রোদহীন_বিকালে_তুমি✨ #ইশা_আহমেদ #পর্ব_৮

0
349

#রোদহীন_বিকালে_তুমি✨
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৮

২১.
রাতে খাবার টেবিলে আলভিসহ সবাই উপস্থিত।সবাই বসে হাসি মুখে খাচ্ছে হঠাৎ আলভির বাবা বলে,,,,”আলভি তোমাদের বিয়ে তো বেশ কিছুূদিন হলো তাই ভাবছি তোমদের রিসিপশনটা করে ফেলি।তুমিও তো মনে হয় আনিশা মাকে মেনে নেওয়ার চে*ষ্টা করছো”

আলভির খাওয়া থামিয়ে দিলো।চো’খ মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই তারমনে কি চলছে।আনিশাসহ সবাই তাকিয়ে আছে ওর দিকে উ’ৎসুক দৃ’ষ্টিতে।আলভি হেসে বলে,,,,
“ঠিক আছে বাবাই আমার কোনো স’মস্যা নেই রিসিপশন করতে পারো”

সবাই হাসলো একমাত্র আনিশা বা’দে।ওর কাছে এসব কিছু কেমন অ’ভি’ন’য় অ’ভি’ন’য় ম’নে হচ্ছে।তাও সবার সামনে জো*ড় পূ’র্ব’ক হাসে।সবাই খেয়ে যার যার রুমে চলে যায়।আনিশা রুমে একটু দেরি করেই যায়।রুমে ঢু’কে দেখে আলভি শুয়ে পরেছে।হাত ক’পা’লে ঠে’কিয়ে চো’খ ব’ন্ধ করে শুয়ে আছে।আনিশা লাইট অফ করে সোফায় ঘুমাতে যাবে তখন আলভি বলল,,,,,
“আনিশা তুমি বিছানায় ঘুমাতে পারো”

আনিশা এমনিতেও আলভির ব্যবহারে প্রচন্ড অবাক হয়ে আছে।তার উপর এক বিছানায় ঘুমাতে বলছে।এখন আনিশা একটু একটু বি’শ্বা’স করলো যে আলভি তাকে মেনে নেওয়ার চে*ষ্টা করছে।আনিশা হাসি মুখেই বলল,,, “তার দরকার নেই আমার এখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।”

আলভি ধ’ম’ক দিয়ে বলে,,,,”তোমার কি আমার কথা পছন্দ হয় না বিছানায় এসে ঘুমিয়ে পরো কালকে থেকেই বাসায় মেহমানরা আসতে শুরু করবে ঠিকমতো ঘুমানোর টাইম ও পাবা না আজকে ভালোভাবে ঘুমিয়ে নেও”

আনিশার কথা না বলে আলভি পাশে গিয়ে শুয়ে পরে। আনিশা ভাবছে,আলভি হয়তো সত্যিই আমাকে মে’নে নেওয়ার চে’ষ্টা করছেন।এটাই অনেক আমি তো কোনো দিন সপ্নেও ভাবিনি কোনো দিন এক বিছানায় থাকবো আমার ভালোবাসার মানুষটার সাথে।আনিশা কথাগুলো চি’ন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পরলো। আলভি আনিশার মুখের দিকে তাকিয়ে র’হ’স্যময় হাসি দেয়।আলভি আপন মনে কিছু ভাবতে থাকে।

২২.
সময় বহমান তাই সে নিজের গতিতেই চলে।এক সপ্তাহ চোখের পলকে কেটে গেলো।আজ আনিশা আর আলভির রিসিপশন।আলভিদের বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।বাড়ির ছাদে সবাই মিলে এখন আড্ডা দিচ্ছে।সবাই মানে আনিশা আলভি,আহা ফারিহা ইয়ামিন নাহিন তিশাম নিশান,রোদ আরো কয়েকজন ফ্রেন্ড আছে।আলভির কিছু কাজিন ও আছে।একসাথে আড্ডা দোওয়ার আইডিয়াটা আলভির।

