মায়া পরি # পর্বঃ ০৮ # জুনায়েত

0
208

#মায়া পরি
# পর্বঃ ০৮
# জুনায়েত

ওই আলোর ভিতর থেকে একজন লোক বললো নাহিয়ান তুই না তোর বাপ মাকে দেখতে চেয়েছিলি? এই দেখ আমি তোর বাবা। আর আমার পাশে যিনি দাঁড়িয়ে আছে ইনি হলো তোর মা।আমি কোন কথা বলছি না শুধু চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছি। আর আমার চোখ দিয়ে শুধু টপ টপ করে জল পরছে। আর এই জল যে কষ্টের জল না এ জল হলো আনন্দের জল। আমি আস্তে আস্তে তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম আর বললাম কই আমার মা? একটু মন খুলে দেখি তারে। ভিতর থেকে একজন মহিলা বলে উঠলো এই যে আমি তোর হতভাগ্য মা।
!
!
!
যে জন্মের পর থেকে তোকে একবার ও আদর করার সময় পায়নি। আমি তোর হতভাগ্য মা যে সন্তানের চেহেরাটাই ভুলে গেছে। আমি খেয়াল করলাম কথা গুলো বলতে গিয়ে ওই মহিলার দুচোখ দিয়ে বৃষ্টির মতো করে পানি পরছে। আমি তাহাদের দিকে এগিয়ে গেলাম আর আমার হাত দিয়ে আমি আমার ওই মায়ের গালে হাত দিতে চাইলাম। কিন্তু আমি তাদের স্পর্শ করতে পারছিলাম না। আমার হাত ভিতরে ঢুকে যাচ্ছিলো।
!
!
!
আমি বাবা এবং মাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলাম কিন্তু তবোও আমি পারলাম না। তারা শারীরিক ভাবে সেখানে উপস্থিত ছিলো না। হয়তো তাদের ছায়া দুটো আমার সাথে দেখা করার জন্য এসেছে। আমি মাকে বললাম মা একবার বুকে জড়িয়ে নাও না? মা কোন কথা বলছে না। শুধু অঝর দ্বারায় কাঁদতে থাকলো। বাবা বললো বাবা নাহিয়ান আমরা তো সারাসরি তোমার সাথে দেখা করতে আসিনি। তাহলে কী ভাবে তোমাকে জড়িয়ে ধরবো? আমাদের ছায়া দুটো তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে।
!
!
!
মা এবার তার চিৎকার এর পরিমান একটু বাড়িয়ে দিলো এবং বলতে থাকলো হে আল্লাহ এ কেমন ধৈর্যের পরিক্ষা নিচ্ছো তুমি? নিজের ছেলেটাকে দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেখতে পেলাম অথচ তাকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারছি না। মায়ের কষ্ট টা আমার সহ্য হচ্ছিলো না। আমি মাকে বললাম মা তুমি চিন্তা করো না একদিন না একদিন তোমার ছেলে তোমাদের বুকে ফিরে যাবেই। মা এবার তার কান্নাটা একটু থামালো।
!
!
!
আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা বাবা আমি কে? আর আমার আসল পরিচয় কী? বাবা আমাকে জানালো আমি একজন ইচ্ছাধারি নাগ। আর আমার বাবা মা ছিলো এই পুরো নাগরাজ্যের রাজা ও রানি। আর আমি নাকি তাদের একমাত্র শেষ বংশধর। আমি বাবাকে আরো জিজ্ঞেস করলাম তাহলে কী এমন হলো যে আজ আমি তোমাদের সামনে দেখতে পাচ্ছি কিন্তু ছুতে পারছি না। বাবা বললো আমাদের কে বন্দী করে রাখা হয়েছে। যেখান থেকে বেরুনোর কোন উপায় নেই বললেই চলে।
!
!
!
আমি বললাম কিন্তু বাবা কে এই লোকটা যার জন্য তোমাদের এই অবস্থা? বাবা বললো তার আপন ছোট ভাই। মানে আমার কাকু রাজ্যের লোভে এসব করেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম তার নাম কী? বাবা জানালো তার নাম সোহান। সোহান কাকু নাকি রাজত্ব পাওয়ার জন্য তার সাথে বৈমানি করে তাকে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে। আমি বাবাকে বললাম বা তুমি কোন চিন্তা করো না আমি যে করেই হউক তোমাদের কে এই কারাগার থেকে মুক্ত করবই।
!
!
!
