তোমার_আমার_চিরকাল🌸 || পর্ব – ৪০ ||

0
514

#তোমার_আমার_চিরকাল🌸
|| পর্ব – ৪০ ||
#লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি

আজ মীরার জন্মদিন। রাত থেকেই অনেক উইশ পেয়েছে সে। ভাইয়াসহ পরিবারের সবাই ফোন করে উইশ করেছে। কাছের কিছু ফ্রেন্ডরা ফোন করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও অনেক উইশ পেয়েছে সে। কিন্তু আশ্চর্য! রাত পেরিয়ে সকাল হলো, আহান তাকে উইশ করলো না। আহান কি জানে না মীরার জন্মদিন? খুব খারাপ লাগলো মীরার। বাসার কেউই জানে না মীরার জন্মদিনের ব্যাপারে। তা-ই বোধয় কেউ উইশও করেনি। আহান কি মিরাজের কাছ থেকেও শোনেনি? সকাল থেকেই মীরার মন খারাপ। আহান মীরাকে না জানিয়েই চলে গেছে। এটাও মীরাকে অবাক করলো। আহান কখনো তাকে না বলে বাহিরে যায়না। আজ তার কি হলো! ভিষণ অভিমান করলো মীরা। বাসার সবাই এমন আচরণ করছে যেন সব স্বাভাবিক।

কলেজে এসে স্যার এর লেকচার শুনছে মীরা। স্যার যা বলছেন সব মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে নিচ্ছে সে। কিন্তু একটু পরেই সে অন্য ধ্যানে চলে যায়। মন খারাপ নিয়ে ভাবতে থাকে, আহান মীরাকে একটা উইশ কেন করেনি। না জানলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তো খবর পাওয়া যায়। তাও আহান দেখেনি?
কয়েকটা ঘন্টা করে মীরাদের চলে যেতে বলা হয়। আজ একসাথে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা চলছে অন্য কলেজদের সাথে। তা-ই স্যারদের মধ্যে সবাই সেখানে উপস্থিত থাকবেন। কলেজের ছেলে মেয়েদের দুটি বাসে করে খেলা দেখার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মীরাসহ আরও অনেকেই যাবে না। তাই যাদের আগ্রহ আছে শুধু তারাই খেলা দেখতে যাবে। কলেজ ইতিমধ্যেই ফাঁকা হয়ে গেছে। মীরার আজ বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। কলেজের বটমূলে বসে আছে সে। মীরার কয়েকজন বান্ধবী এসে তাকে জন্মদিনের উইশ করে। মীরা চমকে যায়। তারা মীরার জন্য কেক ও গিফট নিয়ে আসে। মীরা নিজের কষ্টটা চেপে রেখে হাসার চেষ্টা করছে। ওরা তার জন্য কত কিছু করছে, এখন মন খারাপ দেখিয়ে তাদের আনন্দে পানি ঢালতে চায়না। মীরাকে সবাই কেক কাটতে বলে। মীরা তার সব বান্ধবীদের নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটে। সবাইকে কেক খাইয়ে দেয়, ওরাও মীরাকে কেক খাইয়ে দেয়। এরপর গিফটগুলো দেয়। মীরা ওদের গিফট পেয়ে খুশি হয়ে যায়। ওরা মীরাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যায়। মীরার পছন্দের খাবার ওকে খাওয়ায়। মীরা সত্যিই অবাক হয়ে যায় ওদের কাণ্ড দেখে। ফুরফুরে মুড নিয়ে সে বাসায় আসে। কিন্তু বাসায় এসেই তার মুডটা খারাপ হয়ে যায়। ড্রয়িংরুমে কাউকে দেখলো না সে। তাই তার হাতের গিফটগুলো কেউ দেখেনি। রুমে এসে দেখে সকালে যেভাবে রুমটা রেখে গিয়েছে, এখনো ঠিক তেমনই আছে। তাহলে কি আহান আসেনি? মীরা গিফটগুলো আলমারিতে রেখে আহানের নাম্বারে কল দেয়। আহানের ফোন ক্রমাগত বাজতেই থাকে। কিন্তু উঠার নাম নেই। মীরা যেন আরও ভেঙে যায়। আজ আহানের কি হলো? জন্মদিনের উইশও করলো না, সকালে না বলে চলে গেল; মীরা দেখলোই না। আর এখন ফোন তুলছে না। সব অগোছালো লাগছে মীরার। ফোনটা বিছানায় ছুড়ে ওয়াশরুমে চলে গেল সে।


