কি_নেশায়_জড়ালে #পর্ব_১১ লেখিকা #Sabihatul_Sabha

0
605

#কি_নেশায়_জড়ালে
#পর্ব_১১
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

মুখোমুখি সোফায় বসে আছে সাজ্জাদ আর সুবর্ণা বেগম।

সুবর্ণা বেগম বিরক্ত মুখে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তুমি বুঝতে পারছো তুমি কি বলছো..? আমি সেই ছোটো কালে তোমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছি কথা দিকে রেখেছি। এখন আমি কোন মুখে উনাদের নিষেধ করবো..?’
সাজ্জাদঃ প্লিজ আম্মু এটা গল্প বা সিনেমা নয়, এটা বাস্তব জীবন। তুমি ছোটো কালে কার সাথে না কার সাথে বিয়ে ঠিক করে রেখেছো! আমি বড় হয়েছি আম্মু। আমার নিজের পছন্দ অপছন্দ বলে কিছু একটা আছে।
সুবর্ণা বেগমঃ একজন সাধারণ স্কুল মাস্টার এর মেয়ের সাথে আর যাই হোক তোমাকে আমি বিয়ে করতে দিবো না। চৌধুরী বংশের একটা সম্মান বলে কিছু আছে। ওরা আমাদের কোনোদিক থেকেই যাই না।
সাজ্জাদ গম্ভীর কণ্ঠে বললো, ‘ এবার কিন্তু একটু বেশি বলে ফেলছেন আম্মু। আপনি কোনো কাজ কে ছোটো করে দেখতে পারেন না। আজ আমি এই জায়গায় কিভাবে আসলাম..? আজ আমি সেই স্কুল মাস্টার দের কাছে প্রথম অক্ষর শিখেছি বলেই আজ এতো বড় কোম্পানির মালিক।
সুবর্ণা বেগম চিন্তায় পড়ে গেলেন৷ কিভাবে ছেলেকে মানাবেন..?

সুবর্ণা বেগম থেমে গেলেন।

সাজ্জাদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। বাকিটা আপনি বুঝে নিবেন৷ আমি চাই আম্মু কাজটা একটু তারাতারি এগিয়ে যাক। যত দেরি হবে ততই আমাদের কোম্পানির ক্ষতি হবে। আপনি যতদিন না রাজি হবেন আমিও কোম্পানিতে যাচ্ছি না।
সুবর্ণা বেগমঃ বাচ্চামো বন্ধ করো সাজ্জাদ। কোম্পানিটা কোনো পুতুল খেলা নয়।
সাজ্জাদ ঝুঁকে ওর আম্মুকে বলে উঠলো, ‘ আমার জীবনটাও কোনো পুতুল খেলা নয়।’

সাজ্জাদ নিজের রুমে চলে গেলো।

এতোক্ষন মা ছেলের কথোপকথন শুনছিলো রুম থেকে আহনাফ ।
সাজ্জাদ যেতেই আহনাফ রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।

সুবর্ণা বেগম এর পাশে বসে আহনাফ বলে উঠলো, ‘ ছোটো আম্মু তোমাকে রাগলে না ওন্নেক কিউট লাগে। ‘
সুবর্ণা বেগম আহনাফ এর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।
আহনাফ হেঁসে বলে উঠলো, ‘ বাহ রাগলে আরও বেশ লাগে। ‘
সুবর্ণা বেগম এবার আর কিছু বললেন না। এমনিতেই মন ভালো না। ছেলের জন্য সেই ছোটো কালে মৌ কে পছন্দ করে রেখেছে। আর আজ ছেলে বলছে রূপাকে বিয়ে করবে৷

আহনাফ সুবর্ণা বেগম এর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,’ আম্মু বেশি কিছু না শুধু ছেলের খুশির কথাটা একটা বার ভেবে দেখো৷ কিছু কিছু সময় মা বাবার সিদ্ধান্ত সঠিক হয় না।সন্তান কি চায়, কাকে পেলে সে মানুষিক শান্তি পাবে সেইগুলো ও দেখতে হবে। ভাইয়ার পছন্দ করা মেয়েকি দেখতে খারাপ..?
সুবর্ণা বেগমঃ না, মেয়েতো দেখতে মাশাল্লাহ।
আহনাফঃ তাহলে আর কি সমস্যা..? মেয়ের বাবার পেশা তাইতো..?
সুবর্ণা বেগমঃ না, এটা তো এমনি বলেছি। কি করবো কিছুই খোঁজে পাচ্ছিলাম না তাই যা মাথায়ো আসলো তাই বললাম।
আহনাফঃ সব বাদ কাল তুমি বউ দেখতে যাবে এন্ড লাস্ট কথাও দিয়ে আসবে।
সুবর্ণা বেগমঃ এতো তারাহুরো কেনো..? বাড়িতে তো কেউ কিছু জানে না।
আহনাফ হেঁসে বলে উঠলো, ‘ ভাই আগে আগে সব করে নিয়েছে আর বাকিটা কাল আমি বাড়িতে গিয়ে করে নিবো। তুমি শুধু নিজে রাজি থাকলেই হবে। ভাই তোমার পারমিশন ছাড়া কখনো বিয়ে করবে না।
সুবর্ণা বেগমঃ এতে তোর লাভ কি..?
আহনাফ আমতাআমতা করে বলে উঠলো, ‘ কিসের লাভ। ভাই এর কাজ করলেও বুঝি কেউ লাভ লছ খুঁজে।
সুবর্ণা বেগমঃ আমি তোকে খুব ভালো করে চিনি।
আহনাফ হেঁসে বললো, ‘ হ্যাঁ লাভ তো আছে। ভাই বিয়ে করলে তারপর আমার পালা। আমিও ভাইয়ার মতো হুট করে বউ পছন্দ করে তোমাদের জানিয়ে দিবো। ভাই হলো আমার গুরু। ভাই যেভাবে যাবে আমার লাইফ ও ঠিক সেভাবে।