আনিশা এতোদিনে বি’শ্বা’স করে ফেলেছে যে সত্যিই আলভি তাকে মেনে নেওয়া শুরু করেছে।এতে অবশ্য ফারিহার প্রচন্ড ক*ষ্ট হয়েছে।কিন্তু হাসি মুখে সব মেনে নিয়েছে।ফারিহা অবশ্য রোদ কম জ্বা’লা’য়নি এতোদিন।ফারিহা রোদের ব্যবহারে প্রচন্ড বি*র*ক্ত।ইয়ামিন বেচারা এখনো সিঙ্গেলই আছে।আলভি এই ক’দিন আনিশার প্রচুর খেয়াল রেখেছে।আনিশাও যতটা পেরেছে আলভির খেয়াল রাখার চে*ষ্টা করেছে।

সবাই জানে আলভি আর রোদের গানের গ’লা ভালো।তাই ওরা সবাই দু’জনকে গান গাওয়ার জন্য জো*ড় করে।আহা গিটার এনে আলভির হাতে দেয়।আলভি হেসে রোদের দিকে তাকাতেই রোদ গান গাওয়া শুরু করে।

তুমি আমার নয়তো সুখ
তুমি সুখের বেদনা
সব সপ্নের রং হয় না তো
বে’দনা’র মতো নয় রঙা

রোদের গাওয়ার মাঝখানে আলভি গাওয়া শুরু করলো।[লেখিকা ইশা আহমেদ]

আমি জীবনটাকে বলতে চাই
হয়তো দূর বাক্য নয়
সে তো ভালোবাসার কাব্য কয়
আমি কবি নই

তবু কাব্যের,ভাষায় বলব আজ
তুমি বললে আজ দু’জনে
নীল রঙা বৃষ্টিতে ভিজবো
রোদেলা দুপুরে একসাথে

এবার রোদ গাইতে লাগলো।

নতুন সুরে গানে গাইবো
শেষ বিকালের ছায়ায় নীল
আকাশের বুকে আমি
লাল রঙা সপ্ন আঁকব

আমি কবি নই,তবু কাব্যের
ভাষায় বলবো আজ
তোমার হাসির শ্রাবন ঢলে
সপ্ন নিয়ে ভাসতে চাই

তোামর হাসির শ্রাবন ঢ’লে
সপ্ন নিয়ে বাঁচতে চাই।

আলভি আর রোদ দু’জনেই ফারিহার দিকে তাকিয়ে আছে।ফারিহা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আলভি গিটারে সুর তুলে গাইতে লাগলো,,,

তুমি বললে আজ দু’জনে
সাতরঙা প্রজাপতি ধরবো
নোনা বালিচরেতে একসাথে
আকাশের সমুদ্র স্নান দেখবো

গোধূলির আলো আঁধারিতে
উর্মির সাথে দুজনা
নীলের বুকে আজ হা’রা’বো

আমি কবি নই,তবু কাব্যের
ভাষায় বলবো আজ
তোমার হাসির শ্রাবন ঢলে
সপ্ন নিয়ে ভাসতে চাই……

আলভি আর রোদ দু’জনেই ফারিহার দিকে তাকিয়ে গান গাচ্ছিল।আনিশা দেখেছে ক*ষ্ট পেলেও প্রকাশ করেও লাভ নেই।আনিশা জানে আলভি এখনো ফারিহাকেই ভালোবাসে হয়তো তাকে মেনে নেওয়ার চে*ষ্টা করছে কিন্তু ভালো তো বাসে ফারিহাকে। আনিশা সবার আড়ালে নিজের চোখের পানি মুছলো।সবাই রোদ আর আলভির গানের প্রশংসা করলো।

হুট করে ইয়ামিন বলল,,,,”আমাদের আনিশাও তো খুব ভালো গান গায়”

ইয়ামিনের কথায় রোদ বলল,,,”তাই নাকি ভাবি আমরাও তাহলে আপনার গলায় একটা গান শুনতে চাই”

আনিশা ইয়ামিনের দিকে রা*গি দৃ’ষ্টিতে তাকালো।ইয়ামিন বোকা বোকা হাসলো।আলভিও বলল,,,,”ওরা যখন বলছে একটা গান গাও”

