অবাধ্য_বাঁধনে #পলি_আনান [পর্ব সংখ্যা ১৯]

0
1027

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ১৯]
______________________
” রাসেল ভাই আপনি এখানে কি করছেন?”

পরিচিত কন্ঠে চমকে তাকালো রাসেল।ঈশাকে দেখতে পেয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ইশারায় ডাকলো তাকে।

” আপনি এখানে কি করছেন রাসেল ভাই?ছেলে পক্ষের কেউ হোন?”

” হুম হই।তার আগে শুনো তোমাকে একটা মেয়ে অনেক বার ডেকেছে।ঈশা ঈশা করে গলা ফাটানোর অবস্থা।আমি ভাবলাম এখানে ঈশা আবার কে?এখন বুঝতে পারছি মেয়েটা তুমি।”

” আমাকে ডাকছে?কিন্তু কেন?”

” আমি কি জানি।ছাদ থেকে ডাকলো।”

” তাহলে দেখে আসি।”

ঈশা পা বাড়ালো ছাদের দিকে।রাসেল যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।দ্রুত বসার ঘরে ফিরে নাজিমের পাশে গিয়ে বসলো।নাজিম এতক্ষণ তাদের খুঁজছিলো ঈশানকে বেশ কয়েবার ফোন করেছে তবে ছেলেটা ফোন তুলেনি।রাসেলকে দেখে নাজিম ব্যস্ত হয়ে বলে,

” ঈশান কোথায়?তোমরা হঠাৎ কোথায় উধাও হলে?”

” ঈশান আসবে একটু বেরিয়েছে।”
.

ছাদে প্রখর রোদে চোখ মেলে তাকানোর জো নেই।ঈশা সিড়ি বেয়ে উঠতে সর্তক দৃষ্টিতে তাকালো চারিদিকে।নাহ এখানে কেউ নেই রাসেল যে বললো কেউ তাকে ডাকছে।সিড়ি ঘর পেরিয়ে ছাদে প্রবেশ করতে ওড়নার সাহায্যে মাথা ঢাকলো ঈশা।প্রচন্ড রোদ্রে মাথাটা কেমন ঘুরে উঠলো।আশেপাশে তাকিয়ে কোন মেয়ের চিহ্ন পাওয়া গেলো না।ঈশা ছাদের পেছনের সাইডে যাওয়ার জন্য এগিয়ে গেলো ঈশানকে দেখতে পেয়ে চমকে উঠলো সহসা।

” আপনি এখানে কি করছেন?”

” নাচ করছি।নাচবে আমার সাথে?”

” কি সব বাজে বকছেন।আপনার আজেবাজে কথা শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না আমার।”

” তাহলে অন্যকিছু বলি?প্রেমের কথা?বিয়ের কথা?সংসারের কথা?নাকি বাচ্চাকাচ্চার কথা?”

ঈশানের ঝাঝালো কথার সুরে ভ্রু কুচকে এলো ঈশার।এই মানুষটা অদ্ভুত আচরণ করছে কেন?সবচেয়ে বড় এখানে একটা মেয়ে থাকার কথা কিন্তু ঈশান কেন।

” একে তো রোদ তার উপর আপনার বাজে কথা শুনতে আমার প্রচন্ড বিরক্তি কাজ করছে। আমি গেলাম।”

ঈশা যেতে উদ্যত হলে ঈশান তার মুখোমুখি দাঁড়ালো।উদ্দীপ্ত দুচোখে চোখ রাখলো সে।

” এক পা গেলে খবর আছে বলে দিলাম।”

” আপনাকে এখানে দাওয়াত করেছে কে?এখানে এসেছেন ঝামেলা পাঁকাতে?”

” ঝামেলার দেখলে কি?আমার আড়ালে বিয়ে করে ফেলছো ভেবেছিলে আমি জানবো না?তোমার বিয়ে কি করে হয় আমিও দেখবো।”

” মানে?”

