তোর_শহর_রাঙাতে_এসেছি🤍 #ইশা_আহমেদ #সূচনা_পর্ব

0
837

১.
“আপাই আমার নাকি বিয়ে!জানো আপাই আমি বিয়েতে রাজি। পড়াশোনা থেকে তো মুক্তি পাবো।নিশ্চয়ই আমার বর আমাকে পড়াবেনা। আহা কি মজা!মন দিয়ে সংসার করবো।আমার তো এখন নাচতে মন চাচ্ছে আপাই।এতো মজা লাগছে আমার তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না”

আরশি তার ১৫ বছরের বোন তানাজের কাছ থেকে এমন কথা শুনে অবাক হলো!মেয়েটা পড়াশোনা না করার জন্য বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।আরশি তানাজের মাথায় গাট্টি মেরে বলে,
“তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস তানাজ বিয়ে করবি কি বলছিস তুই।বিয়ের ব টাও বুঝিস পিচ্চি মেয়ে”

তানাজ আরশির কথায় ভেংচি কেটে বলে,,,,”আমি মোটেও পিচ্চি না এটা মর্ডান যুগ বুঝেছো আর আমি সবই বুঝি।আমাকে এমনি এমনি তো আর ১০ম শ্রেনীতে উঠাইনি তাই না।”
আরশি চোখ রাঙিয়ে বলে,”এতো পেকেছিস তুই দাড়া আম্মুকে বলছি।”

তানাজ আবারও মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,,,,”তাতে আমার কি আম্মু নিজেই আমাকে বিয়ে দিচ্ছে।আর আমি বেশি পা’কি’নি বুঝেছো এখন মর্ডান যুগ ৬-৭ এর মেয়েরাও সব জানে তাহলে আমি কেনো ১০ম শ্রেনীতে পরে জানবো না”

আরশি তানাজকে ধরতে গেলেই তানাজ দৌড়ে পালায় আরশি বিড়বিড় করে বলে,,,,”বড্ড পেকেছে এই মেয়ে।আম্মুকে এখনই বলতে হবে”

আরশি উঠে ওর আম্মুর রুমে গেলো।ওর আব্বু এখন বাজারে থাকে।ওদের গ্রামে বড় জামাকাপড়ের দোকান আছে।আরশি ওর মায়ের কাছে এসে পাশে বসে বলে,,,,”আম্মু শুনেছ তোমার মেয়ে কি বলেছে আমার কাছে গিয়ে।ফা’জি’ল হয়ে যাচ্ছে দিনদিন”
আরশির আম্মু আসমা বেগম কাঁথা সেলাই করতে করতে বলে,,,,”কি বলেছে তানাজ”[লেখিকা ইশা আহমেদ]

আরশি বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,”তোমার বাঁদর মেয়ে বয়সের তুলনায় বেশি পেকেছে। ওর নাকি বিয়ে তুমি নাকি ওকে তাই বলেছো ও নাকি রাজি ও”

আরশির কথায় আসমা বেগম হাসতে থাকে।আরশি ভ্রু কুচকে তাকায়।আসমা বেগম হাসি থামিয়ে বলে,,
“ও ভুল শুনেছে ওর বিয়ে না বিয়েটা তোর জমিদার বাড়ির বড় ছেলে তুনান খান শাহিরের সাথে।”

আরশি অবাক হয় আসমা বেগমের কথায়। সে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চায় না।সে বলল,,,,
“আম্মু তুমি তো জানো আমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই না।তাও কেনো এগুলো বলছো তুমি ওদের না করে দাও আম্মু।আমি এখন মোটেও বিয়ে করতে চাই না”

আসমা বেগম কাঁথা রেখে আরশির দিকে তাকিয়ে বলে,”কিছু করার নেই এখন তোর আব্বু কথা দিয়ে ফেলেছে।আর তুনানের নাকি তোকে অনেক পছন্দ হয়েছে।তোকে নাকি কোথায় দেখেছে সে”

আরশি তার আব্বুর কথা দেওয়ার কথা শুনে চুপ হয়ে যায়।আরশি এলোমেলো পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।তার খুব ইচ্ছা তার পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করবে।আর এখনই তার আব্বু তার জন্য বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।আরশি রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগলো।

২.
তানাজ দৌড়ে পালিয়ে তার বান্ধবী রুকাইয়ার কাছে আসে।রুকাইয়া তানাজকে হাঁপাতে দেখে বলে..”কিরে তুই এমন হাঁপাচ্ছিস কেনো রে”

