আম্মার_সংসার #পর্ব৩

0
216

#আম্মার_সংসার
#পর্ব৩

সন্ধ্যার দিকে রঙ্গন ভাই আসলো, সাথে বিশাল লম্বা মতন দেখতে একটা বন্ধু ও এসেছে। আনুমানিক ৬ফুট তো হইবে।

দাদি তো এই লম্বা ছেলে টা কে একদম পছন্দ করছে না।
আম্মা কে ডেকে বললেন-

– বউ এমনিতে-ই রাজ্যের ঝামেলা, এরমধ্যে এই লটকন টা কে নিয়ে আসছে কোন আক্কেলে। ঘরের খবর পরে জানবে এটা কেমন কতা?

– আম্মা আমি কিছু জানি না। আমাকে আর কোন বিষয়ে নালিশ করবেন না দয়া করে।

দাদি এতো পরিমাণ লটকন লটকন করছে আমার মাথার ভেতর রঙ্গন ভাইয়ার বন্ধুর নাম লটকন নামে সেইভ হয়ে গেছে।

রাতে টুনি আপা কে নিয়ে কোন কথা হয়নি। আম্মা-আব্বার মুখ দেখে মনে হচ্ছে আমরা কোন ধরনের ঝামেলার মধ্যে নেই।
অথচ টুনি আপা মোবাইলে টেলিপ্যাথি নিচ্ছি । টগর টা রান্না ঘরে গিয়ে আম্মার কানে কানে কি বললো? আম্মা তো ঝড়ের গতিতে এসে আপা কে চড় মারতে মারতে কান থেকে মোবাইল নিয়ে দুইটা আছাড় দিলো। মোবাইলের স্ক্রিন ভেঙে গেছে।

টগর টা বখে যাচ্ছে তার মাঝে পেয়েছে মেয়েলি স্বভাব। যেমন তার চুপা তেমন কূটনা বাপ রে!

টগরের কূটনামির জন্য আপা আর আম্মার মধ্যে টর্নেডো চলছে। আমি গিয়ে টগরকে বললাম –

– তোর ড্রয়ারে কি পেয়েছি আম্মা-আব্বাকে বলেছি? কূটনামি টা না করলে পেটের ভাত হজম হচ্ছিল না? কি একটা ঝামেলা তৈরি করে দিলি।

– টায়রা আপা আমি কি কূটনামি করেছি প্রমাণ দিতে হবে। তুমি আমাকে কূটনা ডাকো কোন সাহসে? আমি একজন পুরুষ।

– তোর মতো মেয়েলী আচরণের মহিলা আক্তার পুরুষের সাথে কথা বলতে চাই না।

টুনি আপা এতক্ষণ মাথা নিচু করে বসা ছিল। তার মাথায় কি ভুত চাপলো বুঝতে পারলাম না। আম্মার হাত থেকে এক খাবলায় মোবাইল নিয়ে গেলো।

আম্মা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি। টুনি আপার কাছ থেকে এতো বড় বেয়াদবি কখনোই আশা করিনি।
দাদি নাউজুবিল্লাহ নাউজুবিল্লাহ বলে এই রুম থেকে ঐ রুমে হাঁটছে।

সীমা অতিক্রম করে ফেলায় হয়তো আম্মা টুনি আপা কে কিছু বলেননি। টুনি আপার চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে সে কিংকর্তব্যবিমূঢ়।

দাদির আবার বিড়ি না খেলে পেট ফুলা কমে না। এখন বুঝতে পরেছি টগরের ড্রয়ারে আকিজ বিড়ি টা দাদির কাছ থেকে চুরি করা ছিলো।
এই ছেলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
দাদির জন্য মোড়ের দোকান থেকে এক প্যাকেট বিড়ি আনতে বের হয়েছি। এই কাজ টা আব্বা করেন। আব্বা বিড়ির প্যাকেট এনে আম্মার হাতে দেন আম্মা দিদি কে দেন।

বাড়ির এমন হিজিবিজি অবস্থার মাঝে দাদির বিড়ির কথা কার মাথায় থাকে। দাদার জন্য বিড়ি হলে অন্য রকম প্রাধান্য পেতো।

নেশা জাতীয় দ্রব্য নিয়ে ও লিঙ্গ বৈষম্য আছে।

ঐ যে হাতের বাঁ পাশে বেঁকে যাওয়া মাটির রাস্তার উপর ডালপালা মেলে দুই পাশে শিকড় উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শিমুল গাছ। এই গাছে হাতের উপর হাত রেখে হেলান দিয়ে তীর্থে কাকের মতো দাঁড়িয়ে আছে ফয়সাল ভাই।
আহারে! বেচারা কে দেখলেই মনেহয় ‘প্রেম কাঁদায়’ কালো কাপড়ে সাদা সুতা দিয়ে সুঁইয়ের ফুঁড়ে ওয়াল ম্যাট বানিয়ে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখি।

আমাকে দেখে জেনো প্রাণ ফিরে পেলো।

– ছোট বইন তোমার আপার সাথে আম্মার কি হইছে। আম্মার পা’য়ে ধরে মাফ না করা পর্যন্ত বসে থাকবো।

– ফয়সাল ভাই এই বিষয়ে আমি কি বলি বলেন তো?

