#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৭
তীর পিটপিট চোখে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কোথায় আছে। চারিপাশে ভালো করে নজর বুলিয়ে বুঝে এটা তারেই ঘর। কিন্তু পরক্ষনে কিছু একটা চিন্তা করে শুয়া থেকে তাড়াহুড়ো করে উঠে বসে বিরবির করে বলে উঠে।
–এখানে! এখানে কি করে আসলাম? আমি তো গাড়িতে ছিলাম। তাহলে আমার রুমে আসলাম কি করে?
তীরের ভাবনার মাঝেই ছোট অভি রুমে ডুকে হাতে আপেল নিয়ে। আপেল আপেল খেতে খেতে বলে।
–আপু ঘুম থেকে উঠে পড়েছো তাহলে ফ্রেস হয়ে নিচে চলো মা খেতে ডাকছে তোমায়।
তীর আনমনেই বলে উঠে।
–হুম তুই যা আমি আসছি।
–আচ্ছা।
অভি রুম থেকে বের হতে যাবে ওমনি তীর পিছন থেকে অভিকে ডেকে ওঠে।
–অভি এদিকে আয় তো।
–কি হয়েছে বলো?
তীর ঢোক গিলে বলে।
–আমি এখানে আসলাম কি করে?
–ইশান ভাইয়ার কোলে চড়ে।
–ও! কিহ? কি বলছিস কি তুই আমি ইশান ভাইয়ার কোলে উঠে এসেছি।
–হুম। ভাইয়া তোমাকে তোমার রুমে শুইয়ে দিয়ে গেছে তুমি তো তখন চিৎপঠাং হয়েছিলে তাই ভাইয়া দিয়ে গেছে।
–সত্যি কথা বলছিস তুই!
–আমি তোমার মতো মিথ্যা কথা বলি না বুঝলে। আর তাড়াতাড়ি নিচে চলো মা তোমার বারটা বাজাবে তার জন্যই অপেক্ষা করছে।
তীর বেড থেকে নামতে নামতে বলে।
–মানে আমি কি এমন করেছি যে আমাকে বারটা বাজবে মা।
–আজকে ফুচকা আর চটপটি খেয়ে এসেছো তার জন্য।
–কি? মাকে লোকটা বলে দিয়েছে এই কথাটা।
–হুম।
–ঠিক আছে তুই যা।
তীর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে ব্যাগের চেইন খুলতে খুলতে বলে।
–দজ্জাল বেডা! তর ভালো হবে না দেখিস মাকে কথাটা না বললে কি এমন ক্ষতি হতো। ইচ্ছে করে এটা বলেছে আমি জানি তো যাতে মা আমাকে বকাচকা করতে পারে।
বলতে বলতে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে দেখে দশ প্লাস ফোন করেছে ইশা। কিন্তু এর মাঝে একটা মেসেজও আছে। তীর মেসেজটা ওপেন করে দেখে ইশানের নাম্বার থেকে। তীর ভ্রু-কুচকে মেসেজটা পড়া শুরু করে।
“আমি চাইলেই আন্টিকে আজকের ঘটনাটা নাই বলতে পারতাম। কিন্তু আমার মনে হয় তর একটা শিক্ষা পাওয়া দরকার তাই বলে দিলাম। যাতে ভবিষ্যতে এইসব ফালতু জিনিস গুলা খেতে খেলে দ্বিতীয় বার ভাবিস”
তীর মেসেজটা পড়ে নাক ফুলিয়ে বলে।
–শয়তান বেডা! দেখিস তর ভালো হবে না। তর বউ তকে সারা বছর এগুলা গিলিয়ে খাওয়াবে। তখন না পারবি কিছু বলতে আর না পারবি সইতে। আমার কি শিক্ষা পাওয়া দরকার তর একটা শিক্ষা পাওয়া দরকার।
তীর ইশানকে অভিশাপ দিতে দিতে ইশাকে ফোন দেয়। ইশা ফোন ধরার সাথে সাথে তীর বলে উঠে।
–এত ফোন দিয়েছিস কেন? কি হয়েছে?
–তুই কোথায়?
–বাসায় কেন?
–ভাইয়ার সাথে কি তর দেখা হয়েছিলো!
