#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব বত্রিশ
৩২.
বিয়ের পরদিন সকলে ফায়াদকে ধরেছে ট্রিট এর জন্য। মানতে তো হবেই। তাই সেদিন সন্ধ্যা বেলা দুই পরিবারের বাচ্চা পার্টি নিয়ে বের হলো। সন্ধ্যার পর সকলে একটা রেস্টুরেন্টে বসলো। ফায়াদ বসেছে অপরাজিতার পাশে। অপরাজিতা ক্ষণে ক্ষণে লজ্জা পাচ্ছে। কাল এর পর অপরাজিতার চোখ তুলে তাকাতেই লজ্জা লাগছে। তবে সে নিজেকে যথাসম্ভব সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। লজ্জা পেয়ে গুটিয়ে যাওয়ার মতো মেয়ে না সে।
অপরাজিতা ফায়াদের সাথে যতবার কথা বলছে অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলছে। মুখের দিকে তাকালেই নজর গিয়ে ঠেকে ঠোঁটের দিকে। এই নজরটাও আজ এতো নির্লজ্জ হয়ে গেলো কিভাবে৷ নিজেকে মনে মনে বকছে সে। পরক্ষণেই আবার ফায়াদকে বকছে। আসল নির্লজ্জ তো ডাক্তার। তার জন্যই তো এতো কিছু!
সকলে খাবার ডিসাইড করতে ব্যস্ত। কে কি খাবে বুঝছে না৷ অপরাজিতা তো খেতে পছন্দ করে সে এটা ওটা ওর্ডার করছেই৷ রাফিয়া বলল অপরাজিতা যা খাবে সেও তাই খাবে। নীতি ওর্ডার করতে লজ্জা পাচ্ছে। কি রেখে কি খাবে বুঝতেই পারছে না। নীতির অবস্থা বুঝতে পেরে ফারাজই ওর্ডার করে দিল কারন তার বাহিরে থাকতে একসাথে খাওয়ার দরুন তার জানা আছে নীতির খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে। আজ নীতি বসেছে রাফিয়ার সাথে। রাফিয়া হচ্ছে নীতি আর ফারাজের মাঝে। তাই নীতিকে কিছু বলতে হলে রাফিয়াকে পাস করে তারপর বলতে হচ্ছে। যা খুবই বিরক্ত লাগছে ফারাজের। টুকিটাকি আলোচনাও করতে পারছে না। বিরক্ত হয়ে এক পর্যায়ে রাফিয়াকে আস্তে করে বলল,
‘মাঝে বসেছিস কেন তুই?’
রাফিয়াও বিরক্ত হয়ে জোরে বলে ফেলল,
‘আগে বললেই হতো যে নীতি আপুর সাথে বসবা।আজব!’
রাফিয়ার কথা শুনে সবাই তাদের দিকে তাকালো। নীতিও তাকালো। সে জানতো না ফারাজ রাফিয়াকে কি বলছে।সবাই যখন কথা টা শুনলো নীতি লজ্জা পেল।বাকিরা মিট মিট করে হেসে দিল। ফারাজ রাফিয়ার মাথায় চাটি মেরে বলল,
‘বেশি বুঝিস!’
রাফিয়ে বিরক্ত হয়ে উঠে গেল। উঠে নীতিকে তার সিটে বসিয়ে সে বসলো নীতির সিটে।নীতি বা কি করবে? এদেরকে চিনা হয়ে গেছে তার। সব কটা ফা’জিলের হাড্ডি। নীতির অপর পাশে সামির ছিল।রাফিয়াকে এবার বসতে হলো সামিরের সাথে। সামিরকে মিটমিট করে হাসতে দেখে রাফিয়া বলল,
‘খুব হাসি পাচ্ছে?’
সামির দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
‘খুব খুব।’
রাফিয়া মুখ ভেঙচি কেটে অন্যদিকে মন দিল। সামিরও মনে মনে ভেঙচি কাটলো। সে তো আর মেয়ে না যে সামনাসামনি ভেঙচি দিবে।
ফায়াদ আর অপরাজিতা দুজনের হাতেই মোবাইল। দুজনেই তাদের মোবাইলে ব্যস্ত৷ কারো দিকে কারো কোনো মনোযোগ নেই৷ সবাই আশা করছিল এরা নতুন জামাই বউ এর মতো খুনসুটি করবে, লজ্জায় লাল নীল হবে কিন্তু এরা তো ফোন নিয়ে ব্যস্ত।
কিন্তু আসল ব্যাপার হচ্ছে এরা তো ফোনে একে অপরের সাথেই ব্যস্ত। ম্যাসেঞ্জারে।
অপরাজিতা টেক্সট করলো,
‘হঠাৎ মোবাইলে চ্যাটিং কেন?’
