তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_৩৫

0
669

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৩৫

” অ্যাই তুমি কি ম্যারাথনে নাম দিয়েছো? এত জোরে ছুটছো কেন? আরে বাবা একটু আস্তে হাঁটো না। ”

তূর্ণ’র পিছু একপ্রকার ছুটছে মেয়েটা। মহাশয় তো বড় বড় কদম ফেলে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু দুয়া! খরগোশ এবং কচ্ছপের সেই কাহিনীর মতো পেছনে পড়ে গেছে। তাই তো বিরক্ত তনুমন। শেষমেষ বিরক্তি প্রকাশ করে বলেই ফেললো কথাগুলো। তূর্ণ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বললো,

” ট্রেন জার্নি করতে চাইলে দ্রুত পা চালান বিবিজান। এমনিতেই লেট হয়ে গেছে। আরেকটু হলেই ট্রেন মিস। ”

তৎক্ষণাৎ আপত্তি জানালো দুয়া।

” এই না না। মিস হতে যাবে কেন? আমরা চলে এসেছি তো। হাঁটো। জোরে জোরে হাঁটো। ইনশাআল্লাহ্ ঠিক পৌঁছে যাবো।”

স্বামীর হাত ধরে তাল মিলিয়ে হাঁটতে লাগলো মেয়েটি। মৃদু হাসলো তূর্ণ।
.

লাল রঙের ট্রেন, উপরিভাগ তার হলদে। ছোট ট্রেনটি যাত্রা শুরু করলো ওয়াইল্ডার্সউইল হতে। ট্রেনের কেবিন আপাতদৃষ্টিতে ফাঁকা। লোকজন তেমন নেই। লম্বাটে সিটে জানালা সংলগ্ন বসে দুয়া। চোখেমুখে তার অপার মুগ্ধতা! কৌতূহল। স্বল্প গতিতে চলতে শুরু করলো ট্রেনটি। আশপাশে সবুজ আর সবুজ। বৃক্ষরাজিতে ভরপুর। দুয়া’র হাতে মোবাইল। ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ হচ্ছে এই অসীম মুগ্ধকর দৃশ্য! পাশেই বসে তূর্ণ। তার চোখেমুখেও মুগ্ধতা! তবে তা শুধুমাত্র মাইরা’র তরে। তার মোহাচ্ছন্ন চাহনি নিবদ্ধ মাইরা’তে! হালকা পবনে এলোমেলো কেশ। অধর কোণে লেপ্টে মোহনীয় দ্যুতি। ফোলা ফোলা কপোলে লালিমা মাখা। মায়াবী আঁখি যুগলে খুশির ছাপ! ঝঙ্কার সৃষ্টি হচ্ছে পুরুষালি হৃদয়ে।

ওয়াইল্ডার্সউইল হতে রওনা হওয়ার পর ট্রেনটি ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে লাগলো লুটশিন নদীর দিকে। আস্তে ধীরে নদীটি পার হতে লাগলো। দুয়া খুশিতে আত্মহারা হয়ে জানালার সঙ্গে আরো মিশে যায়। উপভোগ করতে থাকে লুটশিন নদীর সৌন্দর্য! দুয়া যখন লুটশিনে মগ্ন হঠাৎ থমকে গেল। অতি সন্নিকটে অনুভব করতে পারলো একান্ত মানুষটিকে। গলদেশের উন্মুক্ত স্থানে আঁকিবুঁকি করে চলেছে তপ্ত শ্বাস। উদরে পুরুষালি হাতের অস্তিত্ব। মেয়েটি আবেশে শিহরিত হতে লাগলো বারংবার। ডান হাতে ট্রেনের দেহ তো বাঁ হাতে আঁকড়ে ধরলো পরিহিত পোশাক। উপলব্ধি করতে লাগলো আস্তে আস্তে করে বাঁ কাঁধ হতে সরে যাচ্ছে কেশগুচ্ছ। সেথায় জায়গা করে নিচ্ছে একান্ত জন। কাঁধের উন্মুক্ত স্থানে ছুঁয়ে যেতে লাগলো নে.শালো ওষ্ঠ। উদরে চলাচল করছে মানুষটির ডান হাত। মা.দকতায় আচ্ছন্ন স্পর্শে খেই হারালো দুয়া। অবশ হলো তনুমন। আস্তে ধীরে মানুষটির প্রশস্ত-সুঠাম বক্ষপটে নিজের ভর ছেড়ে দিলো। নিমীলিত হলো নেত্রপল্লব। অনুভব করতে লাগলো প্রতিটি স্পর্শ, তার গভীরতা!