–হয়েছে আর তার কোলে চড়েই আমি বাড়িতে এসেছি।
ইশা চিৎকার করে বলে উঠে।
–কিহ? তুই ভাইয়ার কোলে উঠে বাড়িতে এসেছি। ফাজলামি করছিস তুই তীর আমার সাথে।
–ফাজলামি করার কোনো মুড নেই আমার তর সাথে।
–তাহলে কেমনে কি দোস্ত? খুলে বল সবকিছু তাড়াতাড়ি।
তীর সবটা খুলে বলে ইশাকে। ইশা সবটা শুনার পর বলে।
–কয়টা কল করেছি আমি হুম। একটাও কি ধরার ইচ্ছে হয় নি তর যদি ধরতি তাহলে এমনটা হতো না।
–সাইলেন্ট ছিলো ফোন।
–ফোন না ধরাতে ভালোই হয়েছে। তুই ভাইয়ার কোলে ভাবা যায় উফ আমি তো সিনটা কল্পনা করছি। ইস কি রোমান্টিক সিন।
–তর কাছে এটা রোমান্টিক সিন মনে হচ্ছে।
–আবার জিগায়। আচ্ছা তর ফিলিংসটা কেমন একটু বলবি আমায়।
–ইশু তুই চুপ করবি।
–আরে বোন ঠান্ডা হ। দেখ ভাইয়া তো তকে মনে মনে পছন্দ করে তাহলে ভাব ভাইয়া হয়তো তখন আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে তকে কোলে নিয়ে।
–তুই ফোন রাখ না হলে তর খবর আছে।
বলে তীরেই ফোনটা কেটে। তীরের ইশানের কোলে উঠার কথা মনে নেই ঠিকেই কিন্তু এখন খুব অস্বস্তি লাগছে কি করে এখন সামনে যাবে ইশানের।
______
আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে ইশান বুকের বা সাইডটা ডান হাত দিয়ে ধরে। ঠিক এই সাইডে আজকে তার তীর মাথা রেখেছিলো ভাবতে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠছে। যখন তীর তার বুকে মাথা রেখেছিলো তখন কতটা প্রশান্তি লেগেছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না হয়তো ইশান। এই প্রথম তীর এতটা কাছে এসেছে ইশানের। ইশান চোখ বন্ধ করেই জোরে নিশ্বাস ছেড়ে বলে।
–অচেতন অবস্থায় আজকে আমার বুকে মাথা রেখেছিস তুই তীর। কিন্তু কবে তুই নিজ ইচ্ছেতে স্বজ্ঞানে আমার বুকে মাথা রাখবি কবে? আচ্ছা সেই দিনটা কি খুব তাড়াতাড়ি আসবে নাকি আরও দেরিতে আসবে।
চোখ মেলে তাকায় ইশান। ফোনটা পকেট থেকে বের করে তীরের ছবি বের করে বলে।
–সেই দিনের অপেক্ষা করতে করতে কি আমি বুড়ো হয়ে যাবো তীর। কিন্তু আমি যদি বুড়ো হয়ে যাই তাহলে তুইও তো বুড়ি হয়ে যাবি তাই না। তখন না হয় আমি আর তুই বুড়ো বয়সেই প্রেম করবো কি বলিস।
বলেই ইশান হেসে উঠে।
_______
তীর ফ্রেস হয়ে পা টিপেটিপে সিড়ি বেয়ে নিচে নামে। চারিপাশ ভালো করে চেক করে দেখে নেয় মা কোথায় আছে। রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখে আয়েশা সুলতানা কি যেন করছে। তীর ডায়নিং টেবিলে তাকিয়ে দেখে খাবার দেওয়া আছে। তীর পা টিপেটিপে ডায়নিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। ভেবে রেখেছে খাবারের প্লেট নিয়ে সোজা রুমে ডুকে যাবে মার সামনে আর পরবে না। কিন্তু তা আর হলো কই অভি চিৎকার করে বলে উঠে।
–মা আপু এসেছে।
তীর সাথে সাথে অভির কাছে গিয়ে অভির মুখ চেপে ধরে বলে।
–ভাই আমার চুপ কর।
আয়েশা সুলতানা অভির চিৎকার শুনে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। মাকে দেখার সাথে সাথে তীর অভিকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। আয়েশা সুলতানা রাগী স্বরে বলে।
–চুপচাপ খেতে বস আর আমি যেনো কোনো আওয়াজ না শুনতে পাই।
তীরও বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ খেতে বসে পড়ে। খাওয়া শেষে তীর রান্না ঘরে গিয়ে মায়ের পিছনে দাঁড়িয়ে বলে।
–কি করছো মা?
