#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৪
_________________
-“কি বলছো তুমি!পাগল হয়ে গিয়েছো নাকি?”
-“স্যার কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না ও-কে।”
শেহরেয়ার আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে সেখানে গেল।সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।শেহরেয়ার চোয়াল শক্ত করে বললো,
-“কি করো টা কি তোমরা!এতোজন মিলে একজনকে পাহারা দিতে পারো না।”
কথাগুলো বলে শেহরেয়ার চুপ হয়ে গেল।ভাবান্নিত ভঙ্গিতে বললো,
-“আই থিংক ও বাড়িতেই যাবে!কারণ ওখানেই ওর আসল গুপ্তধন আছে।”
শেহরেয়ার সেখানে আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে বাড়িতে গেল।কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলো ও যায়নি।
-“কিন্তু গেলো টা কোথায়!”
শেহরেয়ার এইসব ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি দিয়ে উঠছিল হঠাৎ হেনা সাহেবা উচ্চস্বরে বললেন,
-“রাজ…….”
নামটা শুনতেই শেহরেয়ার দাঁড়িয়ে পড়লো।সে পিছনে ঘুরে দেখলো বাড়ির সদর দরজায় রাজ দাঁড়িয়ে আছে।হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ করা,পরনে নতুন কাপড়-চোপড়!শেহরেয়ার ভালো করেই বুঝতে পারলো রাজ ওখান থেকে পালিয়ে গেটআপ চেঞ্জ করে এসেছে।
হেনা সাহেবা দৌড়ে গিয়ে রাজকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
-“তোর হাতে-পায়ে এমন ব্যান্ডেজ করা কেনো?”
রাজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে শেহরেয়ারের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আসলে মা,রাস্তায় কিছু গু*ন্ডা অ্যাটাক করেছিল।আমার সবকিছু নিয়ে গেছে।শুধু প্রাণটা নিয়ে বেঁচে এসেছি।”
রাজের এমন কথায় বেশ অবাক হলো শেহরেয়ার।বিড়বিড় করে বললো,
-“ও আবার নতুন কোন খেলা শুরু করলো!”
রাজ কিছুক্ষণ পরে শেহরেয়ারের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
-“হাগ করবি না আমাকে শেহরেয়ার?”
শেহরেয়ার বাঁকা হাসি দিয়ে রাজকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বললো,
-“বেশি চালাকি করিস না।তোর কপাল ভালো তাই পালিয়ে আসতে পেরেছিস।”
রাজ চুপ রইলো।শেহরেয়ার কিছুক্ষণ পরে রাজকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
-“তুই হঠাৎ করে কোথা থেকে আসলি?না জানিয়ে চলে আসলি একদম?”
শেহরেয়ারের সাথে তাল মিলিয়ে হেনা সাহেবা বললেন,
-“হ্যাঁ তাই তো।তুই না জানিয়ে আসলি কেনো রাজ?”
-“তোমাদের সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম মা।”
হেনা সাহেবা রাজকে যত্ন করে রাজের রুমের দিকে নিয়ে গেল।নিরব দৃষ্টিতে সবটা দেখছিল শেহরেয়ার।হঠাৎ শেহরেয়ারের মোবাইলে নোমানের কল আসলো।শেহরেয়ার কলটা রিসিভ করতে নোমান বললো,
-“স্যার ও-কে পেয়েছেন?”
-“হ্যাঁ ও বাড়িতেই এসেছে।”
-“তাহলে এখন কি করবেন?”
-“চিন্তা করো না।ওর ব্যবস্থা আমিই করতেছি।”
শেহরেয়ার কলটা কেটে দিল।সেতারা বেগম এসে তার কাঁধে হাত রাখলো।সেতারা বেগমকে দেখে শেহরেয়ার মৃদু হাসলো।
-“খারাপ লাগছে নাতি তোর?”
-“খারাপ লাগবে কেনো দিদুন?”
-“তোর মায়ের সব কিছুতেই বেশি বেশি।কার না কার পোলা!উনি একেবারে নিজের পোলার তে বেশি তারে মাথায় তুলে রাখে।”
-“রাজ তো মায়েরই ছেলে।শুধু শুধু তো আর এতো ভালোবাসে না!”