ট্রেনটি লুটশিন নদী অতিক্রম করে তৃণভূমিতে উঠলো। প্রবেশ করলো ঘন জঙ্গলে। ঘন গাছপালায় আচ্ছাদিত স্থানটি। তন্মধ্য দিয়ে ইন্টারলেকেন এবং লেক থুন দেখার জন্য কিছু জায়গায় উঁকি দিলো তূর্ণ, দুয়া যুগল। বন ছেড়ে যাওয়ার পরে ট্রেনটি ছোট মধ্য-স্টেশন ব্রিটলাউয়েনেন এর চারপাশে ঘূর্ণায়মান তৃণভূমিতে প্রবেশ করে। এই ব্রিটলাউয়েনেন, ওয়াইল্ডার্সউইলের স্টেশন থেকে প্রায় এক হাজার মিটার উঁচুতে অবস্থিত।

অতঃপর ট্রেনটি স্কিনিজ প্ল্যাটে আরোহণ করে। শেষ সময়ে অনেকগুলি টানেল এবং চিত্তাকর্ষক দৃশ্য অতিক্রম করে। ঐতিহাসিক রেলপথ, চোয়াল ড্রপ করার দৃশ্য, প্যানোরামা ট্রেইল এবং আরাধ্য আলপাইন ফুল তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তূর্ণয়া যুগল এই পঞ্চাশ মিনিট স্থায়ী যাত্রা পুরোদমে উপভোগ করলো। সেই সঙ্গে কাটলো ছোটখাটো খুনসুটি।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩২২ মিটার উপরে অবস্থিত, হার্ডার কুল্ম। ইন্টারলেকেনের অন্যতম সেরা আকর্ষণ। এই পর্বতশৃঙ্গটি ফটোগ্রাফার, গুরমেট, হাইকার এবং প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য আদর্শ গন্তব্য। এখান থেকে দর্শনার্থীরা সমগ্র জংফ্রাউ অঞ্চলের সবচেয়ে শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবে।

অপরাহ্ন প্রহর। তূর্ণর হাতে বন্দি অর্ধাঙ্গীর কোমল হাতটি। দু’জনে পৌঁছালো হার্ডার কুলম ফানিকুলারের ভ্যালি স্টেশনে। এই স্টেশনটি মধ্য ইন্টারলেকেন এবং ইন্টারলেকেন অস্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে নদীর ওপারে অবস্থিত। তূর্ণ, দুয়া সহ অসংখ্য দর্শনার্থী প্রস্তুত। যাত্রা শুরু করলো ফানিকুলার টি। ইন্টারলেকেনের শক্ত কুল্ম থেকে ফানিকুলার হার্ডারবাহন যাত্রায় প্রায় দশ মিনিট সময় লাগে। এই সময়ে ফানিকুলারের পিছনের জানালা থেকে উপত্যকার সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। তেমনটি করলো তূর্ণ, দুয়া এবং কিছু দর্শনার্থী। সকলেই বিমোহিত উপত্যকার সৌন্দর্যে! ফানিকুলারটি অতি দ্রুতবেগে ধেয়ে যাচ্ছে। মাত্র দশ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেল সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে অতি উঁচুতে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো দুয়া।

” আল্লাহ্! বাঁচা গেল। কি দ্রুত চলছিল এটা। ”

তূর্ণ কিছু বললো না। মুচকি হাসলো শুধু। হাতে হাত রেখে ওরা ফানিকুলার ত্যাগ করলো। সরু পাহাড়ি পথ ধরে অগ্রসর হতে লাগলো গন্তব্যে। জায়গাটা কেমন ভীতিকর! বামে বিশাল খাদ তো ডানে দৈ-ত্যকায় পাহাড়। ওরা সাবধানতা অবলম্বন করে হাঁটতে লাগলো। অতি স্বল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে গেল কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। হার্ডার কুলম্।

