#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩০
সকালের তীব্র রোদে দাঁড়িয়ে গরমে ঘেমে ঘেমে চা পান করছে সৌমিত্র। সেই চায়ের দোকানের ছাউনির নিচে দাঁড়িয়েও যেন আগুন বের হচ্ছে শরীর থেকে। যদিও তার এখানে আসার ইচ্ছে ছিল বা। তবুও ছুটে এসেছে তানিয়া নামক নারীর ডাকে। এই রোদের মধ্যে বাড়ি থেকে কেউ বের হয়? বিকেলেও তো ডাকতে পারত। এই নারী জাতি সবসময় পুরুষ জাতিকে দৌড়াদৌড়ির উপরে রাখতে পছন্দ করে। এসবই ভাবছে সৌমিত্র আর গরম চায়ে একটা করে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে। অনেক প্রতীক্ষার পর সুদূরে পাওয়া গেল কাঙ্ক্ষিত রমনীর দেখা। মনোযোগ দিয়ে চেয়ে বুঝতে পারল ঘাড়ে লম্বা ব্যাগ ঝুলিয়ে হলুদিয়া পাখির ন্যায় সেজে হাতে ছাতা ধরে এগিয়ে আসছে তানিয়া।
সৌমিত্র হাফ ছাড়ল তাকে দেখে। তানিয়া ততক্ষণে অনেকটা এগিয়ে এসেছে। একসময় সৌমিত্রকে দেখে রাস্তা পার হয়ে দোকানে ছাউনির নিকটে এসে ছাতা বন্ধ করতে করতে বলল,
“বেশি দেরি করিয়ে ফেললাম?”
সৌমিত্র নিজের হাতের ঘড়িটা দেখেই বিস্তর হেসে বলল,
“নাহ। মাত্র সাতচল্লিশ মিনিট, বাইশ সেকেন্ড।”
তানিয়া স্পষ্ট বুঝল তাকে খোঁচা দিলো সৌমিত্র। তানিয়া সরু চোখে একবার তাকিয়ে তার ব্যাগের চেইন খুলে সৌমিত্রের কালো রুমালটা বের করে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এইযে নিন আপনার জিনিস। আর আসতে হবে না। অপেক্ষাও করতে হবে না।”
“কীভাবে বুঝলেন আসতে হবে না? আসতে হতেও পারে।”
ভ্রু কুঞ্চিত হলো তানিয়ার। শুধাল,
“কেন?”
“হতেও পারে কোনো প্রয়োজন, অপ্রয়োজনে। কার জন্য কাকে অপেক্ষা করতে হতে পারে বলা যায়?”
“আপনি বেশ কথা প্যাঁচাতে পারেন।”
সৌমিত্র মৃদু হাসল। বলল,
“কথা প্যাঁচানোর কী দেখলেন? পুরুষজাতি স্ট্রেটকাট কথা বলে। মেয়েদের মতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলে না। যেগুলো আমাদের মাথার উপর দিয়ে যায়।”
নারীজাতিকে অপমান করায় তানিয়ার কপালে ভাঁজ পড়ল এবার। শুকনো গলায় বলল,
“কী এমন প্যাঁচানো কথা দেখলেন নারীদের?”
“অনেককিছু। তারা প্রেমে পড়লেও ঘুরিয়ে বলে সে প্রেমে পড়েছে। যেসব আমাদের পুরুষদের সরল মস্তিষ্কে ঢোকে না। তারা রাগ করলেও পেঁচিয়ে কথা বলে। সেটাও আমরা বুঝিনা। আবার খুশি থাকলেও বুঝতে দেয় না। মুখে হ্যাঁ বললে মনে না বলে আর মনে না বললে মুখে হ্যাঁ বলে। এগুলো পেঁচানো কথা নয়ত কী?”
এসব কথা শুনে কিছুটা তেতে উঠল তানিয়া।
“আপনার দেখছি খুব অভিজ্ঞতা আছে।”
“এসব অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। নয়ত বিয়ের পর প্রতিদিন স্ত্রীর কথাগুলো মাথার উপর দিয়ে যাবে আর কথায় কথায় গুষ্টি উদ্ধার করবে।”
এক মুহূর্ত আগেই জ্বলে ওঠা তানিয়ার মাথা এক মুহূর্তেই ঠাণ্ডা হয়ে গেল। ফিক করে হেসে ফেলল সৌমিত্রের কথায়। সৌমিত্রও বিপরীতে হাসি উপহার দিয়ে জানতে চাইল,
“ভার্সিটি যাওয়া হচ্ছে বুঝি?”
