#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_১২
_________________
-“হ্যাঁ অবশ্যই!তুমি চাইলে শিখতে পারো।”
-“না থাক।এতো ভালো জিনিস আমার শিখতে হবে না।”
মেহরিন চলে যেতে গেলে শেহরেয়ার তার হাত টেনে ধরলো।মেহরিন পিছনে ফিরে তাকালো।
-“এতো পারফেক্ট বরকে কেউ এই রাতের বেলা একা রাস্তায় রেখে চলে যায়!মেয়েরা কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবে তো!”
মেহরিন মুচকি হেসে শেহরেয়ারের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
-“নিজের প্রশংসা কি এখন নিজেই করবে?”
শেহরেয়ার মুখটা মলিন করে পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো,
-“বউ যদি প্রশংসা না করে তাহলে তো নিজেরই করা লাগবে।”
শেহরেয়ারের কথায় মেহরিন হেসে বললো,
-“তুমি পারোও বটে।”
হামিদ এসে বললো,
-“বাহ্ দুজনে তো বেশ ভালোই প্রেম করছিস।”
শেহরেয়ার নিশ্বাস ফেলে বললো,
-“আর তুই এখন কাবাব ম্যায় হাড্ডি হতে চলে এসেছিস।”
মেহরিন ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“আরে হামিদ ভাই ওর কথা বাদ দেন।বাকিরা কোথায়?
-“সবাই আসতেছে।”
মেহরিন কিছু বলার আগে মুনিয়া রায়ানকে কোলে করে নিয়ে এসে বললো,
-“আপু রায়ু ঘুমিয়ে গেছে।আমি ও-কে নিয়ে গাড়িতে উঠলাম।”
শেহমীর মির্জা বললেন,
-“হ্যাঁ এখন গাড়ি আবার স্টার্ট করো!”
সকাল ছয়টায় সবাই গিয়ে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালো।কি সুন্দর প্রকৃতি!বিভিন্ন ধরনের বর্ণিল ফুলে ফলে ভরে আছে গ্রাম।কয়েকটি বাহারি ফুল তার মধ্যে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, জারুল, গন্ধরাজ, সোনালু, স্বর্ণচাপা, উদয়পদ্ম, গুলাচি ইত্যাদি।তবে টকটকে লাল রক্তবর্ণ কৃষ্ণচূড়ার মত মাঝে মাঝে হলুদ রঙের কৃষ্ণচূড়াও দেখা যাচ্ছে।পাখির কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে!সবুজ-শ্যামল মাঠ।সব মিলিয়ে এক অসাধারণ দৃশ্য!
বাড়ির গেট দিয়ে গাড়ি ঢুকতে মেহরিন অবাক হয়ে গেল।চারিপাশে গাছপালা!কি সুন্দর ফুলের বাগান দুই পাশে।গাছপালায় ঘেরা একটা বাংলো বাড়ি।বাড়িটা বেশ পুরনো হলেও বেশ চাকচিক্যময়!
মুনিয়া গাড়ি থেকে নেমে বললো,
-“ওয়াও!কি সুন্দর বাড়ি।”
মেহরিন এসে মুনিয়ার কাঁধে হাত দিয়ে বললো,
-“আসলেই রে!বাড়িটা অনেক সুন্দর।”
বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে হৈচৈ শুরু হয়ে গেল।শাহিন মির্জা মুখে হাসির রেখা টেনে বললেন,
-“কেমন আছো বড় ভাই?”
শেহমীর মির্জা গিয়ে শাহিন মির্জাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
-“ভালো আছি ভাই।তুই কেমন আছিস?”
-“আমিও ভালোই আছি।”
শাহিন মির্জার স্ত্রী মাসুমা বেগম সবার জন্য শরবত নিয়ে আসলেন।হেনা সাহেবা বললেন,
-“তুমি আমাকে ডাকতে পারতে তো মাসুমা!”
-“থাক ভাবি আপনার আর কষ্ট করতে হবে না।”
শেহরেয়ার’ মেহরিন আর মুনিয়াকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।মেহরিন বাড়ির বড়দের সালাম করলো।মাসুমা বেগম মেহরিনের গালে হাত দিয়ে বললেন,
-“বাহ্ আমাদের বউমা তো খুব মিষ্টি দেখতে!”
মুনিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“তার বোনটাও বেশ সুন্দরী!”
রায়ানকে দেখে শাহিন মির্জা তাকে কোলে নিয়ে বললেন,
-“আর এ হলো আমাদের নাতি!তাই-না বড় ভাই?”
-“হ্যাঁ।”
শেহরেয়ার নিচু স্বরে শেহমীর মির্জাকে বললো,
-“বাবা’ কাকারা কি সবটা জানে?”
-“হুম আমি জানিয়েছি।”
হঠাৎ করে শুভ এসে শেহরেয়ারকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“ভাইয়া কেমন আছিস তুই?কতোদিন পরে দেখলাম!”
-“আমি তো ভালোই ছিলাম।তা তুই এতোক্ষণ কোথায় ছিলি?”
-“আর বলো না!আম্মু আমাকে সেই বাজারে পাঠিয়েছিল।এইসব বাদ দেও।আগে ভাবির সাথে পরিচয় করাও।”
শেহরেয়ার শুভকে নিয়ে মেহরিনের সামনে দাঁড়া করিয়ে বললো,
-“এই যে তোর ভাবি!”
শুভ হাসি দিয়ে বললো,
-“ভাইয়া তোমার পছন্দ কিন্তু একশো তে একশো!”