বিকেলের দিকে বসে বসে ফেসবুক স্ক্রল করছিল মীরা। বাসার কেউ তো তাকে উইশ করেনি, তাই ফেসবুকেই সময় কাটাচ্ছে। যারা তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে, তাদের ধন্যবাদ দিচ্ছে সে। দুপুরের দিকে অনেক কষ্টে খেয়েছে মীরা। সবার এতো অবহেলা মেনে নিতে পারছে না। গলায় খাবার আটকে যাচ্ছে বারবার। খাবার যেন গলা থেকেই নামছে না। মীরার বিকাশে কিছু টাকা এসেছে। কয়েকদিন আগে অনেকগুলো টি-শার্ট ও পাঞ্জাবীতে হ্যান্ড পেন্টিং করে দিয়েছিল সে। বেশ ভালোই সেল হয়েছে। ওগুলোর পেমেন্ট সব মীরার একাউন্টেই এসেছে। এই কাজটা আয়ান করেছে। বর্তমানে সে খুব ভালো ডিজাইনের জ্যাকেট, হুডি ও শার্ট বানাচ্ছে। মীরার এটা প্রথম আয় করা অর্থ। নিজের কাজ থেকে কিছু আয় করার মতো আনন্দ বোধয় পৃথিবীতে আর কিছু নেই। তারা দুই ভাই-ই আজ বাসায় নেই। এদের হয়েছে টা কি মীরা এটাই বুঝতে পারছেনা। উইশ করতে হবে না অন্তত বাসায় তো আসুক, কলটা তো ধরুক। না, তা করবে না। উপায় না পেয়ে দিবার সাথে চ্যাটিং করছে মীরা।
হঠাৎ কোত্থেকে যেন আয়ান চলে আসে৷ মীরা ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আয়ানকে দেখে। আয়ান হাসছে। মীরা বলে, “কোথায় থাক তোমরা? কিছু বলবে?”
আয়ান মীরাকে বলে, “হ্যাঁ, সারপ্রাইজ দিতে এসেছি।”
মীরা ভ্রু কুচকে জিগ্যেস করে, “কি সারপ্রাইজ?”
তখনই আয়ান পিছন থেকে একটা স্প্রে বের করে মীরার দিকে ছুড়ে মারে। মীরা স্প্রের গন্ধে কাশতে শুরু করে। এবং ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হয়ে আসে তার। পরিশেষে অজ্ঞান করে বিছানায় পড়ে যায়।


মীরার যখন জ্ঞান ফিরে, চোখ খুলে সব অন্ধকার দেখে মীরা। গা কেমন ভারি হয়ে আছে। এই অন্ধকারে মীরা কখন এলো? এতটাই অন্ধকার যে মীরা কিছুই দেখছে না। মীরা তার মোবাইলটা খোঁজার চেষ্টা করছে। অনেক হাতাহাতি করেও পায়না। এই অন্ধকারে থাকতে মীরার ভীষণ ভয় করছে। আস্তে করে উঠে বসে মীরা। গায়ের পোশাকটা ভারি লাগছে। গায়ে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে সে কি পড়ে আছে। থ্রি-পিস তো মনে হচ্ছে না। গাউনের মতো লাগছে। মুখটাও কেমন আটা আটা হয়ে আছে। মীরা অন্ধকারের মধ্যে হাতাহাতি করে হাটতে থাকে। হাতে কিছু একটা লাগতেই মীরা বুঝে সে দরজার কাছে এসেছে। দরজায় দাঁড়িয়ে আহানকে ডাকতে থাকে। পুরো বাসাটাই অন্ধকার হয়ে গেছে। ওকে একা রেখে সবাই কোথায় চলে গেল! মীরার কাঁন্না পাচ্ছে। চিৎকার করে সে আহানকে ডাকছে। “আহান কোথায় আপনি। আমার খুব ভয় করছে।”
মীরা কাঁদতে কাঁদতে দরজার সাথে ঠেস দিয়ে বসলো। ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে সে। হঠাৎ করেই পা চালিয়ে মীরাকে ডেকে তার কাছে উপস্থিত হয় আহান। “মীরা, কোথায় তুমি?”
