#প্রেয়সীর_শব্দপ্রেম
#ফারজানা_মুমু
[৮]
যেদিক থেকে শব্দ আসলো ওরা তিনজন সেদিকে তাকালো। তিনজন স্তব্ধতারূপে চেয়ে থেকে বলল, তিন তলার ভাড়াটিয়া চার ছেলে!
আষাঢ় শব্দ করে হাসলো। বিমোহিত দৃষ্টিতে ঝুমঝুমিকে দেখে যাচ্ছে ও। ঝুমঝুমির সেদিকে অভিব্যাক্তি প্রকাশ পেল না। বরং সন্দেহ ভ্রু কুঁচকালো।
-” আপনারা এখানে?
~কান্তারের পথ ছেড়ে সন্ধ্যার আঁধারে
সে কে এক নারী এসে ডাকিল আমারে,
বলিল , তোমারে চাই :
মিরাজের কণ্ঠে কবিতা শুনে বাকি সবাই ভ্যাবাচেকা খেল। নিজাম কবিতা বলে সর্বক্ষণ। ওর কাছ থেকে এরূপ প্রশ্নে কবিতা বলা আশ্চর্যজনক কিছু নয় কিন্তু মিরাজের কাছ থেকে এরূপ আশা করা বোকামি।
কপালে ভাঁজ পড়ল তৃষ্ণার। মিরাজকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে কাটকাট কণ্ঠে বলল, আপনার বন্ধু আবোলতাবোল কবিতা বললেও নিজে বানিয়ে বলে কিন্তু আপনি তো দেখছি জীবনানন্দ দাশের কবিতা নিজের নামে মেরে দিচ্ছেন। ধুরন্ধর কপিবাজ।
মিরাজ মুখ খুলতে যাবে আষাঢ় থামিয়ে দিল। ঝুমঝুমি তখনো ঠাওর করতে পারছে না এখানে নিয়ে আসার কারণ। ঝুমঝুমির সন্দিহান মুখশ্রী দেখে নির্বিকার ভাবে বলে উঠল আষাঢ়, আমি তোমায় পছন্দ করি ঝুমঝুমি। ভালোবাসা বললে ভুল হবে না।
তিক্ততায় বিষিয়ে উঠল ঝুমঝুমির মুখশ্রী। কণ্ঠে তেজ বজায় রেখে বলল, আমরা এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাব।
দুহাত বুকে ভাঁজ করে ফিচেল হাসলো আষাঢ়। বলল, অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে এনেছি তোমাদের, সহজে যেতে দিবো ভাবলে কি করে? যাও অনেকক্ষণ জার্নি করেছ বিশ্রাম করো গিয়ে। বাম পাশের রুমটি তোমাদের। পালাতে হলে বুদ্ধি দরকার, ক্লান্ত শরীরে মাথায় বুদ্ধি আসবে না।
আষাঢ়ের কথা মনে ধরল ঝুমঝুমির। অসাড় শরীরে শত্রুদের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। সুস্থ থাকতে হবে। পায়ের গতি বাড়িয়ে বান্ধবীদের উদ্দেশ্য বলল, রুমে চল। বিশ্রাম নিয়ে ভাববো কী করা যায়।
নীরা চলে যাবার সময় আলগোছে হিরণ হাতে ছুঁয়ে দিল। শিহরিত হলো পুরো শরীর। নীরা কঠিন দৃষ্টি ফেলতে গিয়েও পারলো না। হিরণের চোখে-চোখ রাখার অবস্থায় ও নেই। মনে মনে বলল, ভালোই হয়েছে এখানে এসে। নিজের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারব। মনেমনে এটাও ঠিক করল কয়েকদিন থেকে যাবে এখানে। তৃষ্ণা-ঝুমঝুমিকে যেভাবেই হোক বুঝাবে।
______________
গোলাকার আকৃতির চাঁদ। ঝকঝকে-ফকফকা আকাশ, অজস্র নক্ষত্রের ভিড়। নারিকেল গাছের ফাঁক দিয়ে আলোকবিন্দু ছিটকে পড়ছে রুমে। লম্বা চুল ছেড়ে দিয়ে টুলের উপর জানালা বরাবর মুখ করে বসলো ঝুমঝুমি। গায়ে চাঁদের আলো উপচে পড়ছে। তৃষ্ণা মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিতে দেখছে অপরূপা সুন্দরী ঝুমঝুমিকে। সৌন্দর্য দ্বিগুণ ভাবে বেড়েছে চাঁদের আলোতে। নীরা, ঝুমঝুমির পাশে বসলো। প্রজ্বলিত নিরাভরণ কণ্ঠে বলল, চাঁদ কন্যা। আমি নিজেই বেহুস হয়ে যাচ্ছি তোকে দেখে।
ম্লান কণ্ঠে বলল , চাঁদের গায়ে কলঙ্ক আছে। চাঁদের কন্যার গায়েও কলঙ্ক। ব্যাপারটা দারুণ না?
