প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৫

0
529

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৫

ইশান গোডাউনের সব ঝামেলা মিটিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে রাওয়ানা হয়। মাঝ রাস্তায় এসে জ্যামে আটকে পড়ে। রাস্তার আশেপাশে দেখাতেই নজর যায় রাস্তার ওপাশে একটা ফুচকার দোকানে একটা মেয়ের দিকে, পাশে আরও তিন জন ছেলেমেয়ে আছে। মেয়েটার চুল গুলা ছুটি করা, বেবি চুল গুলা কপালের সাইডে পড়ে আছে, মুখের এক সাইড দেখা যাচ্ছে তাও এতটা ভালো করে না। তাই ইশান ঠিক ভালো করে চিনতে পারছে না মেয়েটাকে তবে তার খুব চেনা চেনা লাগছে। ভ্রু-কুচকে ইশান ভালো করে মেয়েটাকে দেখার প্রয়াস করছে। হঠাৎ করেই মেয়েটা ঘুড়ে তাকায় আর মেয়েটাকে দেখে ইশান আবাক হয় সাথে রাগও হয়। দাতে দাত চেপে বলল।

–তীর এখানে কি করছে? এসময় তো ওর এখানে থাকার কথা নয়।

ইশান চারিপাশে আরও ভালো করে চেক করে ইশাকে খুজার চেষ্টা করে কিন্তু ইশার কোনো চিহ্ন খুজে পায় না। তাই ফোন হাতে নিয়ে ইশার নাম্বারে কল করে। দুই তিন বার রিং হওয়ার পরপরেই ইশা ফোনটা ধরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশান বাজখাই কন্ঠে বলে উঠে।

–কোথায় তুই?

ইশানের এমন কন্ঠ শুনে ইশা কিছু ভড়কে যায়। কাপাকাপা গলায় বলে।

–ভাইয়া আমি তো বাসায়।

–তীর কোথায়?

ভাইয়ের মুখে তীর কোথায় কথাটা শুনে চোখ বড়বড় হয়ে যায় ইশার। ইশা এতক্ষন বসে বসে যা ভেবেছে তার মানে তাই হলো। বাড়িতে এসে যখন জানতে পারে ইশান বাড়িতে নেই তখন থেকেই ও চিন্তায় পড়ে গেছে। আর সমানে উপরওয়ালার কাছে দোয়া করে গেছে তীর যেন ইশানের সামনে পড়ার আগে বাড়ি ফিরে আসে। ইশানের কন্ঠ পুনরায় শুনা গেল।

–কি হলো কথা বলিস না কেন?

–ভাইয়া আসলে হয়েছে কি তীর তো….

–বুঝতে পেরেছি আমি আর বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলতে হবে না।

বলেই ফোনটা টাস করে কেটে দেয় ইশান। ইশা ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। চিন্তায় দাত দিয়ে নুখ কাটা শুরু করে দিয়েছে। অতিতে একবার ফুচকা আর চটপটি খেয়ে পেটের অবস্থা বারটা বাজিয়ে ফেলেছিলো ইশা আর তীর যার জন্য তিন দিন হাসপাতালে পর্যন্ত থাকতে হয়ে ছিলো। এরপর থেকে বাইরের এসব খাবার খাওয়া বন্ধ। কিন্তু ওরা দুজন লুকিয়ে চুকিয়ে ঠিকেই খেতো। আর আজ তো বন্ধের দিন ছিলো সবাই বাড়িতেই থাকবে। তাই আরও সাহস করে ফুচকা খেতে চেয়েছিলো ওরা। কিন্তু কে জানত ইশা খেতে পারবে না আর ইশানও যে বাড়ি থেকে বের হবে।

ইশা বার বার তীরকে কল করেই যাচ্ছে কিন্তু কল ধরার কোন নামেই নেই। নীরার ফোনেও কল করচ্ছে কিন্তু নীরাও ধরছে না। ইশার মন চাইছে ওই দুইডারে পানিতে চুবাতে। ফুচকা খাওয়ার নেশায় এমন ভাবে পড়েছে যে ফোনটাও ধরতে পারছে না একটু। বেয়াদব দুইটা ফোন ইউজ করে কিন্তু দরকারের সময় ফোন ধরে না। ইশা এক প্রকার বিরক্ত নিয়ে বলে।

–জাহান্নামে যা তুই তীর তাতে আমার কি?