মীরা জবাব দেয়, “আমি দরজার সামনে বসে আছি। আপনি কোথায় আহান। প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন।”
আহান মীরার কাছে এসে তাকে ধরে। “এইতো আমি। একদম ভয় পাবেনা।”
“আপনারা সবাই খুব খারাপ। আমাকে এই অন্ধকারের মধ্যে একা রেখে কোথায় গেছেন?”
“তুমি আগে উঠো। খুব ভয় পেয়েছ না?”
“সরুন। লাগবে না আপনার সাহায্য।”
“স্যরি মীরা।”
মীরা দ্বিতীয়বার কাঁদতে নিলেই আহান বলে, “প্লিজ কেঁদো না। চেহারা নষ্ট হয়ে যাবে তো।”
“আমি এখানে ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি, আর আপনি এসেছেন চেহারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তা বলতে।”
“আসো, আমি তোমাকে নিচে নিয়ে যাচ্ছি।”
আহান মীরার হাত ধরে তাকে নিজের সাথে করে নিচে নামছে। মীরা অন্ধকারে শক্ত করে আহানের হাত ধরে রেখেছে। নিচে নেমে আসার পর আহান মীরার হাত ছেড়ে দেয়। মীরা বলল, “আপনি আমার হাত ছেড়ে দিলেন কেন? কোথায় যাচ্ছেন।”
আহানের আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়না। মীরা কাঁপছে ক্রমশ।
হুট করেই চারদিকে আলো জ্বলে উঠলো। মীরা চারদিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। এতো আলো! পুরো ড্রয়িংরুমে ডেকোরেশন করা হয়েছে। ফুল ও বেলুন দিয়ে সবটা সাজানো হয়েছে। চারপাশে মীরার কাছের সব মানুষজন। একসাথে তারা মীরাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, “হ্যাপি বার্থডে মীরা।”
মীরা কিংকর্তব্যবিমুঢ়! এসব দেখে মীরা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। ওরা ওকে এভাবে সারপ্রাইজ দিবে মীরা ভাবতেও পারেনি। মীরার মা, বাবা, মিরাজ, স্নিগ্ধা, আয়ানের বাবা, মা, প্রিতি, আয়ান, ইরা ও সাইমুন এরা সবাই এসেছে। মীরা ওদের দেখেই খুশিতে কাঁন্না করে দিল। মীরার মা মেয়ের কাছে এসে বললেন, “এই বোকা মেয়ে! জন্মদিনে কেউ কাঁদে?”
“তোমরা সবাই…”
“খুশি হোসনি?”
“খুব খুশি হয়েছি মা। এটা আমার জীবনে সবচেয়ে বড়ো সারপ্রাইজ।”
“জানতে চাইলি না সারপ্রাইজটা কে দিয়েছে?”
মীরা কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিগ্যেস করে, “কে দিয়েছে?”
তখন আয়ান মীরার কাছে এসে বলে, “ভাইয়া। ভাইয়াই সবটা প্ল্যান করেছে। ভাইয়া তোমাকে উইশ করেনি কারণ, এই সারপ্রাইজটা দিবে বলে। এই সব যা দেখছো সব ভাইয়া নিজে সাজিয়েছে। আমাদেরও বলেছে আমরা যেন তোমাকে উইশ না করি।”
মীরার দু’চোখ আহানকে খুঁজছে। কিন্তু ও কোথায় গেল?
আয়ান বলল, “চিন্তা করো না, ভাইয়া আসছে। কেক আনতে গেছে। আগে নিজেকে দেখে নাও।”
আয়ান একটা বড়ো আয়না নিয়ে এসে মীরার সামনে ধরে। মীরা নিজেকে চিনতেই পারছেনা। মীরার পরনে নীল রঙের গাউন। মুখে হালকা মেকাপ। কানে ছোট ছোট দুল। খোলা সিল্কি চুলের কিছু অংশ ডান কাঁধ হয়ে সামনের দিকে পরিপাটি হয়ে আছে। আর কিছু অংশ পিছনে। বাম পাশে গাউনের ওড়না। এক হাতে নীল চুড়ি ও অন্য হাতে ঘড়ি। মাথায় একটা সাদা মুকুট। মীরা সাজলো কখন? আয়ান বলল, “তোমাকে আমরা অজ্ঞান করে এসব করেছি। তোমাকে সাজানো হয়েছে পার্লার থেকে লোক নিয়ে এসে। তারপর ভাইয়া এসব করলো। সবাইকে জানালো সন্ধ্যায় বাসায় আসতে।”
প্রিতি মীরার কাছে এসে বলে, “ইউ লুক সো কিউট।”
“তোমাকে সুন্দর লাগছে প্রিতি।”
মীরা হেসে জবাব দিল। স্নিগ্ধার কোলে তার মেয়ে। মীরা হেটে স্নিগ্ধার কোল থেকে বাচ্চাটাকে নিল। আদর করতে করতে বলল, “জানিস তোর আর আমার জন্মমাস এক। তোর আর আমার মাঝে এক সাপ্তাহের তফাৎ। কি সুন্দর না?”
