#রোদহীন_বিকালে_তুমি✨
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২
৩.
সূর্যের আলো চো’খে পরতেই পিটপিট করে চোখ খুললো আনিশা।চো’খ খুলে নিজেকে বেলকনিতে আবিষ্কার করলো।নিজের এই অবস্থা দেখে তা’চ্ছি’ল্য হাসলো।তার এগুলো সবেতেই অ’ভ্যা’স আছে!বেলকনির দরজায় টো’কা দিলো।কেউ খুললো না!হয়তো আলভি এখনো ঘুমাচ্ছেন।কিছু সময় পর হুট করে কেউ বেলকনির দরজা খুলে দিলো।দরজাটা খুলেছে আলভির বোন আহা।আমাকে বলল,,,
“ভাবি তুমি কি সারারাত এখানে ছিলে”
আনিশা কিছু বললো না।কি আর বলবে ও।কিছুই বলার নেই ওর।চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।আহা হয়তো বুঝতে পারলো তাই বললো,,,,
“ভাবি রুমে আসো মামনি তোমাকে শাড়ি পরে নিচে যেতে বলেছে”
আনিশা রুমে এসে দেখলাম রুমে আলভি নেই।হয়তো কোথাও গিয়েছে।আহার কাছ থেকে শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুম থেকে পরে বের হলো।আহা এখনো আছে।আনিশাকে দেখে বলল,,,
“ভাবি তুমি বসো আমি তোমায় একটু সাজিয়ে দেই আলভি ভাইয়া বিয়ে করেছে শুনে মামা ফুফি সবাই আসছে।”
আনিশা আহাকে বললাম,,,”আহা আমার সাজতে ভালো লাগে না তো”
আহা মুচকি হেসে বলল,,,
“ভাবি আমি তোমায় একেবারে হালকা সাজিয়ে দেবো।”
আনিশা সম্মতি দিতেই ওকে হালকা সাজিয়ে দিলো।সাজানো শে’ষ হতে বলল আহা বললো,,,
“মাশাআল্লাহ তোমাকে লা’ল শাড়ির সাথে হালকা সাজে অনেক সুন্দর লাগছে।”
আনিশা ম’লি’ন হাসলো।আহা আনিশাকে নিয়ে নিচে নামলো।আলভির আম্মু মিসেস নাফিয়া আনিশাকে দেখে তার পাশে বসিয়ে বলল,,,
“শোন তোমাদের বিয়েটা যেভাবেই হোক না কেনো হয়েছে তাই ডি’ভো’র্সের কথা ভু*লে যাও।এ বাড়িতে ডি’ভো’র্সের কোনো নিয়ম নেই।”
আনিশা মা*থা নাড়ালো। উনি আনিশার হাতে চুড়ি পরিয়ে দিয়ে বললেন,,,
“এটা আমাদের বাড়ির বউয়েরা পেয়ে থাকে শাশুড়ীদের কাছ থেকে এতোদিন আমার ছিলো এখন তুমি আলভির বউ তাই এগুলো তোমার”
আনিশা ভাবছে চুড়িগুলোর উপর যে আমার না ফারিহার অ’ধি’কা’র ছিলো।এগুলো যে ওর। আমি কোথা থেকে উড়ে এসে ওর জায়গায় বসে পরলাম।চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরলো।আলভির আম্মু দেখে বললেন,,,
“আমি জানি তোমার ফারিহার জন্য অনেক ক*ষ্ট হচ্ছে। কিন্তু দেখো আল্লাহ হয়তো আলভির সাথে তোমার জুটি বেঁ’ধে রেখেছিলো তাই তো ওরা দু’জন দু’জনকে ভালোবেসেও পেলো না”
চোখের পানি মুছে বললো,,,
“আমি তো চাইনি আন্টি নিজের বেস্টফ্রেন্ডের ভালোবাসাকে কে*ড়ে নিতে। ও আমাকে যেমন ভালোবাসে তেমনই উনাকেও প্রচন্ড ভালোবাসে।মেয়েটার কি অবস্থা কে জানে”
মিসেস নাফিয়া আনিশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,
“ক*ষ্ট পেও না।আর আন্টি কি হা মামনি বলো”
আমি মা*থা নাড়িয়ে বললাম,,,”হুম”
আনিশা ভবছে,,,
মামনি অনেক ভালো মনের মানুষ নাহলে কি আমার মতো এ’তি’ম মেয়েকে কেউ মেনে নেয়।আমার বাবা-মা আদেও আছে কিনা আমি তাও জানি না!
৪.
