অবাধ্য_বাঁধনে #পলি_আনান [পর্ব সংখ্যা ৪০ক]

0
366

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৪০ক]
____________________
” আমার কোন মেয়ে নেই।আমার কোন মেয়ে ছিল না।”

তীব্র অভিমান এবং রাগ নিয়ে কথাটি বললেন অনুর বাবা বেলায়েত।দোলন ঝাপসা চোখে তাকালেন বেলায়াতের দিকে নিজের স্বামীর জেদ সম্পর্কে তিনি অবগত যখন একবার বেলায়াত অনুকে বের করেছে তখন কোন মতে এই মেয়েকে বাড়িতে তুলবে না।তিনি আগেই সন্দেহ করেছিলেন অনুর কোথাও কোন সম্পর্ক আছে সবচেয়ে বড় কথা যখন আঁচ করতে পেরেছেন রাসেলের সঙ্গে মেয়েটার কিছু চলছে তখনি স্বামীকে সতর্ক করলেন।ভালো ঘর দেখে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।কিন্তু তার আগেই তাদের সব জল্পনা কল্পনায় ভাটা পড়লো।

” এ যে আপনার রাগের কথা তা আমি বুঝতে পারছি।আমাদের ছেলে কি আপনার মেয়ের জন্য যোগ্য নয়?সবচেয়ে বড় কথা তারা দুজন দুজনকে পছন্দ করেছে তারা তাদের ভালো বুঝেছে এর মাঝে…”

” আমার মেয়ে কোন খেলনা চেয়ে বায়না করেনি যে তাকে আমি সঙ্গে সঙ্গে এনে দেবো এটা তার সারাটা জীবনের প্রশ্ন।মাফ করবেন আমি আপনাদের সাথে আত্মীয়তা করতে চাই না। ”

মাহমুদা মাথা নোয়ালেন ঈশানের দিকে তাকালেন আড় চোখে।ছেলেটা কেমন শক্ত মুখ করে তাকিয়ে আছে সম্মুখে থাকা মানুষগুলোর দিকে।

” আমাদের পরিবার আমাদের ছেলের একটা কারণ দেখান যা আপনার মেয়ের অযোগ্য।”

” রাসেল ছেলেটা কী আপনার নিজের সন্তান?সে তো আপনার নিজের সন্তান নয়।আদৌ তার জন্ম পরিচয় ঠিক আছে নাকি….”

” হয়েছে।অনেক হয়েছে এবার দয়া করে চুপ করুন আঙ্কেল।”

ঈশানের অনুরোধে থমকে গেলেন বেলায়েত।রাগে ক্রমশ ফুঁসছে ঈশান।রাসেলকে নিয়ে কেউ কোন কথা বললেই চামড়ায় জ্বলন ধরে ঈশানের, সেখানে তার জন্ম পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছে!ঈশান দাঁড়িয়ে পড়লো কিঞ্চিৎ হেসে সবার উদ্দেশ্যে বলে,

” সময় দিলাম চব্বিশ ঘণ্টা। ঠিক শেষ সময়ে আপনাদের মতামত চাইবো আশা করি এই মতামত ইতিবাচক হবে আর হতেই হবে।”
১০৩.
মায়ের কোলে মাথা রেখে নিশ্চুপ শুয়ে আছে ঈশা।সুলতানা খুটিয়ে খুটিয়ে মেয়েকে দেখছেন হাতে পায়ের ব্যান্ডেজগুলোর দিকে তাকালে কলিজায় মোচড় দেয়।দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে অনুর চুলে হাত বুলিয়ে তিনি বলেন,

” ঈশু মাকে সত্যি কথা বলবি?”

“বলো।”

” ঈশান ভালো তো?তুই সুখে আছিস তো?”

” হ্যাঁ ভালো।ওই বাড়ির প্রত্যকটা মানুষ ভালো শুধু ঈশানের ফুফু ছাড়া।”

” ফ..ফুফু কেন তিনি ভালো নন?”

