প্রেয়সীর_শব্দপ্রেম (দ্বিতীয় খন্ড) #ফারজানা_মুমু [১৩]

0
187

#প্রেয়সীর_শব্দপ্রেম (দ্বিতীয় খন্ড)
#ফারজানা_মুমু
[১৩]

ঝর্ণার তখন নয়মাস চলছে। হাত-পায়ে পানি এসেছে। না পারে হাঁটতে, না পারে বসতে। শরীরের তুলনায় পেট ভারী বেশি। মাঝে-মধ্যে কান্নাকাটি করে। ঝুমঝুমি নিজেও এ সম্পর্কে অবুঝ। গুগল সার্চ করে বোনের কোন মুভমেন্টে কি করার দরকার দেখে সে। একদিন রাতে ঘুম থেকে চিল্লিয়ে উঠে ঝর্ণা। বিছানায় র’ক্তে’র ছোপ-ছোপ দাগ। ঝুমঝুমি ভয় পেয়ে যায় তখন। তাড়াতাড়ি করে রিক্সা ডেকে বোনকে নিয়ে ছুটে হসপিটালে। রাতের মধ্যেই সিজার করতে হয়। বাচ্চা একটি মেয়ের গর্ভে আরেকটি ছোট্ট বাচ্চা জন্ম নেয় এই পৃথিবীতে। ঝুমঝুমি কোলে নেয় বাচ্চাটাকে। গালের সাথে মিশিয়ে চুমু খাও সহস্রবার। ঝুমঝুমির মনে তখন আরেকটি কথা চিন্তা করে। ওর মনে হয় এই বাচ্চা মেয়েটা ওর মা জেসমিন বেগম। মৃ’ত্যু’র পর আবারও ফিরে এসেছেন মেয়েদের মাঝে। হঠাৎ করেই কুসংস্কারে বিশ্বাস করে উঠে মন। মিলে মনের শান্তি। একদিন,দুদিন করে সময় অতিবাহিত হয়। ঝর্ণার তখন মানসিক অবস্থা খুব ভালো নয়। সারাদিন মেয়েকে নিয়ে রুমের এক কোনে বসে থাকে, ফিডিং করা না ঠিকমত। ঝিনুক তখন কান্না করে খুব তবুও ঝর্ণার মন গলেনা। ঝুমঝুমি খেয়াল করে এসব। ঝর্ণাকে বুঝিয়ে বলে কিন্তু ঝর্ণার এক কথা,
-” মেঘের বাচ্চাকে আমি মেনে নিবো না আপু। তুমি হয় ও’কে মে’রে ফেলো নয়তো অনাথ-আশ্রমে দিয়ে আসো। ও’কে দেখলে আমার সেই রাতগুলোর কথা মনে পড়ে। আমার শরীরে আ’ঘা’ত করা চিহ্ন ভেসে উঠে। তুমি প্লিজ ও’কে নিয়ে যাও।

ঝুমঝুমি বাধ্য হয়ে ডক্টর দেখাতে শুরু করে ঝর্ণাকে কিন্তু লাভের লাভ কিচ্ছু হয় না। ঝিনুককে তখন ডক্টরের পরামর্শে তোলা খাবার খাওয়ানো শুরু করে। সারাদিন ছুটাছুটি করে রাতের মধ্য প্রহর পর্যন্ত ঝিনুককে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানো ছিল ঝুমঝুমির রোজকার রুটিন। ঝিনুকের বয়স তখন সাতমাস চলছে। সময়টা ছিল শুক্রবার। আজ ঝুমঝুমির ছুটির দিন। সকালে রান্না-বান্না করে ঝর্ণাকে খাইয়ে-দাইয়ে ঝিনুককে নিয়ে বসেছে ফ্লোরে। ঝিনুক তখন বসতে শিখে গেছে,হামাগুড়ি দেয়। ঝুমঝুমি একটা পুতুল দূরে রেখে ঝিনুককে বলে পুতুল আনতে ঝিনুক তখন হামাগুড়ি দিয়ে পুতুল ধরে নিজে-নিজেই হাততালি দেয়। ঝুমঝুমি তখন খুব হাসে। মাঝে-মধ্যে ঝর্ণাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” দেখ আমাদের মা-ও। তুই কেনো যে বুঝিস না। মেয়েটাকে একটু আদর কর না।

