প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৮

0
950

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৮

দুই দিন যাবত তীরকে না দেখে আছে ইশান। ওইদিন বারান্দায় দেখা হওয়ার পর থেকে তীর আর ইশানের একবারও দেখা হয় নি এই দুই দিনের মাঝে। মাঝে ইশান তীরকে শুধু এক বার দেখেছিলো তাও আবার ওর মুখ নয় জাস্ট তীরের অবয়বটা। বেলকনিতে তীর আসতে নিচ্ছিলো আর তখনেই ইশানকে দেখে ঝড়ের বেগে ঘরে ডুকে পরে। সেইসময়ই তীরের অবয়বটা দেখতে পায় ইশান। তীরের দেখা পাওয়া এখন যেন দুস্কর হয়ে পড়েছে। ইশা তীরকে ডেকে আনতে গিয়েছিলো দুই তিন বার কিন্তু নানান বাহানা দিয়ে ইশাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আর কয়েকদিন পরেই তো পরীক্ষা তাই আর ইশানের কাছে এখন ও পড়তে যাবে না।

এই দুই দিন তীরকে না দেখতে পেয়ে ইশানের খুব অস্থির লাগছে। কাজে মনযোগ দিতে পারছে না ঠিক মতো। এই শীতের মাঝেও বেলকনিতে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে তীরকে এক পলক দেখার জন্য। কিন্তু মেয়েটা কিছুতেই‌ তার চোখের সামনে পড়ছে না। প্রতিনিয়ত #প্রনয়ের_দহনে পুড়ে আসচ্ছে ইশান। আর ইশান সেই দহন এত দিন তীরকে দুচোখ ভরে দেখে সহ্য করে এসেছে। কিন্তু এখন আর থাকতে পারছে না তীরকে না দেখে। এক নজর দেখার জন্য ছটফট করছে মন। তাই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। ইশানকে এত সকালে দেখে নেহা বেগম কিছুটা চমকে যায়। ইশান অফিসে যায় সাড়ে নয়টা তাই প্রতিদিন সাড়ে আটটার দিকে উঠে কিন্তু আজ জলদি উঠাতে একটু অবাক হয় নেহা বেগম। ইশাকে খাবার দিতে দিতে জিঙ্গেস করে।

–একি ইশান এত সকালে কোথায় যাবি?

ইশান চেয়ার টেনে বসে বলে।

–অফিসে জরুরি কিছু কাজ আছে তাই আজকে আগেই যেতে হবে।

–ও তাহলে ব্রেকফাস্ট দিয়ে দিবো তকে।

–হুম।

ইশানের পাশে বসেই ইশা পরোটা ছিড়েঁ ডিম দিয়ে খাচ্ছে। ইশান গলা পরিস্কার করে বলে।

–কোচিং কয়টার সময় তোর?

–এইতো আটটায়।

ইশান হাত ঘড়িতে নজর বুলিয়ে দেখে সাড়ে সাতটা বাজতে চলল।

–আমি তদের কোচিং এর রাস্তা দিয়েই যাবো তাই তদের আজকে আমিই কোচিং এ ড্রপ করে দিয়ে যাবো। বাড়ির গাড়ি নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই।

–আচ্ছা ভাইয়া।

ইশানকে খুব অস্থির লাগছে। তাই এক গ্লাস পানি খেয়ে পুনরায় বলে।

–তীর যাবে কোচিং এ।

ইশার খুব ইচ্ছে করছে হাসতে ভাইয়ের অস্থিরতার কারন বুঝতে পেরে। কিন্তু আপতত এখন হাসা যাবে না। তাই নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে।

–হুমম যাবে।

–ঠিক আছে আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি তরা আয়।

ইশান কিছু না খেয়েই চলে যায়। নেহা বেগম ছেলের কান্ড দেখে বলে উঠে।

–ইশান বাবা না খেয়ে চলে যাচ্ছিস কেন?

ইশা খাওয়া শেষ করে হাত ধুতে ধুতে বলে।

–মা তোমার ছেলেকে ডেকে লাভ নেই সে এখন আছে অন্য চিন্তায় আর অন্য কারোর চিন্তায়।

নেহা বেগম ভ্রু-কুচকে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে।

–মানে কার চিন্তায় আছে?

–সে তুমি সময় হলে ঠিকেই জানতে পারবে। এখন আমি আসি লেইট হয়ে যাচ্ছে।

বলেই ইশা কাধে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যায়। ইশা গেইটের বাইরে গাড়ির কাছে এসে দেখে ইশান স্টিয়ারিং এর উপরে কপাল ঠেকিয়ে বসে আছে। ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে ইশার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে যায় সাথে রাগও উঠে তীরের উপর। মেয়েটা কেন বুঝে না তার ভাইয়ের মনের কথা। এই দুইটা দিন ইশানকে কষ্ট দিয়ে কি মজা পেয়েছে সেটা আজকে ইশা তীরের কাছ থেকে জেনেই ছাড়বে।

–ভাইয়া!

ইশান মুখ তুলে তাকায় চোখ গুলা কেমন লাল হয়ে আছে দেখেই বুঝে যাচ্ছে ঘুম হয় নি। ইশা আতংকে উঠে ইশানের লাল চোখগুলা দেখে। ইশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশান বলে উঠে।

–এসে পরেছিস চল তাহলে।

–ভাইয়া আরেকটু অপেক্ষা করি তীর আসুক।

ইশান বিরবির করলো।

–অপেক্ষা! ওর জন্য আর কত অপেক্ষা করবো আমি?