সুবর্ণা বেগম রাজি হলেন কাল রূপার বাড়িতে যেতে। কিন্তু রূপা সে কি রাজি হবে..?

আহনাফ সাজ্জাদ এর রুমে এসে বলে উঠলো, ‘ ভাই তোমার তো ঈদের দিন কাল কে।’
সাজ্জাদঃ কেনো এমন কি খুশির খবর আছে শুনি।
আহনাফঃ আগে বলো আমাকে কি ট্রিট দিবে..?
সাজ্জাদঃ আগে আমার খুশির খবরটা তো শুনি। তারপর ভেবে দেখবো।
আহনাফঃ ছোটো আম্মু রাজি হয়ে গেছে কাল কথা বলতে যাবে।
সাজ্জাদঃ সত্যি!!???
আহনাফঃ আমাকে দেখে কি মনে হয়..?
সাজ্জাদ খুশিতে মুখে হাত দিয়ে বিছানায় কিছু সময় বসে রইলো।
আহনাফঃ ভাই তুমি ঠিক আছো তো..?
সাজ্জাদ আহনাফ এর দিকে তাকিয়ে বললো,’ আজ আমি খুব খুব খুব খুশি তোর কি চাই বল..?
আহনাফঃ আগে তোমার বিয়েটা হোক। তারপর আমি একজন কে চাইবো তুমি তাকে পেতে সাহায্য করবে.
সাজ্জাদ হেঁসে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,’ শুধু এটুকুই…
আহনাফ হাসলো….

_________________

সকালের ট্রেনে আহনাফ নিজের বাড়ি চলে গেলো।।

দুপুরে সুবর্ণা বেগম আর সাজ্জাদ এসে উপস্থিত হলো রূপাদের বাসায়।

রূপা তো সুবর্ণা বেগম কে দেখে জড়িয়ে ধরলো৷
রূপার আম্মু রান্না বসালো। নাস্তা দিলো।
রূপার আব্বু স্কুলে।
সাজ্জাদ চুপচাপ বসে আছে।
রূপা ওর আম্মুকে সব কাজে সাহায্য করছে৷
পাশেই বসে বসে তা দেখছে আর হাসাহাসি করছে সুবর্ণা বেগম।
কে বলবে এই মহিলা কাল রাতেও রূপাকে বউ হিসেবে মানতে রাজি ছিলেন না।

রূপা আব্বু বাসায় এসে সাজ্জাদ কে দেখে খুশি হলেন।
সাজ্জাদ ছেলেটাকে উনার খুব ভালো লাগে। কথার মধ্যে একটা আলাদা মিষ্টতা আছে। চোখে মুখে স্নিগ্ধতা ফুটে উঠে। মাথা নিচু করে কথা বলে। কথা খুব কম বলে তবে যা বলবে সবটাই যুক্ত সংগত।

খাবার টেবিলে আরেক দফা আড্ডা হয়ে গেলো৷ রূপার আম্মু,আব্বু আর সুবর্ণা বেগম এর৷ সাথে রূপাও যুগ দিয়েছে৷ সাজ্জাদ মুখ ভার করে বসে আছে ওর আম্মু জেনো ভুলেই গেছে কেনো এসেছে। এখানে কেউ সাজ্জাদ কে পাত্তা দিচ্ছে না।
রূপা আঁড়চোখে বেশ কয়েকবার সাজ্জাদ এর দিকে তাকালো।
খাবার শেষ করে সুবর্ণা বেগম বললো,’ আমি একটা কথা বলতে চাই যদি আপনাদের কোনো আপত্তি না থাকে..?
সবাই সুবর্ণা বেগম এর দিকে তাকালো। সাজ্জাদ এর কেমন ভয় ভয় লাগছে রূপা যদি মুখের উপর না করে দেয় তাহলে সুবর্ণা বেগম আর কখনো আসবেন না।
সুবর্ণা বেগমঃ আমি রূপাকে আমার মেয়ে বানাতে চাচ্ছি। সবাই চায় ছেলের বউ আমি চাই মেয়ে। আমি সাজ্জাদের বউ করে রূপাকে নিয়ে যেতে চাই আপনাদের কি এতে কোনো আপত্তি আছে..? সবার চোখে চৌধুরী বাড়ির বউ আমার চোখে আমার মেয়ে।
রূপা সহ সবাই অবাক।
রূপার আম্মু খুশি হয়ে বললেন,’ আমাদের কোনো আপত্তি নেই। মাশাল্লাহ সাজ্জাদ খুবি ভালো ছেলে আর আপনাদের সম্পর্কে নতুন তো কিছু জানার নেই৷
রূপার আব্বুও মত দিলেন।
রূপার চোখ মুহূর্তে জলে ভরে গেলো। সে তো কোনো দিন ও বিয়ে করবে না।
রূপা উঠে যেতে নিলে ওর আম্মু হাত ধরে বসিয়ে দিলো৷
রূপার রাগী সারা মুখ লাল হয়ে উঠলো।
সাজ্জাদ বললো,’ আন্টি আমি কি রূপার সাথে আলাদা একটু কথা বলতে পারি..?
~ হ্যাঁ অবশ্যই যাও..

