#রোদহীন_বিকালে_তুমি✨
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৫
৪৬.
রোদদের বাড়িতে ফারিহার বাবা মা সাথে আলভির বাবা মাকে ডাকা হয়েছে।আলভি তো ভয়ে শে’ষ,সবাই যদি আনিশাকে ডি’ভো’র্স দিতে বলে!কিন্তু সে কখনোই ডি’ভো’র্স দিবে না।ও সবার সামনেই আনিশার হাত শ’ক্ত করে ধরে আছে।আনিশা ল*জ্জা পাচ্ছে এতে।কালকের ব্যাপারটার পরতো ওর ল*জ্জা একশো গু’ন বেড়ে গিয়েছে।
বড়রা সবাই সোফায় বসেছে।আর ছোটরা দাঁড়িয়ে আছে।রুহান চৌধুরী বলল,,,,”আপনাদের সবাইকে এখানে ডেকেছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে”
আলভির বাবা আর ফারিহার বাবা বলল,,,,”হ্যা ভাই সাহেব বলেন”
রোদের বাবা হেসে বলেন,,,,”আপনারা তো জানেনই আমি আমার একমাত্র মেয়ে আনিশাকে কিছুদিন আগেই পেয়েছি।আর আনিশার বিয়েটা কীভাবে হয়েছে তাও আমরা জানি না।তার উপর আমি ছেলেটাও তো কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে। আমার কতো শখ ছিলো ছেলে মেয়েদের বিয়ে খাওয়ার কিন্তু এই গা’ধা গিয়ে কাজী অফিসে বিয়ে করলো।মেয়েটা না হয় ছিলো না এতোদিন।”
রুহানকে থামিয়ে রোদ বলে,,,,”বাবা তোমার বউমাই তো আমাকে হু’ম’কি দিলো তখন বিয়ে না করলে আর করতো না তখন আমি কি করতাম বলো”
রোদের কথায় বড়রা সবাই হাসতে লাগলো।ফারিহা পাশ থেকে রোদকে গুটা মা’র’লো।রোদ তাকাতেই ফারিহা চোখ রা’ঙি’য়ে ওর দিকে তাকালো।রোদও হেসে সবার অ’গো’চরে ফারিহাকে চোখ মা’র’লো।ফারিহা বিড়বিড় করে বলল,,,”অ’স’ভ্য লোক”
রোদ পাশে থাকায় শুনে ফেললো।হেসে ফারিহার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,,,”তোমারই”
রুহান আবার বললো,,,,”আমি ঠিক করেছি আলভি আনিশা রোদ ফারিহার বিয়েটা আবার দিতে চাই।আপনাদের কী মতামত”
সবাই সম্মতি দেয়।ওদের বিয়ের তারিখ ফেলা হয় ১৫ দিন পর।রুহানা বলল,,,,”আনিশা আলভি তোমাদের বিয়েটা কিভাবে হলো”
আনিশা এই কথাটা শুনে অ’স্থি’র হয়ে গেলো।ও আলভির হাত শ’ক্ত করে ধরলো।আলভি ওকে শান্ত করলো।তারপর বলতে লাগলো,,,,,সেদিন রাতটা ছিলো বৃষ্টির। হালকা গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরছিলো।আমি নিশান নিহানদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম।তখন মনে হয় ৮টা কি ৯টা বাজে।হুট করে একটা মেয়ে আমার গাড়ির সামনে পরে।আমি গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটির কাছে গিয়ে দেখি মেয়েটা আর কেউ নয় আনিশা।আমি ওকে টেনে তু’লতেই ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগে।ওর পেছনেই কয়েকটা ছেলে এসে পরে।বুঝতে পারলাম ওরা আনিশাকে নিয়ে এসেছে এখানে জায়গাটা খুব নির্জন আর গ্রামীন এলাকা।আমাকে দেখে পা’লিয়ে যায় ওরা।আমি আমার টিশার্টের উপরের শার্টটা খুলে ওকে পরিয়ে দিয়েছিলাম কারণ ওর অবস্থা অনেক খারাপ ছিলো।বৃষ্টি তখন জো’ড়ে জো’ড়ে হচ্ছিল।আমরা গাড়িতে গিয়ে বসতেই গাড়ি স্টার্ট দিলে চলছিলো না।আমি আনিশাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে ওখানের একটা বাড়িতেই আ’শ্র’য় নেই।হয়তো আশ্রয় নেওয়াটা আমাদের ভু*ল ছিলো না না ভুল না ওখানে না গেলে হয়তো আমি আনিশাকে পেতাম নাহ।ওখানে যেতেই ওরা আমাদের জিজ্ঞেস করে আমরা বিবাহিত কিনা!আমি ই’ত’স্ত’ত করে বলি আমরা বিবাহিত।
আলভি থেমে আবার বলা শুরু করলো,,,,”আমি তার পরেই একটা ভু*ল করে ফেলেছিলাম।ওরা আমাকে আর আনিশা একটা রুমে থাকতে দিতেই আমি চি’ল্লি’য়ে উঠি।ওরা স’ন্দে’হ করে!তারপরেই আমাদের বিয়ে দিতে চান।এতে আমি আরো রিয়াক্ট করে ফেলি।তারপরই সকালে ওরা আমাদের জো’ড় করে বিয়ে দিয়ে দেয়”
আনিশা ভ*য়তে সবার সামনেই আলভির একহাত জড়িয়ে ধরে।ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে।রোদ আর রুহানা আনিশার কান্না দেখে অস্থির হয়ে পরে।কিন্তু আলভি পাশে বলে যায় না ওরা কেউ।আলভি আনিশাকে ঠান্ডা করে।সবাই বুঝতে পারে ওইদিনের ঘটনাটা ভ*য়ং*ক*র ছিলো!
