কি_নেশায়_জড়ালে #পর্ব৭ লেখিকা #Sabihatul_Sabha

0
566

#কি_নেশায়_জড়ালে
#পর্ব৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আহনাফ বিরক্ত হয়ে রাস্তার এক পাশে দাঁড়ালো। বাসা খুঁজার মতো বিরক্তিকর কাজ আর দুইটা হতে পারে না।
এই নিয়ে কতো গুলো বাসা দেখেছে কিন্তু ব্যাচেলার শুনেই না করে দিচ্ছে সবাই ।

আহনাফ রূপাদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। নিজের কৃতকর্মের জন্য আজ নিজের এমন অবস্থা।

আহনাফ এসব ভাবছে তখনি কেউ একজন আহনাফ কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ চুর!!চুর!!চুর…কে আছো এই চুরের হাত থেকে আমাকে উদ্ধার করো!..
আহনাফ জেনো আকাশ থেকে পড়েছে। চুর! আবার সে।
আহনাফ নিজের থেকে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতেই দেখা যাচ্ছে রাস্তার মানুষ এদিকে আসছে। বাড়ির গেইটে দাঁড়ানো দারোয়ান লাঠি নিয়ে আসছে।
আহনাফ বুঝলো আজ তাকে গণপিটুনি খেতে হবে তাও ফ্রী তে।
আহনাফ করুন কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমি আপনার কি চুরি করেছি..?’
~ বেশি কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকুন। আমি যা বলি শুধু মাথা নেড়ে হ্যাঁ না বুঝাবেন তাহলে গণধোলাই খাওয়া থেকে বেঁচে যাবেন।
আহনাফঃ কে আপনি আজব ছাড়ুন…
ইতিমধ্যে এখানে লোকজন এসে ভিড় করে ফেলেছে।

একজন লোক বলে উঠলো, ‘ কি হয়েছে মা..? এই ছেলে তোমার কি চুরি করেছে…?’

আরেকজন বলে উঠলো, ‘ রাস্তা ঘাটে আজ শান্তিতে বের হওয়ার জু নেই এইসব ছেলেদের জন্য। দেখতে তো ভালো পরিবারের ছেলে মনে হয়। চুরি না করে কাজ করেও তো খেতে পারো।

আহনাফ এমন পরিস্থিতিতে আগে কখনো পরেনি অবাক হয়ে সবার কথা শুনছে।

আরেকজন বললো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো এমন ছেলেদের কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি দেওয়া উচিৎ।

মেয়েটা আহনাফ এর কানে ফিসফিস করে বললো, ‘ আমি তোমাকে এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে পারি। যদি আমার একটা শর্ত রাজি হও!

আহনাফ আগে পিছে কিছু না ভেবেই বলে উঠলো আমি আপনার সব শর্তে রাজি আগে এই মানুষ গুলোর মুখ বন্ধ করুন।
একজন লোক আহনাফ এর কলার ধরতে এলে মেয়েটা লোকটার হাত ধরে বলে উঠলো, ‘ ধন্যবাদ আঙ্কেল। আমাদের এখানে শুটিং হচ্ছিলো। আর এই ছেলে আমার বয়ফ্রেন্ড।
আহনাফ চোখ বড় বড় করে আশেপাশে তাকালো। রূপার বাড়ির কেউ আছে কিনা। না কাউকে দেখতে না পেয়ে শান্তির নিশ্বাস ফেললো।

লোকগুলো মেয়েটাকে অনেকগুলো কথা শুনিয়ে গেলো। তাতে মেয়েটার কিছু আসে যায় না৷ সে তো এইসব কথা পাত্তা ও দেয়নি।

আহনাফ রেগে মেয়েটাকে বলে উঠলো, ‘ আপনি এমনটা কেনো করলেন..? আপনি কে..?

মেয়েটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমার নাম রিধি। ‘
আহনাফঃ আপনার নাম যাই হোক তাতে আমার কি! আমাকে চুর বলে উপমান কেনো করলেন..?
রিধিঃআপনি বলেছেন আমার শর্তে রাজি।
আহনাফ বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো, ‘ কিসের শর্ত..! কার শর্ত! আর আমি কেনো শর্ত মানবো..?

