প্রেয়সীর_শব্দপ্রেম (দ্বিতীয় খন্ড) #ফারজানা_মুমু [১৪]

0
333

#প্রেয়সীর_শব্দপ্রেম (দ্বিতীয় খন্ড)
#ফারজানা_মুমু
[১৪]

সকাল-সকাল সবাই মিলে পুরো বাড়ি পরিষ্কার করতে শুরু করল। কাজের ফাঁকে-ফাঁকে নাজিমের কবিতা বলায় জমে উঠেছে দারুণ আড্ডা। ভুলে বসেছে রাতের কথা। ধুলোবালি পরিষ্কার করার ফাঁকে নাজিমের বেলেহাজ কবিতা শোনে হিরণের চোখে দুষ্টুমির খেলা অন্যদিকে তৃষ্ণা লজ্জায় ম’রি-ম’রি। ঝুমঝুমি তো কানে তুলো দিয়ে কাজ করছে যেন। হালিমা খালা অবশ্য ঝিনুককে নিয়ে পরিষ্কার রুমে শুয়ে আছে। নাজিম আগেই ওনাকে আলাদা রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখানে চলছে সব এডাল্ট কথাবার্তা। ঝুমঝুমি শুনেও না শোনার ভান ধরে আছে। চারদিকে জোড়া-জোড়া শালিকের দল দেখে নাজিমের মুখটা বেলনের মত ফুলে আছে। বাচ্চাদের মতন করে আকুতি ভরা কণ্ঠে দেওয়াল ঝার দিতে দিতে ই বলে উঠল,
-“মাঝে-মাঝে মন চায় থেমে থাকা গাড়ির নি’চে পরে ম’রে যাই কি দরকার এমন একটা জীবনের যেখানে বন্ধুরা প্রেমিকা, বউ নিয়ে ঘুরে সেখানে এখনও প্রেমিকার ‘প’ জুটাতে পারলাম না।

শুনো হে প্রিয়তমা ,
তোমারে নিয়ে আমার কত যাতনা।
যেও না গো তুমি অন্য কারো হয়ে,
অকালে হারাবে সুখ আমায় না পেয়ে।

নাজিমের বিরহী কবিতা শোনে সবাই হাসলো। তারপর শান্তনা বানিয়ে শুনিয়ে নিজেরা নিজেদের মতো কাজ করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর আষাঢ় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাসায় এনে হাঁক ছাড়লো।
-” তৃষ্ণা,নীরা তোমরা বাসায় চলে যাও। পুলিশ পৌঁছে গেছে ঝুমঝুমিদের বাসায় ওখানে কাউকে দেখতে না পেয়ে ওর পুরনো রেকর্ড বার করছে। তোমাদের দুজনের কাছে পৌঁছানো শুধু সময়ের অপেক্ষা।

নীরা ভীতু দৃষ্টিতে তাকালো। পুলিশের নাম শোনে রীতিমত হাত কাঁপছে ওর। কণ্ঠে তীব্র ভয় রেখেই বলল,
-” তাহলে আমরা কী করব এখন? পুলিশকে কী বলব?
-” বলবে ঝুমঝুমির সাথে পাঁচ বছর ধরে যোগাযোগ নেই। কোথায় আছে কি করে কিছুই জানো না তোমরা।

আশ্বস্ত হলো নীরা তাৎক্ষণিক মুখ খুললো তৃষ্ণা।
-” আমাদের ভার্সিটির প্রধান ওনি তো জানেন ঝুমঝুমির সাথে আপনার সম্পর্ক আছে। পুলিশ যদি ওনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাহলে তো জেনে যাবে আপনার কথা।

মুখ বাঁকালো আষাঢ়। পুলিশ-টুলিশ ওর কিচ্ছু করতে পারবে না। এমপির ছেলে সে, ক্ষমতা অনেক কিন্তু সমস্যা হলো এ-বিষয়ে ওর বাবার কাছ থেকে কিঞ্চিৎ পরিমাণ সাহায্য পাবে না সে। যেহেতু এমপি সাহেব বিয়েতে রাজি নন সেক্ষেত্রে দেখা যাবে ঝুমঝুমিকে ধরিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা ওনি করবেন। সেজন্যই তো এমপির গোপন জায়গায় মাথা গুঁজেছে। এমপি সাহেব আর যাই করুক কখনই এই জায়গার কথা বলবে না। তবুও নিজের একটা এক্সট্রা ক্ষমতা আছে আষাঢ়ের।
-” ভার্সিটির প্রধান আপাতত কানাডায় আছেন ওনার সাথে যোগাযোগ করবে না যদিও বা করে তাহলে স্যার আমাদের কথা বলবেন না। আর শুনো আমাদের দেশের পুলিশ কতদূর যেতে পারে সে সম্পর্কে আমি জানি। মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত বুঝেছ। তোমাদের ওসব নিয়ে ভাবতে হবে না শুধু পুলিশ আসলে বলবে যোগাযোগ নেই।

হিরণ জানতে চাইলো, তাহলে এখন কী করবি তুই? পরের প্ল্যান?
-” দেশ ছাড়বো। আমি কাগজপত্র রেডি করার প্ল্যান করছি।

আবারও অবাক হলো সকলে। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে প্রশ্ন ছুঁড়লো মিরাজ, কাগজপত্র রেডি করার সময় যদি ওরা ধরে ফেলে ঝুমঝুমিকে ত‌খন কী হবে!

