রোদহীন_বিকালে_তুমি✨ #ইশা_আহমেদ #পর্ব_১২

0
308

#রোদহীন_বিকালে_তুমি✨
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১২

৩৪.
রুহানা আর রুহান চৌধুরী একটা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। একটা ছোট্ট রুমে দাঁড়িয়ে আছে তারা।যেখানে ছোট্ট কোনো মেয়ে বাচ্ছার খেলনা আর জামা রয়েছে।রুহানাকে রুহান জড়িয়ে ধরে আছে।রুহান রুহানাকে শান্তনা দিচ্ছে।
রুহানা রুহানকে বলল,,,,”কেনো আমাদের কাছে আমাদের মেয়েটা নেই।কে আমার মেয়েটাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরালো।”

রুহান বলল,,,”কি করবে বলো মেয়েটা এখন কি অবস্থায় আছে কে জানে!আমার মেয়েটা কার কাছে আছে কেমন আছে?”

রুহানা ফোন করে রোদকে।রোদ ফোন ধরতেই বলে,,,”ফারিহাকে নিয়ে চলে আসো দ্রুত আজকে যে তোমার বোনের জন্মদিন সেইটা হয়তো ভু*লে গিয়েছো”

রোদ ওপাশ থেকে বলে,,,”আমি তাড়াতাড়ি আসছি মম”

রোদ তাড়াতাড়ি করে ফারিহার কাছে যায়।আনিশা ফারিহা মাত্রই ক্লাস থেকে বের হলো।পরের ক্লাসটা এখনো ১ ঘন্টা পরে।রোদ ওদের কাছে এসে বলে,,,”ফারিহা আনিশা ইয়ামিন চলো আমার সাথে”

আনিশা বলল,,,,”কোথায় যাবো আমরা রোদ ভাইয়া”

রোদ বলে,,,”দ্রুত চলো!যেয়ে বলছি মম ফোন করে তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে।”

আনিশা আলভিকে জানাতে চাইছিলো কিন্তু রোদ বলে পরে সে বলে দিবে।ওরা একটা এ’তি’ম খানার সামনে আসে।রুহান আর রুহানা চৌধুরী আগে থেকেই চলে এসেছেন।ফারিহা রোদকে বলে,,,”আপনি আমাকে বলেননি কেনো আপনার বোন আছে”

রোদ মলিন হেসে বলল,,,”আছে না ছিলো যে আজ থেকে ২০ বছর আগে হা’রি’য়ে গিয়েছে।”

ফারিহা বলল,,,”কিভাবে হা’রা’লো আপনার বোন”

রোদ বলল,,,,”জানি নাহ!সেদিন ঝড় বৃষ্টির দিন ছিলো আমি মম আর আমার রোদুবুড়ি আমার ছোট্ট রোদুকে নিয়ে যায় কেউ একজন চুরি করে।আমরা অবশ্য জানি কে চুরি করেছিলো কিন্তু তাকে খোঁজ করে জানতে পারি সে রোদুকে নিয়ে পালানোর সময়ই এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে।”

আনিশা আর ইয়ামিন ও শুনছিলো পাশ থেকে।ফারিহা বলল,,,,”সেই লোকটা কেনো চুরি করছিলো আর উনি যদি মা*রা গিয়ে থাকেন তাহলে তো আপনার বোনেরও মা*রা যাওয়ার কথা”

রোদ কিছুটা অ’স্থি’র হয়ে বলে,,,”না না আমার রোদুবুড়িআমার ছোট্ট বনু ম*র*তে পারে না ও বেঁ’চে আছে আর ও ফিরবে এটা আমার বিশ্বাস”

ওদের দেখে রুহানা আর রুহান চৌধুরী ওদের কাছে আসে।আনিশার দিকে রুহানা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।কেমন লাগছে ওনার সেদিনও এমন লেগেছিলো যেদিন উনি আনিশাকে প্রথম দেখেছিলেন।মনে হচ্ছিল আনিশা ওনার অনেক আপন কেউ।
রুহান চৌধুরী বলে,,,,”চলো রোদ সবাইকে খাবার দিবে আর ওরা দু’জন কারা”

রোদ আনিশার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,”আমার বোন ও সরি আমি আসলে ওকে বোন বানিয়েছি আমার রোদু তো আমার কাছে নেই তাই ওকে বানিয়েছি।আর ও আমার রোদুর বয়সিই”

রুহান আনিশাকে বলে,,,,”নাম কি তোমার মা”

আনিশাও বলে,,,,”জি আঙ্কেল আমার নাম আনিশা ইসরাত”[লেখিকা ইশা আহমেদ]

আনিশার রুহানার দিকে চো’খ যায়।রুহানাকে দেখে বলে,,,,”আন্টি আপনি এখানে!আপনিই মনে হয় রোদ ভাইয়ার মা”