মুহূর্তেই দুজনের মুখের হাসি মিলে গেল। চাঁদখানা মুখে ফুটলো তৃপ্তির ছোঁয়া।
-” এখন কি করবি ঝুমি? আমরা তো বন্দী এখন।
তৃষ্ণার কথা শুনে ফিচেল হাসলো ঝুমঝুমি। এতক্ষণ ধরে অনেক কিছু ভেবে চলেছে ও। আষাঢ়ের প্রেমের প্রস্তাব ওর মনে আঘাত করতে পারেনি। বসন্তের বাইশ বছরে কম প্রপোজাল তো পায়নি তাই এসবে কৌতুহল ওর নেই। আপনলোকদের যেখানে পাত্তা দিচ্ছে না সেখানে আষাঢ় তো দূর ছাই। প্রেম ভালোবাসা ওর হৃদয়ে ঢুকতে পারে না, বিষাদময় লাগে এসব তাই হয়তো কারো প্রতি আকর্ষণ খোঁজে পায়না। তবে এখন যেতে চাইলে যাওয়া সম্ভব নয় এখান থেকে। ভার্সিটির প্রধান যেখানে জড়িত । মাঠে নেমেই ওদের এখানে আনা হয়েছে খুব ভালো বুঝতে পেরেছে ঝুমঝুমি। ঠোঁটের হাসিটা বজায় রেখে নীরার পানে দুষ্টুমির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, নীরু বেবি এবার তোমার পরীক্ষা। প্রেমিক শুদ্ধ না অশুদ্ধ বুঝার সময় হয়েছে। লেগে পর প্রেমিক নামের হিরণের প্রতি তবে মনে রেখো অতিরিক্ত কিছু করা যাবে না। প্রেমিক যতই সাদু হোক বিশ্বাস সহজে আনা যাবে না। ছেলে মেয়ে একসাথে থাকা মানে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে অঘটন করা। আই হোপ তুই বুঝতে পারছিস।
নীরা ঠোঁট কামড়ে বাঁকা সুরে বলল, আমার চরিত্র নিয়ে তোর অবিশ্বাস আছে?
-” একদমই না। কিন্তু তুই ভীষন আবেগী। সব আবেগ দিয়ে ঠিক করিস। মানুষ আবেগের বশে অনেক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। আবেগ শব্দটি যতনা ভালো তারচেয়ে দ্বিগুণ অসহ্য।
তৃষ্ণা মনোযোগ শ্রোতার হয়ে শুনলো। ঝুমঝুমির কথাগুলো ফেলে দেওয়ার মতো না। নিজের চোখে অনেককে দেখেছে প্রেমে জড়িয়ে আবেগের বশে প্রেমিকের কাছে নিজের সম্মানকে বিলিয়ে দিতে। নীরা সহজ সরল মেয়ে। ওকে যে কেউ দু চারটে মন ভুলানো কথা বললেই গলে যাবে। সাবধানী কণ্ঠে বলল,
-” দুদিন এখানে থাকতে হবে?
-” আসছি যেহেতু থেকে যাই। আমিও দেখতে চাই ওরা কতদূর যেতে পারে।
-” এখন কী করব?
তৃষ্ণার প্রশ্নে ঝুমঝুমি ভাবতে বসল। ভেবে চিন্তে ঠোঁটের কোণায় ফুটল মিষ্টি হাসি। চুলগুলো খোঁপা করে আনমনে বলল, চল বাহিরে। জমিদার বাড়ি কিন্তু ভুতুড়ে টাইপ হয়। ভৌতিক শিহরিত ভাব গায়ে মাখি।
নীরা ভয়ে আড়ষ্ট হলো। ভূত অবাস্তব কাহিনী কিন্তু তবুও মনের ভিতরে রয়েছে ভয়ের সাগর। ক্রন্দন মিশ্রিত কণ্ঠে বলল, রাত করে যেতে হবে?
-” রাতেই যেতে হবে।
বেরিয়ে পড়লো তিনজন। তবে ঝুমঝুমির মনে চলছে অন্যকিছু। মনের ভিতরে সৃষ্টি সন্দেহটা বান্ধবীদের সাথে শেয়ার করল না ইচ্ছে করে। সেও জানতে চায় ওর সন্দেহ কতখানি ঠিক না বেঠিক।
_________
থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, টিশার্ট গায়ে জড়িয়ে চারজন শুয়ে বসে আছে রুমের মধ্যে। মিরাজের দুহাত মাথার পিছনে রেখে হাঁটুর উপরে হাঁটু রেখে হিরণেকে উদ্দেশ্য করে বলল, তুই শিওর হিরণ?