” কথায় কথায় আমাকে বিভিন্ন ভাবে অপমান করেন।আর ঈশান কি করে করে জানো?পালটা অপমান করে দেয় উনাকে।ঈশান সারাক্ষণ আমায় তার চোখে চোখে রাখে।”

” কেন রাখে তুই বুঝিস না?নিশ্চয়ই ঈশানের কু-কর্ম নিয়ে কিছু বলে কি না সেই জন্য তোকে চোখে চোখে রাতে।”

” কু-কর্ম?ঈশানের ব্যপারে আমার সব জানা আর ওর কাজিনকে রেপ করার বিষটি মিথ্যা আম্মু।লিজা নিজে আমাকে তার সম্পর্ক বলে।যা যা বলে এসব শুনলে তোমার গা গুলিয়ে উঠবে।”

” মা আমার মন ভালো সায় দিচ্ছে না।তুই বরং নিজের জীবনটাকে আলাদা সাজিয়ে নে।”

” আলাদা সাজাবো?কি বলতে চাও তুমি?এসব আমার শুনতে ভালো লাগছে না আমি গেলাম।”

ঈশা পা খুড়িয়ে চলে গেলো নিজের রুমে।ঈশান ল্যাপটপ হাতে বসে বসে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে।অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ কিনা ঈশা জানে না তবে ছেলেটার মুখের ভাব ভঙ্গিমা দেখে মনে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে।

” আপনি কী ব্যস্ত?”

” না গো কাছে আসো।মুড খারাপ হয়ে গেছে নাকি?আন্টি কিছু বলেছে?”

ঈশা নীরবে ঈশানের পাশে বসলো।হাতের ল্যাপটপটা দূরে সরালো ঈশান।ঈশাকে টেনে নিলো আরো কাছে।

” পায়ে ব্যথা করছে?”

” না।”

” অনু কোথায়?”

” ফোনে কার সাথে যেন ঝগড়া করছে নিশ্চয়ই রাসেল ভাইয়ার সাথে।”

” ফাদার ইন ল আজ কি করেছে জানো?অয়নকে ইচ্ছা মতো শাসিয়ে এসেছে।আমি তার সাথেই ছিলাম তবে নীরব দর্শক হয়ে।আশা করছি আর সাহস করবে না তাছাড়া আমি তো আছি।”

ঈশা চুপচাপ তাকিয়ে রইলো ব্যান্ডেজ করা পায়ের দিয়ে।ঈশান তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে এই মুহূর্তে আর কথা বলার ইচ্ছে শক্তি নেই নিগূঢ় নিশ্চুপ অনুভব করাই শ্রেয়।আচমকা নড়ে চড়ে উঠলো ঈশান ঈশার হাত চেপে বলে,

” আজ একটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটেছে তোমার চাচাজান আমার অফিসে এসেছে কেন জানো?”

” কেন?”

” টাকার জন্য।”

” দিয়েছেন?”

” পা গ ল নাকি?তোমার বাবাকে সাক্ষি রেখে আশি লক্ষ টাকা মেরে দিয়েছিল সেদিনের কথাগুলো তো ভুলে যাওনি।তোমার চাচার সাথে আমার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল আমরা একে অপরের পার্টনার ছিলাম।তোমার চাচা একটু বেশি অহংকারি মানুষ ছিলেন টাকাকে গাছের পাতার মতো উড়িয়েছেন।যখন ব্যবসায় ধরা খেল তখন আমাকে বলল পর্যাপ্ত টাকা দিতে সে নাকি ঘুরে দাঁড়াবেই আর আমার টাকাও শোধ করবে।প্রচন্ড বিশ্বাস করতাম তাকে তাই তো নিঃসন্দেহ এতগুলো টাকা দিয়েছিলাম।উনি তো আমার টাকা ফিরিয়ে দিলেনি না বরং পালিয়ে গেলেন।জানো আমি সেই দিনগুলো কতটা জটিলতায় কাটিয়েছি?ব্যাংক লোন সহ অনন্য দেনায় আমি তো দেউলিয়া হওয়ার পথে ছিলাম তোমার চাচাকেও খুঁজে পাইনি তাই বাধ্য হয়ে তোমার বাবাকে ধরেছি।”

“চাচার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।রাখতেও চাই না অহংকারে মাটিতে পা পড়েনা তার।”

” আমি তাকে অফিসে দেখেই মিষ্টির অর্ডার বললাম।বেশ আরাম করে মিষ্টি খাইয়ে শেষে প্রকাশ করলাম তোমার আমার বিয়ের কথা।যদি এমন একটা গন্ডোগোল না হতো তোমায় আমি পেতাম?”

ঈশান চট করে চুমু খেলো ঈশার গালে ঈশা হাসলো নিঃশব্দে।

“ঈশা আমাদের বিয়ের কথা শুনে তার মুখটা শুকিয়ে এইটুকুনি হয়ে গেছে।”

” আমার অনুর জন্য চিন্তা হচ্ছে মেয়েটার জীবনে এভাবে বিপদ বয়ে এলো।”

” তুমি এই নিয়ে কোন চিন্তাই করবে না।অনুর ভাইয়ের সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছে সে বলেছে ব্যপারটা দেখছে আর যদি সে রাজি করতে না পারে তবে আঙুলটা বাঁকাতে হবে।”

” কী করবে তুমি?”