রুহানা মা*থা নাড়ায় ওরা এ’তিম খা’নায় কিছু সময় কাটিয়ে রোদদের বাসায় যায়।রোদকে ফারিহা বলে,,,”আপনার বোনের একটা ছবি তো দেখান আমাদের”

রোদ তার বোন রোদসী চৌধুরী আনিশার একটা পিক এনে সবাইকে দেখায়।আনিশা ছবিটা দেখে থ’মকে যায়।কি দেখছে সে।ও কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,,,,,,,”রো..দ ভা..ইয়া এই মে..য়েটাই কি আপনার বোন”

রোদ বলল,,,”হ্যা আনিশা ওই আমার রোদুবুড়ি আমার বনু।আর মজার ব্যাপার কি জানো তোমার নামও আনিশা আমার রোদুবুড়ির নামও আনিশা।রোদসী চৌধুরী আনিশা।”

ওরা সবাই ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছিলো।আনিশা হুট করে পার্সটা হাতে নিয়ে দৌড়ে চলে যায়।সবাই আনিশার হুট করে চলে যাওয়াতে অবাক হয়।ইয়ামিন দৌড়ে বাড়ির বাইরে যেয়ে দেখলো আনিশা সিএনজি করে চলে গিয়েছে।ইয়ামিন ভেতরে এসে কথাটা বলতেই ফারিহা আর রোদ চি’ন্তা’য় পরে গেলো।

৩৫.
“কিরে মু’খপু’রি এতোদিন পর আমাদের কথা ম’নে পরলো।বড়লোক জামাই পেয়েতো এই পালিত মা-বাবাকে ভু*লে গিয়েছিস।”

আনিশা কোনো কথার উত্তর না দিয়ে সে আগে যেই রুমে থাকতো সেই রুমে দৌড়ে চলে গেলো।গিয়ে নিজের সব কিছু এ’লো’মেলো করে কিছু একটা খুঁ’জতে লাগলো। কিছু সময় পর পেয়েও গেলো।একদৃ’ষ্টিতে তাকিয়ে আছে আনিশা ছবিটার দিকে।আর তার সেই ছোট চেনটার দিকে যেটা তাকে যখন পেয়েছিলো তখন পরানো ছিলো।

আনিশা ওগুলো জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।আনিশার পালিত মা শারমিন বেগম এসে আনিশাকে বলে,,,,,”কিরে তুই এখানে এসে এইগুলো জড়িয়ে ধরে কাঁদছিস কেনো”

আনিশা চোখ মুছে ফেলে নিজের।শারমিন বেগমকে হুট করে জড়িয়ে ধরে।শারমিন বেগম খুব অবাক হন।কারণ এতো বছরে কখনোই আনিশা তাকে জড়িয়ে ধরছে।তার আজ আনিশার জন্য খারাপ লাগছে সে অনেক অত্যাচার করেছে মেয়েটার উপর। সবকিছু মেয়েটা মুখ বুঝে স*য্য করেছে।শারমিনও একহাত আনিশার পি’ঠে রাখলো।

আনিশা শারমিনকে ছে’ড়ে দিয়ে বলল,,,,”তোমাকে ধন্যবাদ আম্মু আমাকে এতো বছর দেখে রাখার জন্য!”

শারমিন ভ্রুকুচকে বলে,,,”কেনো কি হয়েছে”

আনিশা চো’খ মুছে বলে,,,,,”আমি আমার আসল পরিবার খুঁ’জে পেয়েছি”

শারমিন কিছু বলেন না।কিছু বলার মু’খও নেই।আনিশা শারমিন বেগমের হাতে কিছু টাকা দিয়ে চলে আসে।আনিশা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় শারমিন বেগমের সাথে কিছু কথা বলে আসে।রাস্তায় এলোমেলো পাঁয়ে হাঁটতে থাকে।হুট করে একটা গাড়ির সাথে ধা*ক্কা লাগে আনিশার।আনিশা সেন্সলেস হয়ে পরে।

৩৬.
আনিশা জ্ঞা’ন ফিরতেই নিজেকে আলভির রুমে আবিষ্কার করে।চোখ ঘুরিয়ে পাশে তাকাতেই দেখলো আলভি তাকিয়ে আছে তার দিকে।চোখে কেমন অ’স্থি’রতা। আনিশা উঠে বসে।আলভি গ’ম্ভী’র কন্ঠে বলে,,,,”কোথায় ছিলে তুমি সারাদিন আর সন্ধ্যায় কেনো এ’লো’মে’লো পায়ে রাস্তায় হাঁটছিলে”

আনিশা ঘাবড়ে যায় আলভির কন্ঠস্বর শুনে।আমতা আমতা করে বলে,,,”আসলে আমি আমার পালিত বাবা মার বাড়ি থেকে ফিরছিলাম”

আলভি হুট করে আনিশার কাছে এসে ওর কাঁ’ধ ঝাঁ’কা’তে ঝাঁ’কা’তে বলল,,,”জানো যখন তুমি আমার গাড়ির সাথে ধা*ক্কা লেগে অ’জ্ঞা’ন হয়ে পরেছিলে তখন কতো ভ*য় পেয়েছিলাম।আর সারাদিন তোমায় খুঁ’জে খুঁ’জে ক্লা’ন্ত হয়েছি আমি।তোমার কি একটু কমনসেন্স নেই”

আনিশা মাথা নিচু করে বলে,,,,”দুঃখিত আমি আসলে আজকে অনেক বড় একটা জিনিস জানতে পেরেছি তার জন্যই ওই বাড়ি থেকে খুশির জন্য…..”