তানাজ ধপ করে রুকাইয়ার পাশে বসে বলে,,,”আরে আমি আপাইকে বলে এসেছি আমার বিয়ে আম্মুই তো বলেছে!আপাই কি বলেছে জানিস বলেছে আমি নাকি বেশি পেকেছি।আচ্ছা তুই বল আমি কি কুমড়ো বা কলা যে পাকবো আমি তো মানুষ।না না আমি খুব সুন্দর কিউট একটা মেয়ে তুই বল”

তানাজ একদমে কথাগুলো বলে থামলো।রুকাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো হা করে তাকিয়ে আছে।তানাজ হাত দিয়ে ওর মুখ বন্ধ করে দেয়।হাসতে হাসতে বলে..”তুই এমন হা করে আছিস কেনো তোকে দেখতে বিশ্রি লাগছে”

রুকাইয়া বিরক্তিকর কন্ঠে বলে…”তানাজ এতো কথা কিভাবে বলিস তুই বলতো!এতো কথা বলতে বলতে দেখবি তুই কোন দিন গলায় কথা আটকে মরে যাবি”

তানাজ রুকাইয়াকে ভেংচি কেটে বলে,,,,”আমার মুখ আমি কথা বলবো তোর কি হ্যা আর গলায় কথা আটকে মরে আমি তানাজ কখনো মরব না বুঝেছিস আমার কথা বলতে প্রচুর ভাল্লাগে”
রুকাইয়া বিড়বিড় করে বলে..”এই মেয়ে কখনো সুধরাবে না।কীভাবে যে এতো কথা বলে”

তানাজ পুকুর পাড় থেকে উঠতে উঠতে বলে,,,,”চল চল এখন রুমান কাকুর বাগানে কেউ থাকে না।নামাজ পরতে গিয়েছে রুমান কাকু আর ওই খচ্চর দারোয়ানটাও।”

রুকাইয়া আর তানাজ তাদের বেনুনি ধরে লা’ফাতে লা’ফাতে চলে গেলো রুমান সাহেবদের বাগানে।দেওয়াল টপকে ভেতরে ঢুকলো দুই বাদর।তানাজ আশপাশে ভালো করে দেখে নিলো।না কেউই নেই!তানাজ হুড়মুড় করে গাছে উঠে গেলো।তেঁতুল পেরে রুকাইয়াকে দিচ্ছে।রুকাইয়া বলে…
“তানাজ রে নাইমা পর আর লাগবে না নামাজ এতো সময় হয়তো শে’ষ”

তানাজও নেমে পরে।রুকাইয়া আর তানাজ যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই চুপিচুপি বের হয়ে যায় বাগান থেকে।রাস্তায় বেখেয়ালি ভাবে হাঁটতে হাঁটতে তানাজ কারো সাথে ধাক্কা খায়।ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে যায়।তানাজ উঠতে উঠতে বলে..”সামনে আমার বিয়া রে এখন যদি পইরা যাইয়ে কোমড় ভাঙি তাহলে তো আর আমার বর আমাকে বিয়ে করবে না!কোন ছা’গ’ল আমাকে ফেলে দিলো দেইখে চলতে পারেন না নাকি”

তানাজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা ভ্রু কুচকে তানাজের দিকে তাকিয়ে আছে।হয়তো তানাজের পাগলের মতো বকবক করা বুঝছিলো।তানাজ লোকটাকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুখের সামনে হাত নাড়িয়ে বলে,,,,
“ওহ আপনি মনে হয় কথা বলতে পারেন না।তাতে কি তবুও আপনার দেখে চলাফেরা করা উচিত ছিলো।আর এই যে আপনি কথা বলতে পারেন না তাও কেনো আপনাকে আপনার বাড়ির লোকজন একা ছেড়েছে কেনো?”

