#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
ক্লান্ত দুপুরে খাঁ খাঁ রোদ্দুরে যেখানে মানুষ একটু শীতল আশ্রয় খুঁজতে ব্যস্ত। সেখানে স্মৃতি ও তার বন্ধুগন টো টো করতে ব্যস্ত। স্মৃতি হালকা পাতলা হবার দরুনে আম গাছের আগায় উঠে গিয়েছে। কার আম গাছ জানা নেই। গাছের আগায় লক্ষ্য করার মতো কয়েকটা আম হলুদ হয়ে আছে। যেই কেউ আমের দিকে তাকালে লোভ জাগবে। স্মৃতি ও তার বন্ধুগন লোভাতুর দৃষ্টিতে আম গুলো দিকে তাকিয়ে আছে। স্মৃতি আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলো না। গরমের তীব্রতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারলো না। বই-খাতা বন্ধুদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে গাছে উঠে বসলো। সবার দৃষ্টি স্মৃতির দিকে বিদ্যনাম। স্মৃতির মুখশ্রী বেয়ে টুপ টুপ ঘাম পড়ছে। স্মৃতি বিরক্ত হয়ে নিজের ওড়না নিয়ে সমস্ত মুখশ্রী মুছে নিল। নিচে তার বন্ধুগন স্মৃতির দিকে চেয়ে অধীর আগ্রহে বসে আছে। স্মৃতির ফর্সা মুখশ্রী রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। যা স্মৃতির সুন্দর্য একটু বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। দূর থেকে এক জোড়া চোখ তার চোখের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। কত যুগ তার প্রেয়সীকে প্রান ভয়ে দেখা হয়। চাইলেও প্রেয়সীর কাছে ছুটে আসতে পারে না। প্রেয়সীর গভীর আলিঙ্গনে মত্ত হয়ে পারে না। নিজের নিষিদ্ধ চাওয়া পাওয়া দেখে, নিজেই নিজকে ধিক্কার জানালো। প্রচুর রাগ হচ্ছে তার। প্রচন্ড গরমে মানুষ কক্ষ থেকে বের হতে চায় না। মানুষ কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে মেয়েটা খাঁ খাঁ রোদ্দুরের মধ্যে গাছে উঠে গিয়েছে। সামনের দিকে এগোতে গিয়ে যেন দু’টি চরণ থেকে যায়। বুক ভারি করা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের গন্তব্যের দিকে ছুটে চলল।
স্মৃতি গাছের ডালে দুই পা দোলাচ্ছে আর আম ছিলে খাচ্ছে। সবাই স্মৃতির দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে। স্মৃতি সময়টা বেশ উপভোগ করছে। স্মৃতির কান্ড দেখে, মেঘ রাগান্বিত হয়ে বলল,
–আম তুই একা খাবি? এটা আমাদের বললেই পারতি। আমরা এই গরমের মধ্যে কষ্ট করে, তোর জন্য দাঁড়িয়ে থাকি না। লাগবে না তোর আম। থাক আমরা চলে গেলাম। তারপরে দেখবোনি। কে তোকে পাহারা দেয়। আল্লাহর কাছে দোয়া করি। আমরা চলে যাবার পরে, আম গাছের মালিক এসে তোকে যেন, আম গাছের সাথে বেঁধে রাখে। মেঘের কথায় তাল মিলিয়ে মেঘলা বলে উঠলো,
–স্মৃতি সব সময় এমন করে। পরীক্ষার হলে-ও আজে নিজের সব লিখবে। হাতে বাকি যতটুকু সময় থাকে, তখন দেখায়। আজকে আম পেরে একা খাচ্ছে। আমরা বোকার মতো ওর খাওয়ার দিকে চেয়ে আছি। এখানে থাকার কোনো মানেই হয় না। চল আমরা এখনই এখানে থেকে চলে যাব। গরমের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকার কোনো মানেই হয় না। মেঘলাকে চুপ করিয়ে দিয়ে তোহা বলে উঠলো,
–চুপ করবি তোরা। স্মৃতি মজা করছে। দেখতে পাচ্ছিস না। স্মৃতির হাতে কতগুলো আম। সব সময় তোরা এমন ভাবিস কেনো? যে স্মৃতি শুধু নিজেরটা ভাবে। একটা কথা সব সময় মনে রাখবি। স্মৃতি পরীক্ষার হলে সাহায্য না করলে, আমরা কেউ পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারতাম না। তোরা এমন কেন? উপকারীর উপকার স্বীকার করতে চাস না। স্মৃতি তোদের রাগাতে চাচ্ছে। আর তোরাও বোকার মতো রেগে, নিচু মন মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছেস। তোহাকে রোহান কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
