#এক_টুকরো_সুখ
#পর্ব_৩
#লেখনীতে_শুভ্রতা_প্রাণ
পুকুর থেকে পাতিল তুলতে গিয়ে বেশ ভালো ভাবেই গোসল হয়ে গেলো আমার। মাঝ পুকুর থেকে পাতিল তুলবো আর ভিজবো না এটা কি হয়? ব্যাপারটা ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো হলে মন্দ হতো না। না ভিজেই পুকুর থেকে পাতিল তুলে ফেলতে পারতাম। এগুলো বাদ দিয়ে ভেজা কাপড়েই সব থালা বাসন ধুয়ে ফেললাম। হঠাৎ মনে পড়লো সেই কণ্ঠস্বরের কথা। হুড়মুড়িয়ে চাইলাম সেদিক পানে। নারকেল গাছের সাথে হেলে দাঁড়িয়ে আছে এক যুবক। আমাদের গ্রামে আগে কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ে না। কে এই ছেলে? আর হঠাৎ আমার দিকে এভাবে চেয়ে আছে কোন সুখে? ভেজার কারণে খারাপ দেখাবে এমন কাপড় যদিও পড়ি না তবু নিজেকে একবার দেখে নিলাম। নাহ খারাপ কিছু নজরে আসছে না।
“এইযে কাকু কে আপনি? এখানে আমাদের পুকুর পাড়ে কি করছেন?”
“এটা দুপুর।”
সেভাবে হেলে থেকেই কথাটা বললো ছেলেটা। ভাব খানা এমন যেন সে কে তা জানতে চেয়েছি এটুকুই কেবল তার কর্ণকুহরে পৌঁছেছে। কিন্তু ভাই এটা তো সকাল। উনি দুপুর বলছেন কেনো? পাগল আছে বোধহয়।
“কাকু আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না এখনো সকাল দশটা বাজেনি? এরমধ্যে আপনি দুপুর কোথায় পাচ্ছেন?”
এবার মনে হয় ছেলের হুশ ফিরেছে। কেমন চোখ ছোট করে চাইছে দেখো। মুখ ঝামটালাম আমি।
“নিজের প্রেমিকের বয়সি এক যুবককে কাকু বলে তার মনটা চুরমার করে দিতে তোমার একটু মায়া হলো না গো মেয়ে? অন্তত দাদু ডাকতে পারতে। নাতনি ভেবেই না হয় বিয়েটা করে নিতাম আমি। আর আমি ওই দুপুরের কথা বলিনি সুন্দরী। বললাম আমার নাম দুপুর।”
ছেলেটার নাম দুপুর! বাকি কথা গুলো যেন আমার মগজে ঢুকলো না। দুপুরেই আটকে রইলাম। এ কেমন নাম? অবাক হয়ে বললাম
“মানুষের নাম দুপুরও হয়?”
ছেলেটা আমার দিকে এগোতে এগোতে বললো
“কেনো নয়? যদি মেয়েদের নাম সকাল হতে পারে তবে আমার নাম দুপুর হলে অসুবিধা কোথায় হু?”
শেষ টুকু আমার দিকে ঝুকে তারপর বললো। তা দেখে একটু পিছিয়ে গেলাম আমি।
“অসুবিধা! কিসের অসুবিধা? কোনো অসুবিধা নেই। আপনার নাম দুপুর হোক বা বিকেল বা রাত আমার কোনো অসুবিধা নেই। এখন সামনে থেকে সরুন তো। ভিজে কাপড়ে থাকলে মা বকবে আমায়। বাড়ি যেতে দিন।”
“আরে রাত আমার না আমার ছেলের নাম। আর তোমাকে কি আমি ধরে রেখেছি? যাও না পাশ কাটিয়ে। এমনিতেই এরকম আয়না সুন্দরী সামনে থাকলে খুব বেশি সময় লাগবে না আমার চোখ সহ হৃদয় ঝলসে যেতে।”
ছেলেটার অধিকাংশ কথা মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে আমার। নাহ আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না এর সামনে। তবে আমার পাগল হতে সময় লাগবে না বেশি। পাশ কাটিয়েই সামনে এগোতে থাকলাম। মায়ের রান্না বোধহয় এতক্ষণে শেষ হয়ে গেছে। দেরি হলে আবার কি না কি বলবে। আব্বারও হয়তো বাইরে কাজ থাকতে পারে আবার আপা, দুলাভাই আছে। উফ কি যে যন্ত্রনা। কেন এই লোকটা সামনে এলো। এখন কত দেরি হয়ে আমার। বাড়ির কাছাকাছি যেতে মনে হলো বাড়িতে নতুন মানুষের আগমন ঘটেছে। পা চালিয়ে বাড়ি ঢুকলাম। উঠোনে চেয়ার পেতে বসে আছে আমার আপার শশুর আর শাশুড়ি। আপা দাওয়ায় বসে আছে পাশে আব্বা। মা রান্না ঘর থেকে টুকটাক কথা বলছেন। দুলাভাইকে আশেপাশে দেখছি না। আপার শাশুড়ির পাশে একটা খালি চেয়ার পড়ে আছে। রান্না ঘরে মায়ের কাছে থালা বাসন রেখেই দৌড় দিলাম কাপড় বদলাতে।
“আসলে বেয়াইন বাজারে টুকিটাকি দেনা আছে আমাদের সেই সাথে গতবার কেনা জমির কিছু টাকাও বাকি রয়ে গেছে। রুবিটার বিয়ে দিতে গিয়ে আর এগোতে পারিনি। তাই অন্য বছর ছোট খাটো একটা গরু বা ভাগে দিতে পারলেও এবার আর কুরবানী দিতে পারছি না। ঈদের পরের দিনই যদি আপনারা রুবির জন্য না আসতেন তবে কিছুটা দেনা শোধ হয়ে যেত। বাকিটাও এত দিনে সামলাতে পারতাম। কিন্তু এই সময় টুকু আমার বিয়ের ধকল সামলাতেই লেগে গেলো। বোঝেনই তো আহামরি কামায় তো করি না।”
আব্বার কথায় আপার শাশুড়ি একটু কেমন কেমন করে চাইলেন। পরে ফোড়ন কেটে বললেন
“কি আর করবেন বেয়াই। গরিব মানুষ হলে এটুকু তো হবেই।”
“আমরা নাহয় গরিব বলে কুরবানী দিতে পারছি না কিন্তু আপনারা কেনো কুরবানী না দিয়ে আমাদের মতো গরিবদের সাথে ঈদ করতে এসেছেন আন্টি?”