–কিছু বললে ভাইয়া।

–কিছু না! তুই গিয়ে ওকে নিয়ে আয়।

–আচ্ছা।

ইশা কাধের ব্যাগটা গাড়িতে রেখে তীরের বাড়ির দিকে যেতে নিলেই দেখে তীর মাথায় ওড়না পেচাতে পেচাতে গেইট দিয়ে বের হচ্ছে শীতে কাপতে কাপতে। ইশাকে দেখে তীর ওর কাছে এসে বলে।

–ইশু রে! ঠান্ডায় আমি জমে যাচ্ছি। আজকে একটু বেশিই ঠান্ডা লাগছে।

–হু চল এবার! না হলে লেইট হয়ে যাবে।

–হুম।

তীর এতক্ষনে লক্ষ্য করলো একটা কালো গাড়িটা দাড়ানো। এই গাড়িটা ইশানেই ব্যবহার করে। কোনো দিন এই গাড়িতে তীরের উঠা হয় নি। ইশাদের বাড়ির গাড়ি দিয়েই ও কোচিং এ যাওয়া আসা করে। আজকে হঠাৎ এখানে অসময়ে কালো গাড়িটা দেখে তীরের ভ্রু-কুচকে আসে এটা ভেবে গাড়ির ভেতর ইশান নিশ্চয়ই থাকবে। কারন ইশান নিজের গাড়ি নিজেই চালায় কাউকে চালাতে পর্যন্ত দেয় না। তীর ঢোক গিলে ও কিছুতে ইশানের সামনে যাবে না ইশানের সামনে গেলেই ওর সব কিছু কেমন জানি আল্টপাল্ট হয়ে যায় ইদানিং। কেন হয় কিসের জন্য এমন হয় ও ঠিক বুঝতে পারছে না।

ইশা তীর এমন পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে।

–কি হলো চল?

তীর একটা মেকি হাসি দিয়ে বলে।

–দোস্ত তুই চলে যা আমি রিকশা করে যাবো।

–মানে রিকশা করে যাবি কেন এত সুন্দর আরামদায়ক গাড়ি থাকতে।

তীর কিছু বলতে যাবে তার আগেই গাড়ির ভেতর থেকে ইশানের গম্ভীর কন্ঠ ভেসে আসে।

–ইশা ওকে বল এত ভাব না ধরে গাড়িতে উঠতে। সময় ওর জন্য বসে থাকবে না।

ইশা তীরের হাত চেপে ধরে বলে।

–চল তো। ভাইয়া কি তকে খেয়ে ফেলবে নাকি যে তুই দুই দিন যাবত ভাইয়ার সামনে পড়তে চাইছিস না।

ইশা তীরকে জোর করে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও বসে। আড়চোখে এক বার তীর ইশানের দিকে তাকায়। গ্রে কালারের জ্যাকেট পরিহিত লম্বা চাওড়া, সুদর্শন লোকটাকে দেখে বুকের ভেতরটা কেমন মোছরে উঠলো। এই বুকের ভেতরের মোছরা মোছরির জন্যই তীর ইশানের সামনে পড়তে চাইছে না কিন্তু শেষ মেষ তাকে ইশানের সামনে পড়তেই হলোই। অন্য দিকে ইশান লুকিং গ্লাস দিয়ে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তীরকে পরখ করছে। কেমন জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে একবারও মুখ তুলে তাকাচ্ছে না সামনের দিকে। ইশান ঠিক বুঝতে পারছে না তীরের মতিগতি ওই দিনের পর থেকে কেমন যেন একটা হয়ে গেছে। ইশানের ভাবনার মাঝেই ইশা বলে।

–ভাইয়া চলো।

–হুম।

ইশান গাড়ি স্টার্ট দেয় কিন্তু দৃষ্টি তার তীরের দিকে। তীক্ষ্ম চোখে লুকিং গ্লাসের মাধ্যমে তীরকে দেখে যাচ্ছে। ইশানের মাথায় এখন একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে তীর কি ওকে ইকনোর করতে চাইছে কিন্তু কেন ওর জানা মতে তীরের সাথে এমন কিছু করে নি যার জন্য এমন ইকনোর করতে পারে। আগে জানতে হবে তীরের মনে কি চলছে।

_____

গাড়ি গিয়ে থামে কোচিং সেন্টারের সামনে তীর দ্রুত বেগে গাড়ি থেকে নেমে যায়। ইশাান তীরের এমন তাড়াহুড়ো দেখে কিছুটা অবাক হয়। মেয়েটা এভাবে পালাতে চাইছে কেন সেটা ও ঠিক বুঝতে পারছে না। তীর ছয় কদম বাড়াতেই ইশান পেছন থেকে ডেকে উঠে।

–তীর!

তীরের পা জোড়া আটকে যায়! গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠে তার নামটা শুনে। কারো মুখে যে ওর নামটা এতটা মাদকাসক্ত লাগতে পারে সেটা ইশান আজকে না ডাকলে বুঝতেই পারতো না। বুকটা কেমন ধুকপুক ধুকপুক করছে। ইশান সচারচর তীরের নাম নেয় না কিন্তু আজ হঠাৎ এভাবে ডেকে উঠার কারন কি। তীরের খুব ইচ্ছে করছে ফিরে তাকাতে কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে ফিরে তাকালেই কিছু একটা অঘটন ঘটে যাবে। তাই না তাকিয়েই তীর দ্রুত কদম ফেলে কোচিং এর ভেতরে চলে যায়। ইশা তীরের এমন কান্ডে প্রচন্ড অবাক হয়ে ভাইয়ের দিকে তাকায়। ইশান বোনকে ইশারা করে কোচিং এ যেতে বলে। ইশাও চলে যায় কোচিং এর ভেতরে। ইশান আরও অনেকক্ষন গাড়িতে বসে থেকে দীর্ঘ এক নিশ্বাস ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে অফিসের দিকে যাএ শুরু করে।

#চলবে_______

বানান ভুল হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here