ঝর্ণা শুধু তাকিয়ে থাকে, কথা বলে না। ঝিনুক ঝর্ণার মুখে হাত রাখে চুমু খায় তবুও কথা বলে না ঝর্ণা। সরিয়েও দেয়না। নিজের মতো একা থাকে সে।

কলিং বেলের শব্দ শোনে ঝুমঝুমি অবাক হয়। ওদের বাসায় কেউ আসেনা। লোকে ওদের অহংকারী হিসেবে জানে। কারণ কোনো ভাড়াটিয়া কথা বলতে আসলে ঝুমঝুমি এড়িয়ে যায়। কথা বলে না। যার কারণে কেউ আসেনা ঝুমঝুমিদের সাথে কথা বলতে। সকাল এগারোটা এসময়ে কে আসবে জানা নেই ঝুমঝুমির তাই সন্দিহান মনে দরজা খুলে রুজিনা বেগমকে দেখে চমকে উঠে। রুজিনা বেগম সম্পর্কে ওদের ফুপু।

ফিচেল হাসি রুজিনা বেগমের ঠোঁটের কোণায়। ঝুমঝুমিকে ঠেলে আরো দুই তিনজন মহিলাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে অশ্লীল ভাষায় বলতে থাকেন,
-” কি রে ব্যাবসা কেমন চলছে তোদের? ঢাকাতে তো থাকতে পারলি না। ছোট বোনকে ব্যাবহার করবি ভালো কথা প্রটেকশন নিতে বলবি না দেখেছিস এই বয়সেই একটা বাচ্চা হয়ে গেছে। তা তোর খবর কী? ভালো বড় বাসা নিয়েছিস তো। ইনকাম ভালো ই হচ্ছে দেখছি।

ধৈর্যের সীমা অতিক্রম হলো ঝুমঝুমির। রাগ দেখিয়েই বলল, মুখ সামলে কথা বলো ফুপু। তুমি ভুলে গেছ আমরা তোমার কী হই? নিজের আপন ভাতিজিদের উপরে মিথ্যাচার করতে খারাপ লাগে না।

তেড়ে আসেন রুজিনা বেগম। ঝুমঝুমির গালে সজোরে থা’প্প’ড় মে’রে বলেন,
-” তোরা যে আমার ভাইয়ের মেয়ে ভাবলেই আমার কষ্ট হয়। একদম মায়ের মত হয়েছিস দু’শ্চ’রি’ত্র। আমার ভাইকে খে’য়ে’ছি’স তোরা। এখন খা’চ্ছি’স আমাদের মান-সম্মান।
-” আমার মুখ খুলতে বাধ্য কর না ফুপু। চলে যাও বলছি। বাবা বেঁচে থাকতে তো খুবই সুনাম ছিল আমাদের যেই না ওনি মা’রা গেছেন ওমনিই বদনাম ছড়াচ্ছ। তোমাকে ফুপু বলতেও আমার লজ্জা করে।
-” লজ্জা তো করবেই। আমি তো তোদের কু’কীর্তির কথা বলে দিচ্ছি। এখন থেকে তো আর নাগর পাবি না বাসায় তাইতো গায়ে লাগছে।
-” মুখ সামলে কথা বলো। আশেপাশের মানুষের সামনে আমাদের নিয়ে বানিয়ে-বানিয়ে কথা বলবে না।
-” বানিয়ে বলছি তাই না? তাহলে বল ঝর্ণার মেয়ের বাপ কে? বিদেশে থাকে এটাই বলবি তো তাহলে ওর জামাইয়ের সাথে কথা বলিয়ে দে। দেখি পারিস কিনা।

ঝুমঝুমি নিশ্চুপ থাকে। বানোয়াট এডিট ছবি দেখাতে পারলেও কথা বলিয়ে দেওয়ার উপায় নেই। দিবে ই বা কাকে। কেউ নেই।