তূর্ণ, দুয়া যখন শিখরের কাছে পৌঁছালো তখন প্যাগোডার মতো একটি কাঠামো দেখতে পেল। দুয়া কৌতুহলী দৃষ্টিতে সেথায় তাকিয়ে রইল। মৃদু স্বরে শুধালো,

” আচ্ছা এটা কি? সে-ই বিখ্যাত রেস্তোরাঁ? ”

তূর্ণ জবাব দিলো,

” হাঁ। এটা প্যানোরামা রেস্তোরাঁ হার্ডার কুলম। যেখানে একশো জন অতিথির জন্য একটি ডাইনিং রুম এবং একটি সূর্যের ছাদ রয়েছে যেখানে আরও চল্লিশ জন দর্শনার্থী খাবার, স্ন্যাকস, পানীয় এবং মাঝে মাঝে সিগার এবং হুইস্কির স্বাদ গ্রহণের মতো অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারে৷ ”

” আচ্ছা। বুঝলাম। কিন্তু কারো যদি খিদে না পায়? তাহলে? ”

তূর্ণ ওর গালটা টিপে দিলো। হেসে বললো,

” যদি ক্ষুধার্ত বা তৃষ্ণার্ত না হয় কোন সমস্যা নেই। শুধু দেখার বারান্দার দিকে যাবে আর প্রকৃতির প্যানোরামা উপভোগ করবে। ”

” চমৎকার! আমার তো খিদে পায়নি। তোমার পেয়েছে? ”

” উঁহু। ”

দুয়া গদগদ কন্ঠে বললো,

” তাহলে দেরি কিসের? লেটস্ এক্সপ্লোর দ্যা বিউটি অফ হার্ডার কুলম্। ”

” ইয়াহ্। ”

ওরা পৌঁছে গেল উঁচু শিখরের চূড়ায়। নৈসর্গিক শিখরটি অসাধারণ জংফ্রাউ অঞ্চলের সবচেয়ে দর্শনীয় দৃশ্যের কিছু অফার করে। এক পাশে লেক ব্রিয়েঞ্জ আরেক পাশে লেক থুন। মধ্যখানে ইন্টারলেকেন। দুই লেকের মধ্যিখানে শহরটি অবস্থিত বলেই এর নামকরণ হয়েছে ইন্টারলেকেন। দুয়া হাঁটতে হাঁটতে উন্মুক্ত সে বেলকনির রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ালো। অস্ফুট স্বরে আওড়ালো,

” মাশাআল্লাহ্! আল্লাহ্’র সে কি অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য! চমৎকার! ”

মেয়েটি বিমোহিত হয়ে বেলকনি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। পিছু পিছু সঙ্গী তূর্ণ। ক্যামেরা বন্দি হলো অসংখ্য দৃশ্য। সে একেকটি অপরূপ, অবর্ণনীয় সৌন্দর্য! অপরাহ্ন প্রহরের লালচে কমলা দিগন্ত। নিম্নে দুই লেকের মধ্যিখানে ইন্টারলেকেন শহর। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এতটা উঁচুতে অবস্থিত তূর্ণ, দুয়া যুগল। বিমুগ্ধ চাহনিতে উপভোগ করতে লাগলো হার্ডার কুলম্ এর সবটুকু সৌন্দর্য।

ইন্টারলেকেন যেন একটি পাখির চোখের দৃশ্য এবং লেক ব্রিয়েঞ্জ এবং লেক থুনের মধ্যে বাসা বাঁধার এলাকা। দুটি পান্না-সবুজ হ্রদ, আল্পাইন চূড়া দ্বারা বেষ্টিত। এছাড়া মুকুট গৌরব – আইগার, মঞ্চ এবং জংফ্রাউ-এর বিস্ময়কর চূড়াগুলির একটি নিরবচ্ছিন্ন দৃশ্য!