______

এদিকে তীররা ছয় প্লেট ফুচকা শেষ করেও আরও তিন প্লেট ফুচকা আর সাথে তিন বাটি চটপটিও অর্ডার দিয়েছে। টাকা তো নীরা দিবে তাই নো চিন্তা। ফ্রিতে খাওয়ার মজাই আলাদা। কিন্তু নীরা বেচারি যে এভাবে ফেঁসে যাবে কল্পনাও করতে পারে নি। এখনতো রাহুল আর তীরও এক পক্ষ হয়ে নীরার গলা এক প্রকার চেপে ধরছে ওর কাছে পাচঁশ টাকার নোট দেখে। নীরা না পারছে সইতে আর না পারছে কিছু বলতে কারন আপাতত ওর পাচঁশ টাকার নোটটা রাহুলের কাছে। এই পাচঁশ টাকার নোটটা নীরার হাতে দেখা মাএই রাহুল ঈগল পাখির মতো “ছু” মেরে নিয়ে নেয়। নীরা অসহায় ভাবে হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে আর মনে মনে ফন্দি আটছে কি করে পাচঁশ টাকার নোটটা উদ্ধার করা যায়। কিন্তু রাহুল এমন জায়গাতে টাকাটা রেখেছে যেখান থেকে টাকা উদ্ধার করা নীরার কাছে অসম্ভব হয়ে দাড়িছে। তাই আর কি করার নীরা বেচারি চুপচাপ বসে ওদের হাসি হাসি মুখে দেখে যাচ্ছে আর রাগে ফুসছে। তীর নীরাকে উদ্দেশ্য করে বলে।

–রাগ করিস না দোস্ত আমাদেরকেই তো খাওয়াচ্ছিস আর জানিস এতে তর কত সাওয়াব হবে।

–সময় আমারও আসবে এক মাঘে শীত যায় না বলে দিলাম।

রাহুল বলে।

–আপাতত এই বছরের মাঘ মাসটা আমাদের তাই আমরা একটু চিল করি। আর তুই আগামী বছরের মাঘ মাসের জন্য অপেক্ষা কর দোস্ত।

নীরা রাহুলের কথা শুনে আরও রেগে যায় রাহুল যেই চেয়ারটাতে বসেছে সেই চেয়ারটাতে লাথি মেরে বলে।

–তুই হচ্ছিস মেইন কার্লপিট। তকে যে আমি কোন দুঃখে এখানে ডেকে আনতে গেলাম সেটা আমি বুঝতে পারছি না। এখন নিজের উপরে রাগ উঠছে। মানুষ হয়তো এর জন্যেই বলে খাল কেটে নিজে থেকে কুমির ডেকে আনে।

নীরার তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।

–আর তীর তুইও এভাবে পল্টি খেয়ে গেলি। তরা সবগুলা এক একটা পল্টিবাজ। আমার রাগে ইচ্ছে করছে নিজের মাথা নিজেই ফাটিয়ে ফেলতাম।

রাহুল তীরকে ইশারা করে কথা বলতে না করে। নীরা এখন আইটেম বোম হয়ে আছে বেশি কিছু বললে হয়তো ফেটে যাবে এখন আর সব ছাড়খার করে দেবে।

____

জ্যামে ছুটার সাথে সাথে ইশান গাড়ি ঘুড়িয়ে নিয়ে ফুচকার দোকানটার সামনে আসে। তীর এখনও লক্ষ্য করে নি ইশানের গাড়ি লক্ষ্য করবে কি করে ও তো খেতে ব্যস্ত। ইশান গাড়ি থেকে নেমে তীরের পেছনে এসে দাড়ায়। কিন্তু তীরর কোনো হেলদোল নেই ও ওর মতোই চটপটি খেয়েই যাচ্ছে। কিন্তু রাহুল আর নীরার চাওনি দেখে ভ্রু-কুচকে আসে তীরর। ওদের চাওনি দেখে তীর বুঝতে পারলো ওর পেছন নিশ্চয়ই কিছু একটা আছে। তাই তীর সাথে সাথে পিছন ফিরে তাকাতেই আপনাআপনি মুখটা হা হয়ে যায় আর হাত থেকে টাস করে চামচটা নিচে পড়ে যায়। ইশান শীতল দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এই দৃষ্টি তীরের কাছে খুব ভয়ংকর লাগছে বুঝতে পারছে না মানুষটা রেগে আছে নাকি রেগে নেই। তীর শুকনো একটা ঢোক গিলে বলে।

–ইশান ভাইয়া আপনি এখানে কি করছেন?

