একটা_বসন্ত_বিকেলে #অরনিশা_সাথী |২০|

0
285

#একটা_বসন্ত_বিকেলে
#অরনিশা_সাথী

|২০|

জ্ঞান ফিরতে আয়াত ওকে নিজের ঘরে আবিষ্কার করলো। হাত নাড়ানোর চেষ্টা করলে হাতে টান বাজে। তাকিয়ে দেখলো হাতে ক্যানোলা লাগানো। স্যালাইন চলছে। ইরা কাছে এসে বললো,
–“হাত নড়াচড়া করিস না আয়ু, পাইপে রক্ত এসে পড়বে। চুপচাপ শুয়ে থাক।”

আয়াত বাধ্য মেয়ের মতো শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করতেই দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। ইরা আয়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। এমন সময় ঘরে প্রবেশ করলো শান৷ হাতে ফোন, শ্রাবণ ভিডিও কলে আছে বোধহয়। ইরা বললো,
–“স্যালাইন শেষ হওয়ার পর ভাইয়ার সাথে কথা বললে হতো না?”

ইরার কথা শুনে ওপাশ থেকে শ্রাবণ বললো,
–“আচ্ছা সমস্যা নেই, আমি পড়ে ফোন করে নিবো। আমার আর্জেন্ট একটা কাজ আছে সেরেই কলব্যাক করছি। তোমরা আয়ুর খেয়াল রেখো।”

অতঃপর শ্রাবণ নিজেই লাইন কেটে দিলো। ইরা আর শান লেগে পড়লো আয়াতের মন ভালো করার তাগিদে।

পরদিন সকাল বেলা আয়াতের কথাতেই ফারাবীর কবর দেখাতে নিয়ে গেলো শান আর ইরা। আয়াশ আজ আসতে পারেনি, সকাল সকালই অফিসে চলে গেছে। আয়াত দূর থেকে ফারাবীর কবর দেখে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো৷ কান্নারত অবস্থায় বললো,
–“ও এভাবে কেন চলে গেলো ইরু? এত আক্ষেপ এত যন্ত্রণা মানুষটা সঙ্গে করেই নিয়ে গেলো। বেঁচে থাকতে একটু খানি সুখ পেলো না। সৃষ্টিকর্তা আমার মতোই ওর জীবনটাও সাজিয়ে গুছিয়ে দিলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো? মানুষটাকে আমি এভাবে একদমই দেখতেই চাইনি। আমি ওর একটা সুন্দর জীবন দেখতে চেয়েছিলাম, সুখের একটা সংসার দেখতে চেয়েছিলাম।”

–“কাঁদিস না আয়ু, মানুষ সারাজীবন থাকে না তো। সবাইকে একদিন যেতে হবে। তোকে আমাকে সবাইকে___”

শান আয়াতের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
–“আয়ু ভাবী, এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না। তোমার এখন নিজের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিজের অযত্ন করা যাবে না৷ আর তুমি যদি এরকম করো তাহলে আমার ভাইয়াটা কষ্ট পাবে না বলো? প্লিজ এরকম করো না। তাছাড়া নিজের কথাটাও ভাবতে হবে। তুমি এখন একা___”

শানকে পুরা কথা বলতে না দিয়েই আয়াত বললো,
–“ট্রাস্ট মি শান, আমি একদম কান্না করতে চাইছি না, শক্ত রাখতে চাচ্ছি নিজেকে। কিন্তু কোনোমতেই সেটা করে উঠতে পারছি না।”

–“আয়ু?”

