মায়া পরি # পর্বঃ ০৬ # জুনায়েত

0
319

#মায়া পরি
# পর্বঃ ০৬
# জুনায়েত

আমি যে কখন সাপ এ পরিনতো হয়ে গেছি আমি নিজেই বুঝতে পারিনি। যখন খেয়াল করলাম তখন দেখলাম আমি মেয়েটাকে আমার লেজের সাহায্যে পেঁচিয়ে ধরে আছি। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আমার দিকে তাকিয়ে ই খুব ভয় পেলাম। আমি খেয়াল করলাম আমার উচ্চতা ওই মেয়েটার থেকে অনেক বেশি। আর আমাকে দেখে অনেক ভয়ানক ও লাগছিলো। নিজের মাঝে নিজেকে একদম সাপ লাগছিলো না। আমি মানুষ হিসেবে যেমন অনুভব করি ঠিক তেমন ই লাগছিলো আমার।
!
!
!
তবে নিজেকে খোলসের ভিতরে একটু একটু আবদ্ধ লাগছিলো। আমি আরো খেয়াল করলাম মেয়েটা আমাকে দেখে খুব বেশি ভয় পেয়ে আছে। কিন্তু মেয়েটাকে দেখে খুবই নিষ্পাপ মনে হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো ওর দু চোখ আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছে। আমি মেয়েটার চোখের ভাষা বুঝতে পারছি না। শুধু এ টুকু বুঝতে পারছি ওর কোন একটা অভিযোগ আছে আমার কাছে নিশ্চয়। আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম কে তুমি? আর আমার কাছে কী চাও?
!
!
!
মেয়েটি কোন কথা বলছে না শুধু চুপটি করে আছে। আমি ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম বলো কে তুমি? মেয়েটি তবোও কোন কথা বলছে না। এবার আমার রাগ উঠে গেলো। আমি সাপ অবস্থায় মেয়েটিকে আমার লেজের সাহায্যে আরো জোরে পেঁচিয়ে ধরলাম। এবার মেয়েটির খুব কষ্ট হচ্ছে তা আমি বেশ ভালই বুঝতে পারছি।মেয়েটি ওর সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না। কারন ওর শক্তি আমার কাছে কিছুই না।
!
!
!
আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম এখনো সময় আছে বলো তুমি কে?কী তোমার পরিচয়? নয়তো আজ জীবন নিয়ে এখান থেকে ফিরতে পারবে না। মেয়েটি এবার ওর মুখ খুললো আর আস্তে আস্তে বললো আমি অবনি। আমাকে সবাই মায়া পরি হিসেবে চেনে। আমি একজন পরি। আর আমি এখন পরিলোক থেকেই এসেছি। আমি মেয়েটি কে জিজ্ঞেস করলাম তুমি যদি পরি ই হউ তাহলে তোমার শরীর নীল কেনো? পরিদের দেখতে তো অনেক সোন্দর হয়।
!
!
!
মেয়েটি এবার তার মাথা নিচু করে ফেললো আর কাঁদতে শুরু করে দিলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী হলো আমার প্রশ্নের জবাব দাও। মেয়েটি বললো একটা অভিশাপের কারনে আজ তার এই অবস্থা। আর তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যিই নাকি ও আমার কাছে এসেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম আমি কী ভাবে এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পারবো। মেয়েটি বললো তুমি ই পারবে এই অভিশাপ থেকে আমাদের মুক্ত করতে। আমি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম আগে বলো আমি কে?
!
!
!
কী আমার পরিচয়? আমার বাবার মার আসল পরিচয় কী? মেয়েটি কেবল বলেছে তুমি হলে…? ঠিক তখনই মা আমার রুমের সামনে চলে এলো আর এসে ডাকতে থাকলো নাহিয়ান। তোর রুম থেকে কিসের এতো শব্দ হচ্ছে। আমি বললাম কিছু না মা। মা বললো তুই দরজা খুলে দে আমি ভিতরে যাবো। আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি মেয়েটি আর আমার রুমে নেই। মেয়েটি উধাও হয়ে গেছে। হয়তো মায়ের কন্ঠ স্বর শুনে পালিয়েছে বোধ হয়।
!
!
! আমি দরজা খুলে দিলাম আর মা আমার রুমের ভিতরে ঢুকে গেলো আর আমাকে জিজ্ঞেস করলো তোর রুমে কী কেউ এসেছিলো? আমি বললাম কই নাতো। মা বললো আমি কোন একটা মেয়ের কন্ঠ স্বর শুনতে পেলাম। আমি বললাম আরে মা এটা তোমার মনের ভুল। মা আমাকে জিজ্ঞেস করলো বাবা নাহিয়ান তুই কী আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছিস? আমি বললাম না মা!কী এমন আছে যা আমি তোমার থেকে লুকাবো?