মীরা মিরাজের দিকে তাকিয়ে বলে, “নাম কি রাখলি?”
“তুই বল কি রাখব। তোর দেওয়া নামেই সবাই ডাকবে।”
মীরা কিছুক্ষণ ভাবলো। মুচকি হেসে বলল, “মেহজাবিন।”
“মাশআল্লাহ, এটা সুন্দর একটা নাম।”
“পছন্দ তোদের?”
স্নিগ্ধা বলল, “আজ থেকে আমরা ওকে মেহজাবিন বলেই ডাকব।”
“তোমরা আমাকে এতোটা গুরুত্ব দাও ভাবি? কেন? তোমাদের নিজস্ব একটা পছন্দ আছে না?”
“তুমি আমাদের সবার চোখের মণি। তুমি যা বলবে তা-ই হবে।”
মীরা মেহজাবিনকে তার মায়ের কোলে দিয়ে চলে যায়।
একটুপর আহান আসে কেক নিয়ে। আহানকে দেখে মীরার চোখ যেন পলক ফেলছেই না। আজ আহান একটা নীল রঙের স্যুট পড়েছে। মীরার গাউনের সাথে মিল রেখেই পড়েছে। গায়ে সাদা শার্ট। পায়ে ব্ল্যাক সুজ। যেভাবে হিরোর মতো এন্ট্রি নিয়ে আসছে, মীরা তো দেখেই এক দফা ক্রাশ খেল। আহান কেকটা নিয়ে মীরার সামনে এলো। মীরার দৃষ্টি এখনো স্থির তার ব্যক্তিগত মানুষটার উপর। এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে সে আহানের দিকে। আহান তাকে বলল, “হ্যাপি বার্থডে শেহজাদি।”
ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠল মীরার। শীতল কণ্ঠে বলল, “থ্যাঙ্কিউ মিস্টার।”
আহান একটা ছু*রি মীরার হাতে ধরিয়ে দিল। সবাইকে ডেকে নিল। মীরা ও আহান দুজনেই পাশাপাশি। মীরা আহানের হাত ধরে কেক কাটলো। সেটা আহানকে খাওয়ালো। আহানও তাকে কেক খাওয়ালো। তারপর এক এক করে কেক খাওয়ানো শুরু হলো। সবার সামনে আহান মীরাকে একটা লকেট পরিয়ে দিল। যেখানে আহান ও মীরার নাম লেখা আছে। মীরা এটা দেখে খুব খুশি হয়ে গেল। আয়ান জোরে মিউজিক চালিয়ে দিল। আহানকে বলল মীরার সাথে যেন একটা কাপল ডান্স করে। মীরা লজ্জায় মিশে গেছে একেবারে। আহান নিজে থেকেই মীরার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। আহানকে কি করে প্রত্যাখ্যান করবে মীরা? সেও আহানের হাতে হাত রাখলো। গান চলছে, সেই সাথে ওদের কাপল ডান্স। সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছে ওদের৷
দুজন দুজনের কাছাকাছি, পাশাপাশি। সুন্দর একটা মুহুর্ত চলছে। মীরা আহানকে বলল,

“আপনি দিন দিন অনেক স্মার্ট হয়ে যাচ্ছেন মিস্টার। সুদর্শনও বটে। একটা কথা বলে রাখছি, আমি ছাড়া আমার ব্যক্তিগত মানুষটার উপর যেন কারো ছায়া না পড়ে। তাহলে কিন্তু আপনার খবর আছে।”
আহান মীরাকে ঘুরিয়ে বলল, “কারো ছায়া পড়বে না। এইটুকু বিশ্বাস রাখতে পারো।”
ওদের কাপল ডান্স শেষ হলে সবাই জোরে তালি দিল।
মীরার জন্মদিনে আয়ান তার গিটারটা নিয়ে গান শুরু করলো। আয়ানের সাথে গানের ছন্দ মেলাচ্ছে প্রিতি। মীরা খুব এঞ্জয় করছে। প্রিতি আর আয়ান মিলে মীরা ও আহানের বেশ কিছু কাপল পিক তুলেছে। আয়ান অনেক সুন্দর করে তার ক্যামেরায় মীরা ও আহানের নাচের ভিডিও করেছে। সব শেষে সবাই একসাথে খেতে বসে। সবাই আজ খোশমেজাজে রয়েছে। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে এক এক করে সবাই মীরাকে তার জন্য নিয়ে আসা গিফট দেয়। মীরা ইরাকে দেখে বলে, “দিবা আসেনি?”