লোকটা পকেটে হাত গুঁজে বলে,,,”আমি বোবা নই আর ধাক্কাটা তুমি আমাকে মে’রেছো আমি নাহ। আর জানো আমি কে!”
তানাজ চমকে উঠলো।লোকটা কথাও বলতে পারে।তানাজ মাথা চুলকে হেসে বলে,,,,”ওহ হয়তো আমিই ধাক্কাটা দিয়েছি কিন্তু সরি বলবো না কিন্তু আপনি কথা বলতে পারেন।যাক ভালো লাগলো শুনে আচ্ছা আপনি কি আমার বন্ধু হবেন”

লোকটা কিছু বলবে তার আগেই পেছন থেকে একটা লোক এসে বলে..”তুনান স্যার এখান থেকে চলুন!জমিদার বাড়ি থেকে বের হয়েছি অনেক সময় হলো।ম্যাম হয়তো চিন্তা করছেন”

তুনান একবার তানাজের দিকে তাকিয়ে লোকটার সাথে চলে গেলো।রুকাইয়া বলল..”তানু আমার মনে হয় এইটা জমিদার বাড়ির বড় ছেলে তুনান খান শাহির।দেখলিনা ওই লোকটা এসে বলল জমিদার বাড়ি থেকে অনেক সময় বের হয়েছে।”
তানাজ পাত্তা না দিয়ে বলল,,”হতে পারে তাতে আমার কি!বাড়ি চল তেঁতুল মেখে খাবো।অনেক দিন খাই না”

রুকাইয়া কথা বাড়ালো না।সে জানে এই মেয়ে কারো কথা গা’য়ে মাখে না।নিজের মতো বকবক করে যায়।ওরা পুকুর পাড়ে আসে আবার।তানাজ রুকাইয়াকে বলে…”এখান থেকে অর্ধেক তুই নে আর অর্ধেক আমাকে দে।”

৩.
তানাজ নিজের ভাগেরটা নিয়ে নাচতে নাচতে বাড়ি আসে।ওর আম্মুর কাছে গিয়ে বলে…”আম্মু আমার বিয়ে কবে বলো না”
আসমা বেগম মেয়ের কথায় হাসেন।হেসে বলেন..”বিয়েটা তোর না পাগলি তোর আপাই এর আর তুই আরশিকে কি বলেছিস”

তানাজের ম’ন খা’রা’প হলো খুব।সে ভেবেছিলো তার বিয়ে কতো মজা করবে পড়ালেখাও আর করা লাগবে না!কি মজা লাগছিলো।কিন্তু তার তো বিয়ে নাহ তার আপাইয়ের বিয়ে।আসমা বেগম মেয়ের মন খারাপ দেখে হেসে বলেন..
“বোকা ময়ে মন খারাপ করিস না তুই তোর আপাইয়ের বিয়েতেই তো অনেক মজা করতে পারছিস!নিজের বিয়েতে কি কেউ মজা করতে পারে তুই তোর আপাইয়ের বিয়েতে নেচে গেয়ে মজা করবি”

তানাজ কিছু সময় ভাবলো।তারপর চিল্লিয়ে আসমা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলল..”আম্মু তুমি তো ঠিকই বলেছ আমার বিয়ে হলে তো আমি বেশি মজাই করতে পারতাম না।ধন্যবাদ আম্মু”

তানাজ লাফাতে লাফাতে চলে যায়।আসমা বেগম মেয়ের কান্ড দেখে হাসে।মেয়েটা এতো ফাজিল আর চঞ্চল যা বলার বাইরে।আসমার চিন্তা হয় তানাজকে নিয়ে।মেয়েটা যা করে।আর ছেলেপেলেদের নজর পরেছে তার মেয়ের দিকে।

৪.
তুনান বাড়িতে ঢুকতেই জমিদার গিন্নি সামিহা চৌধুরী সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে তুনানকে বলল..”কোথায় ছিলে বাবাই এতো সময়”

তুনান সোফায় বসতে বসতে বলল..”মামনি আমি গ্রামটা ঘুরে দেখছিলাম।তার ভেতরেই একটা পাগল বাচ্চা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে।মেয়েটা একা একাই বকবক করছিলো।ওর জন্য অল্প লেট হলো”

কনিকা হেসে বলল…”বাচ্চা মেয়ে হয়তো বাদ দাও তুনান। তোমার গোমড়ামুখো বদের হাড্ডি ভাই কবে আসছে”

তুনান হেসে বলে..”মামনি তুমি ওর কথা বাদ দাও।ও তোমার আমার বা বাবাইয়ের কথা শুনেনা তা খুব ভালো করেই জানো তো।আর তুমিও ওকে গোমড়ামুখো বলতে শুরু করেছ।”

চলবে,,,,,!

#তোর_শহর_রাঙাতে_এসেছি🤍
#ইশা_আহমেদ
#সূচনা_পর্ব

[আসসালামু আলাইকুম।কেমন লাগলো গল্পটা অবশ্যই জানাবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here