–আমাদের নিয়ে তুমি এত সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছিস কেন? আমরাও স্মৃতির সাথে মজা করছি। আমরা যদি সত্যি স্মৃতিকে রেখে চলে যেতাম। তাহলে এতক্ষণে আমরা অন্য জায়গায় থাকতাম। সবাইকে চুপ করাতে মারিয়া বজ্র কণ্ঠে গর্জন করে উঠলো,
–মানুষের বন্ধুত্ব দেখলে, প্রাণ জুড়িয়ে যায়। আর তোরা সবাই একসাথে হলে, একটা না একটা ঝামেলা তৈরি হয়। তোরা মিলেমিশে থাকতে পারিস না। তোরা যদি আর ঝামেলা করেছিস। তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। এই স্মৃতি তাড়াতাড়ি আম দে, না হলে গাছের আগায় উঠে, তোর অবস্থা খারাপ করে রেখে আসবো। স্মৃতির গাছের ডাল বসেই উত্তর দিল,
–সামনে আমার দোকান আছে। যা গিয়ে কিনে খা। আমাকে নিয়ে তোদের কত অভিযোগ। একদিন দেখবি। তোদের অভিযোগ গুলো রয়েই গিয়েছে। কিন্তু অভিযোগ গুলো যাকে ঘিরে, সেই মানুষটা আর তোদের পাশে নেই। এই যে তোরা আমাকে নিয়ে এত কথা বলিস। তোদের কিছু একবারও মনে হয় না। তোদের এই কথা গুলো আমার কেমন লাগে। আমি কথাটা মানসিক অশান্তিতে ভুগি। অতিরক্তি চিন্তা আমার মস্তিষ্কের রক্ত গুলোকে উতপ্ত করে তোলে, আমার ছোট হৃদয়ে আঘাতে দাগ কটে। আমার ভেতরে হাহাকার পড়ে যায়। কাছে আছি তো। তাই মূল্য বুঝিস না। যেদিন তোদের থেকে দূরে সরে যাব। চাইলেও আমাকে পাশে পাবি না। সেদিন বুঝবি। স্মৃতি তোদের জীবনে কি ছিল। আমি পরীক্ষার হলে কাদের জন্য আগে লিখা শেষ করি। তোদের দেখাবো বলে, আমি আগে লিখা শেষ করি। আমি শত পারসেন্ট নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি। আমি যেভাবে তোদের পরীক্ষায় খাতায় দেখাই। তোরা একজনও আমাকে সেভাবে দেখাবি না। তোদের মুখ চুপসে আসবে। অন্যকে স্বার্থপর বলার আগে, তোরা নিজেরা ভাব। তোরা কতটুকু নিঃস্বার্থ ভাবে আমার পাশে আছিস। তোরা সবাই স্বার্থের জন্যই আমাকে ব্যবহার করছিস। তোরা কি ভেবেছিস। আমি তোদের মনের কথা জানি না। বুঝি না। আমি সবকিছু জানি রে। সবকিছু জেনে-বুঝেই আমি তোদের ভালোবাসি। আমি তোদের মতো স্বার্থপর হতে পারিনি রে। কারন আমি তোদের ভিষণ ভালোবাসি। তোদের ছাড়া থাকতে পারি না। বেশি কথা বললে ঝগড়া হবে। তাই চুপচাপ থাকি। তবুও যেন আমাদের সম্পর্কটা টিকে থাকে। রাগ করে অনেক কথা বলে ফেললাম। রাগ অনেক খারাপ জিনিস। এরা সব সময় মুখ দিয়ে সত্যি কথা বের করে দেয়। কিছু সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য হলে-ও সত্যি কথা বলতে হয় না। স্মৃতির কিছু কথায় পুরো পরিবেশ স্তব্ধ হয়ে গেল। কারো মুখ দিয়ে টু শব্দ বের হচ্ছে না। স্মৃতির প্রতিটি কথা সত্য। মেয়েটা এত ভালো কেনো? মেয়েটা এতটা ভালো না হলে-ও পারতো। ভালো মানুষদের স্বার্থপর মানুষ গুলো নিখুঁত ভাবে ঠকিয়ে দেয়। স্মৃতি আর কাউকে বিরক্ত করল না। মনটা নিমিষেই বিষাদে ছেয়ে তেল। বিষাদের তিক্তটা সম্পূর্ন রুপে স্মৃতিকে গ্রাস করে ফেললো। স্মৃতি সবাইকে আমি পেরে দিয়ে, নিচে চলে আসলো।
চলবে…..
(আমি ভিষণ অসুস্থ। জানি পর্ব ছোট হয়েছে। কিছু করার নেই। নিয়মিত ঔষধ খাচ্ছি। ডক্টর বলেছে ঔষধ খেলে শরীর দুর্বল হবে। এতটা দু্র্বল হবে। ভাবতে পারিনি। ফোন ধরে রাখার শক্তিটুকু নেই। দুপুরে দিতে চেয়েছিলাম। এত খারাপ লাগছিল লিখা রেখে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। কেউ আমাকে ভুল বুঝবেন না। আশা করি সবাই বুঝবেন। রিচেক করা হয় নাই।)