রুজিনা বেগম ফিচেল হাসলেন। তারপর আর তাকে কিছু করতে হয়নি যা করার সব প্রতিবেশীরাই করেছে। মানুষ বলে না, অন্তরে বি’ষ মুখে হাসি তারই নাম প্রতিবেশী। পুরো পাড়া রটিয়ে গেলো ঝুমঝুমি ও ঝর্ণা প’তি’তা’ল’য়ে’র কাজ করে ওদের ওই কাজের ফল ঝিনুক। পাড়া থেকে বের করে দেওয়ার হু’ম’কি দেওয়া হয়। মাসের শেষেই বাসা পরিবর্তন করতে হবে জানিয়েছে বাড়ির মালিক। ঝুমঝুমির কোচিংয়ের চাকরিটা চলে যায়, যে বাসায় পড়াতে যেত তারাও বারণ করে দেয়, রাস্তায় বেরুলে ছোট থেকে বৃদ্ধ সবাই রে’ট জানতে চায়। সিদ্ধান্ত নেয় এখান থেকে মাসের আগেই চলে যাবে। ঝুমঝুমি তখন ওই পাড়া থেকে অনেক দূরে আরেকটা বাসায় থাকা শুরু করে। বাহিরে বের হওয়ার সময় বোরখা পরে। আজ বোরখা না পড়ার কারনেই রুজিনা বেগমের চোখে পড়তে হয়েছে ওদের। নতুন বাসায় আসার পর আরেকবার সত্যর মুখোমুখি হতে হয় ঝুমঝুমিকে। ঝর্ণার অবস্থা আগে থেকেই খারাপ ছিল আবার ঐদিনের ঘটনায় আরো কাবু করে ও’কে। রাতের মধ্য‌ই ব্রেইন-স্ট্রো’ক করে মা’রা যায় ঝর্ণা। ঝুমঝুমির অবস্থা তখন আরো ভয়াবহ। বোনকে সরকারি কবরস্থানে সমাহিত করে ঘরের কোণে কোনঠাসা হয়ে বসে থাকে। জমানো কিছু টাকা ছিল ওই টাকা দিয়েই একমাস পার করল ও। আবারও সিদ্ধান্ত নিলো বস্তি এলাকায় বাসা নিবে ওখানকার বাসা ভাড়া কম। আজকাল কোচিং সেন্টার,কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের অভাব নেই। ওর রেজাল্ট ও খুব ভালো তাই সমস্যা হয়না জব নিতে। আজকাল ইংলিশ আর ম্যাথ টিচারদের কদর বেড়েছে দ্বিগুণ। একমাস ঝিনুককে কোলে নিয়ে খোঁজে বেরিয়েছে নিজেকে আড়ালে রাখার সুব্যবস্থা। পেয়েও যায় মনমতন একটি বাসা। ভাড়া সাতশো টাকা। উপরে টিন, বাঁশের বেড়ার একটি ছোট্ট ঘর। মাস শেষ করার আগেই ও বাসা ছেড়ে এখানে চলে আসে।

এই এলাকায় বিদ্যুৎ থাকে না বললেই চলে। হাতে থাকা জমানো টাকা খরচ করে গ্যাসের চুলো ও মেয়ের জন্য চার্জার ফ্যান কিনে ঝুমঝুমি। নতুন জব খোঁজতে বের হবে দুদিন পর। গরমে সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে তাই মেয়েকে নিয়ে রুমের বাহিরে আসতেই শুনতে পেলো চিৎকার। কেউ কাউকে মা’র’ছে। দেখতে পেলো তারই ঘরের সামনের ঘরে একটা লোক তার বউয়ের গ’লা’য় চেপে সমানে থা’প্প’ড় বসাচ্ছে। হঠাৎ কি হলো জানা নেই ঝুমঝুমির। মেয়েকে ঘরে শুইয়ে দিয়ে এসে লোকটির সামনে দাঁড়িয়ে দুগালে দুটো চ’ড় মা’র’তে’ই মাতাল লোকটি বাঁশের বেড়ায় ধাক্কায় খেয়ে কপাল কেটে গেল। লোকটি তেড়ে আসলো ঝুমঝুমিকে মা’র’তে। ঝুমঝুমি দেখল ওর পায়ের কাছেই রয়েছে বঁ’টি সে বঁ’টি হাতে তুলে চিল্লিয়ে উঠে বলল, আরেকবার আয় তোর মা’থা’টা ঘা’ড় থেকে সরিয়ে ফেলব।