আলভি ভ্রু কুচকে বলে,,,”কি খুশির খবর জেনেছো”

আনিশা আলভিকে হুট করে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,”বলবো কালকেই বলবো আমি আর এ’তি’ম নই আমারও বাবা মা ভাই আছে যারা আমায় খুব ভালোবাসে।আর আমি আজকে নিজের জন্ম…..”

আনিশা টের পেলো ও কি করে বসেছে।ও তাড়াতাড়ি আলভিকে ছেড়ে অন্যদিকে তাকালো।আলভি ভ্রু কুচকে বলল,,,,”নিজের জন্ম কি?”

আনিশা বলে,,,,”ও কিছু না ও জেনে আপনার কি লাভ আপনি তো আর আমায় ভালো…”

আলভি এবার বি*র*ক্ত নিয়ে বলে,,,”কি অ’র্ধে’ক অ’র্ধে’ক কথা বলছো তুমি আনিশা।আমি আহাকে খাবার আনতে বলেছি ও খাবার আনতে গিয়েছে খেয়ে ঘুমাও”

আহা খাবার দিয়ে গেলো আনিশা খেয়ে ঘুমিয়ে পরে।আলভি তাকিয়ে আছে আনিশার দিকে।আনিশার সেদিনের কথাটা মনে পরছে আলভির।আনিশা হয়তো সত্যিই বলেছিলো এক ছাঁদের নিচে থাকতে থাকতে একে অন্যের প্রতি মায়া জন্মায়।তারও এখন আনিশাকে আর বি*র*ক্ত লাগে না।কিন্তু ভালোবাসে না সে আনিশাকে।কিন্তু খুব করে ফারিহাকে ভু*লে আনিশাকে ভালোবাসতে চাই আলভি।ফারিহা তার জন্য নি’ষি’দ্ধ এখন।

৩৭.
আলভি আর রোদদের পরিবার রোদদের বাড়িতে উপস্থিত। কারণ সবাইকে সকালে আনিশা ডেকেছে রোদদের বাসায়।আলভি মোটেও আসতে চাইনি কিন্তু আনিশা জো*ড় করেই নিয়ে এসেছে।সবাই চিন্তিত কি বলবে আনিশা।আনিশা রুহানা চৌধুরীকে বলল,,,”আপনার মেয়েকে হা’রা’নোর সময় কি আপনার মেয়ের সাথে কোনো চেন ছিলো”

রুহানা হ্যা বলে।আনিশা একটা চেন বের করলো আর চেনের উপরে লেখা ছিলো আনিশা।রুহানা চেনটা দেখে আনিশার হাত থেকে একপ্রকার ছি’নি’য়েই নিলো।বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,”তুমি এই চেনটা কোথায় পেয়েছো এটা তো আমার রোদসীর”

আনিশা হাসে।তারপর বলে,,,,”আজ থেকে ২০ বছর আগে আমার পালিত বাবা মার কাছে একটা লোক আমাকে রেখে তার কোন কাজে গিয়েছিলো কিন্তু লোকটা আর ফেরত আসেনি পরে জানতে পারে লোকটা এক্সিডেন্টে মা*রা গিয়েছে।আমার পালিত বাবা অনেক ভালো মনের মানুষ ছিলেন তাই আমাকে তার কাছে রেখে দিয়েছিলো।আমি কালকে রোদসী চৌধুরী আনিশার ছবি দেখে নিজের বাসায় গিয়ে এই চেনটা বের করি আর চেনটা আর কারো না আমারই ছিলো”

আনিশার কথা শেঃষ হওয়ার আগেই রুহানা দৌড়ে এসে আনিশাকে জড়িয়ে ধরে।আনিশার সারামুখে চুমু দিয়ে বলে,,,,”আমার রোদসী মা”

সবাই বুঝতে পারে আনিশাই রোদসী চৌধুরী আনিশা।রোদ আনিশাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।তার রোদুবুড়ি তার কাছে ফিরে এসেছে।সবাই আনিশাকে শান্তনা দিলো এতো বছরের জন্য।আলভি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আনিশার দিকে।তার কেনো জানি এখন আনিশার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে।

ফারিহা সবই খেয়াল করেছে তার খুব ভালো লাগছে আনিশা তার পরিবার ফিরে পেয়েছে।রোদ তার রোদুবুড়িকে পেয়েছে।রুহান চৌধুরী এতো বছর পর মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে।

চলবে……!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here