অনুরাগের_প্রহর #মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি #পর্ব_০৫

0
222

#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৫
_________________
মেহরিন চা আর কিছু নাস্তা নিয়ে বাগানে গেল।গিয়ে দেখলো শেহেরয়ার চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চাঁদ দেখছে।মেহরিন গিয়ে হাতের ট্রেটা টেবিলে রেখে চেয়ার টেনে বসলো।মেহরিনকে দেখে শেহরেয়ার বললো,

-“জানেন কালকেই ভাবছিলাম আপনার সাথে চাঁদ দেখার কথা।এতো তাড়াতাড়ি যে আমার ইচ্ছাটা পূরণ হয়ে যাবে তা বুঝতে পারিনি।”

-“বাহ্ আপনি তো দেখছি বেশ রোমান্টিক!”

-“এমনটা মনে হওয়ার কারণ?”

-“কারণ এইসব চিন্তাভাবনা রোমান্টিক মানুষদের মাথাতেই আসে।”

মেহরিনের কথায় মুচকি হাসলো শেহরেয়ার।দুজনের মাঝে নিরবতা।শেহরেয়ার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,

-“তারপরে রায়ানের আসল বাবার বিষয়ে কিছু বলুন তো শুনি!আপনার আর উনার পরিচয় কি করে হয়েছিল?”

শেহরেয়ারের কথা শুনে চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গেল মেহরিন।সে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে বললো,

-“এই বিষয়ে কথা না বললে হয় না?নাকি আপনার সমস্যা আছে বাচ্চাসহ আমাকে বিয়ে করতে?”

-“আমার যদি সমস্যা থাকতো তাহলে আজকে আমি আপনার সামনে বসে থাকতাম না।আপনার ইচ্ছা না হলে বলার দরকার নেই।আমার এমনি জানার শখ হয়েছিল!”

___________________
-“মুনিয়া তুই আজকে আমাদের বাড়িতে থেকে যা।অনেকটাই রাত হয়ে গেছে।”

রুমির কথায় মুনিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“না রে!আজকে আমার বাড়িতে যেতেই হবে।কারণ কালকে তো প্রাকটিকাল খাতা জমা দিতে হবে।ভুলে গেছিস তুই?”

-“কিন্তু এতোরাতে কিভাবে যাবি তুই?”

মুনিয়া কিছু বলার আগেই হামিদ বললো,

-“আমি উনাকে উনার বাড়িতে পৌঁছে দিবো।”

রুমি হাসি দিয়ে বললো,

-“যাক ভাইয়া যদি পৌঁছে দেয় তাহলে আমি নিশ্চিন্ত।

মুনিয়া কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল।হামিদ মুনিয়াকে নিয়ে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট করলো।রুমা বেগম এসে রুমির কাঁধে হাত রেখে বললো,

-“তুই ওদের সাথে গেলি না কেনো?মুনিয়াকে একা ছেড়ে দিলি হামিদের সাথে?”

-“কেনো কি হয়েছে আম্মু?”

-“ছেলেদের মন বলে কথা।ও যদি মুনিয়াকে পছন্দ করে ফেলে?”

-“করলে করবে।সমস্যা কি?”

-“এই তুই জানিস না আমি যে তোকে ওর সাথে বিয়ে দিতে চাই!”

রুমা বেগমের কথায় বিরক্ত হলো রুমি।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“আম্মু প্লিজ এইসব বাদ দেও।হামিদ ভাইয়া আমার মামাতো ভাই।আর সারাজীবন আমার মামাতো ভাই হয়েই থাকবে।তোমার এইসব ইচ্ছা মাটি চাপা দিয়ে দেও।”

রুমি কথাগুলো বলে তার রুমের দিকে চলে গেল।রুমি যেতে রুমা বেগম বললেন,

-“তুই বললেই হবে নাকি!আমার ভাইয়ের একমাত্র ছেলে।ভাই আর ভাবি নেই তো কি হয়েছে!টাকা-পয়সার তো অভাব নেই।কত বড় বিজনেস ম্যান আমাদের হামিদ।এই ছেলে আমি কিছুতেই হাতছাড়া করবো না।”

হামিদ গাড়ি চালাতে চালাতে আড়চোখে মুনিয়াকে দেখছে।বাতাসের কারণে মুনিয়ার চুলগুলো উড়ে মুখের উপরে পড়ছে আর সে সেগুলো কানের পাশে গুঁজে রাখছে।এই দৃশ্য দেখতে বেশ ভালো লাগছে হামিদের।হঠাৎ করে হামিদের গাড়িটা থেমে গেল।মুনিয়া চমকে গিয়ে বললো,

-“কি হলো?”

-“ওয়েট আমি চেক করে দেখছি।”

হামিদ গাড়ি থেকে নেমে সব চেক করে দেখলো গাড়ি চাকা পাঞ্চার হয়েছে।মুনিয়া কাঁদো কাঁদো সুরে বললো,

-“এখন কি হবে?”

-“চিন্তা করবেন না।আমি ড্রাইভারকে কল করে গাড়ি নিয়ে আসতে বলতেছি।”

___________________
-“বউমা এই পোলাডা কার?তোমার এতো দরদ কেরে তার লিগ্গা?”

সেতারা বেগমের কথায় ঘাবড়ে গেলেন হেনা সাহেবা।নিজেকে স্বাভাবিক করে বললেন,

-“মা আপনি জানেন তো ও আমার বান্ধবীর ছেলে।”

-“তা বান্ধবীর ছেলেরে কি নিজের ছেলের চেয়ে বেশি আদর করন লাগে!”