শ্রাবণের কন্ঠস্বর পেয়ে আয়াত পেছন ফিরে তাকালো। তাকাতেই শ্রাবণের দেখা পেলো। একদম ফর্মাল লুকে আছে৷ গাড়ি নিয়ে এসেছে। দেখে মনে হচ্ছে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানেই এসেছে ও। শ্রাবণকে দেখতে পেয়ে আয়াত দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো ওকে। শ্রাবণ বুকে আগলে নিলো আয়াতকে। আয়াত শ্রাবণের বুকে মাথা রেখে শ্রাবণের কোর্ট খামচে ধরে বললো,
–“ফা্ ফারাবী__”

–“আমি জানি আয়ু, এভাবে কান্নাকাটি করো না প্লিজ। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন কান্নাকাটি করে তো আর সেসব পালটে ফেলা যাবে না।”

আয়াত কিছু না বলে শ্রাবণকে জাপ্টে ধরে ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। শ্রাবণ আয়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। শ্রাবণ আয়াতের দু গাল ধরে আয়াতের মুখ উঁচু করে বললো,
–“একদম কেঁদো না তো, ফারাবীর জন্য বরং নামায পড়ে আল্লাহ’র দরবারে দোয়া করো, এই চোখের পানির বদলে সেটা বেশি কাজে লাগবে।”

আয়াত কিছু বললো না। শ্রাবণ শান আর ইরাইএ ইশারায় গাড়িতে গিয়ে বসতে বললো। শ্রাবণ আয়াতকে বুঝিয়ে শুনিয়ে এনে গাড়িতে বসালো। আয়াত বারবার কবরটার দিকে তাকাচ্ছিলো।

ওরা বাসায় ফিরেছে ঘন্টা খানেক হবে৷ দুপুরের খাবার খেয়ে আয়াতকে নিয়ে সবেই ঘরে এলো শ্রাবণ৷ বেশ জোর করেই খাওয়াতে হয়েছে ওকে। আয়াত শ্রাবণের বুকে মাথা রেখে চুপচাপ ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। শ্রাবণ বললো,
–“কি ভাবছো?”

আয়াত মলিন স্বরেই বললো,
–“কিছু না।”

আয়াতের চোখে পানি টলমল করছে। শ্রাবণ আয়াতকে আবারো বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“আর একবার কাঁদতে দেখলে কিন্তু আমি খুব রেগে যাবো আয়ু। তোমার এখন নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে নিজের যত্ন নিতে হবে। তুমি অসুস্থ হলে কিন্তু চলবে না। আমার, আমাদের অংশ আছে তোমার গর্ভে।”

আয়াত চোখ তুলে তাকালো শ্রাবণের দিকে। কথাটা বলার সময় শ্রাবণের চোখমুখে এক অন্যরকম আনন্দের ছাঁপ দেখলো আয়াত৷ কাঁপা-কাঁপা স্বরে বললো,
–“মা্ মানে?”

শ্রাবণ আয়াতের কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুইঁয়ে দিয়ে বললো,
–“ইট মিনস এ লিটেল বেবি ইজ কামিং টু আওয়ার হাউজ। উই উইল বি প্যারেন্টস।”

শ্রাবণের মুখে কথা শুনে আয়াতের অজান্তেই একটা হাত ওর পেটে চলে গেলো। আয়াতের দু মাস ধরে পিরিয়ড অফ যাচ্ছিলো, ও ভেবেছিলো প্রেগ্ন্যাসি কীট এনে টেস্ট করবে। সেই অনুযায়ী কীটও এনেছিলো। কিন্তু টেস্ট করা হয়নি। ভেবেছিলো আজ সকালেই টেস্ট করে দেখবে কিন্তু তার উপর ফারাবীর মৃত্যুর খবর শুনে কাল দুপুরেই চলে এসেছে এখানে। অশ্রুসিক্ত নয়নে আয়াত তাকালো শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ বললো,
–“কাল অনেকটা সময় যাওয়ার পরেও যখন তোমার জ্ঞান ফিরছিলো না তখন ওরা ডক্টর ডাকে। আর উনিই তোমাকে চেকাপ করে বলেন এই কথা। তোমার শরীর অনেক দূর্বল বউ যার কারণে স্যালাইন দেওয়া হয়। এবার অন্তত নিজের খেয়ালটা রাখো? এসময়ে শরীর দূর্বল থাকলে চলবে না, বেশি বেশি খেয়ে শরীর ফিট রাখতে হবে।”

–“স্ সত্যিই আমাদের বে্ বেবি আসবে?”