মা বললো ঠিক আছে তুই শুয়ে পর। মা আমার রুম থেকে চলে গেলো। আমি ও শুয়ে পরলাম। সেদিন রাতে ও আমার আর ঘুম হলো না। শুধু শুয়ে ই থাকলাম দুচোখের পাতা আর এক করতে পারলাম না। সেদিন সকাল বেলার কথা আমি আমার রুমে শুয়ে ছিলাম। ওই দিন যে সাপুড়ে সাপ খেলা দেখিয়েছিলো আজ সে এবং তার গুরো এসেছে। হয়তো আমার সব কথা সে তার গুরু কে বলেছে তাই সে এসেছে।
!
!
!
তার গুরু এসেই আমার মাকে বললো আপনার বাড়িতে সাপ আছে। আমরা সেটাকে ধরতে এসেছি। মা বললো ঠিক আছে তার কোন সমস্যা নেই। তারা মায়ের অনুমতি নিয়ে বীন বাজানো শুরু করে দিলো। আজ আরো ব্যাতিক্রম বীন ছিলো। যার এক একেকটা শব্দ আমার মাথার ভিতরে এসে আঘাত করছিলো। আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে বীন এর শব্দে। আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। আমি আমার সাপের রুপে এসে গেলাম।
আর আমার রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। বাইরে আসতেই সবাই তো অবাক।
!
!
!
নাহিয়ান এর ঘর থেকে এতো বড় সাপ বেরিয়ে এলো। সবাই ভয় এ পালিয়ে গেলো। আমি ওই দুই সাপুড়ে কে আমার লেজ দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে বাইরে ছুড়ে ফেলে দিলাম আর বললাম আবার যদি এই বাড়িতে দেখি জানে মেরে ফেলবো। আমার এই সাপের রুপের কথা আমার মা জেনে গেলো। তিনি জেনে গেলো যে তার ছেলে নাহিয়ান কোন মানুষ নয়। সে মানুষ রূপে একজন সাপ। আমি আমার মানুষ রুপে ফিরে এলাম। আর আমার মায়ের দিকে এগিয়ে গেলাম।
!
!
!
আর মাকে জিজ্ঞেস করলাম মা বলতো তুমি কী আমার আসল মা। নাকি আমার আরো অন্য কোন পরিচয় আছে? মা কোন কথা বলছে না। শুধু তার মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলছে। আমি আবারো জিজ্ঞেস করলাম মা দয়া করে বলো আমি কে? কী আমার পরিচয়? আর কে আমার আসল বাবা মা? এবার মা তার চোখের জল মুছে ফেললো আর বললো শুন তাহলে আমি তোর আসল মা না। আর রুহি ও তোর আসল বেন না। যে বোন আমাকে ছাড়া কিছু ই বুঝতো না সে আজ ভয়ে মায়ের পিছনে লুকিয়ে আছে।
!
!
! আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম আমি তোমার কাছে আসলাম কী ভাবে? মা বললো আমি নাকি বাড়ির পাশের জঙ্গলের ধারে পরে ছিলাম আর আমাকে নাকি কিছু সাপ পাহারা দিচ্ছিলো। আমি মাকে বললাম এসব কথা তুমি আমাকে আগে বলোনি কেনো? মা বললো তোকে হারানোর ভয়ে। আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম কে আমার আসল মা? মা বললো তা সে জানে না। তবে তার কাছে একটা জিনিস আছে যা থেকে জানা যেতে পারে আমার আসল পরিচয়। মা ভিতরে গেলো আর তার হাতে করে একটা গোল আকৃতির বস্তু নিয়ে এলো আর বললো তুই যখন জঙ্গলের পাশে পরে ছিলি তখন এটা তোর গলায় ছিলো। আমি ওটা হাতে নিয়ে দেখলাম ওই গোল আকৃতির বস্তুটার ভিতরে বড় একটা সাপ এর ছবি আকাঁ। আর তাতে খোদাই করে লেখা নাগরাজ।
!
!
!
চলবে তো?
!
!
!
কেমন লাগলো কমেন্টে জানাবেন। বানান ভুল থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্প পড়ার সময় বড় পর্ব চান কিন্তু কমেন্ট এর বেলায় শুধু nxt বলেন। বড় পর্ব পড়তে হলে সবার বড় বড় কমেন্ট দেখতে চায়। আজ বড় করে দিয়েছি। সবার একটা করে গঠন মূলক মন্তব্য দেখতে চাই। তাহলে nxt পর্ব আরো বড় হবে ইন শা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here