-“দেখুন মা আমার এখন আপনার সাথে এইসব নিয়ে কথা বলার সময় নেই।রাজের জন্য রাতের খাবার তৈরি করতে হবে।ওর ওষুধ আছে।”

হেনা সাহেবা আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন।হেনা সাহেবা যেতে শেহমীর মির্জা এসে সেতারা বেগমের কাঁধে হাত রাখলেন।দূর থেকে তিনি সবটাই শুনছিলেন!

-“তোর বউ ওই পোলারে এতো ভালো পায় কেরে?”

-“জানি না মা।হয়তো ওর বান্ধবী ছেলেটাকে অনেক ছোট রেখে মারা গেছে বলে!”

_____________________
রিয়াজুল রাহমান ঘুমন্ত রায়ানকে কোলে করে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে থেমে গেলেন।তিনি দেখলেন শেহরেয়ার আর মেহরিন বাগানে বসে বেশ হেসে হেসে গল্প করছে।যা দেখে উনার মুখে মৃদু হাসি ফুটলো।তিনি তাদের দিকে এগিয়ে গেলেন।রিয়াজুল রাহমানের কোলে রায়ানকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে মেহরিন বললো,

-“গুড্ডু ঘুমিয়ে পড়েছে?”

-“হ্যাঁ।সিএনজি তে আসার সময়ই ঘুমিয়ে পড়েছে।চিন্তা নেই আমি ও-কে রাতে খাইয়ে এনেছি।তা শেহরেয়ার বাবা তুমি কখন আসলে?”

-“এই তো আঙ্কেল সন্ধ্যার দিকে এসেছি।চিন্তা নেই আমি আপনাদের বাড়ির ভিতরে যাইনি।আপনার মেয়েকে নিয়ে এই বাগানে বসে হল্প করতে ছিলাম।”

-“বাবা তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।রাতে না খেয়ে যাবে না কিন্তু।মেহরিন মা আমি খাবার নিয়ে এসেছি।তোরা খেয়ে নে।হ্যাঁ রে মুনিয়া আসেনি এখনো?”

-“না বাবা ও তো আসেনি।”

-“এতো রাত করছে কেনো কে জানে!”

শেহরেয়ার পাশে থেকে বললো,

-“আঙ্কেল চিন্তা করবেন না ও ঠিক চলে আসবে।”

সবাই মিলে একসাথে খেতে বসলো।খাওয়ার পরে বিদায় নিয়ে শেহরেয়ার বাড়ি থেকে বের হতে দেখলো হামিদ মুনিয়াকে নিয়ে এসেছে।হামিদকে দেখে শেহরেয়ার বললো,

-“হামিদ তুই এখানে?”

হামিদ অবাক হয়ে বললো,

-“শেহরেয়ার তুই এখানে কি করছিস?”

দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কনফিউজড হয়ে মুনিয়া বললো,

-“আপনারা দুজন দুজনকে চিনেন?”

শেহরেয়ার হামিদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

-“হামিদ আমার বেস্টফ্রেন্ড।”

শেহরেয়ার হামিদের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিল।রিয়াজুল সাহেব জমে থাকা প্রশ্নটা ছুড়ে মারলেন।

-“এতো দেরি হলো কেনো?”

মুনিয়া সব ঘটনা বলে বললো,

-“তারপরে উনার ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসার পরে এসেছি।তাই লেট হয়ে গেছে।”

রিয়াজুল রাহমান হামিদের কাঁধে হাত রেখে বললেন,

-“ধন্যবাদ তোমাকে বাবা।”

-“আঙ্কেল এইসব বলার কোনো দরকার নেই।এটা আমার দায়িত্ব।”

শেহরেয়ার হাত ঘড়ি দেখে বললো,

-“হামিদ অনেক রাত হয়েছে বাড়িতে যা।আমিও বাড়ির দিকে যাই।”

মেহরিন পাশে থেকে বললো,

-“না উনি আজকে আমাদের বাড়িতে প্রথম এসেছেন।এভাবে খালি মুখে যেতে দেওয়া যায় না।”

হামিদ হাসি দিয়ে বললো,

-“আপনি আমার হবু ভাবি বলে কথা।আসা যাওয়া তো হবেই।তাই আজ আর না অন্যদিন এসে পেট ভরে খেয়ে যাবো।”

দুজনে সবার থেকে বিদায় নিয়ে মেহরিনদের বাড়ি থেকে চলে গেল।

ড্রয়িংরুমে বসে পান চিবোতে ব্যস্ত হেনা সাহেবা।হাতের মুথো একবার খুলছেন আর বন্ধ করছেন।শেহরেয়ার বাড়িতে ঢুকে দেখলো হেনা সাহেবা বসে আছেন।সে আর কিছু না বলে তার রুমের দিকে যেতে গেলে হেনা সাহেবা বললেন,

-“কোথায় ছিলিস তুই এতোরাত পর্যন্ত?”

শেহরেয়ার শ্বাস ছেড়ে বললো,

-“মেহরিনদের বাড়িতে।”

-“কি চাস তুই?পৃথিবীতে আর মেয়ে নেই যে ও-কেই তোর বিয়ে করতে হবে?”

-“মা আমি আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি।এই বিষয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না।”

-“একটা চরিত্র*হীনা মেয়ে!বাচ্চার বাপের কোনো পরিচয় নেই।ওই মেয়েকে তুই কি দেখে বিয়ে করতে চাস?”

শেহরেয়ার চোয়াল শক্ত করে বললো,

-“ব্যাস মা!অন্যকে কিছু বলার আগে নিজেকে নিয়ে একটু ভেবে দেখো।তোমার জীবনেরও তো কত অজানা তথ্য রয়েছে।”

হেনা সাহেবা ঘাবড়ে গিয়ে বললেন,

-“কি বলতে চাচ্ছিস তুই?”

-“আমি সব সত্যিটা জানি মা।”

#চলবে____

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here