শেষটা_সুন্দর #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ২৭।

0
480

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
২৭।

মেহুল রাবীরের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয়। রাবীর গ্লাসের পানিটা ঢকঢক করে গিলে গ্লাসটা সাইড করে রাখে। রাবীরের চোখ মুখ দেখে মেহুলের মনে হচ্ছে, আবার নিশ্চয়ই সিরিয়াস কিছু হয়েছে। মেহুল তাকে প্রশ্ন করতেও ভয় পাচ্ছে। আবার অস্থিরতায় চুপ থাকতেও পারছে না। তবে রাবীর নিজে থেকেই এক সময় তার মৌনতা কাটাল। গলা ঝেড়ে বলল,

‘সিয়ামের সাথে কি আপনার খুব ভালো সম্পর্ক?’

মেহুল অবাক হলো। স্বাভাবিক স্বরে বলল,

‘ও আমার জাস্ট ক্লাসমেট।’

রাবীর সেই কথার বিপরীতে কিছু বলল না। তার ফোন বের করে একটা ছবি মেহুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

‘এই ছেলেটা কে?’

মেহুল মনোযোগ দিয়ে ছবিটা দেখে। সঙ্গে সঙ্গেই বুঝে উঠতে না পারলেও পরক্ষণেই সেদিনের কথা মনে পড়ে, যেদিন সে সাদরাজের সাথে রেস্টুরেন্টে বসেছিল। সে বলল,

‘এটা সিয়াম না।’

‘তাহলে কে?’

রাবীরের কাঠ কাঠ গলার এই প্রশ্নে মেহুল বেশ বুঝতে পারছে সে যে ছবিটাকে ইতিবাচক চোখে দেখেনি। তাই সে ঠোঁট চেপে হাসে। পরে স্বাভাবিক গলায় বলে,

‘উনিই হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি আমার বাবাকে রক্ত দিয়েছিলেন। একদিন হুট করেই উনার সাথে দেখা হয়েছিল। পরে উনি কফির অফার করেন, তাই এক কাপ কফি খেতে গিয়েছিলাম। কিন্তু, এই ছবিটা কে তুলেছে?’

‘যে তুলেছে সে নিশ্চয়ই আমার শত্রু। আর, এই লোকটার নাম কী? কোথায় থাকেন বা কী করেন উনি?’

‘উনি একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব করেন। আর উনার নাম…’

‘বাবা, আজকে কিন্তু আর যেতে পারবেন না। আমাদের এইখানেই থাকবেন।’

মেহুল নাম বলার আগেই রামিনা বেগম ড্রয়িং রুমে এসে হাজির হলেন। তিনি হেসে কথাটা বললেন। রাবীর মৃদু হেসে বলল,

‘রাতে একটা জরুরি মিটিং আছে, মা। এখানে আজ থাকাটা কোনোভাবেই সম্ভব না। অন্য একদিন এসে অবশ্যই থাকব।’

‘তাহলে খেয়ে যেতে হবে। আমি সব রান্না করছি। না খেয়ে আজ এখান থেকে বেরুতে পারবেন না।’

রাবীর হেসে বলল,

‘আচ্ছা ঠিক আছে, খেয়েই যাব।’

রামিনা বেগম রুম থেকে চলে যাওয়ার পর রাবীর আবার মেহুলের দিকে চেয়ে শক্ত গলায় বলে,

‘তো, লোকটার সম্পর্কে কী বলছিলেন যেন?’

‘লোকটাকে আমি চিনি না। বড়ো জোর দু থেকে তিনবার দেখা হয়েছে, তাও আবার কাকতালীয়ভাবে। কিন্তু, এখন কথা হচ্ছে এই লোকের সাথে আমার এই ছবি আপনাকে কে পাঠাল?’

