#দাম্পত্য_জীবন
#মেহু_আপু
#পর্ব_১৬
বাবা তোমরা এটা ঠিক করলা না। হামজার এতগুলো অপরাধ কিভাবে তোমরা মাফ করে দিলা। তারপর ফ্লাট,গাড়ি দিয়ে। ও কোনোদিন কি পারবে মেঘকে সুখী করতে।
আজগর চৌধুরী বললো দেখ আমরা বাবা হয়েছি এজন্যই। যতই যাই করুক ও তো আমাদের জামাই। ওকে যদি আমরা সুযোগ না দিতাম তাহলে মেঘের জীবন টা নষ্ট হয়ে যেতো।
এইরকম হারামির থেকে মেঘকে মুক্ত করলেই ভালো হতো বাবা।
তুমি এসব বুঝবে না তর্কে আসিয়ো না। এর জন্য আমি বাবা তুমি ভাই আকাশ। শুনো হামজার একটা ডিমান্ড ছিলো সেইটা না পাওয়ার কারণে এইরকম করছে। আমি সেই ডিমান্ড গুলা পূরণ করলাম। নীলার কাছে যতটুকু শুনছি হামজা কখনো কাউকে ভালোবাসে নাই। ভালোবাসার নাটক করেছে শুধুমাত্র অর্থের লোভে। আর সেই অর্থ যদি আমরা তাকে বুঝিয়ে দিতে পারি তাহলে সে ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে করি। একমাত্র মেয়ে আমাদের কিছুতেই সংসার ভাঙনের তোপে পড়া যাবেনা। ছেলেমেয়েরা ভূল করলে বাবা তাকে শুধরানোর সুযোগ বার বার দেয়। এখনো বাবা হও নাই বাবা হলেই বুঝবা আকাশ।
যত্তসব লেইম এক্সকিউজ বাবা। কুকুরের পেটে ঘি হজম হয়না তাই একদিন দেখবেন হামজা ঠিক এরকম কিছু তা তোমাদের ধারণা বাইরে থাকবে। ও রিয়ার সাথে যা করেছে ওর প্রাপ্য ছিলো জেইল। তারবিনিময়ে মেয়ের জামাই হয় বলে তাকে কিছুই শাস্তি দিবা না।
শুকর বলে তোরা বাপ বেটা থাম। এটাই ওর শেষ সুযোগ যদি ভালো হলো ভালো। খারাপ কাজের সঙ্গ দেওয়া শুরু করলে রাজত্ব ও রাজকন্যা দুটোই ছিনিয়ে নিবো চুপ থাক তোরা।
ঈশান বললো ভাই বড়দের ব্যাপার ওরা যা বুঝে করুক। আমাদের দায়িত্ব যা ছিলো করেছি এসব বাদ দে নীলা ভাইকে উপরে নিয়ে যাও।
এরপরে আকাশকে উপরে নিয়ে যায় নীলা। উষশী আর ঈশান উপরে চলে আসে।
আর্জিনা বলে ছেলে দুইটা রাগ করেছে। আসলে কি আমাদের হামজাকে ভরসা করা ঠিক হলো?
আজগর বললো এ ব্যাপারে বাড়িতে একটা কথা শুনতে চাইনা আর। শুকর বললো রিয়ার উপর দিয়ে অনেক কিছু গেছে। বেচারি এসব শুনলে মেনে নিতে পারবে না ভাইয়া।
আজগর চৌধুরী বললো তোমরা সবাই চুপ থাকো। কালকের সকাল পযন্ত অপেক্ষা করুক সবাই। ওদের তিনভাইকেও সারপ্রাইজ দিবো আমরা।
আকাশ নীলাকে বললো বাবা এটা ঠিক করলোনা নীলা। রিয়ার সাথে আর তোমার পরিবারের সাথে যা হলো আমি মেনে নিতে পারছি না।
বাদ দেও এসব, যতভাববা ততই কষ্ট পাবা।
এসব কি বাদ দেওয়ার বিষয়, তুমিই বলো।
কি করবা এখন ওনারা গুরুজন যা করবে আমাদের ভালোর জন্যই করবে।
এইখানে তুমি কি ভালো দেখতে পারছো?