দুটো আলতার বোতল বের করে বললো-

– নেও একটা তোমার আরেক টা টুনির।

– বাহঃ চমৎকার তো! আমার মেয়ে হলে এক্ষুনি টুনি আপা কে আপনার সাথে বিয়ে দিয়ে দিতাম।

– তোমার পছন্দ হইছে ছোট বইন?

– খুউউউউউব।

– তোমার পছন্দ হয়েছে শুনে মনটা ভালোলাগছে। আরেক টা জিনিস তোমার বোন কে দিতাম তোমার হাতে কি ভাবে যে দেই।

– আরে দিয়ে দেন। সংকুচের কোন কারন নেই,ফয়সাল ভাই। আপনি অসম্ভব ভালো মানুষ।

– চিঠি টা তোমার আপা কে দিও।

– আরে বাপরে! আপনিও পত্র লিখেন? আমি তো ভাবতাম জগতে একট মাত্র পাগল আছে আমাদের বাসায়।

– আরে,বইলো না আর। টুনির চাপা চাপিতে লিখতে হইছে। আর লজ্জা দিও না। জীবনের প্রথম চিঠি।

ফয়সাল ভাই তার শার্টের বুক পকেট থেকে চিঠি টা বের করতেই আমি এক রকম হাত থেকে কেড় নিয়ে দৌড়ে দৌড়ে বাসার পথে হাঁটছি। দূর থেকে শুনা গেলো-

– দেইখো আবার খুলে ফেইল না ছোট বইন।

বাসায় যাওয়ার পর আমার যে কি হলো। চিঠি টা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখি। আপা কে দিতে মনচায় না। মনেচায় চিঠি টা পড়ে ফেলি।
আমার অবাধ্য মন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না।

বাসার পেছনে ছোট্ট ডোবার মতো মজা পুকুর আছে। এই পুকুরের মাঝে সাইনবোর্ডে লেখা ক্রয় সূত্রে মালিক আলহাজ্ব রাইসুল ইসলাম চৌধুরী। পুকুরের চারপাশো আনারস গাছ,সুপারি গাছ আছে। বাতাসে পাতার শব্দ ছাড়া এখানে তেমন কোন শব্দ পাওয়া ভার।
চিঠি পড়ার সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা এটা।
আরেকটা নিরাপদ জায়গা আছে,সেখানে পড়তে ভালোলাগবে না। ওয়াশ রুমে প্রেম পত্র মজা করে পড়তে পারবো না।

অবশ্য বি এ ক্লাস ফেইল ফয়সাল ভাইয়ের প্রেম পত্র পড়ে খুব একটা মজা পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না।
আমার ভেতরের ভালো আত্মা টা বলছে পড়িস না টায়রা।
খারাপ আত্মার টা বলছে পড়,পড়,পড়।
মাঝে মধ্যে নিজের মন ভালো রাখার জন্য একটু খারাপ হওয়া দোষের কিছু না।

চিঠি তো চিঠি না জেনো পিরামিড কত রকমেে শুকনো ফুলের মমি। । একটার পর একটা কাগজ দিয়ে পিন করা। শুকনো ফুল এতো সুন্দর হয় আগে কখনো চোখে ধরা পরেনি।
অবশেষে চিঠির পালা।চিঠি ভাঁজ খুলতে-ই পেলাম এক পাতা কালো গোল গোল টিপ।

শুকনো ফুলের মমি,আর টিপের পাতা যে ছেলে চিঠির ভাঁজে দেয়ার চিন্তা করতে পারে তাকে হারানো উচিত নয়।
এই বি এ ফেইল ছেলেকে চোখ বন্ধ করে বিয়ে করে ফেলা উচিত টুনি আপার।

পেছন থেকে কে জেনো চিঠি টা টান দিয়ে নিয়ে গেলো। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম রঙ্গন ভাইয়া ভাইয়ার সেই লম্বা বন্ধু টা।
চলবে….
#তানজীনা_আফরিন_মেরিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here