শুভর কথায় বাড়ির সবাই হেসে দিল।শেহরেয়ার শুভর মাথায় একটা চাটি মারলো।শুভ মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
-“ভাবি আমি কিন্তু তোমার একমাত্র দেবর!”
মেহরিন হাসি দিয়ে বললো,
-“তা তো দেখতেই পারতেছি।”
শুভ মুনিয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
-“ইনি কে?”
মেহরিন মুনিয়ার কাঁধে হাত দিয়ে বললো,
-“ও মুনিয়া!আমার ছোট বোন।”
-“ওহ্ আচ্ছা।মুনিয়া পাখি!”
মুনিয়া ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
-“মুনিয়া পাখি না।অনলি মুনিয়া!”
দুরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে হামিদ।তার প্রচুর রাগ হচ্ছে!কিন্তু সে কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাচ্ছে না।তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
____________________
সকালে নাস্তা করার পরে শেহমীর মির্জা আর শাহিন মির্জা’ সেতারা বেগমকে সাথে করে নিয়ে জমির সমস্যা ঠিক করতে গেলেন।মেয়ে সদস্যরা রান্নাঘরে রান্না করছে।আর ছেলেরা বসে আড্ডা দিচ্ছে!
-“তা হামিদ ভাইয়া তোমার কি খবর?”
শুভর কথায় মৃদু হেসে হামিদ বললো,
-“এতোদিন তো ভালোই ছিল।তবে এখন মনে হয় আর ভালো থাকবে না!”
শেহরেয়ার ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“কেনো রে তোর আবার কি হলো?”
হামিদ শুভর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“মনে হচ্ছে আমার প্রতিপক্ষ চলে এসেছে।’
শেহরেয়ার অবাক হয়ে বললো,
-“তোর আবার কিসের প্রতিপক্ষ?”
হামিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“আরে বাদ দে এইসব।”
মুনিয়া এসে তাদেরকে চা দিল।যা দেখে শুভ বললো,
-“আরে আপনি মেহমান!আপনি কেনো এইসব করছেন?”
মুনিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“মেহমান হলে কি এইসব করা যায় না?”
শুভ কিছু বলার আগে হামিদ বললো,
-“হ্যাঁ করা যায়।তুমি যা করতে ছিলে তা করো গিয়ে!”
মুনিয়া হামিদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেল।
__________________
বিকেলবেলা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে মেহরিন।শেহরেয়ার এসে তার পাশে দাঁড়ালো।শেহরেয়ারকে দেখে হাসি দিয়ে মেহরিন বললো,
-“বৃষ্টি হওয়ার আগমুহূর্তে আকাশটা কি সুন্দর লাগে তাই-না?”
শেহরেয়ার মেহরিনের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
-“হ্যাঁ একদম তোমার মতো।”
মেহরিন শেহরেয়ারের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আবার আকাশের দিকে তাকালো।শেহরেয়ার মেহরিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।তারপরে মেহরিনের কিছুটা কাছে গিয়ে তার হাত জোড়া ধরে চোখে চোখ রেখে বললো,
-“❐- তুমি এক টুকরো বিচ্ছিন্ন আকাশের মতো, শুভ্র মেঘের আস্তরণ ধারণ করে রয়েছো আমার চোখে|আমার সাথে না থাকলেও,আমার দুচোখ বন্ধ করলেই আমি দেখতে পাই তোমাকে!”
মেহরিন কিছুক্ষণ চুপ করে শেহরেয়ারের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
“দরজা খোলা আছে।কেউ চলে আসতে পারে।দূরে সরো!”
-“কেউ আসবে না!”
-“আরে আপু সবাই নিচে আড্ডা দিচ্ছে আর তোরা দুজনে রুমে………….”
এটুকু বলে মুনিয়া থেমে গেল।শেহরেয়ার তাড়াতাড়ি করে মেহরিনের থেকে দূরে সরে গেল।মুনিয়া শয়তানি হাসি দিয়ে এগিয়ে এসে বললো,
-“ওপ্স সরি!এতো রোমান্টিক মুহুর্তটা নষ্ট করে ফেললাম।”
মেহরিন মুনিয়ার কান টেনে ধরে বললো,
-“বেশি পেকে গেছিস তুই!”
-“আপু লাগছে তো।”
-“মেহরিন ছেড়ে দেও।আমার শালিকার ব্যথা লাগছে তো!”
শেহরেয়ারের কথায় মেহরিন মুনিয়ার কান ছেড়ে দিল।মুনিয়া দাঁড়িয়ে কানে হাত বুলাচ্ছে।
-“তোর ভাইয়া বললো বলে ছেড়ে দিলাম!”
মুনিয়া মুচকি হেসে বললো,
-“আহা!কি প্রেম!”
মেহরিন যেই মুনিয়াকে মার*তে যাবে তার আগেই সে দৌড় দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।দৌড়াতে দৌড়াতে উচ্চস্বরে বললো,
-“সবাই ওয়েট করতেছে তোমাদের জন্য।”
মেহরিন হাসি দিয়ে রুম থেকে বের হতে যাবে শেহরেয়ার তার হাত টেনে ধরলো।মেহরিন পিছনে ঘুরে বললো,
-“কি হয়েছে?”
-“তোমার এই মুখখানা আমার হৃদয়ের ফ্রেমে বন্দী হয়ে গেছে।সারাদিন শুধু দেখতেই মন চায়!”
মেহরিন মৃদু হেসে শেহরেয়ারের হাত ছাড়িয়ে চলে গেল।শেহরেয়ারও তার পিছু পিছু গেল!
#চলবে____
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]