#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ফাহিম তার মায়ের সামনে বসে আছে। ফারজানা বেগম তখন একটি টুলে বসে চা খাচ্ছিলেন। ফাহিম তার মাকে প্রশ্ন করল,
‘আম্মু তুমি ইভানার সাথে কাল থেকে এমন ব্যবহার করছ কেন? তুমি তো এমন ছিলে না। ইভানাকে তো তুমি নিজে পছন্দ করেছিলে।’
ফারজানা বেগম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলেন,
‘হ, আমি ওক পছন্দ কইরা আনছিলাম। কিন্তু ও যা করছে তারপর ওকে আর সহ্য হচ্ছে না।’
ফাহিম বিস্মিত হয়ে বলে,
‘ইভানা এমন কি করল যে তোমার ওকে সহ্য হচ্ছে না? আমার জানামতে ইভানা এমন কিছু করে নি।’
‘তুই আর নিজের বউয়ের দোষ ঢাকনের চেষ্টা করিস না৷ ফারহানকে তো তোর বউ আর ওর বান্দুবী মিইলাই জে’লে পাঠাইছিল।’
‘এসব তোমাকে কে বলেছে আম্মু? এসব তো একদম সত্য নয়।’
‘ফারহান কইছে৷’
‘ভাইয়া বললো আর তুমি বিশ্বাস করে নিলে! আম্মু আমি তোমাকে সত্যিটা বলছি ইভানার এতে কোন দো’ষ নেই। যা করেছে ইভানার বাবা করেছে।’
‘কি!’
‘হুম। আর তুমি কিনা ইভানার সাথে খারাপ ব্যবহার করছ। অথচ ইভানাই ওর বাবার শাস্তির কথা বলেছিল। আমিই ওনাদের সম্মানের কথা ভেবে কিছু বলিনি। তুমি তো জানো, ভাইয়ার কারণে ওনারা কতটা অপমানিত হয়েছেন। তারই প্র’তিশোধ নিতে চেয়েছেন উনি।’
ফারজানা বেগম আফসোস করে বলেন,
‘হায় আল্লাহ! বিনা কারণে ঐ মাইয়ারে আমি এত কষ্ট দিলাম। ওর কাছে তো ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।’
ফাহিম মৃদু হেসে বলে,
‘তুমিই তো আমায় শিখিয়েছ আম্মু, ভুল করলে ক্ষমা চাইতে হয়। তাছাড়া সামনে আমার পরীক্ষা তাই আমি আজকেই হোস্টেলে গিয়ে উঠবো। এই সময়টা তুমি ইভানাকে দেখে রেখো।’
‘তুই কোন চিন্তা করস না। আমি ইভানার খেয়াল রাখমু।’
‘জানতাম আম্মু, তুমি আমাকে নিরাশ করবে না।’
ফারজানা বেগম ফাহিমের থেকে বিদায় নিয়ে ইভানার রুমে চলে আসেন। ফারজানা বেগমকে দেখে ইভানা বলে,
‘আপনি হঠাৎ এইসময়! কিছু বলবেন?’
ফারজানা বেগম ইভানার কাছে এসে তার মাথায় হাত দিয়ে বলে,
‘আমায় ক্ষমা কইরা দিও মা। তোমার সাথে না বুঝেই অনেক খা’রাপ ব্যবহার কইরা ফেলছি।’
‘আপনি তো আমার গুরুজন। আমার আম্মু আমাকে বলেছিল শাশুড়ীকে মায়ের মতো দেখতে। মা হিসেবে আপনি তো আমাকে শাসন করতেই পারেন। এই জন্য ক্ষমা চাওয়ার দরকার নেই।’
ফারজানা বেগমের চোখে জল চলে আসে। এত ভালো একটি মেয়ের সাথে খা’রাপ ব্যবহার করেছেন ভেবে তিনি ভীষণ অনুশোচনায় ভুগছেন৷ এর থেকে বড় শাস্তি কি আর হতে পারে!
৩৭.
ক্যাবে করে ইভানাকে কলেজের সামনে নামিয়ে দেয় ফাহিম। অতঃপর তার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘ভালো করে পড়াশোনা করবে। এখন থেকে তোমাকে নিজেকে প্রমাণ করার লড়াই শুরু।’
ইভানা মৃদু হাসি দিয়ে বলে,
‘আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব।’
ফাহিম বিদায় নেয়। ইভানা নিজের ক্লাসে গিয়ে রওনা দেয়। এখানে সবাই তার অচেনা। কোন পরিচিত কেউ নেই। তাই সে অনেক একা ফিল করছে। স্কুলের দিনগুলো মনে পড়লো তার। সেইসময় আনহাসহ কিছু ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিল তার৷ যাদেরকে নিয়ে কত আনন্দে ছিল সে। এসব ভাবতে ভাবতেই একটি ব্রেঞ্চে ব্যাগ রেখে দিল সে।
কিছুক্ষণ পর একটি মেয়ে এসে ইভানার ব্রেঞ্চের সামনে দাড়ালো। মেয়েটি ইভানাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
‘এই মেয়ে তুমি এখানে বসেছ কেন? এটা আমার যায়গা। আমি প্রতিদিন এখানে বসি।’
ইভানা ব্রেঞ্চের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘কই এখানে তো তোমার নাম লেখা নেই।’
‘ভালোয় ভালোয় বলছি এখান থেকে উঠে যা। নাহলে,,,’
‘নাহলে কি করবে তুমি?’
মেয়েটা ইভানার ব্যাগ হাতে নিয়ে ছু’ড়ে মা’রল দূরে। ইভানা উঠে রেগে গিয়ে বললো,
‘এটা কি করলে তুমি?’