ঈশা অবাক হলো প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো ঈশানের দিকে।তবে ঈশানের হাভ ভাবে মনে হচ্ছে না সে সহজে মুখ খুলবে।

” আমার বিয়ে দেখার আপনার শখ?সরাসরি দেখবেন নাকি লাইভে এসে দেখাতে হবে।”

ঈশান এবারেও প্রত্যুত্তর করলো না।ঈশা যাওয়ার জন্য পুণরায় উদ্যত হলে ঈশান তার মুখোমুখি হয়।

” দাঁড়ালেন কেন?আমার শাশুড়ী অপেক্ষা করছে।”

ঈশা আবার যেতে চাইলো তবে এবারো ঈশান তার মুখোমুখি।বাড়াবাড়ি একটা সীমা আছে এই মানুষটাতো সেটাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।নিজের জেদটাকে কাজে লাগিয়ে
ঈশা ঈশানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলো কিন্তু তার আগে তার হাত জোড়া শক্ত হাতের মুঠোয় পুরে নেয় ঈশান।ঈশাকে টেনে নিয়ে যায় ছাদের এক কোণে।

” তোমার মাথায় কী কিছুই ঢুকে না?একটা বিষয় নিয়ে আর কতবার বোঝাতে হয়।”

” না আমি বুঝি না।এবার আমার হাত ছাড়ুন দয়া করে বাড়াবাড়ি করবেন না। ঈশান মনে রাখবেন আপনি আমার বাড়িতে আছেন।”

” আমায় হুমকি দিচ্ছো?তোমার হুমকির ভয়ে আমি থরথর করে কাঁপতে থাকবো এটা ভাবলে কি করে ঈশা।”

ঈশা হাত ছাড়াতে বারবার চেষ্টা করে তবে ঈশান হাত ছাড়লো না।প্রচন্ড গরমে ইতোমধ্যে ঈশান ঈশা দুজনেই ঘেমে একাকার।

” আমি নিচে যাবো ছেড়ে দিন।চিৎকার করলে এখানে কিন্তু ভালো কিছু হবে না।”

” তুমি নিচে যাবে আর নাজিমকে বিয়ে করবে না, এটা সবাইকে জানাবে।যদি আমার শর্তে তুমি রাজি হও তবেই ছাড়বো তোমায়।”

হতভম্ব চোখে ঈশানের দিকে তাকিয়ে রইলো ঈশা।নাজিমের সাথে তার বিয়ে! নিশ্চয়ই মন গড়া ভেবে নিয়েছে সে।তাই তো তার ধারণা ভুল।মনে মনে হাসি পেলো ঈশার তবে এই মানুষটার সামনে ভুলেও হাসা যাবে না।

” এসব কি বলছেন নাজিমের সাথে আমার বিয়ে মানে?”

” নাটক করছো?নাজিমের মায়ের সাথে তো দেখছি সেই রকম ভাব।”

” হ্যা আন্টি আর আমার সম্পর্ক ভালো।তাই বলে আপনি….”

ঈশানের ফোন বেজে উঠলো।ফোন চেক করতে রাসেলের নাম্বার দেখে দ্রুত কেটে পুণরায় পকেটে রেখে দেয়। তার অস্থিরতা প্রবল বাড়লো।হাঁসফাঁস কর‍তে করতে জিভের সাহায্যে ঠোঁট ভেজলো।

“এবার কি করবো আমি,আজ ওদের এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেলে সামনে বিয়ে উফফ কি করবো আমি।আমি স্বার্থপর।এসব মেনে নেওয়া আমার ধাঁচে নেই।”

ঈশান বিড়বিড় করতে থাকে তাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে সে অস্থির হয়ে উঠেছে।ঈশা তার হাত ছাড়াতে পুণরায় চেষ্টা চালায় কিন্তু ঈশান তাকে ধমক দিয়ে বকতে শুরু করে।দুজনের মাঝে লেগে যায় ঝগড়া কিন্তু এবার ঈশানের সাথে পাল্লা দিয়ে এগোতে পারলো না ঈশা।ঈশানের চোখ রাঙানো তার সাথে ধমকের মাঝে চোখে পানি চলে এলো ঈশার।রাসেল বার বার ফোন করায় অবশেষে ফোনটা ধরতে বাধ্য হলো ঈশান।

” ঈশান তুই ছাদে?ঈশা আছে তোর সাথে?”

