অবাধ্য_বাঁধনে #পলি_আনান [পর্ব সংখ্যা ৩৮ক]

0
706

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৩৮ক]
_____________________
” তোমাদের বাড়িটা সুন্দর।এই বাড়ি কর‍ত কত দিন লেগেছে?ধরো তোমরা সবাই মিলে দেশের বাইরে চলে গেলে এই বাড়ি খালি রেখে চলে যাবে কষ্ট হবে না?”

” আমার ষাট হাজার টাকা জলে গেলো।”

” আমি তোমায় কি বলি আর তুমি কি বলো”

” আমার ষাট হাজার টাকা।”

” রাসেল..”

অনুর ধমকে চোখ তুলে তাকালো রাসেল।মধ্য রাতে ছাদে তারা একাই আছে।মূলত অনু তাকে টেনে এনেছে ছাদে কিন্তু ষাট হাজার টাকার শোকে রাসেলের পাগল প্রায় অবস্থা।ঈশান তাকে এভাবে বাশ দিয়ে দিলো!

” অনু ষাট হাজার টাকা এভাবে চোখে পলকে ভ্যানিশ হয়ে যাবে আমি মানতে পারছি না।সবাই মিলে অযথা টাকা গুলো খরচ করবে।”

” তুমি তো বড্ড হিংসুটে এই রাসেল তাকাও আমার দিকে।”

” তোমার কাছে আমাকে হিংসুটে লাগে?এটা দশ পনেরো হাজার টাকা নয় যে আমি চুপচাপ রইবো এখানে ষাট হাজার টাকা।দাঁড়াও করাচ্ছি ঈশানের বাসর।”

রাসেল পকেট থেকে ফোন বের করলো একে একে পাঁচ ছয়বার ঈশানের ফোনে টানা কল দিলো কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না।এবার ফোন করলো ঈশার নাম্বারে অদ্ভুত মেয়েটার নাম্বারো বন্ধ।নিজের প্রতি নিজের রাগ লাগলো রাসেলের যে কোন উপায়ে আজ ঈশানকে বিরক্ত করতে হবে কিন্তু কি করে?সব মিলিয়ে গোলমাল লাগছিলো রাসেলের।সে উপায়ন্তর না পেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকতে ঈশানের মেসেজ দেখে দ্রুত চেক করে এই মেসেজটা আরো এক ঘন্টা আগে দেওয়া যেখানে লেখা ছিল,

“ফোন বন্ধ করে দিচ্ছি আমি জানি তোরা সব বাদর এক হয়েছিস এখন ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করবি।অযথা কোন বিরক্তি চাইছি না তাই আগ্রীম সতর্ক হলাম।খবরদার আমার পেছনে লাগতে আসবি না রাসেল।যদি উলটা পালটা গন্ডোগোল করিস তবে তোর বাসর তো দূরের কথা তোর অনুরূপীকে নিজে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করিয়ে দেবো মাইন্ড ইট।আর তোর ষাট হাজার টাকা মে’*রে দেওয়ার মূল কারণ, তুই বন্ধু বন্ধুর দলে থাকবি তুই কেন প্রেমিকার কথায় আমার বিরুদ্ধে গিয়ে উঠবস করবি?”

দমে গেলো রাসেল ঠোঁট কুচকে কয়েকটা গালি দিল ঈশানকে।পাশে তাকিয়ে দেখলো অনু নেই।অদ্ভুত মেয়েটা গেল কোথায়?অনু কি তার প্রতি বিরক্ত হয়ে চলে গেছে?

৯৩.
আজ ঈশাদের বাড়ি যাবে ঈশান।সকাল থেকে মেয়েটার তাড়াহুড়োর শেষ নেই ব্যাগপত্র ঘুছিয়ে নিজেকে বার বার প্রস্তুত করছিলো কিছুক্ষণ বাদে তারা রওনা দেবে। ঈশান চুলে ব্রাশ করতে করতে আনমনে তাকালো ঈশার দিকে।মেয়েটার ব্যাগে জায়গায় নেই অথচ ঠেসে ঠেসে ব্যাগে জামা কাপড় পুরাতে ব্যস্ত।

” তুমি এত জামা কাপড় কেন নিচ্ছো?”