“জিগ্যেস করেছিলাম, বলল ওর শরীর ভালো লাগছে না।”
“অহ্।”
মীরা জানে দিবা কেন আসেনি। শরীর ভালো না তো বাহানা মাত্র।


আড্ডা দিতে দিতে রাতের অর্ধভাগ হয়ে গেল। মীরাকে নিয়ে আহান নিজেদের রুমে চলে গেল। মীরা ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। আহান তাকে উঠিয়ে দিল। বললো বসতে। নিজের পরনের স্যুটটা খুলে ফেললো আহান। পরনের শার্টটা গায়ে রাখলো। মীরাকে বলল, “তোমাকে আমার আরও একটা গিফট দেওয়ার আছে মীরা।”
মীরা উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলল, “কি?”
আহান মীরার হাত ধরে বলল, “এসো আমার সাথে।”
আহান মীরাকে নিয়ে নিজেদের রুম থেকে বের হয়ে গেল। দোতলার মধ্যে প্রায় চার থেকে পাঁচটা রুম আছে। কিন্তু কখনো মীরা বাকি রুমগুলোতে চোখ বুলায়নি। আহান একটা ছোট্ট রুমে মীরাকে নিয়ে গেল। দরজা খুলে মীরাকে দেখিয়ে বলল, “পছন্দ হয়েছে কিনা দেখো তো।”
মীরা চারদিকে চোখ বোলালো। এটা যেন আস্ত একটা লাইব্রেরি। ছোট বড়ো চার পাঁচটা বুকশেলফ। সারি সারি বই রাখা আছে বুকশেলফগুলাওতে। আলোয় চারপাশটা অসম্ভব সুন্দর লাগছে। মীরা আস্তে আস্তে সবকিছু দেখছে। কত লেখক লেখিকার বই আছে এখানে। মীরার প্রিয় লেখকেরও বই আছে। আহান পাশ থেকে বলল, “পছন্দ হয়েছে?”
“খুব খুব খুব।”
“আজ থেকে এটা তোমার। বই পড়ার জন্য আলাদা টেবিল চেয়ারও আছে। ইচ্ছে হলে বই নিয়ে গিয়ে রুমেও পড়তে পারো।”
“আপনি আজ আমাকে শুধু সারপ্রাইজই দিয়ে যাচ্ছেন।”
“তোমার কাছে আমার কিছু চাওয়ার আছে মীরা।”
গম্ভীর হয়ে বলল আহান। মীরা জিগ্যেস করল, “কি চাই আপনার?”
আহান নিশ্চুপ। তার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। যদি মীরা রাগ করে। তাহলে কিভাবে সামাল দিবে সে?
“কি হলো? বলুন।”
“কিছুনা।”
“মানে? একটু আগেই তো বললেন কিছু চাই আপনার।”
“অনেক ধকল গেছে। চলো, চেঞ্জ করে ঘুমাবে। ঠান্ডাও পড়ছে ভিষণ।”
“আপনি কিন্তু বললেন না।”
“আমি মজা করেছি। চলো।”
“আমি বিশ্বাস করিনা।”
“আরে বললাম তো কিছুনা, আমি মজা করেছি।”
মীরা আর কিছুই বলল না। তবে মনে মনে রাখলো, কিছুতো বলতে চেয়েছে সে। আহানের সাথে আবার নিজেদের রুমে চলে গেল।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here