আম্মার_সংসার #পর্ব২

0
184

#আম্মার_সংসার
#পর্ব২

টুনি আপা মাথায় ঘোমটা দিয়ে পড়ার টেবিলে বসে মোবাইলে পুটুর পুটুর করে কথা বলছে।
আব্বা সুরমা রংয়ের পাঞ্জাবী টা পরে আতর খুঁজছে।
আব্বা কে চমৎকার লাগে এই সুরমা রংয়ের পাঞ্জাবীতে।
বড় ভাই যখন ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেলো তখন তার টিউশনির টাকা দিয়ে আব্বা কে পাঞ্জাবী, আম্মা কে জলপাই রংয়ে সোনালী পাড়ের শাড়ি কিনে দিয়েছিল।
টুনি আপা আর আমি পেয়েছিলাম একটা করে অক্সাইডের পায়েল,টগর কে একটা ওয়ালেট ভেতরে দুইশো টাকা ছিল।

টুনি আপা কে মোবাইলের মালিক ও করেছে আমাদের বড় ভাই রঙ্গন।
তাই আপার প্রেমের জন্য রঙ্গন ভাই কে আম্মা প্রায়-ই কথা শুনায়।

আব্বার আতর টা খুঁজতে খুঁজতে আমি হয়রান। পরে, টগরের পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে পেয়েছি। তার ড্রয়ারে আরো অনেক কিছু পেয়েছি। আমার একটা হেয়ার ব্রাশ পেছনে আয়না লাগানো,মুসলিমা খালা ফ্রান্স থেকে পাঠিয়েছিলেন।
এটা গতে চার মাস ধরে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এ দেখি ঘরের শত্রু বিভিষন।
আধ খাওয়া আকিজ বিড়ি ও পেয়েছি। মনেহয় কেউ চলে এসেছিল তাই শেষ করতে পারিনি।

ছোটভাই টগর টা একদম বখে যাচ্ছে। এই খবর আম্মা-আব্বা কে এখন দেয়া যাবে না।

এমনিতেই মন-মেজাজ ভালো নেই কারো। টুনি আপা টার ও যে কি এমন প্রেম জেগেছে,তার প্রেম সামলাতে সামলাতে আমাদের অবস্থা কাহিল।
টগরের হাতের লেখার অবস্থা যাচ্ছেতাই। যে হাতে বিড়ি ধরায়, সেই হাতের লেখা দিয়ে মনিমুক্তা ঝড়ার কথা না।
মাশাআল্লাহ,হাতের লেখা সুন্দর টিয়া আপার।
সুন্দর না হয়ে উপায় কি?
মোবাইল ইন্টারনেটের যুগে সে চিঠি লিখে। আপা ছাত্রী হিসেবে খুব ভালো সমস্যা হচ্ছে একটু মিচকা বান্দর টাইপের।
এই যে এক ঘন্টা ধরে ট্যালিপাথি লেনদেন করছে মোবাইলে কেউ কিচ্ছু ঠাওর করতে পারছে না। আব্বা তো বেশ কয়েক বার আসা-যাওয়ার করলো তার পাশ দিয়ে। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারেনি।

– টায়রা এদিকে আয় তো মা।

আব্বার ডাকে দৌড়ে গেলাম। আব্বার চুল টা আঁচড়ে দিয়ে তাঁর বুকে আতর, হাতের পাতায় আতর ঘষে দিতে দিতে বললাম-

– কই যাও আব্বা?

– টুনির জন্য যে পাত্র টা দেখেছি তার মামার সাথে একটু কথা বলে আসি।

– আব্বা ফয়সাল ভাই কিন্তু ছেলে হিসেবে ভালো আছে।

– ভালো আছে জানি। ভালোর সাথে সাথে সম্পদ,সম্পর্ক ও দরকার হয়। এই ছেলে টা এতিমখানায় বড় হইছে। তার জন্য মায়া হয় আমাদের কিন্তু আমার মেয়ে কে তো তার কাছে দিতে পারি না। তাছাড়া সে নিজে কোন কাজ করে না,চাচার বাড়ি দেখা শোনা করে জীবন চালায়।

– আব্বা ফয়সাল ভাইয়ের জন্য আমার খুব কষ্ট লাগে।

– জীবন তো খেলা না।

– আব্বা ফয়সাল ভাই তো কাউকে না কাউ কে বিয়ে করবে,সংসার হবে। তুমি নিজে একবার ভেবে দেখো আব্বা।