তানিয়া তৎক্ষনাৎ মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো,
“ভার্সিটি যাব কেন? আমি তো পড়িনা।”
“ওহ। তাহলে বিয়ে করার পরিকল্পনা আছে? নিশ্চয় বাড়ি বসে থেকে বাসন পরিষ্কার করা, কাপড় ধুয়ে দেওয়া, রান্নাবান্না শিখছেন?”
ফের জ্বলে উঠল তানিয়া। ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
“মোটেও না। আমি ভার্সিটি পাশ করেছি এবারেই। পড়াশোনা শেষ করে হাওয়া খাচ্ছি।”
মুহূর্তেই গোলগোল আঁখিদুটি বড়ো বড়ো হলো সৌমিত্রের। কিছুটা বিস্ময় নিয়ে প্রতিত্তোর করল,
“দেখে পিচ্চি মেয়ে মনে করেছিলাম। মেয়েরা আসলেই বয়স লুকায়। উল্টে তো আমিই পিচ্চি হয়ে গেলাম।”
“আপনি বুঝি ভার্সিটিতে পড়েন এখনো?”
সৌমিত্র মাথায় হাত রেখে চুলকাতে চুলকাতে ইতস্ততবোধ করে বলল,
“না মানে পড়লে পাশ করে যেতাম বিশ্বাস করুন। সিজিপিএ ধরে রাখতে পারিনি। আর একটা বছর যদি ধরে রাখতে না পারি বের করে দেবে ভার্সিটি থেকে।”
তানিয়ার দুঃখ প্রকাশ করা উচিত কিনা সে বুঝল না। তবে হাসি পেল ভীষণ। হাসি চাপিয়ে রেখে বলল,
“সারাদিন মেয়েদের নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে থাকলে পড়ার সময় কী করে পাবেন বলুন মি. জুনিয়র?”
মি. জুনিয়র নামটি শুনে যেন মাথা ঘুরে গেল সৌমিত্রের। কিছুটা শুকনো গলায় বলে উঠল,
“অপমান করছেন জুনিয়র বলে? আমি কিন্তু আমার থেকে বয়সে বড়োই হবো।”
“তাতে কী? ক্লাসে তো জুনিয়রই!”
বলেই শব্দ করে হেসে দিলো তানিয়া। সৌমিত্র এবার প্রতিত্তোরে কিছু বলল না। বলতে ইচ্ছে করল না। মাঝে মাঝে সামান্য অপমানিত হয়েও যদি কোনো নারীর মুখে এই সুন্দর হাসি ফোটানো যায় তবে খারাপ লাগবে না। হাসি শেষে তানিয়া বলল,
“তাহলে আমি যাই।”
“কোথায় যাচ্ছেন এই রোদের মধ্যে?”
“একজনের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি আসলে।”
কথাটা সামান্য ইতস্তত বোধ করেই বলল তানিয়া। সৌমিত্র সম্মতি জানিয়ে বলে,
“ওহ হ্যাঁ। তাহলে ঠিকই ধরেছিলাম মিস সিনিয়র গোলাপির বয়ফ্রেন্ড আছে।”
তানিয়া কিছু না বলে ঠোঁট প্রসারিত করে মুখ ফিরিয়ে নিলো। সৌমিত্র বলল,
“এই গরমে হেঁটে গেলে মেকআপ উঠে যাবে। বয়ফ্রেন্ড ভয়ে পালানোর সম্ভবনা আছে। আপনি চাইলে আমি লিফট দিতে পারি।”
“না, ধন্যবাদ। আমি রিকশা নিয়ে নেব সামনের মোড়ে।”
তানিয়া আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেল ছাতা মেলে। আজ তার আর ভয় লাগেনি সৌমিত্রের সাথে কথা বলতে। আসলে লোকটি ভয় পাওয়ার মতো মানুষ নয়।
পাতে খাবার নিয়ে শুধু সেটা হাত দিয়ে নেড়ে এলোমেলো করছে মোহ। তবে খাবার মুখে নেওয়ার কোনো নাম নেই। একবারের চোরের ন্যায় দৃষ্টি নিয়ে দাদীজানের দিকে তাকাচ্ছে। রাবেয়া বেগম মনোযোগ দিয়ে খাবার গ্রহণ করছেন। অতঃপর তিনি আনমনা মোহকে লক্ষ্য করেন।
“কী হইছে? খাইতাছস না ক্যান? এই বয়সে বুড়ি বেডিগো মতো কী এত চিন্তা করোস?”