শ্রাবণ সম্মতি জানাতেই আয়াত শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরলো। কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। আয়াতের মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবথেকে খুশির খবরটা পেয়েছে ও। কিন্তু এই মুহূর্তে এরকম একটা খুশির খবরে কতয়া খুশি হতে পারলো সেটা আয়াতের মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই। চুপচাপ শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো।

আয়াত ওরা ঢাকায় ব্যাক করেছে সপ্তাহ খানেক হলো। আয়াত এখন অনেকটাই নিজেকে সামলে নিয়েছে। বাস্তবতা মেনে নিয়েছে। মেহরাব ম্যানশনে খুশির জোয়ার এসেছে আয়াত প্রেগন্যান্ট এটা জানার পর থেকে। বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ ভীষণ খুশি। সানিয়া মেহরাব, শান, শ্রাবণ তিনজনেই আয়াতের প্রতি বেশ যত্নশীল হয়েছে। আয়াতের তো মাঝে মধ্যে কপাল চাপড়ানোর অবস্থা হয় এই তিনজনের কান্ড কারখানা দেখলে।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আয়াত ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে চকলেট খাচ্ছে৷ সানিয়া মেহরাব এক প্লেট ফ্রুটস এনে আয়াতের সামনে দিয়ে বললো,
–“ফিনিশ দ্যা ফ্রুটস।”

আয়াত কাঁদো কাঁদো চোখে তাকালো। ওর এসব ফলমূলের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। এসব খেতে ভালোও লাগে না ওর। আয়াত বললো,
–“না খেলে হয় না? আমার ফ্রুটস একদম ভালো লাগে না মা।”

–“কোনো কথা হবে না। এসময়ে বেশি বেশি খেতে হয়।”

–“খাচ্ছি তো বেশি বেশি। আপনারা তিন মা ছেলে মিলে তো আমাকে দিন রাত খাইয়ে খাইয়ে ফুলিয়ে ফেলছেন একদম। এত অত্যাচার মানা যায় না মা।”

–“এসময়ে পর্যাপ্ত খাবার না খেলে শরীর দূর্বল হয়ে পড়বে, শরীরে রক্ত থাকবে না, বাচ্চা পুষ্টি পাবে না, বোঝার চেষ্টা কর আয়ু।”

আয়াত নাক মুখ সিটকে অন্যদিকে তাকালো। শান আয়াতের অন্যপাশে বসে বললো,
–“আয়ু ভাবী তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করো, নয়তো ভাইয়াকে ফোন দিচ্ছি আমি।”

আয়াত চোখমুখ কুঁচকে বললো,
–“একজনকে নিয়ে পারছি না আবার আরেকজন এসে জুড়ে বসলো। ভালো লাগছে না আমার খেতে।”

–“তাহলে চকলেটস কিভাবে খাচ্ছো আয়ু ভাবী?”

–“ইট’স মাই ফেভারিট শান।”

–“আরো অনেক চকলেটস এনে দিবো। এবার ফ্রুটস খাও।”

–“একটু খাবো কিন্তু।”

সানিয়া মেহরাব চোখ রাঙিয়ে বললো,
–“পুরোটা শেষ করতে হবে।”

আয়াত বাধ্য হয়েই খেতে শুরু করলো। এই মানুষগুলো এরকম কেন ভেবে পায় না ও। শ্বশুর বাড়ির লোকজন এত ভালো হয়? এদের না দেখলে আয়াত কিছুতেই বুঝতো না।

চলবে~

|ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত। মাথা ব্যথা কমছে না আমার তাই লিখতে অসুবিধে হচ্ছে। আজ দিতাম না গল্প, আপনারা অপেক্ষায় আছেন বলেই এইটুকু দেওয়া। একটু ঠিক হলেই দ্রুত এবং বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। রি-চেক করিনি, ভুলচুক ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, ধন্যবাদ|

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here