‘জানি না। যেই নাম্বার থেকে এসেছে সেই নাম্বার এখন বন্ধ। তবে যে এই কাজটা করেছে সে নিশ্চয়ই আরো বড়ো কোনো চাল চালছে। আর এই লোকের ব্যাপারেও আমার সব ইনফরমেশন বের করতে হবে। এই দু থেকে তিনবার একই মানুষের সাথে দেখা হওয়াটা কি শুধুই কাকতালীয়, নাকি অন্যকিছু?’

‘কিন্তু আপনি লোকটাকে কোথায় পাবেন?’

‘এই কাজের দায়িত্ব আমার। আপনি লোকটার নাম কী যেন বলছিলেন?’

মেহুল একটু ভেবে বলল,

‘সাদ..ওহ, সাদরাজ। সাদরাজ আহমেদ মেবি।’

রাবীরের চোখ মুখ নিমিষেই কুঁচকে যায়। বিস্ময়ে হতভম্ব সে। জিজ্ঞেস করে,

‘কী? তার নাম সাদরাজ আহমেদ? আপনি সিউর?’

‘হ্যাঁ, এখানে সিউর না হওয়ার কী আছে? আমার তো উনার সাথে কথাও হয়েছে।’

রাবীরের মাথার রক্ত টগবগ করছে যেন। রাগে শরীর রি রি করছে। সাদরাজের এত বড়ো কলিজা হয় কী করে? রাবীরের তো কিছু মাথাই আসছে না। এই লোকটার কত বড়ো বুকের পাটা, সে সব ছেড়ে ছুড়ে শেষে কিনা রাবীর খানের কলিজায় হাত দিয়েছে! এই হাত কি আর অক্ষত থাকবে? না, কখনোই না। শুধু এই হাত না, এই হাতের মালিকও আর বেশিদিন অক্ষত থাকবে না।

রাবীর চোয়াল শক্ত করে মেহুলের হাত থেকে ফোন নেয়। তারপর আরেকটা ছবি বের করে। মেহুলের চোখের সামনে ধরে বলে,

‘এই লোকটার কথাই বলছিলেন?’

মেহুল চমকে বলে,

‘হ্যাঁ, উনিই তো সাদরাজ। কিন্তু, উনার ছবি আপনার কাছে কী করে এলো?’

রাবীর নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারছে না যেন। ভয়ানক কিছু করে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার। সে ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলে। দুহাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘এক গ্লাস ঠান্ডা পানি আনুন।’

মেহুল রাবীরের ব্যবহারে ভীত হয়। কী হলো হঠাৎ? এত রেগে গেলেন কেন উনি? মেহুল যাচ্ছে না দেখে রাবীর তার দিকে চেয়ে ধমক দিয়ে বলে উঠে,

‘গো ফাস্ট, মেহুল। ঠান্ডা পানি আনুন।’

মেহুল ধমক খেয়ে এক লাফে উঠে দাঁড়ায়। তারপর দৌড়ে যায় ঠান্ডা পানি আনতে।

রাবীর এক শ্বাসে পুরো পানি শেষ করে। নিজেকে শান্ত রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করছে সে। মাথায় আঙ্গুল চালিয়ে চুল ঠিক করে। পাঞ্জাবীর উপরের দুটো বোতাম খুলে দিয়ে একটু আরাম করে বসে। এর মধ্যেই প্রচন্ড মাথা ধরেছে তার। সে চোখ বুজে সোফায় হেলান দিয়ে বসে। মেহুল ভয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু একটা যে বলবে সেই সাহসটুকুও নেই তার। রাবীরের এই আচরণ তার বোধগম্য হচ্ছে না। কেন এই রাগ, এই আক্ষেপ কে জানে? মেহুল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাঁসফাঁস করছে। রাবীর চোখ বুজা অবস্থাতেই ঠান্ডা গলায় বলল,

‘বসুন।’

মেহুল ঢোক গিলে বসে। তবে অনেকটা দূরত্বে। রাবীর জোরে নিশ্বাস ফেলে। মেহুলের দিকে চেয়ে বলে,