ফায়াদ উত্তর দিল,
‘এদের সামনে কিছু বলব? মাথা খারাপ আমার?’
‘কেন?’
‘মাথা তুলে দেখো সব গুলো তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। কখন কিছু বলবো আর ওরা আমাদের ক্ষ্যাপাবে!’
অপরাজিতা হাহা ইমোজি দিল।ফায়াদ এবার প্রসঙ্গ বদলে বলল,
‘তুমি আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলো না কেন?’
অপরাজিতা অস্বীকার করে বলল,
‘কই না তো’
ফায়াদ ঘাড় বাকা করে একবার অপরাজিতার দিকে তাকিয়ে লিখল,
‘মার চেনো?’
অপরাজিতা মিটমিট হেসে দুষ্টুমি করে লিখলো,
‘আ’দর চিনি’
ফায়াদ নিশব্দে হাসলো।এভাবে কিছুক্ষণ টেক্সটিং চলছে।একপর্যায়ে সামির বলল,
‘এই তোমরা কি বলো তো?’
রাফিয়াও যোগ হলো,
‘হ্যা তাই তো।নতুন জামাই বউ মোবাইলে কি দেখো এতো।’
অপরাজিতা ফোনটা রেখে দিল। ফায়াদও রেখে দিল।তা দেখে নীতি মুখে হাত দিয়ে হেসে দিল। নীতিকে হাসতে দেখে সবাই তাকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।নীতি হাসতে হাসতে বলল,
‘তোমরা এখনো বুঝলে না? তারা মোবাইলে নিজেদের সাথেই কথা বলছিল।’
ফারাজও আগেই বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু বলে নি। ফারাজও হাসলো। রিজু মাথা দুলাতে দুলাতে বলল,
‘কি চালাক! এমনি হওয়া উচিৎ। যেখানে রাফিয়া আর ফারাজ ভাই আছে সেখানে চালাকি করা জায়েজ।’
রাফিয়া চোখ রাঙালেও ফারাজ হেসে উড়িয়ে দিল।
রিজু এই কথা টা বলতেই সামিয়া মুখ খুলে বলল,
‘আপনি একদম ঠিক বলেছেন।’
সামিয়া এতোক্ষণ কোনো কথা বলছিল না। যেই রিজু কিছু বলল ওমনি তার বুলি ফুটলো।রিজু মনে মনে বলল,
‘এই মেয়ে এমন কেন? পিচ্চিটিচ্চি আমি সামলাতে পারবো না। কেউ বাচাও!’
খাবার আসলো। সবাই খাওয়া দাওয়া করছে। টুকিটাকি গল্প চলছে। মজাও হচ্ছে।এদিকে রিজু বেচারা শান্তি তে যে খাবে তাও পারছে না। কেউ যদি খাবারের সময় এভাবে তাকিয়ে থাকে খাওয়া যায়?
রিজু এবার মুচকি হেসে সামিয়াকে আস্তে করে বলল,
‘খাবার সময় খাবারের দিকে তাকাতে হয়।’
সামিয়া বলল,
‘হুম’
রিজু বুঝলো বলে লাভ নেই৷ পিউর নিব্বি।তাই সে খাওয়ায় মন দেওয়ার চেষ্টা করলো।
অপরাজিতা তো নির্দ্বিধায় খেতে আছে।সে খেতে ভালোবাসে। তাই কাউকে পরোয়া না করে নিজের মন মতো খাচ্ছে।খাবার আর পরিশ্রম ঠিক ভাবে হয় বলেই সে ফিট থাকে। আর আজ তো জামাইয়ের টাকায় খাচ্ছে। মন ভরে খাবে সে।
সে নিজেও খাচ্ছে বাকিদেরও খেতে উৎসাহ দিচ্ছে।ফারাজও খেতে ভালোবাসে। সেও অপরাজিতার সাথে তাল মিলাচ্ছে। নীতি খেতে পারছে না দেখে অপরাজিতা তাকে খাওয়ার জন্য এক বিশাল মোটিভেশন ওয়ালা ভাষন ও দিয়েছে। সবাই খুব মজাও পেয়েছে এই কাণ্ডে।এই নিয়ে একদফা হাসাহাসিও হয়ে গিয়েছে।
খাওয়া দাওয়া যখন শেষের পর্যায়ে তখন রাফিয়া দিল নীতির জামায় সস ফেলে।রাফিয়া বার বার স্যরি বলছে। নীতি বলল,
‘সমস্যা নেই।’
বলে সে বেসিনের দিকে যাচ্ছে। ফারাজও গেলো তার সাথে। নীতি জামা দেখতে দেখতে আজ আবার ধাক্কা খেল। আবারো রাফিদ নামের লোকটির সাথে।নীতি স্যরি স্যরি বলতে গিয়ে দেখলো অপরাজিতার পরিচিত সেই লোকটা।রাফিদ নীতিকে দেখে হেসে বলল,
‘হেই মিস।ঘুরে ফিরে আমার সাথেই ধাক্কা লাগে শুধু’
নীতিও হেসে দিল। ফারাজ ভ্রু কুচকালো। ফারাজকে দেখে রাফিদ বলল,
‘আপনি অপরাজিতার উড বি না?’