লোকটি ভয় পেলো। অশ্রাব্য ভাষা গালিগালাজ করে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল। ঝুমঝুমি দেখল মায়ের বয়সী এক মহিলা র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় মাটিতে পরে আছে। মহিলাটির গায়ে ময়লা শাড়ি। ঘর থেকে পানি এনে মাথায় ঢেলে শরীর মুছে দিলো। ঝিনুক তখন একা ঘরে। মহিলাটি তখন ঝুমঝুমিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠল। বিলাপ করতে-করতে বলল, আমার বাচ্চা হয়না দেইখ্যা আমারে খুব মা’রে মা। মাইনসের বাসায় কাম কইরা যা টেহা পাই সবই এক লোক লইয়া যায়। কিছু কইলেই আমারে মা’রে। বাঁচাও আমারে মা।
-” আপনার নাম কি খালা?
-” হালিমা।

সেদিন রাতে হালিমা খালাকে নিজের রুমে নিয়ে আসে ঝুমঝুমি। খাবার খাইয়ে দিয়ে নিজেদের রুমেই থাকতে বলে। হালিমা খালা সেরাত আর ঘুমায়নি। নিজের জীবনের দুঃখের কথা বলে গিয়েছে শুধু। তবে হালিমা খালাকে সে শুধু বলেছে ঝিনুক ওর মেয়ে, স্বামী গাড়ি এক্সিডেন্ট করে মা’রা গেছে, বাবা-মা-ও মা’রা গেছে। ব্যাস এইটুকু।

হালিমা খালা বহুযুগ পর নিজের মনের কথাগুলো বলতে পেরে শান্তি পায়। সকালে ভোরের সূর্য উঁকি দেওয়ার সাথে সাথেই খবর আসে মা’তা’ল স্বামী রাতে দিক-বেদিশা হয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকের নি’চে পড়ে সাথে সাথেই মা’রা যায়। হালিমা খালার কানে সেই বাক্য কি যে মধুর মত লেগেছে অনুমান করা দায়। মৃ’ত স্বামীর লা’শ পর্যন্ত দেখতে যায়নি। এরপর থেকে হালিমা খালা ঝুমঝুমির সাথে থেকে গিয়েছে। ঝুমঝুমিকে মেয়ে বানিয়ে ঝিনুক নাতনী বানিয়ে। জীবনে তো একটু সুখেই খোঁজতে চেয়েছিল সেটা পেয়ে গেছে ঝুমঝুমি,ঝিনুককে পেয়ে।

একজন মেয়ের বাবা মায়ের পর আপন যে হয় সে স্বামী। স্বামীর মত আপন কেউ হতে পারে না। সেই আপন মানুষটার মৃ’ত্যু’তে হালিমা খালাকে খুশি দেখে তারও মনে খুশি হওয়ার ইচ্ছে জাগলো। সেদিনের পর থেকেই নিজের মনকে খুশি করার জন্য উঠেপড়ে লাগলো যাদের কারণে তার জীবন দুর্নিবার তাদের সে ভালো থাকতে দিবে না। সময় নিয়ে নিজেকে তৈরি করল। ঝিনুকের বয়স যখন তিন বছর তখন বস্তি বাসাটা ছেড়ে ভালো একটা বাসা নিলো হাই স্কুলের পাশে। তিনমাস ধরে হাই স্কুলে গেস্ট টিচার হিসেবে আছে সে।

তিন চারমাস পর একদিন মার্কেটে গিয়ে রুজিনা বেগমকে দেখে আড়ালে থাকলো। সেদিন থেকেই পিছু নেওয়া শুরু। কোথায় থাকে? কি করে সবকিছু জেনে নিলো।

পৌষ মাস তখন। ভোরে চারদিকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা জাল, সাদা সাদা ধোঁয়া, হাড় কাঁপানো শীত। রুজিনা বেগমের ডায়েবেটিস ধরা পড়েছে। প্রতিদিন সকালে এক ঘণ্টা হাঁটার পরামর্শ ডক্টরের। শীতের সকাল সাতটার সময়ে তখন চারদিকে কুয়াশা। পার্কের ধারে সরু রাস্তায় রোজ একা-একা হাঁটেন ওনি। ঝুমঝুমি সাড়ে ছয়টায় রেডি হয়ে ওঁৎ পেতে আছে শি’কা’রে’র জন্য। ঝুমঝুমি সেদিন পড়েছিল কালো বোরখা, হাত পায়ে মোজা, চোখে চশমা, সামনে ঝুলানো স্কুল ব্যাগ। একমনে ধীরে-ধীরে রাস্তায় হাঁটছে সে। রুজিনা বেগম ঝুমঝুমিকে চিনতে পারলো না। ভেবেছিল হয়তো কলেজের স্টুডেন্ট কোচিং করতে যাচ্ছে। এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করল,
-” নাম কি? কোথাও পড়াশোনা করো?