সুরকার ফেলিক্স মেন্ডেলসোহন কবি আইচেনডর্ফের কথাগুলিকে সঙ্গীতে সেট করার পর থেকে দ্য হার্ডার তার কোনো জাদুকরী আকর্ষণ হারায়নি: “হে মহিমান্বিত বন, কে তোমাকে সেখানে রোপণ করেছে এত উপরে?” একশো বছর আগে মেন্ডেলসোহন পায়ে হেঁটে সুমিটে পৌঁছেছিলেন। একই পথ ধরে একই কাঠের মধ্য দিয়ে, যা আজও ব্যবহার করা হচ্ছে। দর্শকরা এখন এটিকে অনেক সহজে নিতে পারে এবং নস্টালজিক ফানিকুলার রেলপথের মাধ্যমে শীর্ষে ভ্রমণ করতে পারে।

কাঠের শিখর চূড়ায় দাঁড়িয়ে তূর্ণ। দু হাত দু’দিকে ছড়িয়ে রাখা। মধ্যখানে বুকের সঙ্গে লেপ্টে তার মাইরা। তার হাত দুটোও ছড়িয়ে রাখা স্বামীর হাতের সনে। আঁখি পল্লব মুদিত করে তারা উপভোগ করতে লাগলো দি হার্ডার কুলম্। দেহে ছুঁয়ে যেতে লাগলো সতেজ হাওয়া। প্রশান্তি অনুভব করলো হৃদয়ে। এত সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য! স্রষ্টার অকৃত্রিম সৌন্দর্য সঙ্গে একান্ত ব্যক্তিগত জন। এ এক সুখময় মুহূর্ত। সুখে
ম র ণ হয়ে না যায়! দু’জনের চোখেমুখেই তৃপ্তির আভা। এই দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করলো এক আগন্তুক। ওদের অনুরোধেই সে এই প্রেমপূর্ণ দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করে দিলো।

তমসায় আবৃত ধরিত্রী। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দুয়া। পড়নে পাতলা উষ্ণ পোশাক। তাতে শীতার্ত ভাব নিবারণ করা মুশকিল। দেহে ছুঁয়ে যাচ্ছে শীতল পবন। তবুও নড়লো না মেয়েটি। সে যে মগ্ন চিন্তায়। একান্ত মানুষটির চিন্তার চাদর আচ্ছাদিত করে রেখেছে তারে। মানসপটে বারংবার ভেসে আসছে সেই মানুষটি। যার জন্যি সুমধুর ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় হৃৎযন্ত্র। যার একটুখানি সান্নিধ্যে বুজে আসে আঁখি পল্লব। শ্বাস প্রশ্বাসের গতি ক্রমশ করে ওঠানামা। সেই মানুষটির নয়ন সাগরে সে যে আজকাল বিনা সাঁতার জানা জীবের ন্যায় হাবুডুবু খেয়ে চলেছে। নিজেকে হারিয়ে ফেলছে প্রতিনিয়ত। আজকাল মানুষটি আর কোনোরূপ সীমা মান্য করে না। হুটহাট খুব করে সান্নিধ্যে আসে। তাকে নে.শাতুর কিছু ছোঁয়ায় মুড়িয়ে আবার হারিয়ে যায়। মানুষটি কি বোঝে না তার এই পবিত্র-নে’শাক্ত ছোঁয়াটুকু মেয়েটির হৃদয় কতখানি বেসামাল করে তোলে? করে বেকাবু! বোঝে না তো। বুঝে থাকলে এমনটি করতো না। তাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্পর্শে দিশেহারা না করে সম্পূর্ণ রূপে নিজের করে নিতো‌। নিজ অস্তিত্বে মিশিয়ে নিতো এই কোমল প্রাণটিকে। একান্ত সে মানুষটি সত্যিই অবুঝ। তাই তো অপেক্ষার প্রহরে দাঁড় করিয়ে পরীক্ষা করছে সঙ্গিনীর ধৈর্য্যের বাঁধ। তবে সে-ই বাঁধ ভাঙতে বুঝি আর দেরি নেই। যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে।

দুয়া যখন নিজস্ব মানুষটির চিন্তায় মগ্ন। তখন কক্ষ হতে কয়েকবার ডেকে উঠেছে তূর্ণ। কিন্তু কোনোরূপ সাড়া না পেয়ে বেলকনিতে এলো সে। চিন্তামগ্ন মাইরা’কে ফট করে পাঁজাকোলে তুলে নিলো। হকচকিয়ে গেল মেয়েটি। তড়িৎ দু হাতে গলা আলিঙ্গন করে বললো,

” কি করছো কি? ছাড়ো। ”

হাঁটতে হাঁটতে তূর্ণ বললো,

” ছাড়বো। আজকের জন্য স্পেশাল ছাড়। তবে..! কে বলতে পারে? আগামী রজনী হতে হয়তো কোনোরূপ ছাড় মিলবে না। সো বি প্রিপেয়ার্ড বিবিজান। ”

মানুষটির দুষ্টু কথা বোধগম্য হলো না মেয়েটির। সে ততক্ষণে বিছানায় শুয়ে। বালিশে ঠেকে মাথা।

” তুমি কি বলছো কিছুই বুঝলাম না। ক্লিয়ার করে বলবে কি?”

