রোদহীন_বিকালে_তুমি✨ #ইশা_আহমেদ #পর্ব_৫

0
305

#রোদহীন_বিকালে_তুমি✨
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৫

১২.
“বাবা তুই কি বাসায় আসবি না।তিনটা বছর হয়ে গেলো তুই একবারো বাংলাদেশে আসিসনি।এবার তো আয়।বয়স তো কম হলো না এবার তুই বিয়েটা কর নাতিনাতনির মুখ দেখে তো ম*রি।”

“মম তোমার ছেলে নেক্সট মান্থেই আসছে তোমার কাছে।বিয়ে আমি করবো এসেই আর মেয়েওআমার ঠিক করা আছে ”

মিসেস রুহানা চৌধুরী বলল,,,,”সত্যি তুই আসছিস বাবা”

লোকটা হেসে বলল,,,,”হ্যা মম পা’ক্কা প্রমিস আমি আসছি”

রুহানা চৌধুরী অবাক হয়ে বলল,,,”কি বললি বিয়ে করবি রোদ।কি বললি তুই এটা সত্যি রোদ আজকে আমি অনেক খুশি আমার ছেলে এতোদিন পর বিয়ে করার জন্য মেয়ে পছন্দ করেছে।তাও নিজে সে কে যে আমার ছেলের মনটা চু’রি করলো”

রোদ হেসে বলল,,,”মম আমি এসেই তোমাকে দেখাবো বাট তাকে বিয়ে করতে হলে আগে আমার প্রেমে ফেলতে হবে তারপর সবকিছু”

রুহানা চৌধুরী হেসে বলল,,,”ওকে বাবা ঠিক আছে তুই নিজের প্রেমে আগে ফেলিস আমার হবু বৌমাকে কিন্তু তুই এখানে এসেই ওর ছবি দেখাবি আমায়”

রোদ হেসে বললল,,,,”ওকে মম আমি তোমাকেই আগে দেখাবো”

রুহানা চৌধুরী রোদের সাথে কিছু সময় কথা বলে ফোন রেখে দিলো।ফোন রেখে বলল,,,
“যাক এতোবছর পর তাহলে আমার ছেলের মনে কেউ জায়গা করে নিতে পেরেছে।মেয়েটা যেমনই হোক না কেনো আমার রোদ ভালোবাসে আর আমি তাকে যেভাবেই হোক রোদের বউ করবোই”

রুহানা চৌধুরী তার স্বামী রুহান চৌধুরীকে ফোন করলো।ফোন করে বলল,,,,
“শোন একটা খুশির সংবাদ আছে।”

রুহান চৌধুরী বলল,,,”হ্যা বলো কি খুশির সংবাদ”

রুহানা চৌধুরী খুশি হয়ে বলল,,,”আমাদের রোদ আসছে আর ও নাকি বিয়েও করবে”

রুহান চৌধুরীও হেসে বলল,,,”সত্যি বলছো রোদ বিয়ে করবে যাক আমার ছেলের বিয়ে খাওয়ার শখটা এবার পূ’রন হবে।আমি তো ভেবেছিলাম ওর বিয়ে না খেয়েই মরে যাবো আমি”

রুহানা চৌধুরী হাসতে হাসতে বলল,,,”তুমি পারোও ব’টে এতো ফা’জলামি এই বু’ড়ো বয়সে করো কিভাবে”

রুহান চৌধুরীও হাসতে হাসতে বলল,,,,”আমি সবই পারি বুঝেছো”

রুহানা চৌধুরী রুহান চৌধুরীর কথায় হাসতে লাগলো।তারা কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয়।তারা ভী’ষণ খুশি তাদের একমাত্র ছেলে বিয়ে করবে।এতেই খুশি তারা।

১৩.
আনিশার খাওয়া শেষ হতেই ফারিহা আনিশাকে নিয়ে সোজা ভার্সিটিতে চলে এসেছে।দুইটা ক্লাস করে ওরা তিনজন যেখানে আড্ডা দেয় সেখানে এসে বসে পরলো।ইয়ামিন আনিশাকে জিজ্ঞেস করলো,,,
“তোর আর আলভি ভাইয়ার বিয়েটা কি করে হলো আনি”

আনিশার সেদিনের সেই সবকিছু চো’খের সামনে ভাসতে লাগলো।ও হুট করে চিৎকার দিয়ে বললল,,,”না না আমি আলভিকে বিয়ে করবো না উনি ফারিহাকে ভালোবাসে”

ইয়ামিন আর ফারিহা বুঝতে পারলো।ওইদিন খা’রা’প কিছুই হয়েছিলো।তা নয়তো আনিশা কখনো এভাবে রি’য়াক্ট করে না!ফারিহা আনিশাকে জড়িয়ে ধরে ওর পিঠে হাত বোলাতে বুলাতে বলল,,,
“রিলাক্স আনি কিছু হয়নি দেখ এখানে আমি আর ইয়ামিন”

আনিশা কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,,,”ওরা আরেকটু হলে আমার সাথে খারাপ কিছু করে ফেলতো ফারু”

