শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি #আলিশা_আঞ্জুম #পর্ব_২১

0
306

#শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#আলিশা_আঞ্জুম
#পর্ব_২১

আমি যেন শুধু অবাক হয়ে দেখে গেলাম। আমারও বিয়ে হলো। দ্বিতীয় বার বিয়ে হলো একই মানুষটার সাথে। এইতো সেদিনই সে বলেছিলো, চলে যাও, মুক্তি দাও, আমি চাই না তোমাকে। বিচ্ছেদ ধেয়ে আসছিল আমাদের সম্পর্কে। কিন্তু আজ সে স্বেচ্ছায় বিয়ে করলো আমাকে। আমি ঠিক নিষেধ করতে পারলাম না। মুখ ফুটে কথাটা বলেই স্মরণ আমার হাত টেনে নিয়ে বসে গিয়েছিল পাটিতে। সেখানেই এতোগুলা মানুষের সামনে বিয়ে। সকলে যেন বেশ উৎফুল্ল ছিলো। কেউ একজন বলেছিল

” দুই নাম্বার বউ তো, তাই বেশি আদরের মনে হচ্ছে। একজন কে হারিয়ে এখন আর এটাকে চোখের আড়াল করবে না। ”

প্রিয়া তার পরিচয়, পরিস্থিতি ভুলে বলেছিল

” ভাইয়া তো জিতে গেছে আমার বান্ধবী কে পেয়ে। আসলে সত্যি কথা এটা। দ্বিতীয় বার বিয়ে করলে ঐ বউ সুন্দর হয়। ”

হাসির একটা মুহূর্ত পেরিয়ে গেছে প্রিয়ার কথায়। স্মরণ প্রত্যুত্তর করেছিল। মিহি স্বরে, নিভু নিভু কন্ঠে। যা কেবল যেন আমারই কানে বেজেছিল। সে বলেছিল আমার দিকে চোখ রেখে। আমাকে শোনাতেই

” হতে পারে অথৈয়ের সমান সুন্দর। তবে বেশি নয় আমার কাছে।”

.
বিয়ের ঘরোয়া অনুষ্ঠানের ইতি ঘটলো। প্রিয়া আর ওয়ারেসিয়াকে থাকার জন্য দেওয়া হলো একটা রুম৷ বাকিদের অন্যান্য রুমে থাকার ব্যাবস্থা হলো। তবে আমার ঘরে কেউ থাকার উদ্দেশ্যে এলো না একটা মানুষ ব্যাতিত অন্য কেউ। শুধু স্মরণ এলো। আমার লজ্জা, দ্বিধা আর এক ঝাঁক অস্বস্তির জন্য টেকা হলো না রুমের মধ্যে। রাত একটা বাজতে চলছে তখন। চলে গেলাম বেলকনিতে। বেশি সময় হয়নি বসে আছি। মিনিট দশেক হবে। এরই মাঝে হুট করে পেছন থেকে কেউ এসে বলে উঠলো

— এবার দেখি কিভাবে ছেড়ে যাও আমাদের বাবা আর মেয়েকে ছেড়ে? সব রাস্তা বন্ধ করে দিলাম।

আমি পেছন ফিরে তাকালাম। স্বভাব বশে আমি তাকে কিছুই বলতে পারছি না। বোবা হয়ে শুধু দাড়িয়ে রইলাম। আমার নিস্তব্ধতায় সে যেন একটু মন খারাপ করে বসলো। আকাশের পূর্ণ চাঁদের দিকে দৃষ্টি রেখে ভাবতে বসলো যেন কিছু। আমি আড় চোখে পরখ করতে আরম্ভ করলাম। বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হলে সে আচমকা আমাকে বলল

— অঙ্কন তোমাকে ভালোবাসতো। ও সেদিন আমার কাছে এসে বলে, তোমাকে পটানোর টিপস দিতে। আমি মানতে পারিনি বিষয়টা। কেমন অস্থির হয়ে পরেছিলাম। বারবার মনে হচ্ছিল, আমার ঘরে থাকা জীবন্ত একটা কিছু হারিয়ে যাবে। আমার ঘর শূন্য হয়ে যাবে। মানা যায় না।

এই অজানা তথ্যটা শুনে আমি চমকে তাকালাম তার দিকে। সে দৃষ্টির নড়চড় করলো না। একই অবস্থানে স্থির থেকে সে বলল