কাপড় বদলে আসার পরে আব্বার কথা গুলো শুনতে শুনতেই কাপড় মেলে দিচ্ছিলাম। বিপরীত দিকে থাকায় আমাকে কেউ দেখেনি। হঠাৎ আমার এমন কথায় যেন সব চমকে উঠলো। মা আর আপা তো রাগী দৃষ্টিতে চেয়ে আছেই সেই সাথে আপার শাশুড়িও। তিনি কিছু বলার জন্য মুখ খুলবেন তার আগেই আপার শশুর কথা বলে উঠলেন।
“হাহা। আমরাও আহামরি বড়োলোক নই রে মা। তোদের মতোই বলা চলে বুঝলি।”
“এই মেয়েকে লাই দিচ্ছো কেনো তুমি? ও আমাদের অপমান করতে চাইছে বুঝতে পারলে না? ওদের বাড়িতে ঈদ করতে এসেছি বলে।”
“আহ আকাশের মা চুপ কর তো। বাচ্চা মানুষ আর তাছাড়া ও তো ভুল কিছু বলেনি। আয়না মা আয় তুই আমাদের পাশে এসে বস। তুই করে বলায় আবার রাগ করিস না যেন।”
এগোতে এগোতে মুচকি হেসে বললাম
“না না কাকু ঠিক আছে। আপনি তো আমার আব্বার মতোই।”
সবার মুখ দেখে যা বুঝলাম একমাত্র আমার আব্বা ছাড়া আর কারো পছন্দ হয়নি আপার শশুরের এভাবে আমাকে আহ্লাদ দেওয়া। আপার শাশুড়ি তো আপাকে ডেকে নিয়ে ঘরেই চলে গেলেন। বোধহয় পরামর্শ করতে হবে আমাকে জব্দ করার জন্য। আমি ওদিকে পাত্তা না দিয়ে আব্বা আর আপার শশুরের সাথে গল্প করতে থাকলাম।
“আয়না মা তো আগামীতে মাধ্যমিক দিবি তা কোন গ্রুপ?”
আপার শশুরের প্রশ্ন শুনে হেসে বললাম
“সাইন্স কাকু। দোয়া করবেন আমার জন্য।”
“বাহ্ বাহ্ বেশ। দোয়া কি আবার চাইতে হয় নাকি পাগল। গুরুজনের দোয়া সবসময় সাথে থাকে।”
আব্বা বলে উঠলেন
“এই মেয়েকে নিয়ে যত চিন্তা বুঝলেন ভাই সাহেব। ছেলে ছোট আর রুবির তো হিল্লে হয়েই গেছে। এখন আয়ু মাকে মানুষ করতে পারলে আমাকে আর আমার মুহিনকে টেনে তুলতে পারবে মা আমার।”
কাকুও আব্বাতো কথায় তাল দিলেন। এরমধ্যে দুলাভাই বাড়িতে ঢুকলেন তার পেছনে আরো কেউ একটা আছে। একটু কাছে আসতেই বুঝলাম এই সেই রাতের বাপ ছেলেটা। মানে দুপুর আরকি। এ এখানে কেনো? আবার আমাকে পাগল করে দেবে ভাই কোথায় যাই আমি!
“কিরে দুপুর। আকাশকে ডাকবি বলে কোথায় হারিয়ে গেলি?”
দুলাভাই বললো
“কি বলো আব্বা? আমি তো আরো আসার সময় ওকে পুকুর পাড় থেকে কুড়িয়ে আনলাম। কি ব্যাপার ভাই দুপুর! কোথায় ছিলি তুই?”
মানে কি? এই রাতের বাপ দুলাভাই এর পরিচিত! ওনাদের সাথেই এসেছেন? আমাদের বাড়িতে থাকবেন? এগুলো কি! এসব ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো আব্বার কথা। চেয়ে দেখি কেমন মুখ শুকিয়ে গেছে। এবার আব্বা এতজনকে মার্কেট কীভাবে করে দেবেন? তারপর বাজারও তো আরো লাগবে! নিজের কথা যেন আর মস্তিস্ক ভাবতে চাইলো না। আব্বার কি অবস্থা হবে তা নিয়েই ব্যাস্ত হয়ে পড়লো সকল নিউরন।
চলবে…?
[আস্সালামুআলাইকুম 🖤 গল্প কি এতই খারাপ হচ্ছে যে একটা মন্তব্য করা যায় না?]