“এখানে কি একা আমার জামা?আপনার জামাও আছে।”

” আমি মাত্র দুই সেট জামা নিলাম।এতেই কি বেশি হয়ে গেছে?তুমি যাচ্ছ একদিনের জন্য এত জামাকাপড় নিয়ে লাভ নেই।”

” একদিন মানে?”
ঈশান হাত থেকে ব্রাশটা রেখে এগিয়ে এলো ঈশার কাছে।পেছন থেকে জড়িয়ে গালে গাল মিশিয়ে বলে,
” আজ যাবে কাল রাতে আবার চলে আসবো ঠিক আছে?”

ঈশানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো ঈশা।রোমান্টিক মুডে এসে ব্রেন ওয়াশ করা হচ্ছে।একদিনের জন্য বাবার বাড়ি যাবে মানে কী?অন্তত দুইদিন তো সে থাকবেই।ঈশান ধাক্কা সামলাতে না পেরে দু কদম পিছিয়ে গেল।

” তুমি সবসময় এমন করো আমার আবেগে ঝাড়ু মেরে দাও।”

“আমি দুইদিন থাকবো ঈশান।প্লিজ বাড়াবাড়ি করবেন না।”

“ঠিক আছে থাকবে।কোন প্রবলেম নেই কোন সমস্যা নেই।এখন সমস্যা হচ্ছে দ্রুত কাছে আসো।”

ঈশা এগিয়ে গেলো ঈশানের কাছে ভেবেছিলো ধাক্কা দেওয়ায় হয়তো চোট পেয়েছে।কিন্তু এই ঈশানের মনে কি চলে তা তো বুঝতে পারলো না ঈশা।ঈশা এগিয়ে যেতে তাকে দৃঢ় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে ঈশান বেসামাল ওষ্ঠ ছড়িয়ে যায় ঈশার সারা মুখে।লজ্জায় নিজেকে ছাড়াতে চাইলো ঈশা কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না ক্রমশ ঈশানের ছোঁয়া অবাধ্য হচ্ছে।

” দুলাভাই আমার বান্ধবীটা তো মরে যাবে এবার অন্তত ছেড়ে দিন।”

অনুর কন্ঠে লাফিয়ে উঠে ঈশান।যার ফলে ঈশা ছিটকে পড়ে দেয়ালে।অনু ছোট ছোট পা ফেলে বারান্দা থেকে এগিয়ে আসে।
পর্দার দরুনে অনুকে দেখতে পায়নি তারা।ঈশান পড়েছে বেকায়দায়।তবুও নিজেকে যতটা পারা যায় সংযত করে বলে,

” তুমি এখানে কি করছো অনু?দেখেছো চুপচাপ দেখতে আবার সামনে এসে আমাদের লজ্জা দিতে কে বলেছে হুহ?”

” আ..আমার দোষ নাই।আমি ঈশার কাছে এসেছিলাম ঈশা ওয়াশরুমে ছিল ভাবলাম একটু বারান্দায় বসি।এর মাঝে আপনি এলেন ঈশাও বের হলো আমি ভাবলাম আপনি চলে গেলে আমি বের হবো।কিন্তু আপনি দুম করে ঢুকে ধাম করে রোমান্স শুরু করে দেবেন এটা কে জানতো।”

অনু এগিয়ে এলো ঈশার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলে,

” বেচারি তোর জন্য মায়া হচ্ছে।ভালো থাকিস আমি গেলাম।”