— দ্বিতীয় বারও ভালোবাসা যায়? বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু তুমি চলে যাওয়ার কথা বললে মানতে পারি না।

স্মরণের কথা শুনে আমার হৃদপিণ্ডের কম্পন বেড়ে গেলো। শীতল হাওয়া বইছিল বেলকনিতে। তবুও ঘেমে উঠালাম নিমিষেই। আমার এই করুণ অবস্থা স্মরণ অবলোকন করল কিনা জানি না। তবে সে আচমকাই আমার এক হাত টেনে নিয়ে স্থাপন করলো তার বুকের বা পাশে। মাথা থেকে পা অব্দি আমার কেঁপে উঠলো। স্মরণ নির্বিঘ্নে শান্ত কন্ঠে বলছিল

— বিট হচ্ছে? এটার একটা ভাষা আছে। সেই ভাষা কি তুমি বুঝতে পারছো?

আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। স্মরণ করুণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আমার প্রতি। আমার বড্ড মায়া হলো। হঠাৎ মনোনিবেশ করলাম এলোমেলো মনটাকে টেনে হিঁচড়ে একীভূত করে তার বুকে। যেন উপলব্ধি করলাম, সে ভালো নেই। অনেক দিনের কষ্ট তার বুকে জমা তো আছেই সেই সাথে কিছুদিন হলো যেন তা বিক্ষিপ্ত হয়ে উড়িয়ে বেড়াচ্ছে তার বক্ষে।

— আমার পক্ষে সম্ভব না তোমাকে অথৈয়ের মতো ভালবাসা। আমি যদি তোমাকে অন্য ভাবে ভালোবাসি ক্ষতি হবে? তুমি কি খুব রাগ করবে তোমার কাছে আমার দুঃখ গুলো লুকিয়ে রাখলে? হ্যা তোমাকে তো আমার প্রয়োজনই। আর প্রিয়জনকেই তো প্রয়োজন হয় লাইফে তাই না?

চোখ ছলছল করে উঠলো আমার। স্মরণ পলকহীন তাকিয়ে রইলো আমার পানে। অতঃপর নিজে থেকেই মুক্ত করে দিলো আমার হাত। পুনরায় মনের দুঃখ গুলো নিয়ে ঠাট বজায় রেখে বলল

— যদি রাজি থাকো তাহলে ফিরে চলো। নইলে আমি জোর করবো না। তোমার ইচ্ছে। তবে হ্যা, এভাবেই থাকতে হবে। অন্য কেউ এসে হাত বাড়ালে আমি টলারেট করবো না।

শেষোক্ত কথা ব্যাক্ত করার মুহূর্তে সে ঝুঁকে পরলো কিছুটা। অনেকটা কাছে চলে এলো আমার। আমি পিছু হটলাম। তার থেকে কিছুটা দূরত্বে গিয়ে দাড়িয়ে পরলাম। ভাবছিলাম প্রস্থান পথ ধরবো কিন্তু আমার ভাবনার ঘোর বিরোধীতা করে সে শান্ত মনে আমার শাড়ির আচলের একাংশ বন্দী করলো তার হাতের মুঠোয়। গিট ফেলল তাতে। হাতে পেচিয়ে নিয়ে এক টানে তার আর আমার মাঝে থাকা দূরত্বটা ঘুচিয়ে ফেলল নিমিষেই। আমি হুমড়ি খেয়ে পরতে গিয়েও বেঁচে গেলাম। তার সাথে ধাক্কা লাগলো আমার। সে বরাবরের মতোই অজানা কোথাও দৃষ্টি রেখে বলে উঠলো

— ডোন্ট মুভ। এখানেই থাকো।

মিনিট পাঁচ উশখুশ করে কাটলো আমার। সে শান্তই রইলো। আকাশের চাঁদে যেন অমৃত পেয়েছে সে এমন করেই তাকিয়ে রইল। আমিও একটা সময় স্থির হয়ে গেলাম। উশখুশ ভাব উবে দিয়ে দাড়িয়ে রইলাম তার পাশে। চোখ লেগে গিয়েছিল কিনা তা সঠিক বলতে পারবো না। তবে হুট করে যেন আমার মস্তিষ্ক সজাগ হলো ফোনের চিৎকারে। চকিতে সোজা হয়ে দাড়াতে গিয়ে বুঝলাম আমি ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম। স্মরণের কাঁধে মাথা রেখে ঝিমোচ্ছিলাম।

— হ্যালো আমার প্রিন্সেস?