আলভি আনিশাকে বলে,,,”তুমি ওখানে কীভাবে গিয়েছিলে আনিশা”
আনিশা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলতে লাগলো,,,,স্টুডেন্টের বাসা থেকে সেদিন বের হতে দেরি হয়েছিলো।রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিকশা খুঁজছিলাম। আর তখনই ওরা আমাকে ওখানে নিয়ে যায়।আমি অনেক ক*ষ্টে পালিয়ে আলভির গাড়ির সামনে পরি।উনি সেদিন না আসলে,,,,,,
শেষের কথাটা বলে কাঁদতে থাকে।ফারিহা এসে আনিশাকে জড়িয়ে ধরলো।শান্ত করতে লাগলো।
৪৭.
রুহান রাতের খাবার না খাইয়ে কাউকেই ছাড়বে না। আলভি আনিশার হাত ধরে আছে দেখে রোদ হুট করে ওদের সামনে এসে দাঁত কেলিয়ে বলে,,,,,
“তুই ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস!বিয়ের আগ পর্যন্ত ও এখানেই থাকবে”
আলভি ভ্রু কুচকে রোদের দিকে তাকায়।আনিশা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।রোদ আলভিকে কিছু বলতে না দেখে রোদ বলল,,,”হাত ছাড় ওর তুই চলে যা একেবারে ১৫ দিন পর এসে নিয়ে যাস”
আলভি বির*ক্তি নিয়ে বলল,,,,”তুই সালা বেস্টফ্রেন্ড নামের ক’ল’ঙ্ক”
রোদ হাসতে লাগে।আলভি চোখ পরে ফারিহার উপর।ও বাঁ’কা হেসে রোদকে বলে,,,,”ভালোবাসিস না নিজের বউকে!ফারিহাকেও আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি দাঁড়া।আর আমাকে বউ ছাড়া করতে চাইছিলি নাহ আমি তোকেও করে দেবো ওয়েট”
রোদ বলে,,,,”না না ভাই এমন করিস না আমি ফারিহাকে ছাড়া থাকতে পারি না প্লিজ এমন করিস না”
আনিশা আর ফারিহা ওদের দুজনের কথা শুনছিলো।রোদ বলে,,,,,”ঠিক আছে আমি আনিশাকে আ’ট’কাবো না নিয়ে যা তুই ভাই আর আমার বউকেও আমার কাছে থাকতে দে”
ওদের কথা শুনে আনিশা আর ফারিহা একে ওপরের দিকে তাকিয়ে হা হা করে হাসতে থাকে।আলভি আর রোদ ওখান থেকে কে’টে পরে।রুহান চৌধুরী আবার সবাইকে নিয়ে ড্রইংরুমে বিয়ের আলোচনা করতে বসেন।
রুহান বলল,,,,”ভাই আমি চাইছি বিয়েটা একটা রিসোর্টে হোক।আপনারা কি বলেন”
ওরাও রাজি হয়।রুহান বলে,,,,”তাহলে বিয়ের পাঁচদিন আগে আমরা তিন ফ্যামিলি রিসোর্টে চলে যাবো ঠিক আছে”
সবাই গল্প করতে থাকে।রাতের খাবার শেষে সবাই বিদায় নিয়ে চলে যায়।বেচারা রোদ আর আলভি আনিশা থেকে যায় আর ফারিহা চলে যায় ওর বাবা মার সাথে।রোদ কপাল চাপরাচ্ছে।এই ১৫ দিন না ও বউ ছাড়া থাকবে কি করে ও।
৪৮.
