#তোর_শহর_রাঙাতে_এসেছি🤍
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২
৪.
তুনান বাড়িতে ঢুকতেই জমিদার গিন্নি সামিহা চৌধুরী সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে তুনানকে বলল..”কোথায় ছিলে বাবাই এতো সময়”
তুনান সোফায় বসতে বসতে বলল..”মামনি আমি গ্রামটা ঘুরে দেখছিলাম।তার ভেতরেই একটা পাগল বাচ্চা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে।মেয়েটা একা একাই বকবক করছিলো।ওর জন্য অল্প লেট হলো”
সামিহা হেসে বলল…”বাচ্চা মেয়ে হয়তো বাদ দাও তুনান। তোমার গোমড়ামুখো বদের হাড্ডি ভাই কবে আসছে”
তুনান হেসে বলে..”মামনি তুমি ওর কথা বাদ দাও।ও তোমার আমার বা বাবাইয়ের কথা শুনেনা তা খুব ভালো করেই জানো তো।আর তুমিও ওকে গোমড়ামুখো বলতে শুরু করেছ।”
সামিহা তুনানকে বলে,,,,”দে তো ফাজিলটাকে ফোন ওর ভাইয়ের বিয়ে আর ওরই কোনো খবর নেই।”
তুনান তানিমকে কল করলো।তানিম কল রিসিভ করতেই তুনান বলল,,,”তোকে মামনি বলল আমার বিয়ে আর তুই এখনো আসলি না।”
ওপাশ থেকে তানিম বললো,,,”ভাইয়া আমার পরার অনেক চাপ তাই যেতে পারবো না প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো”
তুনান বললো,,,,”আমি কিছু জানি না তুই আসবি মানে আসবি এটাই আমার শেষ কথা।আমি বিয়েটা একশবার করছি না একবারই করছি তাই প্লিজ আয় ভাই আমার”
তানিম গম্ভীর কন্ঠে বলল,,,,”ঠিক আছে ভাইয়া আমি আসবো”
তুনান কল কেটে দিয়ে বিশ্ব জয়ের হাসি হাসে।সামিহাও হাসে।অনেক দিন হলো ছেলেটা বাড়ি আসে।সেই কতো বছর ধরে বাড়ির বাইরে। বাড়িতে এই কয়েক বছরে এসেছে মাত্র দুই তিনবার তাও দুই একদিন থেকে চলে গিয়েছে।
৫.
আজকে তুনান আর আরশির বিয়ে।বেচারি আরশি তো কেঁদে কেটে শেষ।নিজের মাকে অনেক বার বলেছিলো।কিন্তু লাভ হলো না।সে এখন পুতুল সেজে বসে আছে।তাকে পুতুলের মতোই লাগছে।তানাজ লেহেঙ্গা পরে দু হাত দিয়ে উঁচু করে সবকিছু দেখতে থাকে।তানাজকে লেহেঙ্গাটা তার আপাইয়ের শশুর বাড়ি থেকে পাঠানো হয়েছে। সাথে মেচিং গয়নাও।এতেই তানাজ খুশিতে সাড়া বাড়ি লাফিয়ে বেড়াচ্ছে।
আরশি এখন বসে আছে ফুল দিয়ে সাজানো ঘরে।সে কাঁদতে ছিলো তার মা তাকে ধমক দিয়ে গিয়েছে।এখন চুপচাপ বসে আছে।
তুনানরা মাত্রই এসেছে।আর তা শুনে তানাজ নাচতে নাচতে চলে এসেছে।বরকে দেখে তানাজ অবাক হয়ে গিয়েছে।এ যে সেই দিনের ছেলেটা।তানাজ ভীষণ খুশি হয় তুনানকে দেখে।তানিম এক পাশে দাড়িয়ে ফোন টিপছে।তানাজ সবাইকে ঠেলে তুনানের সামনে এসে দাঁড়ায়।তুনান তানাজকে দেখে চোখ বড়বড় করে তাকায়।
তানাজ তা দেখে হাসে।হেসে বলে,,,,”আপনাকে তো সেদিন বন্ধু হতে বলেছিলাম কিন্তু আপনি আমাকে কোনো উত্তর না দিয়েই চলে গিয়েছিলেন আজকে উত্তর না দিলে কিন্তু আপাইকে নিয়ে যেতে দিবো নাহ।”
তুনান মৃদু হেসে বলে,,,,”ঠিক আছে আমার একমাত্র শালিকা”[লেখিকা ইশা আহমেদ]
তানিম একপলক তাকায় তানাজের দিকে আবার নিজের ফোনের দিকে তাকায়।তুনান সবাইকে তাদের চাওয়া টাকা দিয়ে ভেতরে ঢুকে।তানাজের বাবা তো আপ্যায়ন করতে থাকে।তানিম এক সাইডে দাড়িয়ে ফোন টিপছিলো।তানাজের চোখ পরে তানিমের দিকে।ও তখন তুনানের সাথে তানিমকে দেখেছিলো একবার।তানাজ লেহেঙ্গা উঁচু করে তানিমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরে।
তানিম ওকে দেখে ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকায়।তানাজ হেসে বলে,,,,”আচ্ছা আপনি এমন দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?কিছু কি লাগবে আপনার বলুন আমি এনে দিচ্ছি”
তানিম গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,”আমি কি আপনাকে বলেছি আমার কিছু লাগবে।শুধু শুধু বিরক্ত কেনো করছেন”
তানাজ হেসে বলে,,,,”আমি তো আপনাকে বিরক্ত করছি না।শুধু শুনছিলাম যে আপনার কিছু লাগবে কিনা যতই হোক আমাদের বাসার মেহমান আপনি”
তানিম আবার ও গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,”জিজ্ঞেস করেছেন না বলেছি আপনি যেতে পারেন।আমার অতিরিক্ত কথা বলা পছন্দ নয়”
কথাটা বলে তানিম অন্যদিকে চলে আসে।তানাজ কিছুটা অপমান বোধ করে।সে কত সুন্দর করে হেসে হেসে কথা বলছিলো আর তানিম তাকে ইগনোর করলো।তানাজ চলে গেলো ওখান থেকে।সে কেনো আলতু ফালতু মানুষের জন্য মন খারাপ করবে।
৬.