অনু চলে গেলো ঈশান তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।রোমান্সেও ডিস্টার্ব!দুনিয়ার কোথাও শান্তি নাই,আজকাল রোমান্সেও শান্তি নাই।ঈশা বড় বড় পা ফেলে বসলো বিছানায় এখনো তার গা কাঁপছে ভাগ্যিস ওটা অনু ছিল যদি শ্রেয়া বা রুমা হতো তবে কী হতো!
.
নীল রঙের পাঞ্জাবিটা হাতের সাহায্যে ঠিক ঠাক করে নিজেকে একবার দেখে নিলো ঈশান।বউ নিয়ে এই প্রথম শ্বশুর বাড়ি এসেছে তাই এই অনুভূতি তো অন্যরকম।গাড়ি থেকে নামতে দেখা হলো হাসিনের সাথে ছেলেটা তাদের এগিয়ে নিতে এসেছে।নাজমুল-শ্রেয়া,আর রাসেল অনুও তাদের সাথে এসেছে।ঘরের ভেতর প্রবেশ করতে ঈশান মুখোমুখি হলো মুজাহিদ হাসানের কিন্তু আজ আর ঈশানকে আগের মতো উচ্ছ্বাস দেখালো না এখন সে নতুন জামাই তাকে থাকতে হবে ভদ্রতার বেশে।দুজনের মাঝে কুশল বিনিময় শেষে ঈশার বাবা তাকে বসতে বললেন।সুলতানা দৌড়ে এসে মেয়েকে জড়িয়ে নিলেন সবার সাথে ভালো ব্যবহার করলেও ঈশানের সালামের উত্তর নিলেন গম্ভীর মুখে।তিনি মেয়ে জামাই হিসেবে কিছুতেই ঈশানকে মেনে নিতে পারছেন না।

৯৩.
এই দুইদিন বাড়িটা আনন্দে পরিপূর্ণ ছিল অথচ আজ আবার নিরিবিলি।অবসন্ন মনটা নিয়ে বসে রইলেন মাহমুদা।যেদিন জানতে পেরেছেন ঈশানের বিয়ে ভাঙায় তার বাবার হাত আছে সেদিন যোগাযোগ ছিন্ন করেন আবিদ শাহরিয়ারের সঙ্গে।এত নোংরা খেলায় তিনি কেন মেতেছেন?ঈশানের বিয়ের ব্যপারে কিচ্ছু জানানো হয়নি তাকে, মাহমুদা একা হাতে সবটা সামলে গেছেন।অতীতের কথা মাথায় আসতে মনটা কেঁদে উঠে তার।আবিদ শাহরিয়ার ছিলেন একরোখা জেদি,রাগী মানুষ।তিনি ছিলেন বউ পাগল স্বভাবের।শ্বশুর বাড়িতে মাহমুদার স্থান ছিল রানীর হালে সবাই তাকে আদর যত্নে ক্রুটি রাখনি।কেউ মাহমুদাকে একটু উচু গলায় কথা বললেও আবিদ সহ্য করতেন না।ভালোবাসায় পরিপূর্ণ সংসারটা তখনি পূর্ণতা পায় যখন কোল আলো করে সন্তান আসে।ঈশানের জন্ম নেওয়ার আগ পর্যন্ত সবটা ঠিক ছিল কিন্তু ছেলেটা জন্ম নেওয়ার পর পালটে গেলো তাদের সবকিছু।আবিদ শাহরিয়ারের ইচ্ছে ছিল তাদের ঘরে কন্যা সন্তান আসবে কিন্তু তার ভাগ্য সহায় হয়নি।জন্ম নিলো পুত্র সন্তান।
আবিদ শাহরিয়ারের জীবনে ঈশান ছিল কাটার মতো সন্তানের কারণে স্ত্রীর দূরত্ব তাকে বড্ড পীড়া দিত।একরোখা মানুষ যখন যা মাথায় আসে তা নিয়ে চলে কারো কথার ধার তিনি ধারেন না।সংসারটা তবুও ভালো ছিল আবিদ যথাসম্ভব নিজেকে মানিয়ে নিতো।ঈশান বড় হলো ছেলেটা হলো বাবার মতো।আবিদ শাহরিয়ার ঘর সংসারের মায়া কমিয়ে দেশ ছাড়লেন টাকার পেছনে ছুটতে থাকা তার নেশায় পরিণত হলো।তিনি যাওয়ার পর সংসারটা আরো পাল্টে গেলো সন্তানের ভবিষ্যতে ঝুকলেন মাহমুদা ঈশানকে আগলে রাখতেন নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে।ধীরে ধীরে জীবনটা কত রঙে পালটে গেলো প্রথমে বাবার মৃত্যু,রাসেলকে ছেলে হিসেবে কাছে পাওয়া সব মিলিয়ে জীবনটা তার কাছে কখনো অপূর্ণ লাগেনি।আবিদ স্বামী হিসেবে একজন যোগ্য মানুষ হলেও বাবা হিসেবে নন এই কথা বুকে হাত রেখে বলতে পারবেন মাহমুদা।