আষাঢ়ের রাগ হলো খুব। তীব্র রাগ। স্ল্যাং শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়েও থেমে গেলো। সকলের সামনে এ-ধরনের শব্দ উচ্চারণ করা ঠিক হবে না বলে গিলে ফেলল কথাগুলো। ধীরে সুস্থে বলল,
-” আমারে তোদের ফেলনা মনে হয়? ভুলে যাস না আমি এমপির ছেলে। টাকা কথা বলবে। টাকায় সব হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে সব কাগজপত্র রেডি করে দেশের বাইরে পাড়ি জমাবো। আমার পরিবারের কথা জিজ্ঞাসা করলে বলব আমি পরোয়া করি না। মাঝে-মধ্যে নিজের খুশির জন্য বেপরোয়া হওয়া অন্যায় নয়। ড্যাডকে সামলানো আমার বাঁ হাতের কাজ। তবে তাকে সামলানোর জন্য আমার দরকার সঠিক সিদ্ধান্ত। সবার আগে ঝুমঝুমিকে নিরাপদ জায়গায় রাখা জরুরি তারপর আসি পরিবারকে মানানো। এমপি আসাদুল্লাহ জেওয়াদ চৌধুরীর ছোট ছেলে আষাঢ় জেওয়াদ চৌধুরী আমি ভুলে যাস না। যে মেয়ের জন্য আমার জীবন শে’ষ হতে চলেছিল মৃ’ত্যু’র মুখ থেকে ফিরে এসেছি সেই মেয়েকে আমার পরিবার সাদরে গ্রহণ করবে। ওনাদের কাছে ছেলের জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

শেষের কথাগুলো আষাঢ় ফিচেল হাসি দিয়ে বলল। ওর সেই হাসির অর্থ সকলেই বুঝল। তাদের মুখেও চমৎকার হাসি শুধু হাসি নেই ঝুমঝুমির মুখে। আষাঢ়ের শেষ বাক্যর অর্থ সে বুঝেছে। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল। আষাঢ় এইটাই করবে ওর পরিবারের সাথে। মনে-মনে খুব দুঃখ পেয়েও মুখে টু শব্দটি করল না। কারণ এছাড়া যে উপায়ও নেই।

তৃষ্ণা,নীরা,হিরণ,মিরাজ ও নাজিম চলে যায় থেকে যায় শুধু আষাঢ়,ঝুমঝুমি,হালিমা খালা ও ঝিনুক। ঝুমঝুমির মন,মেজাজ কিছুই ভালো নেই। প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা। বিছানায় গুটিশুটি মে’রে শুয়ে আছে। হালিমা খালা রান্না করছে। ঝিনুক ভয়ানক জঙ্গলে থাকবে না বলে কান্নাকাটি করে এখন আষাঢ়ের সাথে খেলছে।

________

দুপুরের তীব্র আবহাওয়ার এখানে নেই। বড়-বড় গাছের ফাঁকে একটু করে দেখা যাচ্ছে সূর্য মামাকে। তেরছা হয়ে গাছের ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে বিন্দু পরিমাণ রোদ জানালা বেদ করে রুমে ঢুকেছে। সাথে রয়েছে মৃদু মন্দ বাতাস। টাফনিল খেয়ে সকাল থেকে ঘুমানোর পর ঘুম ভাঙ্গে ঝুমঝুমির। অলস ভঙ্গিমায় পিটপিট করে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কোথায় আছে সে। অনেকক্ষণ ধরে ঘুমানোর পর মস্তিষ্ক গেঁথে থাকা অতীত স্মরণে আসতে মিনিট খানেক সময় লাগলো ওর। তারপর আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে জানালার কাছে দাঁড়াতেই তেরছা রোদটুকু মুখে এসে লাগলো। আরামদায়ক প্রাকৃতিক বাতাসের সাথে রোদটুকু ভালোই লাগছে গায়ে। দুহাত উপরে তুলে হাই তুলে পিছন ঘুরতেই কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে স্মিথ চোখে তাকিয়ে আষাঢ়কে দেখে মিষ্টি হেসে বলল, জনাব আপনি এখানে? এখনও যাননি?