রিধি আহনাফ এর আরও কাছে এসে বলে উঠলো, ‘ আপনার মনে হয় আপনার গণধোলাই খাওয়ার ইচ্ছে। বাঁচাও কেউ তো বাঁচাও…
আহনাফ মেয়েটার মুখ চেপে ধরে বলে উঠলো, ‘ বইন মাফ কর। তোর কি শর্ত বলে আমাকে উদ্ধার কর..!
মেয়েটা মুচকি হেসে বললো, ‘ এই তো লাইনে এসেছেন। তবে আমি কারো বইন নই। আমার একটা সুন্দর নাম আছে। ‘
আহনাফ বললো,’ এবার বলেন প্লিজ..!
রিধি আহনাফ এর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমার দাদু আমার জন্য বিয়ে ঠিক করেছে আমি বলেছি আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। এখন দাদু বলছে আজকেই জেনো বয়ফ্রেন্ড নিয়ে দাদুর কাছে যাই। ‘
আহনাফঃ ভালো কথা নিয়ে যান।
রিধিঃ আগে পুরো কথা তো শুনবেন!
আহনাফ আগ্রহ না দেখিয়ে বললো,’ আপনার এই সব কথা আমি শুনে কি করবো..?
রিধিঃ দেখুন আমি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে পারি না যা বলবো সোজাসুজি। আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। আর প্রায় পাঁচ ঘন্টা ধরে আমি বয়ফ্রেন্ড খুঁজছি। এই এলাকার ছেলেরা খুবি ভীতু আমাকে দেখলেই ভয় পায় কেউ হতে রাজি না। তাই বাধ্য হয়ে এমন করা।
আহনাফ একবার ভালো করে মেয়েটার দিকে তাকালো। কালো শার্ট সাথে প্যান্ট, মাথায় কেপ, শার্টের সামনে চশমা ঝুলানো। দেখতে বখাটে মেয়ে মনে হচ্ছে।
আহনাফ হাত উঠিয়ে বললো,’ এইটুকু একটা শরীর মাছি তাড়ানোর মতো হাত দিয়ে বাতাস দিলে উড়ে যাবেন আর আপনাকে এলাকার ছেলেরা ভয় পায়!! ওরা আসলেই ছেলে তো নাকি…
রিধিঃ আপনার সাহস তো কম না আমাকে অপমান করছেন..? আজ শুধু বিপদে পড়েছি বলে না হলে এতোক্ষনে হাত পা ভে*ঙে গলায় ঝুলিয়ে দিতাম।
আহনাফ বিরক্ত হয়ে বললো,’আহ্ আমি তো সেই ভয় পেয়ে গেছি, এখন আমি কি করবো..?
রিধিঃ আমার বয়ফ্রেন্ড সেজে আমার দাদুর কাছে যাবেন।
আহনাফঃ কিইইই!! কখনো না।
রিধিঃ তাহলে কি আবার চিৎকার করবো.? পাবলিকের মাইর কিন্তু সেই স্বাধ।
আহনাফ অসহায় চোখে আশেপাশে তাকালো।

____________________

রূপা সাজ্জাদের সামনে বসে ফাইল দেখছে আর আঁড়চোখে সাজ্জাদের দিকে তাকাচ্ছে।
এক নাম্বার গিরগিটি, এখনি মনে হলো বের করে দিবে কিন্তু না উল্টো নিজের সামনে ফাইল দিয়ে বসিয়ে দিয়েছে। এদিকে পেটেও খুব খিদে পেয়েছে। সকালে এই আহনাফ ঝামেলার জন্য কিছু খাওয়া হয়নি।

হঠাৎ রূপা সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো, ‘ প্রথম কিভাবে ওর আর সাজ্জাদের সেই অন্ধকার রুমে দেখা হয়ে ছিলো। এই ছেলে নিজ থেকে হেল্প করতে আসবে আবার এটিটিউড দেখাবে। যা রূপার খুব বিরক্ত লাগে।

আহনাফ এর ক্যাবিনে একটা মেয়ে খাবার নিয়ে আসলো।

সাজ্জাদ রূপার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,’ আমি জানি আমি খুব সুন্দর, হ্যান্ডসাম তাই বলে তুমি চোখ দিয়ে আমাকে গিলে নিবে। এই জন্যই আম্মু প্রতি দিন বলে সাজ্জাদ কপালে কালো টিকা দিয়ে রাখো না হলে মেয়েদের নজর লাগবে কালো নজর। ‘

রূপা লজ্জা পেয়ে গেলো সাজ্জাদের কথায়।
লজ্জা লুকাতে বলে উঠলো, ‘ কি আজব আপনি সুন্দর, হ্যান্ডসাম! কি হাস্য কর কথা না..? আমি তো জাস্ট ভাবতেছিলাম…
সাজ্জাদ এক ভ্রু উঁচু করে বললো, ‘ কি ভাবতে ছিলে..?