” হ্যা কেন?”

” নাজিমের সাথে ঈশার কাজিনের বিয়ে মানে ওর খালাতো বোন শ্রেয়ার।আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।”

” কি!”

উত্তেজিত হয়ে পড়লো ঈশান।ততক্ষণে ঈশার চোখ দুটো জলে টইটম্বুর।তপ্ত শ্বাস ছাড়লো ছেলেটা।দ্রুত ফোন কেটে মনোযোগ বাড়ালো ঈশার দিকে।জলটা অন্য দিকে গড়িয়ে গেলো সন্দেহের দরুনে ঈশার মনে জায়গা করার আগেই আরেকবার তার চোখে খারাপ হলো সে।এইজন্যই রাসেল বলে এত বাড়াবাড়ি করিস না,সবসময় চড়া মেজাজের মাথা নিয়ে ঘুরবি না।সব ক্ষেত্রে রাগ জেদ প্রযোজ্য নয়।ঈশার হাতটা ছাড়লো সে এবং ডান হাতটা ঠেকিয়ে দিলো ঈশার মাথায়।পরম যত্নে আলতো হাত বুলিয়ে দিলো ঈশার মাথায়।

” মন খারাপ করেছো?”

ঈশানের নরম হয়ে আসাটা সহ্য হলো না ঈশার ঝটকায় সরিয়ে দিল তার হাত।

” দরদ দেখাতে আসছেন?”

” বকবো আমি, রাগ দেখাবো আমি, আবার আমি দরদ দেখাবো এটা আবার বলতে হয়?”

” আপনি এবার বেশি বাড়াবাড়ি করলেন।আমি বাবাকে সব বলে দিব।”

” তোমার বাবা আদৌ কিছু করতে পারবেন আমার বিরুদ্ধে? ”

ঈশা প্রত্যুত্তর করলো না।দ্রুত হস্তে চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।মনে মনে ভেবে নিলো হয়তো ঈশান সরি বলবে আর সেই সু্যোগে দুই-চারটা কথা শুনিয়ে দিবে তাকে।কিন্তু তার ভাবনা মিথ্যা করে ঈশান বলে,

” যা হয়েছে ভালোর জন্য হয়েছে।ভবিষ্যতে অন্তত কিছু করার আগে এই দিনের কথা মনে পড়বে।আমি বরং নিচে যাই তুমি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেকাআপ ঠিক করে নাও।বানের জলে সব আটা ভেসে গেছে।”

ঈশা তেঁতে উঠলো তার দামি দামি মেকআপ প্রডাক্টকে সে আটা বলছে।

” আপনি আমার মেকআপ’কে আটা বললেন কোন সাহসে।আপনার ধারণা আছে এগুলা কত দামি এক্সপেন্সিভ প্রোডাক্ট।”

” রিয়েলি এত দামি!বউয়ের মেকআপ কেনার জন্য হলেও এবার তো আমায় আরো বেশি বেশি কাজ করতে হবে।কাজ করলেই তো বেশি বেশি টাকা হবে।”

” অসভ্য লোক।”

ঈশার চোখে চোখ রাখলো ঈশান।মেয়েটার মন খারাপ উবে গেছে এখন শুধু জেদ টুকু বাকি আছে।মনে মনে নিশ্চিন্ত হয়ে ঈশাকে নরম স্বরে বলে,

” আলেয়া আন্টিকে শাশুড়ী বানালে কেন?”

” নাজিম ভাইয়ের ছোট ভাই নাদিমকে ভালো লাগে তাই ডাকি।”

ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া নাদিম দেখতে গুলুমুলু বোকাসোকা ধরণের ছেলে।চোখে তার এটে থাকে মস্ত বড় গোল ফ্রেমের চশমা।মাঝে মাঝে ঈশার মনে হয় এই চশমাটা স্পেশালি তার জন্যই তৈরি।গুলু গুলু গাল দুটোতে এঁটে থাকে চশমা।ঈশা সুযোগ বুঝে ছেলেটার গাল চটকে দিতে দ্বিধাবোধ করে না।ঈশা যখন তার গাল চটকাতে ব্যস্ত ছেলেটা তখন না পারতে চিৎকার করে বলে, ‘ ঈশা বউ আমায় আর জ্বালিয়ে মেরো না।’ দুজনের খুনশুটি আলেয়া বেশ উপভোগ করেন।আর সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেন ঈশার হাতের তৈরি স্পেশাল কেক।