মনে মনে কথাগুলো বললো শেহরেয়ার।যার কারণে তা আর সেতারা বেগমের কান পর্যন্ত পৌঁছালো না।শেহরেয়ার কিছুক্ষণ পরে সেতারা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“ওফ দিদুন!আমি কি বাচ্চা নাকি যে এইসবে কষ্ট পাবো?”
-“নাতি রে…বাচ্চা হওন লাগে না।বাপ-মায় যদি নিজের ছেলে-মেয়ের তে অন্যের ছেলে-মেয়েরে বেশি আদর করে তাইলে তো কষ্ট লাগেই।”
শেহরেয়ার কিছু না বলে মলিন হাসি দিল।
______________________
-“ধ্যাত!কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি।একটাও সিএনজি পাচ্ছি না।”
মুনিয়া সিনএনজি’র জন্য দাঁড়িয়ে আছে আর বারবার হাতের ঘড়ি দেখছে।
-“রুমি হয়তো এতোক্ষণে কেক কেটে ফেলেছে।ইশ!আমার আর যাওয়া হলো না।”
কাজিনের বার্থডে উপলক্ষে তার জন্য গিফট কিনে গাড়ি নিয়ে তার বাড়ির দিকে যাচ্ছিল হামিদ।কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছে তার।তবে তা নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই।এক সময় গেলেই হলো এমন একটা ভাব!হঠাৎ করে রাস্তার পাশে চোখ পড়তে দেখলো কালকের সেই মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে।এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে!
-“এই মেয়ে এখানে দাঁড়িয়ে কি করছে?হয়তো বা সিএনজি’র জন্য অপেক্ষা করছে।চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো ইমারজেন্সি!গাড়িটা থামিয়ে দেখি।”
হামিদ মুনিয়ার সামনে গিয়ে গাড়িটা থামালো।মুনিয়ার মেজাজ যেন একশো আশি ডিগ্রি তাপমাত্রায় গরম হচ্ছে।একটু পরে হামিদ গাড়ি থেকে নামলো।হামিদকে দেখে মুনিয়ার রাগ আরও বেড়ে গেল।হামিদ কিছু বলতে যাবে তার আগে মুনিয়া বললো,
-“সমস্যা কি আপনার?এতো জায়গা থাকতে আমার সামনে এসে গাড়ি থামাতে হবে?এমনি সিএনজি পাচ্ছি না।এখন যদি এতোবড় গাড়িটা আমার সামনে থাকে তাহলে তো আর সিএনজি চলে গেলেও দেখতে পাবো না।”
একদমে কথাগুলো বললো মুনিয়া।হামিদ কিছুক্ষণ বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকে বললো,
-“আপনি এতো কথা বলেন কেনো?আমি এখানে গাড়ি থামিয়েছি আপনার কোনো হেল্প লাগবে নাকি তার জন্য!”
-“আপনার থেকে আমি হেল্প কেনো নিবো?”
-“না নিলে না নিবেন।এমনিও আপনার মতো একজনকে হেল্প করতে আসাও ঠিক না।”
হামিদ চলে যেতে গেলে মুনিয়া বললো,
-“ওয়েট……..”
হামিদ পিছনে ঘুরে বললো,
-“কি?”
“আমাকে _____ জায়গায় পৌঁছে দিতে পারবেন?”
হামিদ অবাক হয়ে বললো,
-“আপনি ওখানে কেনো যাবেন?”
-“আমার ফ্রেন্ডের বার্থডে তাই।”
-“আপনার ফ্রেন্ডের নাম কি রুমি?”
-“হ্যাঁ।আপনি কিভাবে জানলেন?”
-“ও আমার কাজিন হয়।আচ্ছা গাড়িতে উঠুন।”
দুজনে গাড়িতে উঠলো।হামিদ গাড়ি স্টার্ট করলো।
______________________
শেহরেয়ার তার রুমে বসে টিভি দেখতে দেখতে বোর হচ্ছিলো।
-“আর ভালো লাগে না টিভি দেখতে।এক কাজ করি।মেহরিনকে কল করে জিজ্ঞেস করি উনি কি করছেন।দুজনে মিলে ঘুরতে গেলে সময়টা ভালো কাটবে।”
শেহরেয়ার আর দেরি না করে মেহরিনকে কল করলো।মেহরিন কলটা রিসিভ করতে শেহরেয়ার বললো,
-“কি করছেন আপনি?”