‘আমার রাজনীতি জীবনের সবচেয়ে বড়ো শত্রু কে জানেন? এই সাদরাজ আহমেদ। যার কারণে রাজনীতিতে আসার পর এই নয় বছরের জীবনে আমি একদিনও শান্তি পাইনি। যার কারণে প্রতিনিয়ত আমার জীবন হুমকির মুখে পড়ে। যার কারণে আমি একদিনের জন্যও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারি না। সেই ভয়ংকর লোকটাই হলো, সাদরাজ আহমেদ। আপনার চোখে যিনি ভীষণ দয়ালু, ভীষণ ভালো মানুষ। যিনি আপনার বাবাকে রক্ত দিয়ে সাহায্য করেছেন, তিনি আবার সবথেকে বড়ো শত্রু। আর এই সবকিছু উনি কেন করেছেন জানেন, আমার থেকে শোধ নেওয়ার জন্য। আমার কারণে তাঁর অনেক বেআইনি কাজ আটকে গিয়েছে, অনেক বেআইনি সম্পদ হারিয়েছে। তাঁর ক্ষমতা হারিয়েছে। তাই সে আমার উপর থেকে শোধ নেওয়ার জন্য আপনাকে তুরুপের তাস বানিয়েছে। ভেবেছে, আপনাকে পুঁজি করে সে সহজেই আমার কাছ থেকে সবকিছু হাসিল করে নিতে পারবে। কিন্তু, এসব করতে গিয়ে সে নিজেরই যে কত বড়ো বিপদ ডেকে এনেছে, সেদিকে তাঁর বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। ওকে তো আমি…’

শেষের কথাটা শেষ না করেই রাবীর টি টেবিলের উপর জোরে ঘুষি দিয়ে উঠে। মেহুল ভয় পায়। রাবীর রীতিমতো রাগে কাঁপছে। তার কপাল আর হাতের রগ ফুলে উঠেছে। চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। রাবীরের এমন রূপ দেখে মেহুলের ভয়ে কান্না পাচ্ছে যেন। সে তো কিছু জানতো না। সাদরাজকেও সে চিনত না। রাবীর যদি তাকেও এখন ভুল বুঝে? যদি তার উপরও সে প্রচন্ড রেগে যায়, তখন?

মেহুল ভয়ে ভয়ে বলে,

‘আ-আমি সাদরাজ আহমাদকে চিনতাম না। উনাকে এর আগে কখনো দেখিওনি। আমাকে ভুল বুঝবেন না, প্লিজ। আমি ইচ্ছে করে কিচ্ছু করিনি। বিশ্বাস করুন।’

রাবীর উঠে বসে। মেহুলের দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। নিজেকে শান্ত করে বলে,

‘আমি আপনাকে বিশ্বাস করি, মেহুল। আর আমি জানি এইসব কিছু সাদরাজ ইচ্ছে করে করেছে। আর এইসব কিছুর যে এখন কী ভয়ানক পরিণতি হবে সেটা সে কল্পনাও করতে পারছে না।’

মেহুলের ভয় একটু কমে। সে রাবীরের কিছুটা কাছে গিয়ে বসে বলে,

‘রেগে গিয়ে কিছু করতে পারবেন না। এই লোকটাকে বুদ্ধি দিয়ে মারতে হবে। আমার মাথায় একটা প্ল্যান আছে। এখন উনার চাল দিয়েই আমাদের উনাকে মারতে হবে।’

‘কীভাবে?’

‘শুনুন, বলছি…’

চলবে…

(এই গল্পের কোন চরিত্রের উপর বিশেষভাবে রেগে আছেন?

বি: দ্র: আমি কিছুদিনের জন্য একটু বেড়াতে এসেছি। তাই এইসময়টুকুতে হয়তো রেগুলার গল্প দিতে পারব না। তবে গল্প যদি লিখে উঠতে পারি তবে অবশ্যই সেটা পোস্ট করে দিব। আর সেই জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here