” অনুর ভাইয়ের কর্মক্ষেত্রে একটু সুতা নেড়ে দেবো তারপর দেখবে অনুর বাবা তো দূরের কথা তার পুরো বংশ সোজা হয়ে যাবে।উনারা অহেতুক জেদ ধরে বসে আছেন।তাদের একটাই জেদ অনুর পছন্দ করা কোন ছেলেকে জামাই হিসেবে মেনে নেবেন না।”

১০৪.
সময়টা চোখের পলকে পেরিয়ে গেলো।এই সময়টুকু কার জন্য কেমন ছিল অনুর জানা নেই তবে তার কাছে যুদ্ধের ময়দানের চেয়েও কম মনে হয়নি।প্রায় চারদিন কসরতের পর অনুর পরিবার রাজি হয়েছে রাসেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে।অনু ফিরে গেছে তাদের বাড়ি তবে কেউ তার সঙ্গে আগ বাড়িয়ে একটা কথাও বলছে না।যতটুকু কথা বলার অনুর চাচী এসে বলছেন।আজ মেয়েটার গায়ে হলুদ।মাহমুদার ইচ্ছে ছিল দুই ছেলের একসাথে বড় করে বিয়ের আয়োজন করবেন তবে তা আর হলো কই?অনুর পরিবারের অনিচ্ছায় কোন কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।তবুও ছেলের কথা স্বল্প আয়োজনে মেয়ে বিদায় করছেন বেলায়েত।হলুদের অনুষ্ঠান করা হয়েছে অনুদের ফ্লাটের ছাদে।হলুদ শাড়ি পড়ে মুখটা ছোট করে বসে আছে অনু।তার কাজিন সদস্যরা এটা ওটা বলে হাসানোর চেষ্টা করছে তবে তার মুখে রা নেই।ঈশা পড়েছে ফ্যাসাদে, একদিকে দেওরের বিয়ে অন্যদিকে একমাত্র প্রিয় বন্ধুর বিয়ে কোন দিকে যাবে সে?হলুদ পাঞ্জাবি পরনে হাতা গুটিয়ে ঈশার সামনে দাঁড়ালো দিহান।অনুর শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে ঈশাকে বলে,

” এই বাদরটা সারাদিন দাঁত কেলিয়ে থাকে আজ মুখে স্কচটেপ মেরেছে কেন?”

” তুই জানিস না তার মনের অবস্থা?”

” রাখ তো।বাঙালি বাবাগুলার এই এক দোষ কখনো ছেলে মেয়ে পছন্দ করা পাত্র পাত্রী তারা মানতে চায় না।কেন চায় না এই সাইন্স বোধহয় আদৌ আবিষ্কার হয়নি।এই অনু আগে পরে যা হবার হবে এখন এঞ্জয় কর।বিয়ে একবারি করছিস অনুষ্ঠানো একবারি হবে বুঝলি?”

দিহানের কথা শুনে অনু হেসে ফেললো।সত্যি সত্যি তার এখন ভালো লাগছে মনে হচ্ছে মনের কোণে সাহস সঞ্চয় হয়েছে।ঈশা আগাগোড়া পরখ করলো দিহানকে দিহানের হাত টেনে সে বলে,

” বিশ্বাস কর তোকে এত সুন্দর লাগছে যদি অবিবাহিত হতাম এক্ষুনি তোকে বিয়ে করে ফেলতাম।”

” তো এখন কর কে কী বারাণ করেছে?অবশ্য তোর জামাই যা চিজ আমার হাড্ডিগুড্ডি কোন দেশে পা চা র করবে সে নিজেও ধারণা করতে পারবে না।মাফ কর তোকে বিয়ে করার স্বাদ নেই।”
.

” তোর মাথা ঠিক আছে?আমাকে সং সাজাতে উঠে পড়ে লেগেছিস কেন?”

“তোকে বোরকাটা পরতে বলেছি পর।এক্ষুনি পরবি।”

ঈশানের নির্দেশে বোরকাটি হাতে তুলে নিলো রাসেল।আজ ছেলেদের বাড়ির সবার পোশাকের রঙ নির্ধারিত হয়েছে সবুজ অপরদিকে মেয়ে পক্ষের হলুদ।সেই হিসেবে রুমা রাসেলকে একটি সবুজ রঙের বোরকা এনে দেয় পড়ার জন্য আর এর মূল উদ্দেশ্য হলো গায়ে হলুদে রাসেলকে তারা নিয়ে যাবে সবার আড়ালে।এতক্ষণ যাবৎ ঈশান রাসেলকে এই বোরকাটি পরাতে জোর কসরত করছে কিন্তু রাসেল এতে কিছুতেই সাড়া দিচ্ছে না।

” ঈশান দয়া কর আমার ইজ্জত ফালুদা করিস না।আমি বোরকা পরতে পারবো না।”

” তোর বিয়ে ক্যান্সেল করে দিবো।পর এক্ষুনি বোরকা পর।অবশ্য তুই যে খাম্বা জাতি বুঝে ফেলবে বোরকার আড়ালে এটা আস্ত একটা ব্যাটা মানুষ।”

” তাই তো বলছি পরবো না।”

” না তুই পরবি তোকে পরতেই হবে।”
.