আয়েশা সুলতানা থমথমে গলায় বলে।
–দেখতে পাচ্ছিস না না কি করছি।
–ও মা এভাবে কথা বলছো কেন?
–তো কি ভাবে কথা বলবো আমি তর সাথে। যে মেয়ে মা-বাবার কথা শুনে না সে মেয়ের সাথে আর কিভাবে কথা বলবো!
তীর বুঝতে পারছে তার মা যে ভীষন রাগ করে আছে। তাই মায়ের রাগ গলানোর জন্য তীর এবার মাকে জড়িয়ে ধরে।
–ও মা আর খাবো প্রমিজ।
–সর তো আর এসব প্রমিজ তুই আরও অনেক করেছিস।
–এবার কসম করে বলছি আর খাবো সত্যি বলছি। এবার একটু হাসো না মা প্লিজ একটু হাসো। মুখটা এমন গোমড়া করে রাখলে আমার ভালো না প্লিজ মা হাসো।
আয়েশা সুলতানা মেয়ের কথা শুনে হেসে বলে।
–ঠিক আছে এবারের জন্য ক্ষমা করলাম কিন্তু পরের বার।
–পরের বার কিছু বলার সুযোগ দিলে তো তোমাকে।
–ঠিক আছে যা এখন আর পড়তে বস গিয়ে পরীক্ষার তো আর দেরি নেই।
–হুম যাচ্ছি।
তীর মায়ের গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে চলে যায়। মনটা এবার হালকা লাগছে তীরের মায়ের রাগ কমাতে পেরে। রুমে ডুকে সোজা বারান্দায় চলে যায় তীর। তীরের বারান্দায় অনেক ধরনের ফুল গাছ আছে। সকাল বেলায় পানি দিতে পারে নাই। তাই এখন গাছ গুলাতে পানি দিবে। তাই ছটপট ওয়াশরুম থেকে মগ ভর্তি পানি নিয়ে এসে ফুলের টবে পানি দিতে থাকে। এক সময় পানি দিতে দিতে চোখ যায় সামনের বারান্দায় যেখানে ইশান দাঁড়িয়ে আছে আর ওর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। সেই এক চাওনি এই চাওনির সাথে সচারচর পরিচয় নয় তীর তবে যখনেই এভাবে ইশান ওর দিকে তাকায় তখনেই তীরের কেমন যেন করে ওঠে বুকের ভেতরটা। খুব ইচ্ছে করছে তীরের বুকটা চেপে ধরতে কিন্তু ইশানের সামনে তা পারছে না। লোকটা এখনও তাকিয়ে আছে ওর দিকে এক ধ্যানে। তীর শুকনো একটা ঢোক গিলে তাড়াহুড়ো পায়ে কোনো মতে বারান্দা থেকে চলে যায়।
তীর চলে যেতেই ইশান হেসে উঠে শব্দ করে। ইশান বেলকনিতে এসেছিল একটা ফোন করার জন্য। কিন্তু বেলকনিতে এসেই চোখ আটকে যায় তীরের দিকে। খোলা চুলগুলা বাতাসে দোল ছিলো। বার বার মুখের সামনে চলে আসা চুলগুলা হাত দিয়ে তা কানের কাছে গুজে দিচ্ছিলো তীর বিরক্ত নিয়ে। সেই মিষ্টি মুহুর্তটাই ইশান মনভরে দেখছিলো। ইশানের খুব ইচ্ছে করছিলো হাত বাড়িয়ে তীরের রেশমি চুল গুলো কানে গুজে দিতে। কিন্তু তা তো আর হওয়ার নয়। ইশানও দীর্ঘ এক নিশ্বাস ছেড়ে ফোনে কারোর সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
রুমে ডুকেই তীর বুক চেপে ধরে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে শুরু করে। আর কিছুক্ষন থাকলে হয়তো ধম আটকে মেরেই যেত ও। তীর বিছানায় ধপ করে বসে বলে।
–কি হচ্ছে এসব আমার সাথে কেন হচ্ছে? কই আগে তো এমন লাগে নি তাহলে আজকে কেন? নাহ আজ থেকে এই লোকের সামনে আমি আর যাবো না।
#চলবে_______