ফারাজ শক্ত ভাবে বলল,
‘না।তার দেবর। আর আমার ভাই এখন আর উড বি নেই। তারা হাজবেন্ড ওয়াইফ হয়ে গিয়েছে।’
বলেই নীতিকে টেনে নিয়ে বেসিনের দিকে যেতে লাগলো। রাফিদ সেদিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,
‘এদের দু ভাইয়ের কি শুধু টানাটানি করার অভ্যাস নাকি!’
নীতিকে বেসিনের এখানে এনে থামতেই নীতি বলল,
‘এভাবে আনলেন কেন? কি ভাবলো সে?’
ফারাজ বিরক্ত হয়ে বলল,
‘তা ভাবুক! আপনার কি? ‘
নীতি জামা পরিষ্কার করতে করতে বলল,
‘আপনি এতো রিয়েক্ট করতেছেন কেন?’
ফারাজ ভাবল আসলেই তো। তারপর সে আর কিছু বলল না। কিন্তু মনে মনে একটু বিরক্ত হলো নিজের উপর।
নীতি আর ফারাজ আসতেই সকলে উঠলো চেয়ার থেকে। তারা এখন বেরুবি । নীতি এসেই অপরাজিতাকে বলল,
‘তোমার পরিচিত এই লোকটাকে দেখেছি’
অপরাজিতা বুঝতে না পেরে বললো,
‘কে?’
ফারাজ বিরক্ত হয়ে বলল,
‘আরে ওই যে রাফিদ নাকি কি জানি।’
অপরাজিতা খুশি হয়ে বলল,
‘কোথায় কোথায়? ‘
ফায়াদ তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাতেই সে মেকি হাসি দিয়ে বলল,
‘যেখানেই থাকুক আমার কি! ‘
তারপর ফায়াদের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলল,
‘আরে আমি আপনার বউ তো। এমন করেন কেন?’
ফায়াদ কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
‘বউ তাই না?বোঝাচ্ছি মজা!’
অপরাজিতা ফাঁকা ঢোক গিলল।রাফিদকে এক্সাইটমেন্ট দেখানো উচিত হয়নি।তারই বা কি দোষ! সে পরিচিত মানুষ দেখলে এক্সাইটেড হয়ে যায়।
বের হতেই কেউ এখনি বাড়ি যেতে চাইলো না। তাই তারা সকলে মিলে পার্কে এল। অপরাজিতা ফায়াদকে সকলে নিজেদের মত ছেড়ে দিল।তারা দুজন সকলের অনেক পিছে হাঁটছে। তারা পাশাপাশি হাঁটছে। অপরাজিতা অন্যদিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।ফায়াদ অপরাজিতার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ওকে চাপ প্রয়োগ করে বলল,
‘আমার দিকে তাকিয়ে হাসো ‘
অপরাজিতা একপলক তাকালো তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। ফায়াদ ভ্রু কুচকালো কিন্তু তার মুখে হাসি। অপরাজিতা আবার তাকাল ফায়াদের দিকে তারপর হাসি হাসি মুখে নিজের মতো করে লাইন পরিবর্তন করে নরম সুরে গাইল,
‘তুমি আমার হাসি মুখের কারণ হবে
তুমি আমার শত ভুলের বারন হয়ে যাবে।’
(চলবে)
(পর্ব ছোট হয়েছে আমি জানি। আমার ইচ্ছে ছিল কালকে বড় করে পর্ব দিব কিন্তু অনেকেই অপেক্ষা করেন বলে ছোট করে এক পর্ব দেওয়া কাল বড় পর্ব দিব। পর্ব ছোট বলে অভিযোগ করবেন না 🌸)