তূর্ণ বেলকনির দ্বার বদ্ধ করতে করতে বললো,

” বেশি বুঝে লাভ নেই। চটাপট ঘুমিয়ে পড়। আগামীর জন্য প্রস্তুতি নিতে থাক। ”

কিছুই বোধগম্য হলো না। চিন্তিত দুয়া’র পাশে শয্যা গ্রহণ করলো তূর্ণ। নিভিয়ে দিলো আলো। আঁধারে দুয়া অনুভব করলো মানুষটির স্পর্শ। তাকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে নিয়েছে। ললাটের কার্নিশে অধর ছুঁয়ে আদুরে কণ্ঠে বললো,

” গুড নাইট বিবিজান। ”

দিবাকরের আলোয় উজ্জ্বল বসুন্ধরা। বিছানায় হেলান দিয়ে বসে সাজেদা। হাতে ফটোফ্রেম। স্বামী, দুই সন্তান এবং সে। কতটা সুখ, আনন্দ মিশ্রিত ফটোতে। ফটোটা তোলা হয়েছে তখন তানু’র বয়স মাত্র দুই। দ্বিতীয় জন্মদিন উপলক্ষে তারা সিলেট ভ্রমণে গিয়েছিল। সেথায় তোলা এই ফ্যামিলি ফটো। মানুষটির অধর কোণে খুশির ছাপ। কতটা সুদর্শন লাগছে! হয়তো সে শ্যামবর্ণের। তবে সৌন্দর্যের কমতি ছিল না। সে-ই সৌন্দর্য হয়তো সবার চোখে পড়ে না। শুধুমাত্র যারা মনের চক্ষু দিয়ে অবলোকন করে তারাই দেখতে পায়। উনিও তো দেখতে দেরি করেছিলেন। ওনার মন যে বিভোর ছিল মাসুদের নকল, ভ*য়ঙ্কর সৌন্দর্যে। তাই তো উনি স্বামী, সংসারের মহত্ত্ব উপলব্ধি করতে এতটা দেরি করে ফেললেন। তবে সহায় ছিল স্রষ্টা। তাই তো উনি অল্পতেই ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। স্বামী সন্তান নিয়ে অতিবাহিত করেছিলেন অজস্র সুখময় মুহূর্ত। একসাথে পাড় করলেন কতটা বছর! মানুষটি হয়তো আজ আর সাথে নেই। তবে তার ভালোবাসা, যত্ন এখনো হৃদয়ে গেঁথে। ছেলেটাও বাবার মতো হয়েছে। যত্নশীল। খুব করে আগলে রাখতে জানে। ভালোবাসতে জানে। হয়তো ওনার ভুলে ছেলে আজ ভালোবাসা হারা। তবে উনি তা সইবেন না। সবটা ঠিক করে ফেলবেন ইনশাআল্লাহ্। ওনার জাবিরের জন্য মিষ্টি একটা বউ আনবেন। সংসারী হবে ওনার ছেলেও। হাঁ। ওনার তো শরীর ভালো না। ডক্টর কিসব চিকিৎসা করছে। উনি একটু সুস্থ হলেই ভাইকে বলবেন। ওনার ছেলের জন্য মেয়ে খুঁজতে। এরপর ছেলে, ছেলেবউ আর মেয়েকে নিয়ে উনি বাকি জীবন সুখে শান্তিতে কাটাবেন। সেখানে অবশ্য ভাই-ভাবি সব্বাই থাকবে। হুম। সবাই থাকবে। সুখে আচ্ছাদিত হবে বাকি জীবন। থাকবে না আর মিছিমিছি অপ্রাপ্তি।

চলবে.

[ সুইজারল্যান্ড ট্রিপ নিয়ে দু লাইন মন্তব্য আশা করছি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here