মোহ হকচকিয়ে তাকায়। ইথান আজ নিজ হাতে ভাত খাচ্ছে। মোহের চিন্তা, স্বচ্ছকে সে গত রাত থেকে না খাইয়ে রেখেছে। সকালেও কিছু খেতে না দিলে বিষয়টা লজ্জার হয়ে যাবে তার কাছে। তবে সে কোনো বাহানাও পাচ্ছে না ঘরে যাওয়ার জন্য। অতঃপর মোহ উসখুস করে বলল,
“এত গরমে খাওয়া যাচ্ছে না দাদীজান। ঘরে ফ্যানের নিচে বসে থেকে খাই?”
রাবেয়া বেগম কপাল কুঁচকালেন। খুব একটা গরম কোথায়? ঝড়ের পর আশপাশ পরিবেশ বেশ ঠাণ্ডা। তিনি কিছু বলার আগে ইথান ফট করে বলল,
“তাহলে আমিও তোমার সাথে ঘরে খাব মাম্মা!”
মোহ হতাশা নিয়ে চাইল ইথানের দিকে। মাত্র একটা বুদ্ধি পেয়েছিল তাও ইথান নিজের অজান্তে ভেস্তে দিয়ে যাচ্ছে। মোহ হাসার চেষ্টা করে বলল,
“না বাবু। এখন এখানেই খাও। তুমি তো খেতে খেতে ভাত ফেলে দাও নিচে। বিছানায় ভাত পড়লে ঘুমাবে কী করে বলো সেখানে?”
ইথান যেন বুঝল। মাথা নাড়িয়ে বলল,
“আচ্ছা। এখানেই খাব।”
মোহ এবার দাদীজানের উত্তরের আশা না করে দ্রুত পাতিল থেকে আরো ভাত তুলে নিলো। আর বলল,
“এতটুকু ভাত দিয়েছ কেন দাদীজান? তোমার নাতনির পেট ভরবে? আর একটু ডিম ভেজে নিয়ে যাচ্ছি। এমনি ভর্তা দিয়ে খেতে ভালো লাগছে না।”
এই বলে তড়িঘড়ি করে চুলোর দিকে গেল মোহ। রাবেয়া বেগম ভাত খাওয়া ছেড়ে নাতনির কাণ্ড দেখে স্তব্ধ হয়ে রইলেন। মোহ কোনোকালেই এতগুলো ভাত খেত না। এবার থালভর্তি ভাত নিয়ে যাওয়া দেখে মাথা ভনভন করতে লাগল উনার।
খিদেতে যখন স্বচ্ছের নাজেহাল অবস্থা তখনই ঘরে এসে তার সামনে রাখল মোহ। বিরস মুখে বলল,
“কাল রাত থেকে খেয়ে থাকতে হয়েছে তার জন্য সরি।”
স্বচ্ছ তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ মোহের শুকনো মুখের পানে। তপ্ত শ্বাস ফেলে খাবারের দিকে চেয়ে বলল,
“মানুষ যখন সরি বলে মুখে একটা অনুতপ্ত ভাবটা থাকতে হয়।”
“আমার মুখে অনুতপ্ত ভাব নেই কারণ আমি এখানে আপনাকে ডাকিনি। আপনি আমার বাড়ির অযাচিত অতিথি। খাবার খেয়ে একটা জ্বরের ট্যাবলেট খান। আশা করি ঠিক হয়ে যাবেন। আমি আপনার ভাইকে কল করে দেব। নম্বর দিয়েন দয়া করে। সে এসে নিয়ে যাবে।”
“তাড়িয়ে দিচ্ছো?”
“কেন দেওয়া উচিত নয়? কেন এসেছেন আপনি এখানে? উত্তর আছে আপনার কাছে?”
মোহের কড়া কণ্ঠ এবার স্বচ্ছকে বিব্রত করে তুলল। গলা খাঁকারি দিয়ে বলতে লাগল,
“বললাম তো আমি একটা আত্মীয়…”
মোহ তৎক্ষনাৎ স্বচ্ছের কথার মাঝে নিজে বলল,
“শাক দিয়ে মাছ ঢাকার দরকার নেই। আমি এতটা বোকা নই। কাল থেকে সন্দেহ হয়েছিল আমার। আজকে শান্ত সব ক্লিয়ার করে দিয়ে গেছে। আপনি এখানে আমার খোঁজে এসেছেন। ঠিক নাকি ভুল?”