আনিশা আ’ম’তা আ’ম’তা করে বলল,,,”ঠিক আছে কিন্তু বেশি গাইবো না”আনিশা আলভির দিকে তাকিয়েই গাইতে লাগলো।

তোমাকে ছো’য়ার নেই তো আমার সা’ধ্য
দেখতে পাওয়া সেই তো বড় ভাগ্য
ম’নটা অ’বাধ্য হচ্ছে প্রায়শ
ক*ষ্টের বোঝা বেড়েই যাচ্ছে ক্র’মশ,,,,,

আনিশা গানটা গেয়েই দৌড়ে ওখান থেকে চলে যায়।কা’ন্নাগুলো দলা পাকিয়ে বের হয়ে আসছিলো তাই রুমে এসে দরজা আটকে কাঁদতে লাগলো।ওরা সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।ফারিহা আর ইয়ামিন বুঝতে পেরেছে।ফারিহাও উঠে গেলো ইয়ামিনও ফারিহার পেছন পেছন চলে গেলো।আহাও চলে গেলো ও একা একা কি করবে ভেবে চলে গিয়েছে।

ওরা চলে যেতেই রোদ বলল,,,,”ভাবি যাওয়ার পর এরা সবাই চলে গেলো কেনো!যাই বলিস না কেনো ভাবির গলাটা কিন্তু অনেক সুন্দর”

আলভির রোদের কথা কানে ঢু’কছে না ও তো আনিশা আর ফারিহার ভাবনায় ম’গ্ন।রোদ আলভিকে অ’ন্য’ম’নষ্ক দেখে বলল,,,,
“কিরে আলভি ভাবি হঠাৎ যাওয়াতে চি’ন্তিত হলি চিন্তা করিস না হয়তো ভালো লাগছে না তাই চলে গিয়েছে।”

রোদের কথায় আলভি বলে,,,”হ্যা হয়তো বা’দ দে চল গল্প করি”

ওরা যার যার মতো গল্প করে যাচ্ছে।ফারিহা আসতে চাইনি কিন্তু আনিশার কথায় আসলো।আনিশাও জানে ফারিহার ম’নের অবস্থা কিন্তু আলভি আর মিসেস নাফিয়ার জো*ড় করাতে বলতে বা’ধ্য হয়েছে।ফারিহা আজকে আহার সাথে থাকবে। বাড়িতে অনেক লোকজন থাকায় ফারিহার আহার সাথে থাকতে হচ্ছে।

ইয়ামিন আহার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আহা নিজের রুমের সামনে ইয়ামিনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,,,
“ভাইয়া আপনার কি কিছু লাগবে”

ইয়ামিন জো*ড় পূ’র্বক হেসে বলল,,,,”না না কিছুই লাগবে না আমি ফারিহাকে একটু দেখতে এসেছিলাম ওকে আমি যাই”

আহাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায় ইয়ামিন।আহা হা করে তাকিয়ে থাকে।আনিশা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে।

২২.
সবাই ভী’ষ’ন ব্য’স্ত রিসিপশনের কাজে।আনিশাকে সাজাচ্ছে পার্লারের মেয়েরা।আনিশা পু’তু’ল হয়ে বসে আছে।কালকে রাতের পর থেকে ম’ন ভালো নেই তার।নিজের স্বামীর চো’খে অ’ন্যকারো জন্য ভালোবাসা কোনো মেয়েই স*য্য করতে পারে না।আনিশাও পারছে না।

সাজানো শেষে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ছাদে।আলভি সেখানে দাঁড়িয়ে তার ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলো।আনিশার চোখ আ’টকে যায় তার প্রিয় মানুষটার দিকে।
আলভিও তাকায় আনিশার দিকে।আনিশা লা*ল রঙের লেহেঙ্গা পরা।আলভিও ওর সাথে মেচিং করে শেরওয়ানি পরা লা*ল রঙের।একবার তাকিয়ে চো’খ ফিরিয়ে নেয়।আহা আর ফারিহা আনিশাকে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
ফারিহার আলভির উপর চোখ আটকে আছে।সে তাকাতে চাইছে না কিন্তু বেহায়া মন তো মানতে চায় না।আলভিও ফারিহার দিকে তাকায়।

চলবে,,,,?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here