” মেডাম ঈশান স্যারের বাবা এসেছেন।”

দারোয়ানের কথায় চমকে গেলেন মাহমুদা।আচমকা বুকের ভেতরটায় চাপা ব্যথার অনুভব হলো।উঠে দাঁড়াতে কানে এলো হাই হিলের ঠকঠক শব্দ।মাহমুদা বিচলিত হলেন এগিয়ে যেতে দেখতে পেলেন ঈশানের বাবা,ফুফাতো বোন লিজা এবং ফুফু লিপি এসেছে।এই দিনে মাহমুদার নিশ্চয়ই খুশি হওয়ার কথা ছিল?কিন্তু আতঙ্কে তার মুখ নীল বর্ণ ধারন করেছে।

” মামীমা জানো তোমায় কত মিস করেছিলাম?”

মাহমুরা নীরব রইলেন এই মেয়েটাকে তিনি মোটেও সহ্য করেন না।অসভ্য মেয়ের জন্য তার ছেলের জীবন ছারখার।লিপির ক্রুদ্ধ চাহনি চোখ এড়ালো না মাহমুদার নিশ্চয়ই তার ভাইয়ের জন্য সামনা সামনি কিছু বলার সাহস করছে না।আবিদ শাহরিয়ার এখনো একটি বিষয়ে অটল আর সেটি হলো স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা।

” কেন এলে?আবার নতুন নাটক করতে?আমার ছেলের সংসারে কোন ঝামেলা চাই না আমি।”

” ছেলে তোমার একার না।আমারো আমায় না জানিয়ে বিয়ে পর্যন্ত দিয়ে দিলে।ডাকো তোমার ছেলেকে এবার একটা বিহিত হবেই।”
.
রাতের খাওয়ার শেষে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো সকলে আজ ঈশান ঈশাদের বাড়িতে থাকবে।রাসেল বিদায় নিয়েছে সে সন্ধ্যায়।শ্রেয়া-নাজিম,হাসিন,অনু যে যার বাড়ি চলে গেছে।এই বাড়িতে আসার পর একটুও মন খারাপ হয়নি ঈশানের বরং মনে হয়েছে এটা তার নিজের বাড়ি।তবে সুলতানার আচরণ একটু খারাপ লেগেছে তার। ঈশান সারাজীবন শুনেছে জামাইদের যত্নে শ্বাশুড়িরা ক্রুটি রাখেন না অথচ ঈশানের ভাগ্যে পড়লো এক জাঁদরেল শ্বাশুড়ি যে কি না কথায় কথায় তাকে তিরস্কার করতে ছাড়ে না।
রাত বারোটা বেজে গেলো এই মুহূর্তে ঈশানের মাথায় ঝোঁক উঠেছে সে দাবা খেলবে আর তার কথায় তাল মেলালেন মুজাহিদ হাসান।ঈশা চুপচাপ তাদের কান্ড দেখছিলো।ঈশান আর মুজাহিদ হাসানের মাঝে ফোঁড়ন কাটলো সুলতানা।

“পেট পুরে খেয়েছো এবার যাও রুমে যাও।”

” মাদার ইন ল আপনি কি আমার সাথে সুন্দর করে কথা বলতে পারেন না?”