বর যাত্রী থেকে খুব একটা বেশি মানুষজন আসেনি।যেহেতু বিয়ের আয়োজন ঘরোয়া হচ্ছে তাই পরিবারে কাছের সদস্যরাই এসেছে।অতিথি আসতে দিহান কাজে লেগে গেলো ঈশান ঈশাকে পেয়ে হাত টেনে নিয়ে যায় ছাদের এক কোণে।

” এত সুন্দর লাগছে কেন?আল্লাহ আমি শেষ।”

” এখন প্রেম প্রেম পেয়ে লাভ নেই চলুন স্টেজের দিকটা সামলাই।”

” না একটা দিব বেশি না।প্লিজ একটা দি?”

” দিয়ে কোন লাভ নেই যে পরিমানে মেকাপ লাগিয়েছি আপনার সাংঘাতিক লেভেলের চুমুতে আমার সব মেকাপ কেকের মতো গলে যাবে।ছাড়ুন এক্ষুনি আমার হাত ছাড়ুন।

বাধ্য হয়ে ঈশান ছেলে দিলো ঈশার হাত।ঈশা এক ছুটে চলে গেলো স্টেজের সামনে।রুমার পাশে বোরকা পরা একটি মেয়েকে দেখে ভ্রু যুগল কুচকে গেলো ঈশার।

” রুমাপু উনি কে?”

” আ..আমার খালা শ্বাশুড়ি।”

রসগোল্লার ন্যায় বড় বড় চোখ করে পর্দার আড়ালে তাকালো রাসেল।রেদোয়ান তার পাশে বসে ঠোঁট চেপে হাসছে।রাসেলকে আগাগোড়া সম্পূর্ণ ঢেকে দিয়েছে তার চোখ দুটোও নিকাবের সাহায্যে ঢাকা আর তাই তো তাকে চিনতে পারলো না ঈশা।আজকের হলুদ অনুষ্ঠানে লিপি আসেনি তবে লিজা একটি লেহেঙ্গা পরে এসেছে এতদিন ওয়েস্টার্ন পোশাকে দেখলেও আজ মেয়েটাকে একটু সাজসোজ্জায় দেখে চমকে গেল ঈশা।মন্দ লাগছে না বরং নজর কাড়া সুন্দর লাগছে!

” তোমাকে সুন্দর লাগছে লিজা আপু।”

” থ্যাংস।তোমাদের এদিকে ছেলেগুলো কেমন যেন।”

ভ্রু কুচকে এলো ঈশার।সন্দিহান কণ্ঠে লিজাকে বলে,

” কেমন?”

” বুঝবে না তুমি, যাও।”

ঈশা চলে গেলো।অনুকে একে একে সবাই হলুদ ছোঁয়ালো বাকি রইলো রাসেল।রুমা তাকেও পাঠালো অনুকে হলুর ছোঁয়াতে।রাসেলের উচ্চতায় সকলের মনে সন্দেহের বাতি জ্বলে যায় যতই হোক গঠন রীতির দিক থেকে তাকে আলাদা সনাক্ত করাই যায়।অনুর পাশে চেপে বসলো রাসেল।মোজা পরা হাতে একটু হলুদ তুলে ছুঁয়ে দিলো অনুর গালে।দিহানের মনে সন্দেহ জাগলো সে চুপিচুপি রাসেলের পাশে গিয়ে নিকাব টেনে ধরতেই রাসেল চিল্লিয়ে বলে,”টানে কে রে?” তৎক্ষনাৎ হা হয়ে গেল অনুর মুখ।আশেপাশে সবাই তাজ্জব বনে তাকিয়ে রইলো।দিহানের সন্দেহটাই ঠিক ছিল বোরকা পরা ব্যক্তিটি রাসেল। তাই তো সে দেরি করলো না একে একে টেনে খুললো সব।অনু আবাকের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে মাথায় হাত দিয়ে রাসেলের দিকে চোখ পাঁকিয়ে সে বলে,

” লাজ লজ্জার মাথা খেয়েছো?”