হুট করে একটা ঘটনা ঘটে গেলো তানাজ আর তানিমের উপর দিয়ে।সামিহা তানিমের জন্য তানাজকে চেয়ে বসলো।তানাজের মা আসমা বেগম ও রাজি হয়ে যান কারণ তানাজ সুন্দরী হওয়ায় গ্রামের অনেক বাজে ছেলে ওর পিছনে পরেছে ছিল।তাই সামিহার এক কথাতেই সে রাজি হয়।
তানাজ তো নাচতে নাচতে রাজি হয়ে যায়।কারণ সে তো চাইছিলো বিয়ে করতে।অন্যদিকে তানিম মোটেও রাজি হচ্ছিল না কিন্তু সামিহা ইমোশোনাল ব্লাকমেইল করেই রাজি করিয়েছে তানিমকে।ওদের বিয়ে শেষে যখন তানাজ তানিমকে দেখে তখন ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পরে কারণ ও বিয়ে ঠিকই করতে চেয়েছিলো কিন্তু তানিমকে নয়।
ও গম্ভীরতা মোটেও পছন্দ করে না।কিন্তু সেই গম্ভীর বদ একটা লোকই তার বর হলো।তানাজ কিছু সময় কপাল চাপড়ে তানিমকে ভালো ভাবে দেখলো।না সুন্দর আছে লোকটা।হলুদ ফর্সা গায়ের রং লম্বা আছে বেশ দেখতে তানিম।এতে তানাজ ভীষণ খুশি হয়।তার থেকে বেশি খুশি হয় এটা ভেবে যে তাকে আর পরাবেনা তানিম।
আসার সময় অনেক কেঁদেছে আরশি আর তানাজ।ওদের মা ও ওদের জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছে।
৭.
আরশি এখন বসে আছে বাসর ঘরে। কেঁদেছে অনেক সময় ও।দরজা আটকানোর শব্দে নড়েচড়ে বসে ও।বিছানার চাদর খামচে ধরে।ভয় হচ্ছে তুনান যদি উল্টা পাল্টা কিছু করে তার সাথে।সে মোটেও প্রস্তুত নয়।তুনান ফ্রেশ হয়ে এসে আরশির পাশে বসে।তুনান যখন রুমে ঢুকেই ওয়াশরুমে ফ্রেস হতে যায় তখন আরশি প্রচন্ড অবাক হয়েছিলো।
তুনান এসে আরশির পাশে বসে।আরশি আরো গুটিয়ে নেয় নিজেকে।তা দেখে তুনান হাসে।তুনান ওকে বলে,,,,”ভয় পেওনা আমি তোমাকে তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কখনো স্পর্শ করবো না।”
আরশি প্রচন্ড অবাক হয় তুনানের এমন কথা শুনে।তুনান আবারও হাসে সে জানে আরশি ভেবেছিলো তুনান তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্পর্শ করবে।কিন্তু তুনানের শিক্ষা এমন নয়।সে মেয়েদের প্রচন্ড সম্মান করে।
আরশিকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,,!আমি কি তোমার হাতটা ধরতে পারি”
আরশি আবারও অবাক হয়।সে এতো সময় নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো।তুনানের দিকে তাকায় এবার সে।তার সামনে একটা সুদর্শন যুবক বসে আছে।সে মাথা নাড়াতেই তুনান তাকে একটা রিং পরিয়ে দেয়।তারপর আরশির হাত ছেড়ে দেয়।আরশিকে বলে,,,,”শাড়িটা চেঞ্জ করে এসে ঘুমিয়ে পরো।”
আরশি চেঞ্জ করে এসে দেখে তুনান বিছানার এক সাইডে শুয়ে পরেছে।সেও অসস্থি নিয়ে শুয়ে পরে এক সাইডে। তার অসস্থি হচ্ছে।
চলবে,,,,,,,?
[দুঃখিত দেরিতে দেওয়ার জন্য]