আমরা যেইটা খালি চোখে দেখছি না ওরা বোধহয় ভালোটাই দেখেছে।
দিস ইস টু মাচ নীলা 😟
রাগ করিয়ো না আকাশ। এসব চিন্তা মাথা থেকে বের করে একটা লম্বা ঘুম দিবো দুজনে।
এরপরে আকাশ নীলাকে বিছানায় জড়িয়ে ধরে বলে কখনো আমাকে ছাড়বা না!
তোমাকে ছাড়বো না আকাশ।
রিয়া রুমে অনবরত ভাবে কাঁদছে। ইমরান শুধু রিয়াকে শান্তনা দিয়ে যাচ্ছে।
রিয়া বললো কখনো ভাবি নাই, এভাবে বিয়ে করবো। বড় বাবা আমায় এখনো ফোন দিলেন না৷ বিদায়ের সময় আমার মুখ দেখে নাই। আমার ভিতরটা খা খা করছে এর জন্য ইমরান।
তুমি এসব ভাবিয়ো না বড়বাবার রাগ কমলে ওনি নিজেই আমাদের দেখতে আসবে।
কখনো না ইমরান ওনি একরোখা লোক।আমার জন্য ওনি বোধহয় নীলা আপুর সাথেও কথা বলবে না।
তুমি এতো ভাবিয়ো নাতো নীলা ভাবি নিসন্দেহে ম্যানেজ করে নিবে। ভরসা রাখো ভাবির উপর।
কি এমন অপরাধ করেছিলাম যার জন্য আমাদের ভরা গ্রামবাসী এই জায়গায় দাঁড় করালো।
কপালে এইভাবেই আমাদের চারহাত এক হওয়ার কথা ছিলো সম্ভবত।
আমি ছাড়বো না যে আমাদের সাথে এরকম করছে তাকে আমি খুঁজে বের করবোই।
এসব বাদ দাও অনেক ধকল গেছে তোমার। শরীর নিশ্চিত ব্যাথা করছে। এখন একটু ঘুম দাও তো।
রিয়া আর ইমরান ঘুমিয়ে পড়লো।
ঈশান উষশীকে বলে কখনো রিয়া ইমরানকে মুখ ফসকে কিছু বলবানা। ওরা হামজাকে মাফ করতে পারবে না।
ওদের সাথে যা হয়েছে এগুলা কি মেনে নেওয়ার শুধু তোমার বোন ওই ছেলেকে বিয়ে করছে বলে পার পেলো।
ঈশান বললো এটা জানি আমরা চলো ঘুমাই।
তিনভাই তাদের তিনবউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমালো 💗
সকাল হলো আকাশ, ঈশান অফিসের জন্য তৈরি হয়ে অফিস বেড়ালো।
আজগর চৌধুরী আকাশ আর ঈশানকে ডাক দিলো।
বাবা কিছু বলবা।
তোদের অফিস যেতে হবেনা।
কিন্তু কেনো বাবা।
আজ থেকে আমি আর শুকর অফিস করবো।
কিন্তু তুমিতো এসব কাজ বাদ দিছো হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত।
ক্যান আমাকে কি তোমরা দুই ভাই ভরসা করোনা। এই আমি আমাদের কোম্পানিকে এত বড় করেছি।
ভরসার কথা হচ্ছে না বাবা, তোমার সিদ্ধান্তের কথা শুনে আমরা বিস্মিত
শুকর বললো বসো তো দু ভাই।
চাচ্চু কি হচ্ছে বাড়িতে তুমি বাবাকে বোঝাও। অনার বয়স হয়েছে এখন অফিস করার সময় না।
শুকর বললো আমরা দুভাই সিদ্ধান্ত নিয়িছি কয়েকদিনের জন্য আমরা সব কাজ দেখাশোনা করবো।
কিন্তু কেনো?