” তুমি এমন কে যার সাথে আমার মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে হবে?আমার মেয়েকে তোমার হাতে দিয়েছি এটা তোমার ভাগ্য। মনে করো দয়া দেখিয়েছি।”

” সিরিয়াসলি দয়া?আপনার মেয়ে কি এমন কেউ যাকে আপনি দয়া দেখিয়ে অন্যর হাতে তুমি দিবেন?যদি দয়া হয় তবে আমি ধন্য।সেই দয়ার প্রতিদান হিসেবে আপনাকে কয়েক জোড়া নাতি-নাতনি গিফট করবো।”

সুলতানা অবাক হলেন,তার এই চাহনি দেখে ঈশান মিটিমিটি হাসছে।ঈশা চুপচাপ তাকিয়ে তাদের ঝগড়া দেখছে এই ঈশানটা এমন কেন?মুজাহিদ হাসান গলা ঝারলেন তিনি দাবার গুটি নিয়ে বসে আছেন এখনো খেলা শুরু করতে পারছেন না বলে অস্থির লাগছে।ঈশান সুলতানাকে জব্দ করতে চায় সে চায় এই মানুষটার আদর যত্ন পেতে তাই তো বুদ্ধি খাটিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন সুলতানাকে।

” মাদার ইন ল আপনার সাথে একটা বৈঠক আছে আমার।এই বৈঠক ভীষণ জরুরি।”

” আবার কি চলছে তোমার মাথায়?”

“ফাদার ইন ল আর মাদার ইন ল আপনারা দুইজন এক দল। আমি আর ঈশা আরেক দল।আমার শর্ত হলো যদি আপনাদের দল জিতে যায় তবে মাদার ইন ল জিতে যাবে আমি প্রতিটা ধাপে ধাপে মাদার ইন ল’য়ের কথা মেনে চলবো।যদি আমি জিতে যাই তবে মাদার ইন ল আমাকে মেয়ে জামাই হিসেবে গ্রহণ করবেন এবং ভালো ব্যবহার করবেন।আপনারা রাজী?”

সুলতানা এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন।তিনি জানেন মুজাহিদ হাসান দাবা খুব ভালো খেলেন তাকে হারানো চারটে খানি কথা নয়।তিনি খুশি মনে মেনে নিলেন।খেলা শুরু হয়ে গেলো দুই দলের মাঝে শুরু হলো টান টান উত্তেজনার।মুজাহিদ হাসান আড় চোখে তাকালেন ঈশানের দিকে।প্রতিটা ধাপে ধাপে সেচ্ছায় তিনি হেরেছেন ঈশানের কাছে। অপরদিকে ঈশান নিজেও জানে মুজাহিদ হাসান সেচ্ছায় হেরেছেন কেননা এর আগেও উনার সাথে খেলায় বারবার হেরেছিলো ঈশান।বিজয়ের উল্লাসে ঈশান আর ঈশা যখন চিৎকার করছিলো তখন
সুলতানার মুখটা পাংশুটে হয়ে গেলো।এই হতচ্ছাড়াকে এখন মেয়ে জামাই বলে আদিখ্যেতা করতে হবে!

” মাদার ইন ল দেখলেন তো জিতে গেলাম।”

” তো তাতে কী?যাও ঘুমাতে যাও।”