ফারিহা বলল,,,,”শান্ত হ তুই।ওসব কথা বাদ দে আমি তোকে আলভির পছন্দের জিনিসগুলো বলছি আর কি কি করতে হবে তাও বলছি।তুই মনোযোগ দিয়ে শোন”

আনিশা চোখের পানি মুছলো।তারপর ফারিহা ওকে সব কিছু বলতে লাগলো।ইয়ামিন ওদের জন্য আইসক্রিম আনতে গিয়েছে।আনিশা শুনে বলল,,,,
“না না ফারু আমি উনার উপর অ’ধিকার খা’টাতে পারবো না।আর উনিও আমার কথা শুনবেন না কখনো উনি তোকে ভালোবাসে”

“দেখ আনি তুই কথা বলবি না তুই আলভির খেয়াল রাখবি আর ওর কাজে অ’ধিকার দেখাবি বুঝেছিস।”

ফারিহার বু’কে চিনচিন ব্যাথা করছে।কথাগুলো বলতে কিন্তু করতেই হবে হবে এগুলো। সে যে চায় তার আনি ভালো থাকুক আর আলভিও।আনিশা বলে,,,,
“দেখ ফারু তুই বুঝতেছিস না তুই যা বলছিস তা আমি করতে পারবো না উনার উপর অ’ধিকার খা”টানো অ’স’ম্ভব।”

“আনি আমি চিনি আলভিকে চিনি ও কিছুই করবে না শুধু যা বলেছি তাই করবি”

আনিশা ভ’য় পেয়ে বলল,,,,,”না না ফারু আমি পারবো না”

ফারিহা চো’খ রা’ঙি’য়ে আনিশাকে বলল,,,,”পারতে তো তোকে হবেই।”[লেখিকা ইশা আহমেদ]

ফারিহা আনিশাকে বোঝাতে লাগলো।আনিশাকে আলভির পছন্দ অপছন্দের কথাও বলতে লাগলো।আনিশা আলভির পছন্দের বিষয়গুলো ম’ন দিয়ে শুনলো।সেও এখন চায় আলভির ম’নে জায়গা করে নিতে।কিন্তু আদেও তা সম্ভ’ব কিনা কে জানে।

ইয়ামিন আইসক্রিম নিয়ে ওদের কাছে এসে বলে,,,
“ফ’কি’ন্নিগুলা নিজেরা আরামে এই গাছের ছায়ায় বসে গল্প করছে আর আমাকে রোদের ভেতরে আইসক্রিম আনতে পাঠাইছে।তাও টাকা দেইনি খ’ইরা’ইত্তা পা’না তোরা দু’জন কি সারাজীবন করবি।”

আনিশাকে ইয়ামিন বলে,,,”ওই ছে’মরি ওই তোর বর না সেই বড়লোক বাপ মার একমাত্র ছেলে তার উপর নিজের একটা কোম্পানি আছে তারপর ও তুই সেই খ’ইরা’ই’ত্তা পা’না করোস ল’জ্জা লাগে না”

আনিশা হেসে বলে,,,,”আমার বরের কথা বা’দ আগে আমার বেস্টফ্রেন্ড আর তুই ও কিন্তু বাপ মার ছোট ছেলে সো তোর ও কিন্তু কম টাকা না”

ফারিহা হাসতে হাসতে বলে,,,,,”আমি আমার মামি মামুর টাকা খাই তাতে তোর কি। তুই যে টাকাগুলো পাস তাও আমার মামুর কাছ থেকে।আর মামুর একমাত্র ভাগ্নি হিসাবে আমার অ’ধিকার আছে হুহ”

কথাটা বলেই আনিশা আর ফারিহা হাসতে লাগলো।বেচারিদের হাসি থামছেই না।ইয়ামিন রে*গে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।ওরা ইয়ামিনের হাত থেকে আইসক্রিম নিয়ে খেতে লাগলো।ইয়ামিনের একদিক দিয়ে খুশিও লাগছে এই কয়েকদিন এমন ঝ*গ*ড়া করেছে না দুষ্টমি।অন্যদিকে আনিশা ভাবছে সে ভা*গ্য করে দু’জন বন্ধু পেয়েছিলো।যে নিজের ভালোবাসাকেও সে’ক্রি’ফাইস করল। হয়তো করতো না শুধু মাত্র বিয়ে হয়েছে বলেই।তাও ফারিহা চাইলেই বলতে পারতো তাকে চলে যেতে কিন্তু ফারিহা তা করেনি।তাদের ফ্রেন্ডশীপের প্রায় ১৫ বছর হতে চলল।ছোট থেকেই একসাথে।আর ফারিহা তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।

আনিশার ভাবনার মা’ঝেই ফারিহা ইয়ামিনকে বলল,,,,”চল আজকে তুই আমাদের ফুসকার ও ট্রি’ট দিবি”

ইয়ামিন চো’খ বড়বড় করে বলে,,,,”কি এখন আবার ফুসকা!তোরা আজকে আমাকে ফ’কি’র বানানোর ধান্দায় আছিস না”