শায়লা ইমরানকে ডেকে নিয়ে আসো।
শায়লা ইমরানকে ডাকতে যায়।ইশান আর আকাশ থম মেরে সোফাতে বসে যায়। ইমরান এসে বলে আমাকে ডাকছিলে 😟
আজগর চৌধুরী বললো ওইখানে বসো ওদের সাথে।
আকাশ রেগে যায়। কি হচ্ছে বাবা বাড়িতে? এসব কি অনাচার শুরু করলে নতুন করে।
আর্জিনা বললো কিছু না শুনে হুটহাট রেগে যাওয়ার স্বভাব কবে থেকে হলো তোর।
ঈশান আকাশ থামিয়ে দিয়ে বলে। বাবা তিনজন এক জায়গায় আছি । কি বলবা তাড়াতাড়ি বলো আমাদের খুব টেনশন হচ্ছে।
আজগর চৌধুরী বললো বাড়িতে এ কয়দিন অনেক কিছু হয়েছে। তাই আমরা দুই ভাই সিদ্ধান্ত নিছি কয়েকদিন অফিসের কাজ আমরা দেখাশোনা করবো।তোমাদের মন ভালো করার জন্য বাড়ির বাইরে পাঠাবো। তোমরা হানিমুন হিসাবে নিতে পারো।
তিনভাই লজ্জা পেয়ে যায়।মাথা নিচু করে ফেলে।
শুকর বলে আমরা টিকিট সব বুক করেছি তোমাদের না বলেই। কক্সবাজারে তোমাদের হোস্টেলের রুম বুক করা আছে।
ইমরান মুখ ফসকে বলে মাত্র কক্সবাজার। আকাশ ইমরানের মাথায় চাটি মেরে দেয়।
শুকর বলে এই পরিস্থিতিতে দেশের বাইরে দেওয়া সম্ভব না। তাতে কয়দিন সময় লাগবে। তোমাদের ভালোর জন্য কক্সবাজার আয়োজন করছি। তোমরা খুশি না?
আকাশ ইমরান মাথা নেড়ে হ্যা সূচক সম্মতি দেয়।
শায়লা বেগম তিনজনকে ছয়টা টিকিট দিয়ে দেয়। আজগর বললো আজকেই রওনা করো অফিসের কথা চিন্তা করবা না কারণ আমরা আছি। সময়গুলো ইনজয় করো।
আকাশ নীলাকে হাগ করে।
তুমি না এইমাত্র অফিস বেড়ালে।
আকাশ বললো বাবা আমাদের তিন ভাইকে সারপ্রাইজ দিছে নীলা।
কি সারপ্রাইজ?
টিকিট নীলার হাতে দিয়ে বললো আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি বেড়াতে।
সত্যি 😳
হুম সত্যি বিয়ের পর তোমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে বের হয় নাই। আর কতদিন হলো আমরা একে অপরকে ভালোবাসি না খুব ভালোবাসবো তোমায়।
যাও তোমার দুষ্টুমি বাদ দাও। এক্ষুনি বেড়াতে হবে।
হুম ল্যাগেজ দুইটা গুছিয়ে ফেলি চলো।
ইমরান রিয়াকে যেয়ে এই কথা বললে খুব খুশি হয়ে যায়।বিয়ের পর সাথে সাথে ঘোরার মূহুর্ত পাচ্ছে ফিলিংস আলাদা টাইপের পাচ্ছে। খুশিতে দুজন ল্যাগেজ খুশিয়ে ফেলে।
তিন ভাই ল্যাগেজ নিয় নিচে এসে বাবা মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিলো।
ড্রাইভার এসে এয়ারপোর্টে ড্রপ করলো। সকালের ফ্লাইট ধরে ১০.৩২ এ কক্সবাজার পৌঁছালো।
এরপরে তিনজন তিনজনের চাবি নিয়ে হোস্টেলে উঠে পড়লো।
নীলা,রিয়া,উষশীর হোস্টেল টা খুব পছন্দ হলো।
নীলা রুমে যেয়ে পরিবর্তন করলো। রুমে আসতেই কারেন্ট চলে গেলো। নীলা খুব ভয় পেলো রুমের অন্ধকার দেখে। মনে মনে বললো এতো বড় হোস্টেলে আইপিএজের ব্যবস্থা নাই। অন্ধকারে হাটতে থাকলো। পিছন থেকে কেউ এসে নীলাকে জড়িয়ে ধরলো। নীলা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকলো।
চলবে,,,
[ আসসালামু আলাইকুম, কেমন লাগলো আজকের পর্ব জানাবেন একটু খানি ]