সুলতানা গটগট পায়ে চলে গেলেন।ঈশান হাসি মুখে মুজাহিদ হাসানের হাতে হাত মেলালো।

” ফাদার ইন ল আপনি একটু বেশি কিউট আমি এমন একটা শ্বশুর ডিজার্ভ করেছিলাম।এখন আমি পেয়ে গেছি।”
.
সবার সাথে হাসি মুখে থেকে রাতে ঘুমাতে এলেও ঈশানের মনে শান্তি নেই।মাথায় চেপে আছে চিন্তার বোঝা।সন্ধ্যার পর রাসেল ফোন করে জানিয়েছে তার বাবা এসেছে এখন নিশ্চিয়ই বাড়িতে যুদ্ধ শুরু হবে!বেচারি ঈশাকে কত কিছুর সম্মুখীন হতে হবে কে জানে।সবকিছু সহ্য করে গেলেও ঈশার অপমান সহ্য করবে না ঈশান প্রয়োজনে বাড়ি ছাড়বে তবুও এই সম্পর্কে আর কোন উটকো ঝামেলা চায় না।সকল চিন্তা এক কোনায় রেখে ঘুমিয়ে পড়লো ঈশান কিন্তু মাঝ রাতে একটি স্বপ্ন দেখে আচমকা ঘুমটা তার ভেঙে গেল।প্রচন্ড গরমে দরদর করে ঘামছে ঈশান হঠাৎ উঠে বসতে বিছানার ঝাকুনিতে ঘুম ছুটে যায় ঈশার পিটপিট চোখে তাকাতে ঈশানকে বসে থাকতে দেখে বলে,

” কি হয়েছে?”

” কিছু না।”

” তাহলে বসে আছেন কেন?”

ঈশান পুনরায় শুয়ে পড়লো ঈশার পাশে।এবার আর তাদের মাঝে কোন দুরত্ব নেই ঈশান আরো ঘেষে এলো ঈশার পাশে।

” আমার ভালো লাগছে না।খারাপ স্বপ্ন দেখেছি।”

” স্বপ্ন সত্যি হবে নাকি একটু ভয় পেয়েছেন এবার নিজেকে স্থির করুন।”

” তুমি মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।”

ঈশা আলতো হাত ঈশানের চুলে বিলি কেটে দিলো এর মাঝে আবার ঘুমিয়ে পড়লো ঈশা, ঈশান অপলক তাকিয়ে রইলো ধীরে ধীরে ঘুমের সাগরে অতলে ডুবতে থাকা ঈশার দিকে।হঠাৎ ঈশানের মাথায় এলো দুষ্টু বুদ্ধি ঈশার গাল টেনে তাকে বিরক্ত করার ইচ্ছে জাগলো মনে।ঈশা নিভু নিভু চোখে তাকালো ঈশানের দিকে,

” ঘুমোতে দিন ঈশান।”

” না দিলে?”

” ভুলে যাবেন না আমার বাড়িতে আছেন যে কোন সময় যা ইচ্ছে তাই করতে পারি।”

” বাড়ি তোমার হলেও তুমি তো আমার।আমার মানুষটাকে আমি যখন ইচ্ছে জ্বালাতে পারি।”

ঈশান টেনে নিলো ঈশাকে।ঈশার ঘুমন্ত চোখে গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে মেয়েটাকে বিরক্ত করতে উদ্যত হলো।ঈশা কপট রাগ দেখালো ঈশানকে দ্রুত ঈশানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজে পেছাতে গেলে ঝোক সামলাতে না পেরে মেঝেতে উলটে পড়ে।ঈশান মেয়েটার হাত টেনেও ধরতে পারলো না।আকস্মিক পড়ায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় ঈশা!ঈশান উঠে গিয়ে কোলে তুলে নিলো ঈশাকে এভাবে পড়ে যাওয়ায় ভীষণ লজ্জা পেল সে।তার লজ্জা দেখে ঈশান বলে,

” তুমি যে পড়ে গেছো এই কথা আমি কাউকে বলবো না তবে একটা শর্ত আছে।”

” কি শর্ত?”

” আমি এখন তোমায় বিরক্ত করবো তুমি চুপচাপ হজম করবে।”

” কখনো না আপনি পারলে মাইকিং করুন গিয়ে।”

” যাই আগে আমার ফাদার ইন ল কে বলে আসি।”

ঈশান সত্যি সত্যি রুমের দরজা খুলতে দৌড়ে গেল ঈশা।ঈশানকে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে বলে,

” করুন বিরক্ত।আমি বিরক্ত হয়েও বিরক্ত হবো না।”
#চলবে__

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here