আমি বাবাকে বললাম বাবা আমার আরো একটা প্রশ্ন আছে? ওই রুহি নামের মেয়েটা কে? আর ও বললো ওর নাম না-কি মায়া পরি! কিন্তু ওর পুরো শরীর নীল।বাবা বললো হ্যা ও একজন পরি। আর ওর বাবা ছিলো ওই পরি লোকের রাজা। আমাদের রাজ্যের পর সোহান কাকুর নজর নাকি ওই রাজ্যে পরেছিলো। আর তিনি নাকি অবনির বাবা মাকে মেরে ফেলেছে। আর তার বিষ এর সাহায্য পুরো পরিলোক দখল করে নিয়েছে এবং পরিলোকের সবাই কে সাপ বানিয়ে দিয়েছে।।
!
!
!
আর বিষের রাজ্যে থাকতে থাকতে তাদের শরীর নীল বর্ণ ধারন করেছে। এই কথা গুলো বলা শেষ করতেই বাবা আর মায়ের ছায়াটা হালকা ঝাপসা হতে শুরু করলো। আমি বাবা মাকে জিজ্ঞেস করলাম কী হচ্ছে এটা বাবা? কী হচ্ছে এটা মা? মা তো কোন কথা বলছে না শুধু চুপটি করে চোখের জল ফেলছে। বাবা আমাকে জানালো তাদের সময় শেষ। এখন তাদের যেতে হবে। হয়তো আর কখনো দেখা নাও হতে পারে। কিন্তু যাওয়ার আগে বাবা আমাকে একটা কথা বলে গেলো যে তিনি যদি মারা যান তাহলে আমি যেন পুরো নাগরাজ্যটা দেখে রাখি।
!
!
!
আর অবনি কে যেন নাগরাজ্যের রানি বানাই। আমি বাবা মাকে বললাম। বাবা, মা আমি তোমাদের সব কথা শুনতে রাজি আছি তবোও তোমরা দয়া করে যেও না। বাবা বললো নাহিয়ান ভালো থাকিস। আমি আমার হাত দ্বারা আলোতে স্পর্শ করে মাকে বললাম মা ভালো থেকো। নিমিষের মধ্যেই আলোটা নিভে গেলো আর বাবা মা ও হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। আমি ওখানে হাঁটু গেড়ে বসে পরলাম আর অনেক কান্না করলাম।
!
!
!
সেদিন রাতে আমি আর কিছুতেই ঘুমতে পারলাম না। মায়ের মায়া ভরা কান্না করা মুখটা ভেসে উঠছিলো। যাই হউক এখন আমার মাথায় শুধু একটাই চিন্তা। যে করেই হউক আমার বাবা মাকে ওই কারাগার থেকে মুক্ত করতেই হবে। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবো সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। আর কী করেই বা বুঝবো নাগরাজ্য কোথায়? আর আমার বাবা মাকে কোথায় বন্দী করে রাখা হয়েছে? তার একদিন পরের কথা।
!
!
!
আমি রুমেই ছিলাম। আর ওই অবনি মানে মায়া পরি আমার ঘরে আসলো। আর এসেই আমাকে জিজ্ঞেস করলো নিশ্চয়ই তুমি ভাবছো তোমার বাবা মাকে কী করে খুজে পাবে? আমি বললাম হ্যা সত্যি আমি তাই ভাবছি। অবনি বললো এই কাজের জন্য সেতো আছে। সে আমাকে এই কাজের জন্য সাহায্য করবে। আমি বললাম তাহলে চলো এক্ষুনি আমরা দুজনে নাগরাজ্যে আক্রমণ করবো। অবনি বললো না এখন না। আগে ওই সোহান এর অবস্থান সম্পর্কে জানতে হবে।
!
!
!
অবনি বললো চলো আমরা নাগরাজ্য থেকে ছদ্মবেশ এ একটু ঘুরে আসি। আর তাদের অবস্থান টা দেখে আসি৷ আমি বললাম চলো তাহলে। আমার হাত ধরে অবনি আমাকে নাগরাজ্যে নিয়ে এলো। আমরা আড়ালে লুকিয়ে ছিলাম। অবনি সিংহাসন এ বসে থাকা একটা লোককে দেখিয়ে বললো এটাই সেই লোক যে তোমার বাবা মাকে বন্দী করে রেখেছে। আমি লোকটার দিকে তাকিয়ে খুবই অবাক হলাম আর বললাম এটা তো জঙ্গলের ওই লোকটা যে আমাকে বলেছিলো আমি নাগরাজ। তার মানে আগে থেকেই উনি সব জানতেন। ইনি তাহলে ছদ্মবেশি একজন নাগ।
!
!
!
চলবে তো?
!
!
!
কেমন লাগলো কমেন্টে জানাবেন। বানান ভুল থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর হ্যা গল্পের শেষটা কষ্টের হতে পারে। সবার গঠন মূলক মন্তব্য দেখতে চায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here