ফোন রিসিভ করে হাতে ধরে নিজের সম্মুখে রেখে ঝলমলে হাসি নিয়ে কথাটা বলল স্মরণ। ওপাশে ছোঁয়ার কন্ঠ

— বাবা? তুমি কোথায়? তোমাকে দেখা যাচ্ছে না।

— এক মিনিট মা।

স্মরণ হাঁটতে শুরু করলো লাইট অন করার জন্য। তার সাথে আমার হাত বাঁধা থাকায় আমিও যাচ্ছিলাম তার সাথে। তবে তার বিপরীতে। সে ভুল পথে যাচ্ছিলো। মাঝখানে টানাটানি বেঁধে গেলো। সে ভ্রু কুঁচকে আধো আলোতে পেছন ফিরে আমার দিকে চাইলো। আগের দিনগুলোর মতোই কাঠকাঠ কন্ঠে বলল

,– কি সমস্যা? টানাটানি করছো কেন? লাইট অন করবো তো!

আমি কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমাকে একটু কথা বলার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিলো তার। কিন্তু সে তা না করে উল্টো রেগে অগ্নি ঝাড়াচ্ছে চোখ দিয়ে। একটু আগেও তো কেমল ছিল। ভালোবাসা নিবেদন করছিলো। হুট করে আবার ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। সে এমন কেন? ঘাড়ের কোনো একটা রগ কি তার বাঁকা আছে?

— লাইট এদিকে।

আমি মিহি স্বরে বললাম। তখন সে পা বাড়ালো এদিকে। তবুও উঁচু মাথায়। নুইয়ে পরে না। নিজের ভুল স্বীকার করতে ভারি নারাজ সে।

লাইট অন করার সঙ্গে সঙ্গে ছোঁয়া আমাকে দেখে ভীষণ রেগে গেলো। মুখ ঘুরিয়ে নিলো অন্যদিকে। প্রায় এক সপ্তাহ পর মেয়েটার মুখ দেখলাম। এ ক’দিনে যে আমি তাকে একেবারেই ভুলে থেকেছি তা নয়। তবে চেষ্টা করেছি। কিন্তু ব্যার্থ হয়েছি গভীর রাতে। স্মরণের সাথে বেশ ভাব জমিয়ে কথা বলছে সে। কিন্তু আমকে পাত্তা দিচ্ছে না। মুখ দেখে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না সে অভিমানের আস্ত এক পাহাড় গড়েছে আমার নামে। স্মরণ বিছানায় বসে মেয়ের সাথে কথা বলছিল। আমি তার পাশ ঘেঁষে বসলাম। ছোঁয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম

— আমার সাথে কি কথা বলা যাবে? সময় হবে? নাকি ভুলে গেছে কেউ আমাকে।

ছোঁয়া ওপাশ হতে উত্তর দিলো

— আমি পঁচা মেয়েদের সাথে কথা বলি না। যে আমার বাবাকে আর আমাকে কষ্ট দেয় তার সাথে আমার কথা বলতে ভালো লাগে না।

আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। স্মরণ আমার হাতে ফোন ধরিয়ে দিলো। ছোঁয়া অভিযোগের ঝড় তুলেছে। আমি তার ঝড়ে উড়ে যাওয়ার দশায়। তবুও শান্ত হয়ে শুনছিলাম। তাকে বোঝালাম একেবারে তো চলে যাইনি? আমাদের দেখা হবে, কথা হবে, আমরা আবারও শাড়ি পরে ঘুরবো। সে দমে দমে থমকে দিলো রাগ। শান্ত হলো। ভাব জমতে শুরু করলো আমার সাথে। এরই মাঝে পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি স্মরণ শুয়ে পরেছে। সে ঘুমিয়ে গেছে আমার আচলে হাত বাধা অবস্থাতেই। আচ্ছা মানুষটার সাথে কি ফিরে যাওয়া যায়? নতুন একটা অধ্যায়ের সূচনা কি করা যায়? তার দুঃখ গুলো আমার কাছে ভীষণ যত্নে লুকিয়ে রেখে তার পাশে থাকা যায় না?

চলবে…

( কি অবস্থা সবার। কেমন আছেন 🫣)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here