” আমি এসব করিনি ঈশান আর রুমা আপু বাধ্য করেছে।”

১০৫.
কক্ষের দ্বার রুদ্ধ করে অনেকক্ষণ যাবৎ ফোনে ঝগড়া করে যাচ্ছে লিজা।ফোনের অপর পাশের ব্যক্তিটি নিশ্চয়ই কোন ভীনদেশি।বাংলা ছেড়ে ইংরেজিতে তালে তাল মিলিয়ে ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিটির সাথে বোঝাপড়া করছে সে তবে প্রতিবার ব্যর্থ মেয়েটা।তার ব্যর্থার প্রমাণ দিচ্ছে লিজার মুখের অঙ্গভঙ্গি।

” সিড বাড়াবাড়ি করো না।তুমি আমায় ভুল বুঝছো।”

” কিসের ভুল?অলরেডি তিনজন ছেলের সাথে তোমার ছবি পেয়েছি।প্রতিটা আপত্তিকর ছবি ছিল।তুমি আমায় ঠকিয়েছো লিজা।এর মূল্য তোমায় দিতেই হবে।”

” সিড আমায় বিশ্বাস করো একটু বিশ্বাস করো আমি সত্যি তোমায় ভালোবাসি।”

” আমিও বাসি আমি আমার কাজকে,পরিবারকে ভালোবাসি তারপর ভালোবেসেছিলাম তোমায়।জীবনে অনেকটা গুরুত্ব দিয়েছি তোমায় কিন্তু দিন শেষে এভাবে ঠকালে।”

” তুমি জানতে আমার বয়ফ্রেন্ড ছিল কিন্তু এখন এসব উঠছে কেন?”

” উঠছে কারণ….”

অতি দ্রুত ফোন কাটলো লিজা।দ্রুত ফোনটা ছুড়লো বিছানায়।অনন্য বয়ফ্রেন্ডের চেয়েও সিডের প্রতি লিজার মায়া প্রখর।চলমান কয়েকজনের সাথে এখন আর সম্পর্ক রাখার ইচ্ছে নেই আপাতত সিড হলেই তার চলবে।কিন্তু এই ছেলেটা মাঝ পথে এসে ঝামেলার সৃষ্টি করলো!বেশি বাড়াবাড়ি করলে একেও রাখা যাবে না।যত দ্রুত সম্ভব এই দেশ ছাড়তে হবে এখানে বড্ড দম বন্ধ লাগে লিজার।

করাঘাতে ধ্যান ভাঙলো লিজার।দ্রুত নিজেকে পরিপাটি করে দরজা খুলতে দেখতে পেলো আবিদ শাহরিয়ারকে।

” কিছু বলবে মামা?”

” হুম।”

” ভেতরে আসো।”

আবিদ চুপচাপ প্রবেশ করলেন কক্ষে।লিজা দ্বাররুদ্ধ করে দাঁড়ালো তার মামার মুখোমুখি।আবিদ শাহরিয়ার এক পলক লিজার দিকে তাকিয়ে বলেন,

” আমার ছোট ছেলের বিয়েটাও সম্পূর্ণ হবে।রইলে বাকি তুমি এবার পছন্দ মতো ছেলে দেখে বিয়ে করে নেওয়া উত্তম।অন্তত লিপি যেন আমাকে আজীবন খোঁটা দিতে না পারে তার মেয়েকে বানের জলে ভাসিয়ে দিয়েছি। আমি আমার ছেলের চেয়েও তোমায় বিশ্বাস করেছিলাম লিজা, তোমাকে বিশ্বাস করে আমি ঠকে গেলাম।আমার ছেলেটা এত বছর রইলো দূরে দূরে সত্যিটা যদি তোমার জানানোর হতো এত বছরেও জানালে না কেন?”

” ঈশানের সংসারে আমি ঝামেলা চাই না।সবচেয়ে বড় কথা আমি ঈশানকেই চাই না।মমের জেদ ঈশানের সংসারে ঝামেলা পাঁকাবে কিন্তু এসব থামা জরুরি।আমি আগেই বলতে চেয়েছি সত্যটা মমের কারণে বলতে পারিনি।তিনি প্রতি বার আমাকে আ ত্ম হ ত্যা র হুমকি দেন।”

” জানো আমার মন কি চাইছে?তোমাদের দুটো চড় লাগিয়ে বের করতে মন চাইছে।খবরদার লিজা আমার ছেলেদের সংসারে যেন কোন অশান্তি না হয় যে ঝামেলা তোমরা সৃষ্টি করেছো তা তোমরাই শেষ করবে।
#চলবে___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here