‘যা করেছি বেশ করেছি। যারা আমার যায়গা কেড়ে নিতে চায় তাদের আমি এই হালই করি।’
ইভানা মেয়েটিকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ক্লাসে স্যার প্রবেশ করল। ইভানা আর তর্ক করলো না। নিজের ব্যাগ তুলে নিয়ে পেছনের ব্রেঞ্চে গিয়ে বসল।
পেছনের ব্রেঞ্চে একটি মেয়ে বসেছিল। মেয়েটি বড্ড মিশুক। তাই ইভানাকে দেখামাত্রই বলে ওঠে,
‘হ্যালো, আমি মেঘলা। তুমি কি এখানে নতুন?’
‘জ্বি।’
‘তোমার নাম কি?’
‘আমার নাম ইভানা ইসলাম।’
‘ওহ। ঐ যে মেয়েটা যে তোমার সাথে খা’রাপ ব্যবহার করল ওর নাম বেলা। ওর কথায় কিছু মনে করো না। নাম্বার ওয়ান একটা ফা’লতু মেয়ে। আমি আর ও আগে একই স্কুলে পড়তাম। তখন থেকেই দেখছি ওকে। ও পড়াশোনায় একটু ভালো জন্য খুব অহ’ংকার দেখায়।’
ইভানা বেলা নামের মেয়েটির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,
‘এমন মেয়েকে কিভাবে শা’য়েস্তা করতে হয় সেটা আমারো জানা আছে।’
কলেজ শে’ষে বের হয়ে আসার সময় ইভানা বেলার সামনে গিয়ে দাড়ায়। মেঘলাও ছিল তার সাথে। ইভানা বেলাকে থ্রে’ট দিয়ে বলে,
‘তুমি চেনো না আমি কে। আমার বর এই শহরের একজন বিখ্যাত মাফি’য়া। যদি আর কখনো আমার পেছনে লাগো তাহলে তোমার সাথে কি হতে পারে ভেবে দেখো। আমি কিন্তু বাড়িতে হাঙ্গর পুষি। সেই হাঙ্গর অনেক দিন থেকেই মানুষের মাংসের স্বাদ পায়না,,,আশা করি আর কিছু তোমাকে বোঝাতে হবে না।’
বেলা ভয়ে ঘামতে থাকে। বেলার ভয়ার্ত মুখ দেখে ইভানার খুব হাসি পায়। অনেক কষ্টে সে হাসি আটকে রাখে।
অতঃপর মেঘলাকে সাথে নিয়ে ইভানা চলে আসে। মেঘলা জিজ্ঞেস করে,
‘সত্যি কি তোমার স্বামী মাফিয়া?’
‘আরে না। উনি তো একজন হবু ইঞ্জিনিয়ার। আমি তো শুধু ঐ বেলাকে টাইট দেওয়ার জন্য বলেছিলাম।’
‘ইউ আর সো স্মার্ট।’
‘সেটা তো আমি অবশ্যই।’
এভাবেই হাসি ঠাট্টা চলতে চলতে তারা গেইটে পৌছে যায়। ফাহিম ইভানাকে কলেজের গেইট থেকে পিক করে নিয়ে যায়।
৩৮.
ফাহিম বুয়েটের হোস্টেলে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তার যাওয়ার কথা শুনে ইভানা খুব কষ্ট পেয়েছে। নীরবে চোখের জল বিসর্জন করছে সে।
ফাহিম নিজের ব্যাগ গুছিয়ে ইভানার কাছে আসে। সযত্নে তার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলে,
‘প্লিজ এভাবে কেদোনা। তুমি কাদলে আমারও কষ্ট হয়। দেখো মাত্র তো একটা মাসেরই ব্যাপার। এক মাস পর আমি আবার ফিরে আসবো।’
‘কিন্তু এই একমাস আমি আপনাকে ছেড়ে থাকবো কিভাবে?’
‘দেখবে এক মাস দেখতে দেখতে কে’টে যাবে। তুমি কিন্তু একদম পড়াশোনায় ফাকিবাজি করবে না। মনযোগ দিয়ে পড়বে। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আম্মুকে বলবে আর নাহলে আমাকে ফোন করবে। সর্বোপরি নিজের খেয়াল রাখবে।’
‘আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন।’
ফাহিম বিদায় নেওয়ার আগে একটি অবাক কাণ্ড করে ফেলে। আবেগপ্রবণ হয়ে জড়িয়ে ধরে ইভানাকে। এই মুহুর্তে তার চোখ দিয়েও এক বিন্দু অশ্রু নিঃসৃত হয়।
✨
ফারহানের সাথে তার গাড়িতে করে হোস্টেলের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয় ফাহিম। সে একাই আসতে চেয়েছিল কিন্তু ফারহানের জোরাজুরিতে বাধ্য হয়ে তার সাথেই আসে। সারা রাস্তায় দুই ভাইয়ের মধ্যে কোন কথা হয় না।
গন্তব্যে পৌছে গাড়ি থেকে নেমে ফাহিম আচমকা ফারহানকে জড়িয়ে ধরে। অতঃপর আবেগমিশ্রিত গলায় বলে,
‘তোকে একটা রিকোয়েস্ট করব ভাইয়া। আমার অবর্তমানে প্লিজ ইভানার সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করবি না। ও আমাকে ছাড়া এমনিই অনেক অসহায় থাকবে।’
‘তুই কোন চিন্তা করিস না ভাই। আমি বুঝতে পেরেছি তুই ইভানাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছিস। তোর স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করার কথা আমি আর ভাববো না।’
‘তোর থেকে এটাই আশা ছিল। লাভ ইউ ব্রো।’
‘লাভ ইউ টু মাই ডিয়ার ছোট ভাই।’
অতঃপর দুই ভাই হেসে ওঠে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