#আম্মার_সংসার
#১ম পর্ব
টুনি আপার কান্নার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। একবার বেচারি কান্না শুরু করলে ঠিক কবে নাগাদ শেষ হবে বুঝতে পারা যাবে না।
ঝড় হলে আন্দাজ করা যায়, কখন থামবে। তারাপতি টা মেঘের আড়াল থেকে বের হবে কখন তা ও ধারণা করা যাবে। টুনি আপার কান্নার গতিপথ বুঝা মুশকিল।
এরপর শুরু হবে না খেয়ে থাকার ম্যারথন দৌড়।
আব্বা গলা ঝেড়ে জানালার বাহিরে কফ ফেলে বললেন-
– শোন মা জীবনে সব কিছু নিয়া রাগ করবা খাওন নিয়ে রাগ করবা না। খাইয়া ফেলো মা। বেতন টা পেয়ে-ই তোমার জন্য সুন্দর একটা ড্রেস কিনে দিবো।
টুনি আপার কান্না থামে না।
আম্মা রান্না ঘর থেকে চেঁচিয়ে বলছেন-
– ঘরে তো ডিম নাই,ময়দা নাই। নিয়ে আসো রাত বেশি হলে দোকান-পাট বন্ধ হয়ে যাবে।
আব্বা চলে গেছেন দোকানের উদ্দেশ্যে। আম্মা গরম ভাতের উপর দুটো শুকনা মরিচ,আমের ডাল,কই মাছ ভাজি দিয়ে ভাত মাখাতে মাখাতে বললেন-
– সারাদিন খাস নাই,তোর তো পাকস্থলী শুকিয়ে যাবে।
– আম্মা,তুমি আব্বা কে বুঝিয়ে বলো ফয়সাল ভালো ছেলে।
তুমি কি তারে কখনো পথে দাঁড়িয়ে বিড়ি খাইতে দেখছো? কেউ দেখছে বলতে পারবে?
ছোট ভাই টগর টা দৌড়ে এসে বললো-
– ফয়সাল ভাই বিড়ি খায়। আমারে দিয়ে প্রায় সময় বিড়ি আনায়,তারপর হাতে দশ টাকা দিয়ে বলে। দুলাভাই ডাকলে একশো টাকা দিবে।
আম্মা চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করলেন-
– তুই কি তারে দুলাভাই ডাকছিস?
– অবশ্যই ডাকছি,একশ টাকার জন্য আমি তারে আরো অনেক কিছু ডাকতে পারি।
আম্মা টগর দুই গালে দুই চড় দিয়ে বললেন-
– একদম ব্রিটিশ হইছে, পড়তে বস গিয়ে। এই সংসারে আসার পর থেকে আমার হইছে যতো জ্বালা। নে, ভাত টা এবার মুখে নে। বিড়ি খাইলে খারাপ, না খাইলে ভালো এমন না। ফয়সালের সাথে বিয়ে দেয়া যাবে না। সে বিএ ফেইল। এই জীবনে শুনছিস কেউ বি এ ক্লাসে ফেইল করতে।
তাছাড়া তোর যেখানে বিয়ে ঠিক হয়েছে পাত্রের বিশাল অবস্থা। রাইস মিল,ধানের আড়ৎ, কামলা-টামলা নিয়ে সেই অবস্থা।
তোর আব্বার ও খুব পছন্দ হইছে।
তার মধ্যে তুই এক বার পালিয়ে গেছিস এটা পাত্র জেনে ও রাজি।
টগর আম্মার হাতে চড় খেয়ে কিছুক্ষণ এদিকে সেদিকে দেখলো। আম্মা সাধারণত টগর কে বকা দেয় না,মারে না।
তাই কিছু ক্ষনের জন্য হতবিহ্বল হয়ে পরেছে।
যাওয়ার সময় বলে গেলো-
– ফয়সাল ভাই কে দুলাভাই ডাকি নাই।
টুনি আপার মুখ টা এতক্ষণ চকচক করছিল,টগরের কথা শুনে সব শেষ।
আমি আপার কাছে গিয়ে বললাম-
-আরেক বার সাধিলে খাইতাম।
আপা আমার গালে চটাস করে একটা বসিয়ে দিল।
আপা আবার চড় মারার উস্তাদ। চড়ের উস্তাদের হাতে চড় খেয়ে খুব খারপ লাগছে। পড়ার চারকোনা কাঠের টেবিলে কাটা কম্পাস দিয়ে বৃত্ত আঁকছি।
টগর এসো এক বার বলে গেছে-
– তোমরা বরং থাকো সুখে আগুন জ্বলুক আমার বুকে।
কার সাথে ইয়ার্কি করলো বুঝতে পারছি না। একবার মনে হচ্ছে আমার সাথে আরেক বার মনে হচ্ছে টুনি আপার সাথে।
দাদি শীতল পাটিতে বসে বসে সুপারি কাটে ফাঁক ফুকোর পেলে টিপ্পনী কাটে।
টুনি আপা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে দাদির কোলে মাথা রাখলো।
দাদি টুনি আপার চুলে বিলো কাটতে কাটতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
– এই বয়সে লাংয়ের কতা মনে হইলে পরাণ ডা হু হু কইরা উঠেই, এর লাইগাই এমনে কাঁনতে লাগবো?
লাং মানে প্রেমিক আরেকটু সুন্দর করে বললে বয়ফ্রেন্ড। দাদির ভাষায় লাং।
দাদির এই ভাষার সাথে আমাদের পরিচয় আছে,তাই খারাপ লাগে না।
আমি তো ফিক করে হেসেই ফেললাম।
ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর আপার জন্য একটা দুইটা পাত্র দেখা হচ্ছে।
আপার আবার ভিষণ প্রেম জমে বসে আছে ফয়সাল ভাইয়ের সাথে।
একহারা গড়নের বিশাল লম্বা, শ্যামলা মতন দেখতে ফয়সাল ভাইয়ের ও করুন দশা।
রাস্তা ঘাটে আমার সাথে দেখা হলেই হয়।
ছোট বোন রিকশা ডেকে দেই,ছোট বোন আইসক্রিম কিনে দেই।
ছোট বোন ছাতা নিয়ে বের হইবা,কোন ছেলে ডিসটার্ব করলে আমাকে বলবা।
– কানের নিচে এমন একটা বাজামু না,এক বছর কানে শুনতে পারবে না।
আমার মাঝে মাঝে খুব বলতে ইচ্ছে করে-
আপনি ও তো টুনি আপা কে ডিসটার্ব করতে করতে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছেন।
এটা বলা যাবে না, ফয়সাল ভাইয়ের কাছে আমি প্রায়োরিটি পাই খুব।
চলবে…