ফারিহা আর ইয়ামিন ক্যাম্পাসে বসে আছে।ফারিহার চোখ মুখ ফো’লা যা ইয়ামিনের দেখতে মোটেও ভালো লাগছে না।তারা তিনজন মিলে সারাটা সময় মজা করে আর এখন কেমন হয়ে গেলো সবকিছু।একদিনের ব্যবধানে কি হয়ে গেলো।ইয়ামিনের ভাবনার মা’ঝেই আলভি এসে ফারিহাকে টেনে বসা থেকে দাঁড় করালো। আলভিকে দেখে ফারিহার চোখে পানি আসলো।নিজেকে সামলে নিলো।তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা আর তার না ভাবতেই বুক কেঁ’পে উঠছে ফারিহার।
আলভি ফারিহার ভাবনার মা’ঝে বলল,,,
“ফারুপাখি আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।রাতের সব কথা ভু*লে যাও আমি আনিশাকে বুঝিয়ে ডি’ভো’র্স দিয়ে তোমাকে বিয়ে করবো আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসি বি’শ্বা’স করো না”
ফারিহার বুকে চি’ন’চি’ন ব্যা’থা করছে।ভেতরে যত ভেঙে যাক না কেনো উপরে উপরে সে চোখ মুখ শক্ত করেই দাঁড়িয়ে আছে।আলভি ফারিহার এমন নিরবতা দেখে কাঁধ ঝাঁ’কি’য়ে নরম কন্ঠে বলে,,,,
“ফারুপাখি কথা বলছো না কেনো?”
ফারিহা এবার চিল্লিয়ে বলল,,,
“বে*হা*য়া র্নি’ল’জ্জ লোক কোথাকার কালকে বিয়ে করে নতুন বউকে রেখে এখন প্রা’ক্তন প্রেমিকার কাছে আসছে।তোমাকে আমি কালকে রাতেই সব বলে দিয়েছি তাও তুমি এখানে কেনো এসেছো”
আলভি মে’জা’জ ঠান্ডা করল।এখন মা*থা গ’র’ম করলে কোনো কিছুই হবে না।সে জানে ফারিহার রা*গ জে*দ সম্পর্কে!তাই ঠান্ডা গলায় বলল,,,
“আমি আবারও বলছি ফারিহা তুমি আরেকবার ভাবো।”
ফারিহা আগের বারের থেকে দি’গু’ণ জো*ড়ে চি’ল্লি’য়ে বলল,,,
“বললাম না তোমায় কালকে তো সব বলেই দিয়েছি তাহলে কেনো এসেছো!আনিশার কাছে যাও ওকে সময় দাও”
আলভি আর নিজেকে ক*ন্ট্রো*ল করতে পারলো না।সেও চিল্লিয়ে বলল,,,
“তুই আনিশা আনিশা করেই যাচ্ছিস।আরে তুই তোর নিজের দিকটাও তো ভাব।আর আমি বুঝে গিয়েছি তোকে বোঝালেও লা’ভ নেই ঠিক আছে আমিও তোর আনিশাকে ঠিকমতো বাঁচতে দিবো না”
ফারিহাও চি*ল্লি*য়ে বলে,,,,
“আনিশার যদি কিছু হয় আমি তোমায় ছা’ড়বো না আলভি এইটা মা*থায় রেখো”
ভার্সিটির সবাই হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।কারণ সবাই জানে যে ওরা এমন কাপল যে ওদের ভেতর ঝ*গ*ড়াও হয় না আর আজকে আনিশাকে নিয়ে এদের ঝ’গ’ড়া হচ্ছে।আনিশা মেয়েটা যে প্রচুর শান্ত তা সবাই খুব ভালো করে জানে।সবাই খুব অবাক হলো আনিশা আলভির বিয়ের কথা শুনে!!আলভি হ’ন’হ’ন করে চলে গেলো।
ফারিহার কাছে ইয়ামিন এসে বলল,,,
“হয়েছেটা কি তাই তো বল!সকাল থেকে তোকে জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছি।আর তুই এ’ড়ি’য়ে যাচ্ছিস ওদের বিয়েটা কিভাবে হলো।”
ফারিহা বলল,,,,”ওদের জো*ড় করে বিয়ে দিয়েছে লোকজন”
ইয়ামিন অবাক হলো কে আবার ওদের জো*ড় করবে।
“কারা”
ফারিহা বলল,,,
“আমি সিয়র জানি না। আনির কাছ থেকে জানতে হবে।”
ইয়ামিন বলে,,,
“ফারু চল আমরা আনির কাছ থেকে ঘুরে আসি”
“ইয়ামিন এটা ঠিক হবে বল।ওটা আমার হবু শ্বশুড়বাড়ি হতে চলেছিল আমি কিভাবে যাই বল”
“তুই এগুলো ভাবলে থাক আমি যাচ্ছি মেয়েটার সাথে একদিন হয়ে গেলো কথা হয় না আর ওখানে সবাই ওর সাথে কেমন আ’চ’র’ণ করছে তাও তো দেখতে হবে”
ইয়ামিন চলে যাচ্ছিল ফারিহা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে,,,”আমিও যাবো চল”
৫.