” নিচে যাও ঈশা আমি কিছুক্ষণ পর যাবো।”

” আপনি না গেলেও চলবে।”

৩৬.
শ্রেয়া এবং নাজিমের আংটি বদল হলো সন্ধ্যার পর।ঈশা অনু সহ কয়েকজন কাজিন মিলে পুরো আসরটা জমিয়ে রেখেছিলো।ঈশান তখন নির্বাক সবার কান্ড দেখতে ব্যস্ত এত বাজনা বাজিয়ে বিয়ে মোটেও পছন্দ না ঈশানের।আজ যদি আলেয়া আন্টি অনুরোধ না কর‍তো কখনো সে এতক্ষণ এখানে বসে থাকতো না।রাসেল হয়েছে আরেক খাটাশ সে সুযোগ বুঝে অনুর সাথে কথায় লেগে যায়।

বাড়ির মুরব্বিরা সব এক হয়েছে। শ্রেয়া এবং নাজিমকে আলাদা কক্ষে পাঠানো হয়েছে কথা বলার জন্য।অনু রাসেল ঈশান সহ ঈশার কাজিনরা একটা কক্ষে বসে টুকটাক আলাপ সারছে।রাসেলের জোরাজোরিতে ঈশানকে এই কক্ষে আসতেই হলো।বেডের পাশে থাকা সিঙ্গেল সোফাতে চুপচাপ বসে ফোনে ধ্যান রাখলো ঈশান।নাদিম তখন ঈশানের পাশে বসে গেমস খেলছে।ঈশা হঠাৎ কক্ষে এসে টেনে আনলো নাদিমকে।গঠনে ছোট হওয়ায় ছেলেটাকে নিজের কোলে বসিয়ে গালে গাল মিলিয়ে আদুরে সুরে ঈশা বলে,

” ভাসুরের বিয়ে ডান এবার আমাদের বিয়ে কখন হবে? ”

” আম্মু বলেছে আমার ফাইনাল এক্সাম শেষ হলেই আমাদের বিয়ে হবে তখন তুমি আমার কাছে থাকবে ঈশা বউ।”

নাদিমের আদুরে কথায় হেসে উঠলো সকলে ঈশান আড় চোখে দেখছিলো তাদের কান্ড।

” ঈশা বউ বিয়ের পর কিন্তু আমায় মজার মজার কেক খাওয়াবে সবসময়।”

” অবশ্যই আমার জান বলেছে আর আমি খাওয়াবো না তা কি হয়।তোমার গালটা এত চকচক করছে কেন জান?”

” জানো আম্মু আমায় নতুন একটা ক্রিম কিনে দিয়েছে তাই তো চকচক করছে।আম্মু বলেছে যদি নিয়মিত ক্রিমটা লাগাই আমাকে বেশি সুন্দর লাগবে আর তখন নাকি তুমি আমায় বেশি বেশি ভালোবাসবে।”

হেসে ফেললো ঈশা সহ বাদবাকি সকলে।ঈশা পুণরায় চটকে দিলো নাদিমের গাল।নাদিম তার আঁকাবাকা দাঁতে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।শ্রেয়া এবং নাজিমের কথা শেষ তারা বেরিয়ে পড়েছে কক্ষ ছেড়ে তাদের কন্ঠে শুনে সবাই মিলে বের যায় তাদের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে।শুধু ঈশান দাঁড়িয়ে রইলো।আলমারির এক কোনায়।ঈশা তার চুল ঠিক করার উদ্দেশ্যে দরজা ভিড়ে দিলো তার জানা মতে কক্ষে আর কেউ নেই।ঈশা গা থেকে ওড়না সরাতে আয়নায় ভেসে উঠে এক কোনে দাঁড়িয়ে থাকা ঈশানকে।

“আপনি এখানে?”