-“বই পড়ছিলাম।”
-“এখন এইসব বই পড়া রাখুন।রেডি হন আমি আসতেছি।দুজনে মিলে একটু প্রেম করতে যাবো!”
শেহরেয়ারের কথা শুনে মেহরিন খিলখিল করে হেসে দিল।হাসি থামিয়ে বললো,
-“আপনি যে কিসব বলেন তা আপনি নিজেও জানেন না!”
-“হ্যাঁ বুঝেছি তো।এতো কথা না বলে রেডি হন আমি আসতেছি।”
-‘আরে বাসায় কেউ নেই তো।বাবা গুড্ডুকে নিয়ে ঘুরতে গেছে আর মুনিয়া গেছে ওর ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টিতে।”
-“তো কি হয়েছে?আপনিও বের হয়ে পড়েন।”
-“আমার ভালো লাগছে না।”
-“এমনটা বলে আমাকে কষ্ট দিতে পারলেন?”
মেহরিন মুচকি হেসে বললো,
-“আপনি কষ্ট পেলে আমার কি?”
-“কিচ্ছু না আপনার?”
-“নাহ্!কিচ্ছু না আমার।”
শেহরেয়ার অভিমান করে কলটা কেটে দিল।মেহরিন মোবাইল হাতে নিয়ে বললো,
-“ইশ!কষ্ট পেল নাকি আবার?”
মেহরিন দুইবার কল দিল কিন্তু শেহরেয়ার কল রিসিভ করলো না।তৃতীয় বার কল দিতে গিয়ে দেখলো মোবাইল সুইচ অফ!মেহরিনের এবার কিছুটা খারাপ লাগলো।
শেহরেয়ার গাড়ি ড্রাইভ করছে আর হাসছে।
-“ম্যাডামের নিশ্চয়ই এতোক্ষণে মন খারাপ হয়ে গেছে।ওয়েট করেন আমি আসতেছি।
শেহরেয়ার গাড়ি নিয়ে মেহরিনদের বাড়ির সামনে থামালো।গাড়ির হর্ণ বাজালো।
গাড়ির হর্ণের আওয়াজ পেয়ে বেশ অবাক হলো মেহরিন।সে সদর দরজা খুলে দেখলো গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে শেহরেয়ার।শেহরেয়ারকে দেখে বেশ চমকে গেলো মেহরিন!
মেহরিন দরজা খুলতে তার দিকে এগিয়ে আসলো শেহরেয়ার।পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো,
-“কি ম্যাডাম মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল নিশ্চয়ই?”
মেহরিন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
-“মোটেও না।তবে আপনি মোবাইল অফ করেছেন কেনো?”
-“আপনার সাথে মজা করতে।বাই দ্যা ওয়ে দুই কাপ চা বানিয়ে আপনাদের বাগানের দিকে আসুন আমি ওখানে যাচ্ছি।”
মেহরিন অবাক হয়ে বললো,
-“বাগানে কেনো যাবেন বাড়ি থাকতে?”
-“আপনাদের বাড়িতে তো এখন কেউ নেই।এখন ভিতরে যাওয়াটা ঠিক হবে না।কারণ আপনার সাথে ফাঁকা বাড়িতে বসে গল্প করার এখনো অধিকার নেই আমার।”
শেহরেয়ার মুচকি হেসে বাগানের দিকে চলে গেল।মেহরিনের মুখে হাসি ফুটলো।
-“লোকটার চিন্তাধারা অভাবনীয়।”
___________________________
-“শুনলাম রাজ নাকি বাড়িতে এসেছে?”
শেহমীর মির্জার কথায় হেনা বেগম উজ্জ্বল হাসি দিয়ে বললেন,
-“হ্যাঁ এসেছে তো।”
-“তা কোথায় সে এখন?”
-“রুমে রেস্ট নিচ্ছে।জানো ও-কে নাকি গু*ন্ডারা অ্যাটাক করেছিল।”
-“তারপর কি হলো?”
-“ওর সব জিনিসপত্র নিয়ে ও-কে মে*রেছে।”
-“আহারে বেচারা।ডাক্তার তুহিনকে ডেকেছিলে?”
-“তার দরকার হয়নি।কারণ ও নিজেই ডাক্তারের কাছে গিয়ে ব্যান্ডেজ করে বাড়িতে এসেছে।”
-“তাহলে ঠিক আছে।”
#চলবে____
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]