স্বচ্ছ হাতেনাতে ধরা পড়ে মুখটা ছোটো হয়ে গেল। চুপসে গেল চেহারা। চোখ দুটো ছুটে বেড়াচ্ছে তার ধরা পড়ার ভয়ে। মোহ বুঝে নিলো স্বচ্ছের মৌনতা। বলল,
“কেন এসেছেন এখানে? কী চান আপনি? একটা সাধারণ মিডল ক্লাস পরিবারের সাধারণ একটা শিক্ষকের মেয়ের জন্য আপনি নিজেকে ক্ষ/ত বি/ক্ষত করে ছুটে এসেছেন। কেন আপনার এই অস্থিরতা?”
স্বচ্ছ এবার হাজারও দ্বিধা সরিয়ে মোহের চোখে চোখ রাখে। ধীর গলায় বলে,
“পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল পথ হারিয়ে ফেলেছি। তাই তোমার কাছে এলাম। নিজের পথ চিনতে, নিজেকে গুছিয়ে নিতে।”
মোহ স্বচ্ছের এমন উত্তর আশা করেনি। গলা শুঁকিয়ে গেল তার স্বচ্ছের উত্তরে। পরপর ঢক গিলে দৃষ্টি নামিয়ে নিলো সে। মস্তিষ্কে খেলে গেল সরোয়ার সাহেবের কথাগুলো। হ্যাঁ, ওই ব্যক্তির কথাগুলোই মিলছে প্রত্যক্ষভাবে। মোহ মিলতে দেবে না। তার বাবার সম্মান আর মিশতে দেবে না। এতে ঝামেলা বাড়বে, সব উলোটপালোট হয়ে যাবে। নিজেকে ধাতস্থ করে সে বলল,
“আপনার পথ ভিন্ন, আমার পথ ভিন্ন। দুটো পথকে গুলিয়ে ফেলবেন না।”
“যদি কখনো দুটো পথের শেষে একে অপরের সাথে মিলে যায় তবে?”
মোহের কণ্ঠস্বর কাঁপছে। সেটা সে উপলব্ধি করতে পারছে। তবুও বলল,
“এটা অসম্ভব। হতে পারেনা। কখনো হবে না।”
স্বচ্ছ আর প্রশ্ন করল না। নিজের অহংবোধকে সে খোয়াবে না। বজায় রাখবে। বরং তার রাগ হলো নিজের প্রতি। কেন এত কথাগুলো বলতে গেল সে? তার রগে রগে জানান দিলো ক্রোধ। হালকা কেঁপে উঠে ডান হাতে আস্তে করে খাবার থালা টেনে নিলো সে। গরম ভাতের ধোঁয়া ক্রমশ কম হয়ে আসছে। সামনে ডিম ভাঁজি। বাকি দুটো জিনিস স্বচ্ছ চেনে না। গাঢ় সবুজ রঙের কিছু একটা। আরেকটা মরিচ দিয়ে কিছু। স্বচ্ছের মুখভঙ্গি অদ্ভুত হয় এসব দেখে। গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে,
“এসব কী খাবার? কী বলে এগুলোকে?”
মোহের ভ্রু কুঁচকায়। শুধায়,
“কখনো খাননি?”
“মা বোধহয় দুয়েকবার ছোটো বেলায় জোর করে খাওয়াত। নাম মনে পড়ছে না।”
মোহ দুটো জিনিস ইশারায় দেখিয়ে বলে,
“ওটা কচু ভর্তা আরেকটা মরিচ ভর্তা৷ বাড়িতে এর চেয়ে ভালো খাবার হয় না। আপনি বোধহয় বাহিরের খাবারে বেশি অভ্যস্ত। তবে এগুলো খাবার অনেক স্বাস্থ্যকর। আজেবাজে জিনিস না খেয়ে মানসম্মত খাবার খাবেন। শরীর ভালো থাকবে।”
স্বচ্ছ চুপচাপ একটু করে ভর্তা দিয়ে ভাত মাখিয়ে খেয়ে দেখল। না খারাপও লাগছে না। ভালোই লাগছে। আস্তে আস্তে সমস্ত ভাত খেয়ে নিলো স্বচ্ছ। মোহ স্বস্তি নিয়ে বলল,
“ভালো লেগেছে আপনার?”