” নাদিমের প্রতি এত ভালোবাসা।এত ভালোবাসা আমায়ও তো দেখাতে পারো।”

” আপনি বলতে চাইছেন নাদিমের মতো আপনার গাল চটকে দিতে?”

ঈশা এক গাল হাসে।চাপা জেদটাকে কাজে লাগায় সে।এগিয়ে যায় ঈশানের সম্মুখে।

” আমিও চাই আপনার গাল চটকে দিতে আপনি এত্ত কিউট কেন।”

ঈশা ঈশানের দুই গালে চেপে ধরে।তার বড় বড় ধারালো নখের সাহায্যে এতটা রুক্ষ ভাবে চেপে ধরে যে ঈশানের গালের চামড়া কেটে রক্ত ঝরার অবস্থা।ঈশান নির্বাক শক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো ঈশার দিকে তার মুখে রা নেই।এই মেয়ে কতটা পারে সেও দেখবে।ঈশানের গালে রক্তের দেখা মিলতে তাকে ছেড়ে ছিটকে দূরে সরে যায় ঈশা।অবাক চোখে ঈশানের দিকে তাকাতে ঈশানের কোন প্রতিক্রিয়া মিললো না।

” র রক্ত!”

রক্ত দেখে ভয় পেয়ে গেলো ঈশা।
ঈশান এগিয়ে এলো ঈশার সম্মুখে।

“যতটা আঘাত করার করে নাও বাঁধা দেব না।”

ঈশা প্রত্যুত্তর করলো না।দৃষ্টি নামিয়ে নিলো পায়ের কাছে।ঈশান কিঞ্চিৎ হেসে আলতো হাতে ঈশার গাল টেনে বেরিয়ে গেলো কক্ষ ছেড়ে।

.
কাউকে কিছু না বলে বাড়ি ফিরে আসে ঈশান।তার গাল প্রচন্ড জ্বলছে।পানি লাগাতে সর্বাঙ্গে ঝিলিক মারছে।কোন মতে গালে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে ক্ষান্ত হলো সে।এই গালে যদি একবার দাগ পড়ে যায় হাজার খানেক কথার সম্মুখীন হতে হবে তাকে।

রাসেল বাড়ি ফিরলো রাত নয়টা বাজে।আগে ফ্রেশ না হয়ে দ্রুত ছুটে যায় ঈশানের কাছে।

” চলে এলি কেন ঈশান?এক মিনিট তোর গালে কি হয়েছে?”

” কিছু না।”

” ব্যান্ডেজ লাগিয়ে বলছিস কিছু না।

” বিরক্ত করবি না আমি কাজ করছি।”

” সত্য কথা না বললে বিরক্ত করবোই।আমরা বেরিয়ে যাওয়ার পর দরজা লাগিয়ে তখন তুই আর ঈশা কি করছিলি?আমি কিন্তু তোদের উপর নজর রেখেছি।”

” বাজে বকবি না সামনে থেকে সর।”

রাসেল ঠোঁট টিপে হাসলো।ঘেষে বসলো ঈশানের পাশে।

” সত্যি কথা বল তোদের মাঝে কি হয়েছিলো।এটা কি ভালোবাসার চিহ্ন ছিল নাকি?”

ঈশান ভ্রু কুচকে কপট রাগ দেখালো রাসেলকে।

” তুই ব্লাশিং হচ্ছিস কেন?তার মানে সত্যি?তাই বলে গালে কেউ এসব করে তোরাও না… ”

” থা প্প ড় দেওয়ার আগে এখান থেকে উঠে যা।”

ঈশানকে রাগিয়ে দিতে সিরিয়াস হয়ে রাসেল বলে,

” আমার পাপী মনে আমি কিন্তু অনেক অনেক কিছু ভেবে ফেলেছি ঈশান।”

” তুই যা ভাবছিস তা না।”

” তবে কী?”

” এসব তুই বুঝবি না এটা স্পাইসি ভালোবাসার ধরণ।”

রাসেল ঠোঁট বাঁকালো ঈশান যে স্বীকার করবে না তা তার বোঝা হয়ে গেছে।

৩৬.