আলভি নিজের রুমে বসে আছে একটুও ভালোলাগছে না তার।মিস করছে আনিশাকে।আলভি কিছু একটা ভেবে ফারিহাকে ফোন দিলো।ফারিহা রোদের সাথে কথা বলছিলো রোদকে বলে আলভির ফোন রিসিভ করে।
আলভি বলে,,,,”কেমন আছো ফারিহা”
ফারিহা অবাক হয় আলভির ফারিহা ডাকায়।কারণ আলভি তাকে সবসময় ফারুপাখি বলেই ডাকতো।ও বুঝতে পারে এখন আর আগের মতো কিছুই নেই।ফারিহা হেসে বলল,,,,”আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি খুব তুমি কেমন আছো”
আলভিও হাসে বলে,,,”আমিও খুব ভালো আছি।আচ্ছা তোমাকে যে জন্য ফোন দিয়েছিলাম সেইটা বলি”
ফারিহা বলল,,,”হুম বলো”[লেখিকা ইশা আহমেদ]
আলভি বলল,,,,”আমি আনিশাকে খুব ভালোবাসি আর তুমিও যে রোদকে ভালোবাসো তা খুব ভালোকরেই বুঝা যায়।তাই আমি বলছি কি আমি আর তুমি আগে কি ছিলাম তা আমরা ভু*লে যাওয়ার চে’ষ্টা করব।জানি একটু ক’ঠি’ন কিন্তু দেখো তোমারও আমাকে আগের মতো মনে পরে না আমারও না।আমার মনে শুধু আনিশা আর তোমার রোদ।তাই আমি বলছিলাম কি আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি”
ফারিহা হেসে বলে,,,,”আমিও তোমাকে এই কথাগুলো বলবো ভাবছিলাম।হ্যা এখন থেকে আমরা ফ্রেন্ড আগের সবকিছু আমিও মনে রাখতে চাই না।আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড ওকে”
ওরা কিছু সময় কথা বলে ফোন রাখে।আলভি আনিশাকে ফোন করে।আনিশা আলভির কথাই ভাবছিলো।আনিশা ফোন রিসিভ করে বলে,,,”আসসালামু আলাইকুম!কি করেন”
আলভি মৃদু হেসে উত্তর দেয়,,,,,ওয়ালাইকুম আসসালাম বউজান।আমি একটা মেয়ের কথা ভাবছি।আপনি কি করেন”
আনিশা অভিমানী কন্ঠে বলল,,,,”আপনি অন্যমেয়ের কথা ভাবছেন যখন তখন আমাকে কেনো ফোন দিয়েছেন”
আলভি হেসে বলে,,,,”পা*গ*লি আমি তোমার কথায় ভাবছি”
আনিশার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে।ওরা গল্প করতে থাকে।ভালোবাসা জিনিসটা আসলেই অদ্ভুত সুন্দর। কেউ ভালোবেসে সুখী থাকে আবার কেউ কষ্টে।কিন্তু ভালোবাসলে সত্যিকারের ভালোবাসা উচিত।
৪৯.
আনিশাকে আজকে পাঁচদিন পর দেখবে আলভি।এই কদিন ব্য’স্ততা’র কারণে দেখা করতে পারেনি।অফিসে অনেক কাজের প্রেশার ছিলো।সামনে ক’দিন যেতে পারবে না তার জন্য।ওরা চারজন না ছয়জন আনিশা আলভি ফারিহা রোদের সাথে আহা আর ইয়ামিনও যাবে।
আলভি আনিশাকে নিতে এসেছে।রোদ কিছু সময় আগেই ফারিহাকে নিয়ে এসেছে।আনিশা আলভি একটা গাড়িতে।রোদ ফারিহা একটা গাড়িতে আর আহা ইয়ামিন বাইকে যাবে।ওরা শপিংমলে পৌছালো।একসাথে নেমে লেহেঙ্গার দোকানে গেলো!আনিশা ফারিহা আর আহা লেহেঙ্গা দেখছে।
আনিশা ফারিহাকে বলল,,,”ফারু তুই কি রঙের লেহেঙ্গা নিবি”
ফারিহা বলল,,,,”আমার ইচ্ছা সাদা রঙের লেহেঙ্গা পরার।চল তুই আর আমি এক রঙের লেহেঙ্গা নেই।আমার অনেক দিনের শখ ছিলো তোর আমার বিয়েটা একসাথে হবে আমি আর তুই এক রঙের লেহেঙ্গা পরবো!”
চলবে…….!