রূপা আর সাজ্জাদ দাঁড়িয়ে আছে ছাঁদে।

রূপাঃ আপনাকে আমি বিয়ে করবো না আপনি এখন গিয়ে নিষিধ করে দিবেন।
সাজ্জাদ রূপার চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
~ কেনো তা জানতে পারি..?
রূপা কঠিন মুখে বলে উঠলো, ‘ বলতে বাধ্য নই।
~ তাহলে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাও।
রূপাঃ আমি এই বিয়ে কখনো করবো না।
~ কোনো একটা কারন দেখাও..?
রূপাঃ আমার অতীত ভয়ংকর.. আমার অতীত সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
~ জানার ইচ্ছে ও নেই। এইসব জানার আমার প্রয়োজন নেই।
রূপা হেঁসে সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি একজন খু’নি এবার করবেন আমায় বিয়ে..?
সাজ্জাদ থমকে গেলো। তবে কিছুই বললো না।
রূপা হেঁসে বললো,’ আর কিছু জানার আছে..? আমি চাই আপনি নিষেধ করে দেন।
~ তুমি নিজে খু’ন করেছো হাতে নাকি বলে দিয়েছো আত্মহত্যা করতে…? সে ভুল করেছে তুমি তার প্রতিবাদ করেছো। হ্যাঁ মানছি তোমার সবার সামনে জুতা খুলে মা’রা উচিত হয়নি। কিন্তু আমার বোনের সাথেও যদি কেউ এমনটা করতো তাহলে আমিও থেমে থাকতাম না। নিজেকে দোষী ভাবা বন্ধ করো। এতে তোমার কোনো হাত নেই। জীবনের সাথে লড়াই করে বাঁচতে হয় সে প্রথমেই হার মেনে নিয়েছে।
রূপা অবাক হয়ে বললো,’ আপনি এই সব কিভাবে জানলেন..?
~ আমি এমন অনেক কিছুই জানি রূপা। বাদ এইসব কথা। আমি তোমাকে জোর করবো না তবে ভাবার জন্য টাইম দিলাম৷
রূপাঃ আমার থেকেও ভালো কিছু, ভালো কাউকে পাবেন।
~ আমার জীবনে পৃথিবীতে পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার হলে তুমি। আমি তোমাকে চাই তবে জোর করে নয়।

সাজ্জাদ চলে যেতেই রূপা মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো। কি করবে সে এখন..?
আহনাফ এর বলা সেই দিনের একটা কথাই বার বার কানে বাজছে,’ আহনাফ চৌধুরীর গার্লফ্রেন্ড হবে তোমার মতো দু’পয়সার মেয়ে। চৌধুরী বাড়ির বউ হওয়ার কি যোগ্যতা আছে তোমার..?

রূপা চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ালো । হ্যাঁ সে করবে বিয়ে । আহনাফ কে দেখিয়ে দিবে দু’পয়সার মেয়ে আজ চৌধুরী বাড়ির বউ। যোগ্যতাহীন মেয়ে আজ চৌধুরী বাড়ির বউ। প্রতিশোধের নেশা মাথায় চড়ে বসলো।
রূপার বাবা সব সময় একটা কথা বলতেন” কুকুর আমাদের কামড়াতে আসবে তাই বলে আমরাও যদি কুকুর কে কামড়াতে যাই তাহলে কুকুর আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়..?
এই একটা কথা রূপাকে বুঝিয়ে দিয়ে ছিলো, ‘ একজন আমার সাথে খারাপ করেছে বলে আমিও তার প্রতিশোধ নেবো তাহলে তার আর আমার মধ্যে পার্থক্য কোথায়..? সে যে ভুল করেছে আজ আমিও বুঝে শুনে একি ভুল করলাম।

রূপা প্রতিশোধ নিবে না শুধু আহনাফ কে দেখিয়ে দিবে দু’পয়সার মেয়ে আজ তার ভাবি, বড় ভাইয়ের বউ।

নিশ্চয়ই আহনাফ সব জানে৷

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here