযোগ আর কবেই বা আসছে? অবনি আমাকে জানালো পরশু দিন হলো পূর্নিমা। আর তোমার চাচা এর ৪০ বছর পূর্ণ হবে আর ওই দিন উনি উনার সমস্ত শক্তি হারাবে।
!
!
!

আর তোমার ১৮ বছর পূর্ণ হবে আর তুমি তোমার সমস্ত শক্তি পাবে। আর সেদিন তোমার একটা ছোবলে থাকবে প্রচুর বিষ। আর সেই বিষ যে কাউকে মারতে সক্ষম। আর তোমার কাকুকে তার শক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য উনাকে নাগমনি হাতে পেতে হবে। নয়তো উনার শক্তি কোন ভাবেই ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। আমি অবনি কে বললাম তাহলে পরশু দিন ই হবে আমার কাকুর জীবনের শেষ দিন। আমি আর অবনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম আমরা দুজনে পরশু দিন ই আক্রমণ করবো। আমি আমার রুমে শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম আচ্ছা আমি কী আমার চাচাকে মেরে ফেলবো?


!
!
!
উনি যাই করুক না কেনো? হাজার হলে ও উনি তো আমার কাকু। আমি মনে মনে ভাবলাম যদি উনি উনার ভুল বুঝতে পেরে বাবা মাকে ছেড়ে দেন আর ক্ষমা চান তাহলে তাকে ছেড়ে দেবো। আমাদের সেই পূর্নিমা রাতটা এসে গেলো। যেটার জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম। অবনি আমার কাছে আসলো আর বললো আগে আমাদের নাগমনি চুড়ি করতে হবে। যাতে তোমার কাকার কোন শক্তি না থাকে। আমি অবনি কে বললাম ঠিক আছে তাহলে চলো আমরা আগে নাগমনি ই চুরি করি।
!
!
!
আমরা দুজনে নাগমনি চুরি করার জন্য বেরিয়ে পরলাম। আর আসার আগে আমার পালিত মা কে ডাকলাম আর বললাম মা আমি নাগরাজ্যে যাচ্ছি। জানি না ফিরতে পারবো কী না? মা আমার কথা শুনে কাঁদতে থাকলো। আর বোন রুহি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো দাদা তোকে ছাড়া আমরা থাকতে পারবো না। প্লিজ তুই ফিরে আসিস। আমরা তোর অপেক্ষায় থাকবো।
!
!
!
বোনটার কপালে একটা চুমু খেয়ে বেরিয়ে পরলাম। অবনি আমাকে একটা গুহায় নিয়ে এলো আর বললো ভিতরেই নাগমনি লুকিয়ে রাখা আছে। আমরা ভিতরে ঢুকলাম। আমি দেখতে পেলাম। নাগমনি টা খুব উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। আমি নাগমনিটার কাছে গেলাম আর ওটা নিজের হাতে তুলে নিলাম। আর হাতে তুলে নেওয়ার সাথে সাথে উপর থেকে একটা জাল এসে আমার আর অবনির উপর পরলো। আর আমাদের দুজন কে বন্দি করা হলো।
!
!
!
তার পর আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো সোহান কাকু। উনি হাসতে হাসতে বললো এটাই তো চেয়েছিলাম। তুমি নাগমনি টা নিজের হাতে তুলে আমাকে দেবে। তার পর আমি তোমাকে মেরে ফেলবো ভাতিজা। আমি বললাম না আমি আপনাকে এই নাগমনি কখনো দেবো না। চাচা বললো যদি না দাও তোমার পরিনতি ও তোমার বাবা মায়ের মতো হবে। তাদের মতো তোমাকে ও মরতে হবে। এই কথা টা শুনার পর। আমি মাটিতে বসে পরলাম।
!
!
!
আর চাচা কে জিজ্ঞেস করলাম আমার বাবা মা বেঁচে নেই? চাচা জানালো তা তারা তার কথা মতো নাগমনি এনে দেননি বলে কাল তাদের হত্যা করেছে। এই কথা বলে আমার চাচা একটা অট্টহাসি দিয়ে উঠলো। আমার দুচোখ দিয়ে অঝোর দ্বারায় বৃষ্টির মতো করে পানি পরতে থাকলো। আমি মা বলে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলাম। আমি খুবই রেগে গেলাম আর আমার কাকুকে বললাম যখন আমার বাবা মা ই বেঁচে নেই তাহলে কী হবে এই নাগমনি রেখে?
!
!
!
আমি নাগমনি টা নিজের হাতে নষ্ট করে ফেললাম। আর আমার কাকু একটা চিৎকার দিয়ে বললো এটা করিস না নাহিয়ান। এবার আমি আমার সাপের রুপে ফিরে এলাম আর এতো বড় আকার ধারণ করেছি যে এটা দেখে কাকুর সাথে যে চেলা পেলা এসেছিলো তারা দৌড়ে পালিয়ে গেলো। আমাকে এমন অবস্থায় দেখে উনি ভয় পেয়ে গেলো। হয়তো উনি জানতো না আজ আমি আমার সমস্ত শক্তি পেয়েছি। কাকু আমাকে বললো আমার ভুল হয়ে গেছে নাহিয়ান আমাকে তুই ক্ষমা করে দে বাবা।