রূপা আমতাআমতা করে বললো,’ কিছু না। আর সবার আম্মুর কাছেই তার সন্তান সুন্দর। তাই বলে নিজেকে সুন্দর বলবেন না স্যার। আমি নিজেও বলতে পারি আমি বিশ্বসুন্দরী তাই বলে কি সত্যি আমি বিশ্বসুন্দরী হয়ে গেলাম নাকি।

সাজ্জাদ ওর সামনে দাঁড়ানো মেয়েটাকে বলে উঠলো,’ মিস মিহি তুমি বলো আমি দেখতে হ্যান্ডসাম না..?’
মেয়েটা হেঁসে বলে উঠলো, ‘ হুম দাভাই তুমি দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম আর কিউট। ‘
সাজ্জাদ বিজয়ী হাসি দিয়ে রূপার দিকে তাকালো।

রূপা সাজ্জাদের চোখের আড়ালে মুখ ভেংচি কেটে কাজ শুরু করলো। কিন্তু খুব খিদে লেগেছে তাইকাজে মন বসছে না৷ সামনে এতো খাবারের ঘ্রাণ পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে কাজে কিভাবে মন বসে..?

সাজ্জাদ হাতের ইশারায় মেয়েটাকে চলে যেতে বললো।

সাজ্জাদ সব খাবার টেবিলে সাজিয়ে রূপার দিকে তাকালো।
রূপা আঁড়চোখে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
সাজ্জাদ নিরবে হাসলো। রূপার মুখ দেখেই বুঝেছে সাজ্জাদ রূপার খিদে পেয়েছে।

সাজ্জাদ রূপাকে ডাকলো।
রূপা কাজ রেখে সাজ্জাদের দিকে তাকালো।

সাজ্জাদঃ একটু কষ্ট করে এদিকে আসবেন মিস রূপা।
রূপা সাজ্জাদের সামনে গেলো।
সাজ্জাদ রূপাকে রিকোয়েস্ট করে বললো,’ প্লিজ সব গুলো থেকে একটু একটু খেয়ে বলবেন কোনটা সব থেকে ভালো হয়েছে..? ‘
রূপাঃ সব গুলো থেকে খেতে গেলে এইগুলো তো এটু খাবার হয়ে যাবে।
সাজ্জাদঃসমস্যা নেই, আসলে আমার ঝালে খুব সমস্যা হয়। আমি ঝাল খেতে পারি না আপনি একটু…
রূপার পেটে খুব খিদে তাই বেশি কিছু না ভেবে রাজি হয়ে গেলো।
সাজ্জাদ দুইটায় খাবার বেরে নিলো। সব কিছু থেকে অর্ধেক অর্ধেক রূপাকে দিলো৷
রূপা অবাক হয়ে বলে উঠলো, ‘ এতো কেনো স্যার..?’
সাজ্জাদঃ খাবার নষ্ট হওয়া আমার পছন্দ না। অন্য দিন আমার ফ্রেন্ড সাথে থাকে আজ না হয় আপনার সাথে লাঞ্চ করলাম।
রূপা কিছু না বলে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে খাবার খাওয়া শুরু করলো।
সাজ্জাদ খাবার না খেয়ে রূপার খাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
রূপা খাবার শেষ করে দেখে সাজ্জাদ এখনো খাবারে হাত দেয়নি।
রূপা নিজের প্লেটের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে গেলো। ইসস কেমন নির্লিপ্ত ভাবে সব গুলো খাবার খেয়ে নিলে আর বস এখনো খাবারে হাতও দেয়নি।
রূপাঃ স্যার আপনি খাবেন না..?
সাজ্জাদঃ তুমি তো এখনো বলোনি কোনটা কেমন..? আর কোনটা ঝাল কোনটা ঝাল না..?

রূপা নিজের জিহ্বে কামড় কাটলো। সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ স্যার সব গুলোই ভালো হয়েছে । ঝাল তো একদম নেই। ‘

সাজ্জাদ এমন ভাব করলো জেনো সে এই উত্তর শুনার জন্য অপেক্ষায় ছিলো। কিন্তু সে তো আগে থেকেই জানতো কোন খাবারটা কেমন। আর ঝাল কেমন।

আহনাফ দাঁড়িয়ে আছে একটা বাড়ির সামনে। সাথে রিধি।
আহনাফ মনে মনে বলে উঠলো , ‘ শালা আমার জীবনটাই গেলো ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে।’

চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here