“হুমম। তখন ছোটোবেলায় টেস্ট বুঝতাম না এত। ভালো লেগেছে।”
মোহ মৃদু হাসল। থালা হাতে নিতে নিতে বলল,
“আশা করব, এরপর আমার জন্য এত অস্থির হবেন না। আপনার বাবা আমার বাড়ি বয়ে এসে আমার বাবার উপর শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গেছে। উনার ধারণা আমি আপনাকে ফাঁসাচ্ছি। উনার ধারণা সত্যি করে দেবেন না প্লিজ! আমার বাবার সম্মান আমার কাছে অনেক বেশি দামী।”
হুট করে বাবার বিরুদ্ধে এতগুলো কথা শুনে মাথার সবকিছু যেন উলোটপালোট হয়ে গেল স্বচ্ছের। আঁখি দুটো ছোটো হয়ে গেল। তার ধরণী কেঁপে উঠল। বিশ্বাস হলো না মোহের কথা।
“কী বলছ তুমি? বাবা এসব বলেছে? ভুল হচ্ছে না তো তোমার?”
“আপনার বাবাকে চিনতে আপনার ভুল হতে পারে। আমি উনাকে এতদিনে শিরায় শিরায় চিনেছি। বিন্দুমাত্র ভুল হবে না আমার। আমি জানি উনি আপনার বাবা তাই আমার চেয়ে বেশি হয়ত আপনার উনাকেই বিশ্বাস হবে। তাই বলিনি উনার কথা। কিন্তু না বলে পারলামও না।”
মাথা ভনভন করে উঠল স্বচ্ছের। মোহ দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বচ্ছের ফ্যাকাসে মুখটা দেখে দরজা খুলে চলে গেল। স্বচ্ছ মানতে চাইল না। তার বাবা যে সেদিন প্রমিস করেছিল এসব আর করবেন না! তবুও কেন প্রমিস ভাঙল?
চেয়ারে বসে থেকে তার হ্যান্ডেলে নিজের হাতের আঙ্গুলগুলি বারবার নাড়াচ্ছে সরোয়ার সাহেব। চোখ বন্ধ করে চেয়ারে ঠেস দিয়ে বসে আছেন তিনি। একসময় তার গাম্ভীর্যের কারণে যেন কেঁপে উঠল দেয়াল।
“মেয়েটা শুধু আমার রাজনীতিতে থাবা মা;রতে চাইছে না ইয়াকীন! মেয়েটার আমার ছেলের দিকেও হাত বাড়িয়েছে।”
কালো কুচকুচে ঘন দাড়িওয়ালা লোকটি মনোযোগের সহিত শুনল সরোয়ার সাহেবের কথা। কোঁকড়ানো চুলগুলো তার মাঝে কাটা ভ্রু ঢেকে দিয়েছে। গাঢ় শ্যামলা কপালে জমেছে ঘাম। সে জানতে চাইল,
“আপনি কী চাইছেন সাহেব?”
“তেমন কিছু না। তোমার যেটা কাজ সেটাই করবে। আশা করছি আমাকে একটা একটা করে শব্দ দিয়ে তোমায় বুঝিয়ে বলতে হবে না?”
“না সাহেব। আমি বুঝতে পেরেছি।”
সোজা হয়ে বসলেন এবার সরোয়ার সাহেব। চোখমুখ কুঁচকে পাশের টেবিল থেকে সিগারেট হাতে নিয়ে লাইটার দিয়ে ধরিয়ে মুখে নিয়ে বললেন,
“ভোটের আগে কোনো ঝামেলা চাইনা আমি। আর ওই মেয়ের মতো পথের কাঁটাকে তো একদমই না।”
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। আমার টেস্ট এক্সাম শুরু হয়েছে। এতদিন দেরিতে গল্প দিয়ে যাওয়ার এটাই কারণ। সাইন্সের সাবজেক্টগুলোর চাপে অনেকটা ব্যস্ত হয়ে আছি আমি। এইচএসসি পরীক্ষার্থী ২০২৩ আমি। দোয়া করবেন সবাই আমার জন্য।
অনেকের অভিযোগ রয়েছে গল্প নিয়ে। তা হলো, গল্পের এতগুলো পর্ব হয়েও কেন স্বচ্ছ আর মোহের প্রেম টেম হলো না? কেন ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে না। কেন কেউ ভালোবাসার কথা স্বীকার করছে না। আসলে এটা দুটো চাপা মানুষের প্রেম কাহিনী। তারা কথা চেপে রাখে। একমাত্র ইন্ট্রোভার্ট মানুষজন এসব ভালো বুঝবে। আর বারবার ভালোবাসি ভালোবাসি বলাটা আমার ভালো লাগে না। আমি চাই ওদের কর্মে ভালোবাসা ফুটিয়ে তুলতে। তাছাড়া পারিপার্শ্বিক চরিত্রের ঘটনাও আমাকে দেখাতে হয়। তাদের জন্যও লিখতে হয়। এরপরও যাদের এই কারণে ভালো লাগবে না তাদের অনুরোধ করব জোর করে না পড়তে।]