যতটা সম্ভব কণ্ঠ নিচু করেই বানিয়ে-বানিয়ে অনেক কথা বলতে লাগলো ঝুমঝুমি। দশ মিনিট আলাপ-আলোচনা করে দুজন বসলো বেঞ্চে। শীতকাল তখন‌ও অব্দি জায়গা ফাঁকা। রুজিনা বেগমের মুখ খোলা তখন। আবদারের কণ্ঠে ঝুমঝুমি বলল,
-” আন্টি আমি একটা জিনিষ বানিয়েছি দেখবেন?

রুজিনা বেগম খুশি হয়ে দেখতে চাইলো। ঝুমঝুমি তখন সুন্দর একটি রুমাল বের করল যার মধ্য খুব সুন্দর করে হাতের কাজ। রুজিনা বেগম রুমালটা হাতে নিয়ে ওলটপালট করে দেখলেন।
-” তুমি নিজে করেছ? খুব সুন্দর তো। আমায় একটা জামায় এভাবে কাজ করে দিবে। যা খরচ হবে দিয়ে দিবো।
-” আপনি যে কি বলেন আন্টি। টাকা লাগবে কেন? এক কাজ করুন এইটা আপনি নিয়ে নিন। জানেন এটার ঘ্রাণ খুব সুন্দর। শুকে দেখুন।

রুজিনা বেগম নাকে ঠেকানো মাত্রই চোখের সামনে সব ঝাপসা হতে দেখলেন তারপর আর কিছুই মনে নেই ওনার। জীবনের প্রথম খু’ন। হাত কাঁপছিল খুব তবুও চোখ বুজে ছু’রি চালালো রুজিনা বেগমের দে’হে। সেদিন এত র’ক্ত দেখে বমি পর্যন্ত করেছিল ঝুমঝুমি। কাজ শেষ করে এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করেই নিজের ঠিকানায় চলে আসে। এখানে থাকে ছয়মাস তারপর পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে আসে ঢাকায়। ঢাকায় এসে বাকি দুটো খু’ন করে।

সবাই তখন বিস্ময়,অবাক,আহত দৃষ্টিতে দেখে ঝুমঝুমিকে। জীবনে মেয়েটা অনেক কিছু সয়েছে। সে তো বাঁচতে চেয়েছিল কিন্তু পিছুটান,অতীত তাকে সুখে বাঁচতে দিল না। সুখের সংসারে নজর পড়েছিল বদ লোকের। এ নজর খুবই ভয়ংকর। একরাশ ঘৃনা, প্রতিশোধের নেশায় বুদ হওয়া ঝুমঝুমি আচমকা আবার কেঁদে উঠল। আষাঢ় তখন ঝুমঝুমিকে বুকের সাথে মিশিয়ে চোখ বন্ধ করে গম্ভীর কন্ঠে বলল, তুমি কেঁদো না তেজপাতা। বিশ্বাস রাখো তোমাকে আমি আর কাঁদতে দিবো না। তোমার জীবনের অতীত তো আমি মুছে দিতে পারবো না কিন্তু তোমার ভবিষ্যত হবে উজ্জ্বল, আলোকিত সেখানে থাকবে না কষ্ট,বিরহ,প্রতিশোধ।
-” আপনি আমায় ছেড়ে যাবেন না তো।

কাতর কণ্ঠ তীরের বি’ধ’লো আষাঢ়ের বু’কে। আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলল, তোমার ছেড়ে দিলে যে আমি ম’রে যাব প্রিয়। তোমার ছাড়া আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তুমিই তো আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন। আমার প্রেম বাগানের একমাত্র প্রেম ফুল তুমি। তুমি না থাকলে আমার বাগান যে ভরে যাবে আগাছায়।

রুমে থাকা প্রতিটি সদস্য দেখল সেই দৃষ্টি। প্রত্যেকটি মানুষের চোখে তখন অশ্রু। তারাও চায় দুঃখবিলাসি মেয়েটার মনের ভেতরে প্রেমের বাগান হোক। সেই বাগানের একমাত্র মালি শুধুই আষাঢ়।

##চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here