নিস্পলক চোখজোড়া মুগ্ধ নয়নে দেখল সেই মধুময় হাসি। কণ্ঠের মাধুর্যে হারিয়ে গেলো স্বর্গসুখে। দু’হাতে ঝুমঝুমির দু’কাঁধে হাত রেখে আবেদনময়ী কণ্ঠে বলে উঠল,
তুমি আমার সবচেয়ে
আপন দুখ___
যত্ন করে পুষে রাখা
অতিপ্রিয় অসুখ।(কালেক্টেড)

ঝুমঝুমি শান্ত গভীর চোখজোড়া চেয়ে রইল সামনে থাকা অদ্ভুদ পাগলাটে প্রেমিকের চোখ পানে। এ দৃষ্টি যেন সরবার নয়। দুজন-দুজনকে দেখার তৃষ্ণাতে মত্ত। কাঁ’টা প্রেম,প্রেমিকের না পাওয়া গোলাপ ফুল নিজ থেকেই কাঁ’টা ছাড়িয়ে ধরা দিল হৃদয়ে।

তখনই দৌঁড়ে আসলো ঝিনুক। এসেই আষাঢ়ের কোমড় জড়িয়ে আদুরী বেড়ালের মত মুখ চেপে বলল, বাবা, আমরা বিদেশে যাব কেন? নানু বলেছে আমরা সবাই বিদেশ যাব। বিদেশে কি হয় বাবা? ওখানে স্কুল আছে? ফ্রেন্ড আছে? পার্ক আছে? আচ্ছা ওখানে গিয়ে কী হবে?

আষাঢ় দুহাতে ঝিনুককে কোলে তুলে নিলো। ঝুমঝুমির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি বজায় রেখে বলল, ওখানে তোমার ভাই আছে,বোন আছে মা। ওখানে সব আছে।

ছোট্ট মুখটি খুশিতে ঝলমল করল। ঝুমঝুমি রাগী চোখে তাকালো আষাঢ় সেটা পাত্তা না দিয়ে আরো অনেক কিছু বলতে লাগলো ঝিনুককে। সে তো আষাঢ়ের গলা জড়িয়ে ধরে একটু মন খারাপের ভান ধরে বলল, আচ্ছা বাবা তুমি আগে আসো নি কেন? মাম্মা কেন বলেছে তুমি ম রে গেছ?

আষাঢ় তখন এক হাতে ঝুমঝুমির নাকে টান দিয়ে বলল, তোমার মাম্মা খুব বোকা তো তাই। আসো আমরা বাবা মেয়ে খেতে বসি। তোমার নানু মজার মজার কিসব রান্না করেছে চলো খেয়ে আসি।

ঝিনুককে কোলে নিয়ে যেতে-যেতে ঝুমঝুমির উদ্দেশ্য বলে উঠল, বোকা তেজপাতা, ফ্রেশ হয়ে চলে আসো। দেরি করলে খাবার পাবে না।

ঝুমঝুমির হঠাৎ মন ভালো হয়ে গেলো। সুন্দর একটি দৃশ্য যেন সত্যিই ওরা বাবা-মেয়ে। হ্যাঁ তো সত্যিই তো ওরা বাবা মেয়ে। কেন র’ক্তে’র সম্পর্ক ছাড়া বুঝি বাবা-মেয়ে হতে পারে না। আত্মিক টান র’ক্তে’র টানের মতোই তো মজবুত। তবে ওর মনে এখনও গেঁথে আছে মেঘকে নিয়ে। মেঘের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত নয় সে। তাছাড়া মেঘ কী খোঁজে পাবে আষাঢ়ের গোপনীয় জায়গার কথা। অন্যদেশে চলে গেলে মেঘকে কী শাস্তি দিতে পারবে না-ও। আবারও তরতর করে খু’নে’র নেশা মাথায় চাপলো। মেঘ তো আসলো কালপ্রিট তাহলে ওর শাস্তি হবে না কেন? মেঘের শাস্তি হবে ভ য় ঙ্ক র। সবথেকে ভ’য়া’ন’ক শাস্তি দরকার মেঘের কিন্তু এখান থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই ওর হাতে। র’ক্ত নিয়ে খেলা করা অভ্যাস হয়ে গেছে ঝুমঝুমির। মেঘের মৃ’ত্যু না দেওয়া পর্যন্ত তো ম’রে গিয়েও শান্তি পাবে না ও। দুটনায় পড়ল ঝুমঝুমি। বুদ্ধি কাজ করছে না কোনো। তরতর করে বেড়ে গেল মাথা ব্যাথা। দুহাত চেপে বিছানায় শুইয়ে পড়তেই আবারও ঘুমেরা চলে আসলো দ্বারে।

আষাঢ় ঝিনুককে হালিমা খালার সাথে রেখে আসলো ঝুমঝুমিকে নিতে এসে দেখলো আবারও ঘুমাচ্ছে ঝুমঝুমি। ডাকলো না আর। পরম যত্নে কপালে হাত রেখে বলে উঠল,
শুনো হে বিশ্বজগৎ,
শুনো হে আকাশ,
আমার ভালোবাসার মুগ্ধতায়,
প্রেয়সীর শব্দপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ।

##চলবে,

[বিঃদ্রঃ পর্বটি ছোট হওয়ার জন্য আমি দুঃখিত।]

রি চেইক করা হয়নি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here