ফারিহা আর আনিশা দাঁত কেলিয়ে একসাথে বলল,,,”একদম ঠিক ধরেছিস”

ইয়ামিন ওদের কথা শুনে ভৌ দৌড় দিলো।ফারিহা আর আনিশা একে অপরের দিকে তাকিয়ে দৌড় দিলো ইয়ামিনের দিকে।অন্যদিকে এইসব দেখে আলভি রা*গে ফুঁ’সছে। আলভির মোটেও এদের স্বাভাবিক ভাবে থাকতে দেখে তা স-য্য হচ্ছে না।সে বাড়ি থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পরেছে।এতোসময় ধরে দেখছিলো ওদের কাজ।

ফারিহা আনিশার সাথে এমন বি’ভেব স*য্য হচ্ছে না।সে জানে ফারিহা আনিশাকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু নিজের ভালোবাসার মানুষকেও দিয়ে দিবে ভাবতে পারেনি।আগে ওদের দেখে নিজেই ম’নে ম’নে চাইতো ওদের ফ্রেন্ডশীপ যেনো সারাজীবন থাকে।কিন্তু এইসব নে’কা’মি আর না’টক ছাড়া কিছুই ম’নে হচ্ছে না।

আলভি রে*গে আনিশা ফারিহা আর ইয়ামিনের কাছে গেলো।ওরা দু’ষ্টমি করছিলো আর ফুসকা খাচ্ছিল।ও এসেই আনিশার সামনে দাঁড়িয়ে ওর হাত থেকে টেনে প্লেটটা নিয়ে নেয়।প্লেটটা টেবিলে রেখে আনিশাকে টা’ন মেরে দাঁড় করায়।

হুট করে আনিশার হাত থেকে কেউ প্লেট নেওয়াতে ও অবাক হয়।তারপর আবার টান মেরে দাঁড় করায় ভ*য় পেয়ে আলভির শার্ট শ’ক্ত করে ধরে।ইয়ামিন আর ফারিহাও দাঁড়িয়ে যায়।আলভি রে*গে আনিশার হাত শ’ক্ত করে চে’পে ধরে বলে,,,,
“তোমাকে না মা’না করেছিলাম আসতে এখানে তবুও আসলে তুমি!অনেক সাহস না তোমার আজকে বাসায় গিয়ে তোমার সাহস বের করছি”

আনিশা ব্যা’থা’য় কা’তরা’চ্ছে। ফারিহা বুঝতে পারে।ফারিহা রা*গি ক’ন্ঠেই আলভিকে বলল,,,,
“ওর হাতটা ছে’ড়ে দাও”

আলভিও রে*গে বলে,,,,,”সকালে অনেক বলেছ এখন আমি বলছি শোনো ও আমার বউ ওর সাথে আমি যা খুশি তাই করতে পারি আমার অ’ধি’কার আছে”

ফারিহা বলল,,,,”তুমি ওর সাথে যা খুশি তাই করতে পারো না কারণ ও একটা মানুষ আর ওর স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে। আর তুমি তো ওকে বউ বলে মানো ও না”

আনিশা আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।ও তা দেখে বলে,,,,”আপনারা চুপ করুন প্লিজ সবাই কীভাবে তাকিয়ে আছে।”

ওরা আনিশার কথায় পা’ত্তা না দিলো না।আলভি বলল,,, “আমি আজকে থেকে মেনে নিলাম ও আমার বউ সো ওর উপর এখন অবশ্যই আমি অ’ধি’কার খা’টাতে পারবো আর তুমি কেউ না আমাদের মা’ঝে কথা বলার”

কথাটা বলেই আলভি আনিশাকে টেনে ওখান থেকে নিয়ে যায়।ফারিহা অ’সহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওদের যাওয়ার দিকে।বুকে যে র*ক্ত ক্ষ’রণ হচ্ছে।ইয়ামিন বুঝলো হয়তো তাই বিল দিয়ে ফারিহাকে নিয়ে ওখান থেকে বাসায় চলে গেলো।

১৪.
ওই দিনের পর আজ পনেরো দিন পার হলো।না আলভি আনিশাকে ফারিহার সাথে দেখা করতে দিয়েছে আর না ফারিহা আনিশার কাছে গিছে।ওর যে সেদিনের কথাটা এখনো মা*থায় ঘু’রতে আছে।ফারিহা ভবছে,,,
“আনিশাও হয়তো আলভিকে ভালোবাসে।ওর চো’খ মুখ দেখলেই বোঝা যায়।আচ্ছা আলভিই কি ওর সেই ভালোবাসার মানুষ।”

ফারিহার ভাবনার মা’ঝে ফারিহার মা মিসেস শিরিনা আহমেদ ফারিহার রুমের সামনে এসে বলল,,,,,,
“ফারু মা দরজাটা খোল”

ফারিহা রুমের ভেতর থেকে বলে,,,”মম তুমি যাও আমি আসছি একটু পর”

চলবে,,,,,,,,,?

[আসসালামু আলাইকুম!দুঃখি’ত কালকে গল্প না দেওয়ার জন্য।ব্যা’স্ত থাকার কারণে দিতে পারিনি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here