– সে এতিমখানায় বড় হইছে,এই জায়গায় ছেলে টা দূর্বল করে রেখেছে টুনি কে।

আব্বা কিছু বলতে গিয়ে আর কথা বাড়ায়নি আমার সাথে। হয়তো চিন্তা করেছে ইন্টারমিডিয়েট পড়া একটা মেয়ের সাথে কথা বাড়ানো আর অরন্যে রোদন এক।

তবে আমি বিচলিত আব্বার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট দেখে।
ফ্রিজ থেকে চিংড়ি মাছ গুলো নামিয়ে আম্মা কে দিয়ে আসলাম।
টগর গাছ থেকে দুপুরে ডাব পেড়ে ছিল। ডাব চিংড়ি রান্না করা হবে আজ। দাদির জন্য করল্লা দিয়ে চিংড়ির ঝোল টা মুখে দিলাম। আমি করল্লা খাই না। তেঁতু কিছু মুখে তুলা ভার,এই ঝোলের ঘ্রাণে নিজেকে কন্ট্রোল করা সম্ভব হলো না।

আম্মা কে জড়িয়ে ধরে বললাম-

– আম্মা তোমার দুই হাতে দুই ভড়ি ওজনের বালা পাওনা রইলা আমার পক্ষ থেকে। ভাগ্যিস তুমি সম্রাট আকবরে আমলে জন্ম নেও নাই। আব্বার কপাল টা ভালো আছে।

– একদম পাকনামি করবি না আমার সাথে। ডাইল ঘুটনি টা কই?

আম্মার হাতে ডাল ঘুটনি টা দিয়ে এক দৌড়ে দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে আম্মার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট গোল করো উম্মা,উম্মা করে দুইটা ফ্লাইং চুমু দিয়ে দিলাম আম্মার গালে।

দাদি কাঠের পিঁড়িতে বসে আম্মার কাজ দেখছিলো এতক্ষণ।

এখন টুনি আপা কে দেখছে। দাদি ইদানীং টুনি আপাতে খুব একটা পছন্দ করে না মনে হচ্ছে।

– বউ একটা কতা জানো?

– আম্মা এই সংসারে আসার পর থেকে একটা দিন শান্তিতে ছিলাম বলতে পারেন। এখন শুরু হইছে আরেক কাহিনী। সব অশান্তি মেনে নিছি চোখ বুজে। ছেলে-মেয়েদের অশান্তি দেখার জন্য।

– কি করবা বউ,দুনিয়া ডা এমনই। কলি কালের পুলাপাইন। ঝিয়ের উঠে তন মা’য়ে পায় না মন,পুতের উঠে দাঁড়ি ঘুরে বাড়ি বাড়ি।

টুনি আপার মোবাইলো কথা বলার এ পর্ব মুটামুটি শেষ। আমি আপার কাছে গিয়ে বসতে বসতে বললাম-

– আপা শুনছো দাদি কি বলছে?

– কি বলছে?

– ঝিয়ের উঠে তন মায়ে পায় না মন,পুতের উঠে দাঁড়ি ঘুরে বাড়ি বাড়ি।
তন মানে কি আপা?

– তন মানে স্তন,বুঝতে পারছিস।

– আপা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করো দাদি তার ভাষা ব্যাবহার করে নাই।

-দাদি নিজের শব্দ ব্যাবহার করলে এই ছন্দ মিলাইতে পারতো না।

আপা আর আমি খিলখিল করে হাসতে শুরু করলাম।

– আব্বা কই গেছে রে টায়রা?

– তোমার জন্য যে জামাই টা দেখেছে তার মামার সাথে কথা বলতে গেছে। আপা ফয়সাল ভাই কে তুমি কেনো ভালোবাসো?

– জানি না। টায়রা ফয়সাল আমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না। তার আপন বলতো আমি ছাড়া আর কেউ নেই। তুই বল আমার কি করা উচিত?

– আমি জানি না আপা। আব্বা আমাকে এই কথা টা ই বলে গেছে। তুমি তার এই বিষয় সবচেয়ে বেশি দূর্বল।

চলবে…
#লেখা
#তানজীনা_আফরিন_মেরিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here