মধ্য রাতে ঈশান যখন ঘুমে কাবু তখন নিস্তব্দ কক্ষে বেজে উঠলো তার ফোন।ঘুমকাতুরে ঈশান এলোমেলো হাতে ফোন খুঁজে কানে তুলতে ফসফস নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শুনতে পেলো না।হ্যালো হ্যালো বলে ঈশান তাকে জানান দিলেও ফোনের অপর পাশের ব্যক্তিটি ছিলো নিরব।বিরক্ত হয়ে ফোন কাটলো ঈশান।কিয়ৎক্ষণ বাদে আবার ফোন আসে ঈশান আবার ফোন তুলতে কানে ভেসে আসে গুরুগম্ভীর চিরচেনা কন্ঠ।এই গলার স্বর শোনা হয়নি তার বহু বছর।

” আমি ঈশান শাহরিয়ারের বাবা বলছি।”

ঈশান থমকায়।তার রাগ জেদের কাছে কোন সম্পর্ক সে পরোয়া করেনা।এমনকি পিতার সম্পর্কে বেঁধে থাকা এই মানুষটাকেও না।ঈশান মাঝে মাঝে ভাবে এই মানুষটা তাকে সত্যি ছেলে মানে তো?যদি ছেলে মানতো তবে সেদিনের অপবাদটা তার গায়ে ছোড়ার আগে হাজার বার অনুসন্ধান,বিচার বিশ্লেষণ করতো।

” কি বলবেন বলুন।”

” বাড়ি ফিরবে কবে?এভাবে কতদিন জল ঘোলা করে রাখবে।এবার অন্তর এই নাটক শেষ করা জরুরি।”

প্রতিবারের ন্যায় আবিদ সাহেবের কন্ঠ গম্ভীর সরল।ঈশানের ঘুম ছুটে গেছে ইতোমধ্যে।সে বিছানা থেকে পা ফেলে ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে গেলো বারান্দায়।

” আমার বাড়িতে আমি আছি।এ ছাড়া আমার কোন বাড়ি আছে বলে আমার মনে হয় না।”

” কথাবার্তা আগের মতোই আছে দেখছি।”

” এক চুলো পালটায়নি।সে বিষয়ে সন্দেহ রাখবেন না।”

” তর্ক কর‍তে ফোন করিনি।তোমার মাকে আর কতদিন ভুগাবে?এবার অন্তত এখানে আসো মানুষটার সাথে সময় কাটাও।”

” আমি মা’কে বলে দিয়েছি দেশে ফিরতে আর মা যদি দেশে না ফিরে আমার কিছু বলার নেই।”

” মাহমুদাকে একা ছাড়তে পারবো না আমি।যদি নেওয়ার ইচ্ছে থাকে তবে নিজে এসে নিয়ে যাও।”

” একা ছাড়তে হবে না আমার মা ততটাও অবুঝ নয়।তাকে এয়ার্পোরটে ছেড়ে আসলে হবে এদেশের এয়ারপোর্ট থেকে আমি রিসিভ করবো।”

” তার মানে তবুও আসবে না?”

” না।”

” ঠিক আছে আসতে হবে না।আমি মাহমুদাকে পাঠাবো না।”

” ভদ্রমহিলা আপনার স্ত্রী হলে উনি আমার মা। আমার অধিকার আছে উনার উপর।আপনার কারনে আমি বহু বছর মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছি এবার অন্তত বিবেক থাকলে আমায় বঞ্চিত করবেন না।”

ঈশানের কথা শেষ হলো তবে অপর পাশ থেকে কোন উত্তর এলো না।ঈশান তপ্ত শ্বাস ছাড়লো।বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে।রক্তের সাথে যেন মিশে গেছে অস্থিরতা।আবিদ সাহেব কি ভাবলেন কে জানে তবে ফোন কাটার আগে বললেন,

” ঠিক আছে মাহমুদাকে পাঠিয়ে দিব।তোমার মায়ের ভালো তুমি বুঝবে।”
#চলবে___
দেরিতে দেওয়ার জন্য দুঃখিত কারেন্ট ছিল না🥀

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here