আনিশা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।আলভির ফুফিরা মাত্র এসেছে।এসেই আলভির ফুফি আনিশাকে দেখে বলল,,,
“ভাবি আগে যার সাথে বিয়ে ঠিক করেছিলেন তার থেকে এই মেয়ে দেখতে সুন্দর গায়ের রং মাশাআল্লাহ। কিন্তু আলভি যাকে ভালোবাসতো তার গায়ের রংটা তো বেশি উজ্জল না।যাক এই মেয়েটাকে আমার ভালোই লেগেছে”
আনিশার প্রচন্ড রা*গ লাগছে এদের কথা শুনে।হতেই পারে ফারিহার গায়ের রং টা একটু চা’পা তাই বলে কি সে সুন্দর না।ফারিহাকে আনিশার কাছে খুব মায়াবী লাগে।যে কেউ দেখলেই বলবে মায়াবতী।তার মধ্যে এই মহিলা বেশি বেশি বলছে।আনিশাকে আশেপাশের বাড়ি থেকে মহিলারা এসে দেখে যাচ্ছে।খুব বি*র*ক্ত লাগছে।
আলভির মামা মামি মামাতো বোন আসলো।এসেই আনিশাকে দেখে আলভির মামি বলল,,,
“মেয়েতো মাশাআল্লাহ সুন্দর কিন্তু বং’শ পরিচয় কি মেয়ের”
মিসেস নাফিয়া বললেন,,,
“ও এ’তি’ম কিন্তু তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।”
আলভির মামি বলল,,,
“কিন্তু আপু বংশ পরিচয় না জানা একটা মেয়েকে আলভির বউ করে রাখবেন”
“তো কি হয়েছে বংশ পরিচয় না থাকলে কি কোনো মেয়েকে কেউ বিয়ে করে না”
ফারিহা আনিশার পাশে বসতে বসতে কথাগুলো বলল।আনিশা অবাক হলো।ও ভাবতেই পারেনি ফারিহা কখনো আসবে।অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো ফারিহার দিকে।
আলভির মামি কিছুটা রু*ক্ষ কন্ঠে বলল,,,
“তুমি তো ভারি অসভ্য মেয়ে কোন মু’খ নিয়ে এখানে এসেছো”
“আমি কোনো অ’প’রা’ধ করেছি যে এখানে আসতে পারবো না এটা আমার বেস্টফ্রেন্ড বা বোন যাই বলেন না কেনো তার শ্বশুড়বাড়ি তো আমি আসতেই পারি”
আলভির মামি আর কথা বললো না।ফারিহা হাসলো।আলভির মাকে বলল,,,
“আন্টি ভালো আছো”
নাফিয়া মা*থা না’ড়ালো।নাফিয়া ভেবে পেলো না এই মেয়েটা কিভাবে এতো স্বাভাবিক রয়েছে।ফারিহা আবার হেসে বলল,,,
“আন্টি তুমি যদি কিছু মনে না করো তাহলে আমি আর ইয়ামিন আনিকে নিয়ে একটু ওদের রুমে গেলাম”
মিসেস নাফিয়া বললেন,,,”হুম যেতে পারো স’ম’স্যা নেই”
ফারিহা আনিশার হাত ধরে টেনে উপরে আলভির রুমে নিয়ে আসে।ইয়ামিন ওদের পিছনে পিছনে চলে আসে।রুমটায় ঢু’কতেই বুক কেঁ’পে উঠে ফারিহার কারণ এই রুমটা তার আর আলভির হওয়ার কথা ছিলো।ফারিহা তাকিয়ে দেখলো তার আর আলভির একটা ছবি বেডের পাশের টেবিলে রাখা।সে ছবিটা নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলল।
আনিশা অবাক হয়ে বলল,,,
“তুই এইটা কি করলি ফারু তুই ছবিটা ওখানেই রেখে দে প্লিজ”
ফারিহা আনিশার হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে হেসে বলল,,,”ওইসব বাদ দে আলভি তোকে কিছু বলেছে”
আনিশা জো*ড়পূ’র্বক হেসে বলল,,,
“না না উনি কি বলবে।!কিছুই বলেননি”
আনিশা ফারিহাকে জড়িয়ে ধরলো।বলল,,,”তুই এতো শা’ন্ত কিভাবে আছিস ফারু। ফারু তুই চাইলে আমি আলভিকে ডি’ভো’র্স দিয়ে দিবো”
আনিশার গলা কাঁ’পছিলো ডি’ভো’র্সের কথাটা বলার সময়।যতই হোক ভালোবাসে তো সে আলভিকে।
চলবে,,,,,?