-” একশো ভাগ শিওর।
-” আবারও ভেবে দেখতে পারিস। মেয়েটা ভীষন ভালো আমরা চাইনা মেয়েটার কোনো ক্ষতি হোক।
কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল আষাঢ়ের। হিরণ জানের বন্ধু হলেও বন্ধুর মতিগতি সম্পর্কে ওরা সবাই সবকিছু জানে। প্লেবয় হিরণের সত্যিই প্রেমে পড়া নিয়ে চিন্তিত বাকি তিনজন। গলা ঝেড়ে বলল আষাঢ়, মিরাজের কথায় আমিও একমত হিরণ। যাই করিস ভেবে চিন্তে। কিছুদিন সময় নেওয়া দরকার।
শোয়া থেকে বসল হিরণ। চোখেমুখে রাগের আভাস। মুখের ভাষা সাবলীল রেখেই বলল, আমার চরিত্র ফুলের মত পবিত্র। আমি যাদের সাথে প্রেম করেছি সবকটাই টাকা দেখে আমার সাথে ডেট করছে। এমনকি টাকার জন্য বেড পার্টনার হতেও চেয়েছিল। তাই ছেড়ে দিছি। নীরাকে নিয়ে আমি সত্যিই সিরিয়াস। আব্বার সাথে এনিয়ে কথা হইছে। বলছে ইলেকশন শেষ হওয়ার পর বিয়ার প্রস্তাব পাঠাবে।
অনেকক্ষণ ধরে মুখে কুলুপ এঁটে বসে ছিল নাজিম। বন্ধুদের ঝামেলায় কবিতারা মাথায় আসছে না। অনেকক্ষণ ধরে তিন বন্ধুর প্যাচাল সহ্য করে বলল, ভাই কইনে আনছস আমারে? হাগতে মুততে যাইতে পারি না। জঙ্গলে এসব করা যায়? সাপ টাপ থাকলে তখন কী হইবো? জমিদাররা খবিশ ছিল নাকি? হাগা মুতার জায়গা বাইরে বানাইছে ক্যান। চাপের ঠ্যালায় কবিতা আসেনা মাথায়।
হিরণ টিপ্পনী কেটে বলল, ভালোয় হলো বল। তোর ছাগল মার্কা কবিতা থেকে দুদিন মুক্তি পাব।
গায়ে মাখলো না নাজিম। বলল
“আসুক হাগা মুতা কিংবা পাদ,
তোদের সামনেই ছড়াবো আমি দুর্গন্ধের ঝাঁক।।”
নাক ছিটকে সরে পরল তিনজন। নাজিম বিজয়ের হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ল। এখন আর থাকা যাচ্ছে না। প্রকৃতির ডাকে সাড়া না দিয়ে উপায় নেই ছুটল জমিদার বাড়ির শৌচাগারে।
ফোনে নেটওয়ার্ক না থাকায় রুম থেকে বেরিয়ে পড়ল আষাঢ়। জরুরী ফোন দেওয়ার প্রয়োজন। ওদিকে কী হচ্ছে জানতে হবে এদিক সেদিক হলেই এতদিনের রেপুটেশন শেষ হয়ে যাবে। বাবার সামনে মাথা তুলে তাকানোর সাহস থাকবেনা। ঠান্ডা মাথায় ওর সাগরেদ রিয়াদের সাথে কথা শেষ করতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলালো। চোখের সামনে ঝুমঝুমিকে দেখে পলকহীন ভাবে চেয়ে রইল। সাদা কুর্তি, মাথায় সাদা পাতলা ওড়না। বেগতিক পরে যাওয়ার ফলে খোঁপা করা চুলগুলো রাশিরাশি করে খুলে গেল। আষাঢ়কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঝুমঝুমি আড়ষ্ট হয়ে অস্বস্তিবোধ করল। আষাঢ়ের খেয়াল হলো সে জড়িয়ে ধরেছে ঝুমঝুমিকে। বাঁধন ছেড়ে দিয়ে লজ্জিত হয়ে বলল আষাঢ়, সরি আমি দেখিনি। ব্যাথা পাওনি তো?
ঝুমঝুমি এতদিন ধরে ভাবত সকল পুরুষ এক। নিজেদের বড় করে তোলার জন্য অন্যদের মাটিতে ফেলতে দুবার ভাবে না। শুধুমাত্র ওর বাবাকে আলাদা ভাবত কিন্তু আজ আষাঢ়ের কাছ থেকে এরূপ ব্যাবহার দেখে এতদিনের চিন্তাভাবনা ভুল প্রমাণিত হলো।
বলল, না ব্যাথা পাইনি। আপনার সাথে আমার পার্সোনাল কথা আছে।
মাথা চুলকিয়ে আষাঢ় বলল, আসো আমার সাথে।
##চলবে,
আজ বানান রিচেইক করিনি। গতকাল পরে গিয়ে পায়ের হাড় ফেটে গিয়েছে।তাই গল্প লিখতে পারিনি। গল্পের তাল হারিয়েও ফেলেছি। ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন দুআ করবেন পা যেন ভালো হয়ে তাড়াতাড়ি।