!
!
!
আমি বললাম তুমি আমার মা বাবাকে মেরে ফেলেছো। এর পর ও আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো? রাগে আমার চোখ মুখ লাল হয়ে গেলো। আমি আমার লেজের সাহায্যে কাকু কে জড়িয়ে ধরলাম আর আমার বিষাক্ত দাঁত এর কামড় বসিয়ে দিলাম তার ঘাড়ে। মুহুর্তের মধ্যেই সোহান কাকু ছট ফট করে মারা গেলো। আমি মাটিতে বসে পরলাম আর কেঁদে কেঁদে বললাম আজ নিয়তি আমাকে নিজের আপন কাকুকে মারতে বাধ্য করলো। অবনি বললো চলো তোমার বাবা মাকে যে রুমে রাখা হয়েছিলো সেখানে যায়।
!
!
!
অবনি আমাকে একটা একটা বন্ধ ঘরে নিয়ে আসলো আর বললো এখানেই তোমার বাবা মাকে আটকে রাখা হয়েছিলো। আর প্রতিনিয়তো তাদের উপর অত্যাচার করা হতো। আমি খেয়াল করলাম চার পাশের দেয়াল জুড়ে রক্তের দাগ। আমি দেয়ালে হাত লাগিয়ে বললাম এটা আমার মা বাবার রক্ত😭। আমি আরো খেলার করলাম মেঝেতে এক টুকরো কাপড়ের অংশ পরে আছে। এটা আমার মায়ের শাড়ীর আচল। কাপড়ের টুকরো টা হাতে তুলে নিলাম আর চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলাম।
!
!
!
মাকে দেখার জন্য আমার মনটা বড্ড পাগল হয়েছিলো। কিন্তু মা বাবাকে জীবিত দেখবো তো দুরের কথা তাদের মৃত দেহটাকে ও খুজে পেলাম না। আমি মাটিতে বসে চিৎকার করে কাঁদতে থাকলাম। অবনি আমার কাধে হাত রাখলো আর বললো নাহিয়ান তুমি যদি এই ভাবে ভেঙে পরো তাহলে তোমার বাবার নাগরাজ্যের কী হবে? আর আমি কোথায় যাবো? আমি অবনি কে জড়িয়ে ধরলাম। আর নাগরাজ্যে ফিরে এলাম। আমি গিয়ে বাবার সিংহাসন এ বসলাম। আর অবনি আমাকে ওই মুকুট টা মাথায় পরিয়ে দিলো। আমার সামনে শত শত মানুষ রূপে সাপ দাঁড়িয়ে আছে
!
!
!
আমি দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্য একটা কথায় বললাম আজ থেকে আর কোন রাজা থাকবে না। আজ থেকে তোমরা সবাই স্বাধীন। আমি আরো বললাম যদি আমি রাজা হই তাহলে হয়তো আমার বংশধর রাও এই রাজ্য নিয়ে রক্ত পাত করবে। আজ থেকে সবাই মুক্ত। আমি অবনি কে বললাম চলো আমরা আর এক মুহূর্তও থাকবো না। এখানে আমার মা বাবার রক্ত মিশে আছে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
আমি অবনি কে নিয়ে গ্রামে ফিরে এলাম। এসে দেখি মা আর রুহি আর বসে কাদঁছে। আমি মা বলে ডাক দিলাম।
!
!
!
মা আমার দিকে তাকিয়েই দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। রুহি ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো দাদা আমি জানতাম তুই ফিরে আসবি। মা আর বোন কে জড়িয়ে ধরে নিজের আপন মা বাবাকে ভুলার একটু চেষ্টা। মাকে বললাম আমার মৃত মা বাবার শেষ ইচ্ছে ছিলো আমি যে অবনি কে বিয়ে করি। মা বললো তার কোন সমস্যা নেই। আমি অবনি কে বিয়ে করেছি। অবনি অনেক দিন বিষ ক্রিয়ার মাঝে ছিলো তাই এখন আমার ভেতরের বিষ এ তার আর কোন সমস্যা হয় না। আমাদের একটা মেয়ে হয়েছে নাম রেখেছি নীলা। আমি নাহিয়ান, আমার স্ত্রী অবনি, আমার মা আর বোন রুহি এবং আমাদের মেয়ে নীলা সবাই মিলে অনেক ভালো আছি অনেক সুখে আছি। আর এর পরে আমি আর কখনো আমার সাপের চরিত্র টা সামনে আনিনি।

!
!
!
আসলে মা বাবা কে হারানো কতোটা কষ্টের তা যারা হারিয়েছে তারাই একমাত্র ভালো জানে।

আমি জুনায়েত হাসান আরো একটা অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্পের ইতিটানলাম। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর আমার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ হাফেজ।
!
!
!
আজ অন্তত একটা কমেন্ট করবেন আর জানিয়ে দেবেন সম্পূর্ণ গল্পটা কেমন লেগেছে আপনার? যারা এতোদিন একটাও কমেন্ট করেননি তারা-ও আজ একটা কমেন্ট করবেন। খুব শিগ্রই নতুন একটা গল্পে দেখা হবে ইন শা আল্লাহ।

…….সমাপ্ত………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here