ইশান তীরের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে।

–সাহসটা খুব বেড়ে গেছে না।‌ ইশা ঠিকেই কোচিং শেষে বাড়ি চলে গেছে আর তুই এখানে বসে বসে এসব আনহেলদি খাবার খাচ্ছিস। যে খাবার গুলা খেলে অসুস্থ্য হয়ে পরিস ঠিক সে গুলাই খেতে ইচ্ছে করে না।

তীর নিচের দিকে তাকিয়ে বলে।

–না মানে আমি আসলে।

–আর কোনো কথা নয় বাড়ি চল।

তীর বাধ্য মেয়ের মতো মাথায় দুলিয়ে উঠে দাড়িয়ে গাড়ির দিকে অগ্রসর হতে যাবে তখনেই নীরা বলে উঠে।

–তীর যাওয়ার আগে বিলটা তো দিয়ে যা প্লিজ।

নীরা এতক্ষন ধরে সুযোগের সৎ ব্যবহার খুজছিলো কি করে ওর টাকাটা বাচানো যায় আর তা পেয়েও গেলে এখন নিজের পকেট থেকে টাকা খরচা হবে না ইশান ভাইয়াই সব দিয়ে দিবে ভেবেই নীরার মন খুশিতে নাচছে। তীর পিছন ফিরে নীরার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনেই ইশান বলে।

–কত টাকা বিল এসেছে।

–ভাইয়া সব মিলিয়ে তিনশো দশটা।

–কিহ? তিনশো দশটা বিল এসেছে। কয় প্লেট ফুচকা আর চটপটি খেয়েছো তোমরা।

–ভাইয়া আমরা বেশি খাই‌নি তীরেই‌ বেশি খেয়েছে।

ইশান তীরের দিকে রাগী চোখে তাকাতেই তীর মুখটা নিচু করে ফেলে। ইশান দাতে দাত চেপে বলে।

–সেটা আমি ভালো করেই জানি।

ইশান পকেট থেকে মানি ব্যাগ বের করে পাচঁশ টাকার একটা নোট নীরার হাত ধরিয়ে দিয়ে বলে।

–বাকি টাকাটা তুমি রেখে দিও।

ইশান তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।

–চল।

ইশানের পিছন পিছন তীরও ধীর পায়ে হেটে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। আজকে ওর কপালে দুঃখ আছে সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। আর ওর মা যদি জানতে পারে তাহলে পিঠের চামড়া আর চামড়া থাকবে না।

____

নীরা চোখ পাকিয়ে রাহুল দিকে তাকিয়ে বলে।

–আমার টাকা ফেরত দে রাহুল।

রাহুল চটপটি খেতে খেতে বলে।

–কিসের টাকা?

–মেজাজ গরম করাবি না রাহুল টাকাটা ভালোও ভালো ফেরত দে।

–আমার কাছে টাকা থাকলে তো তকে টাকা দিবো।

–তার মানে তুই টাকাটা দিবি না।

–উফফ! তুই চুপ করবি কানের কাছে এত বকবক করবি না তো। শান্তি মতো একটু খেতে দে।

–রাহুলের বাচ্চা আমার টাকাটা ফেরত দে না হলে কিন্তু ভালো হনে না।

রাহুল এবার বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে।

–ওই টাকার আশা তুই বাদ দিয়ে নীরা। ওই টাকা তুই আর পাবি না।

বলেই দৌড় মারে রাহুল।

–আমি তকে অভিশাপ দিলাম তুই ‘আব্বা’ ডাক কোনো দিন শুনতে পাবি না দেখে নিস।

–শুকুনের দোয়ায় গরু মরে না।

#চলবে_______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here