এক_টুকরো_সুখ #পর্ব_১২ #লেখনীতে_শুভ্রতা_প্রাণ

0
300

#এক_টুকরো_সুখ
#পর্ব_১২
#লেখনীতে_শুভ্রতা_প্রাণ

“আমার এক বন্ধুর ভাগ্নে বুঝলি আয়ু। বড্ড ভালো ছেলে। ছোট বেলায় মা মারা যাওয়ার পরে বাপ আবার বিয়ে করে নিলো। সেই থেকে সৎ মায়ের সাথে থাকে ছেলেটা। কিন্তু দেখে কেউ বলবে না সৎ মানে। এত ভালো ব্যবহার ছেলের। ঢাকায় থাকে। লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরি করে নিজের খরচ চালায় আবার মাঝে মাঝে বাপ মায়ের জন্য এটা সেটা নিয়ে আসে। বন্ধু বললো তোর সাথে সেই ছেলের বিয়ের কথা। তাই খোঁজ খবর নিলাম। ছেলে খারাপ না, বিয়ে হলে মন্দ হবে না। এবার তোর মত থাকলেই আসতে বলি আরকি। কি বলিস?”

পারলাম না আব্বার মুখের ওপর না বলতে। তার যা ভালো মনে হয় করুক বলেই নিজের ঘরে চলে এলাম। আব্বা বোধহয় অনেক বেশি খুশি হলেন আমার কথায়। যাক সবাই খুশি থাকলেই হলো। বিশেষ করে আব্বা। কম কষ্ট তো করেনি আমার জন্য। এখনো করে যাচ্ছে। তার মুখে এক চিলতে হাসির জন্য নাহয় সুপ্ত ইচ্ছে গুলো জলাঞ্জলি দিলাম। ব্যাপার না, সবার জন্য সবকিছু হয় না।

আজ রাতেও আবার সেই অচেনা নাম্বার থেকে ম্যাসেজ। কথা গুলোও অনেকটা আগেই মতোই। বুঝলাম না ঠিক কে এসব দিচ্ছে। আবার বলে আমি নাকি তাকে জ্বালিয়ে মারছি। এ কথা তো ভাই আমার পরিবারও কখনো বলতে পারবে না যে আমি তাঁদের জ্বালিয়েছি। কি জানি সে কোন ক্ষেতের মুলো। কার পাকা ধানে মই দিয়েছি কে জানে। ভাবা ভাবি রেখেই যেই না চোখ বন্ধ করেছি অমনি বিকট শব্দে ফোন বেজে উঠলো। নাহ, এগুলো তো মানা যায় না। এখন মনে হচ্ছে ফোন যখন ছিলো না তখনই ভালো ছিলাম। রাত বিরাতে কেউ অন্তত কল করে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতো না। ধুর…

“হ্যাঁ কে বলছেন? এত রাতে কোন মানুষটা কাউকে কল দেয় ভাই একটু বলবেন আমাকে? আপনার কি এমন দরকার হলো আমাকে যে এই মাঝ রাতে কল করতে হলো? আমার জানা মতে আমি তো তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কেউ না। তবে?”

আর কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে একটা পুরুষ কণ্ঠ কেশে উঠলো। আবার ছেলে আল্লাহ…

“কে কাকু আপনি?”

“দুপুর এবং আমি তোমার কোনো জন্মেরই কাকু লাগি না। বাই দ্যা ওয়ে আয়ু তুমি এত বাঁচাল হলে কবে থেকে? কীভাবে হলে?”

দেখো কান্ড। একে তো এই রাতে আমার ঘুমের তেরোটা বাজালো আবার বলছে আমি নাকি বাঁচাল হয়ে গেছি। বলি মগের মুল্লুক পেয়ে গেছে নাকি উনি।

“এই কি বললেন আপনি?”

উত্তরের বদলে পেলাম হাসির শব্দ। আমার রাগ যেন তার গায়েই বাঁধলো না। উল্টে হাসছেন তিনি। কেউ দামই দেয় না আমাকে! থাকবো না এই সংসারে। কালই বনবাসে চলে যাবো আমি…

“তারপর?”

“কি?”

“তোমার সো কলড রাফিদ ভাইয়ার সাথে কথা বলেছো?”

যাও একটু রাগ কমিয়ে ফেলেছিলাম সেটুকুও আবার বাড়িয়ে দিলো। কিসের রাফিদ ভাইয়া ভাই? মাঝরাতে আমার সাথে ফাজলামি করতে আসছে শালা। কিছু কড়া কথা বলতে গিয়েও বললাম না। মাথার মধ্যে খেলে গেলো দুষ্টু বুদ্ধি। হাহা! আমার ঘুমে বাগড়া দেওয়ার শাস্তি আপনি এখনই পাবেন রাতের বাপ কাক্কু।

“আরে হ্যাঁ। মাত্রই তো রাফিদের সাথে কথা শেষ করে ফোন রেখেছিলাম। আর অমনি আপনার কল। আচ্ছা আমি না টায়ার্ড এখন। ফোন রাখিইইই?”

ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ আগুন জ্বলে উঠেছে। যাই আরেকটু ঘি ঢেলে দিই।

“আসলে কি বলুন তো ভাইয়া। কাল অথবা পরশু হয়তো আমাকে দেখতে আসবে। পছন্দ হলে কলমা পড়িয়ে রেখে যাবে। বাবার বন্ধুর ভাগ্নে বুঝলেন। শুনেছি অনেক ভালো ছেলে। তো এখন যদি আমি আপনার সাথে রাত জেগে কথা বলতে গিয়ে চোখের নিচে কালি ফেলে দিই তবে তো তাঁদের আমাকে পছন্দ হবে না! এটা কি ঠিক হবে বলুন? আপনি কি চান আমার সাথে এমনটা হোক?”

খট করে লাইন কেটে গেলো। আহা এবার শান্তি লাগছে। দুপুর মিয়া যে মনে মনে আমাকে পছন্দ করে তা বেশ বুঝতে পারি আমি। হাজার হোক, মেয়ে মানুষ তো। অনুমান শক্তি বেশি হয়। আমারও যে তাকে খারাপ লাগে তা নয়। আব্বার বন্ধুর ভাগ্নের ব্যাপারটা না থাকলে তার কথা বলা যেত। কিন্তু এখন আর উপায় নেই। তবু উনি আমার সামনে মিনা আপার সাথে চিপকা চিপকি করেছেন তার জন্য তো আর ছেড়ে দেওয়া যায় না। তাই হালকার ওপর ঝাপসা ডোজ দিলাম। কিন্তু একটা জায়গায় খারাপ লাগা থেকেই যায়। উনি আমার হলে মন্দ হতো না। কিন্তু আফসোস!

আপার শশুর বাড়িতে ফোন করা হয়েছে। যেহেতু ছেলের মামা আমাকে পছন্দ করেছেন আর আব্বাও ছেলের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়েছেন তাই ছেলে আর তার বাবা আসলে কলমা দিয়ে রেখে তবেই যাবেন। একমাত্র ছোট বোনের বিয়েতে বড় বোন না থাকলে খারাপ দেখায়। যতই হোক শুধু কলমা তবু বিয়ে তো। তাই রুবি আপা আর দুলাভাইকে আসার কথা বললেন আব্বা। আপাকে কিছু বলতে না দিয়ে ফোন নিয়ে নিলো আপার শাশুড়ি। ফোনে স্পিকার অন থাকায় সব কথাই কানে আসছে আমার।

“ছেলে কেমন বেয়াই? কি করে? লেখাপড়া কদ্দুর? আমার ছেলের মতো অমন সুন্দর তো? নাকি আবার কোথাকার কাকে তুলে আনলেন? জমি জমা কেমন আছে ছেলেদের? সম্পত্তি কত আছে?”

“আসলে বেয়াইন এত কিছু তো জানার সুযোগ হয়নি। কাল আসলে কথা বলেই সব জেনে নেওয়া যাবে। আমার এক বন্ধুর ভাগ্নে। ছোটবেলায় মাকে হারিয়ে সৎ মায়ের কাছে বড় হয়েছে। কিন্তু দেখলে কেউ বলবে না ছেলেটা মহিলার সৎ ছেলে। এমন যত্ন করে সৎ মায়ের।”

আব্বা আর কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে উনি ছলকে উঠলেন।

“শেষে কিনা মা মরা ছেলে! আর কি করবেন বলুন যা অবস্থা আপনাদের। সবাই তো আর আমার মতো অমন গরিব ঘর দেখেও নিজের সোনার টুকরো ছেলের সম্মন্ধ করতে আসবে না। তাছাড়া আপনার মেয়েও কম মুখর নয়। তা যা হয়েছে ভালোই। বউমা আর আকাশকে বিকেলে পাঠিয়ে দেবো এখন রাখি।”

আব্বার মুখের ওপর ফোন রেখে দিলেন মহিলা। আব্বার চেহারা কেমন চুপসে গেছে। এই মহিলাকে বাগে পেলে যে কি করতাম আমি। লোকের পেছনে লাগা ছাড়া বোধহয় আর কোনো কাজই নেই এনার। আরে বাবা কার কত সম্পত্তি আছে না আছে তা দিতে তোর কি দরকার। যত্তসব ফালতু মানুষ জন।

“আয়ু।”

“হু আব্বা।”

ভাবনার মাঝে আব্বার ডাকে একটু চমকে সাড়া দিলাম।

“তোরও কি ছেলের মা না থাকা নিয়ে আপত্তি আছে মা? থাকলে বলে দে। আমি ওদের আসতে বারণ করে দেবো। তোর অমতে কিচ্ছু হবে না মা। তারপর ছেলের কত সম্পদ আছে না আছে এগুলো নিয়ে কিছু বলার থাকলেও বল।”

“ধুর আব্বা তুমিও না। আমাকে কি ওই মহিলার মতো লোভী মনে করো তুমি? ছেলের সম্পত্তি দিয়ে কি হবে আমার যদি সে ভালো মানুষ না হয়? তুমি তো বললে খোঁজ নিয়ে দেখেছো ছেলে ভালো। ওতেই হবে, আর কিছুর দরকার নেই আমার।”

আব্বা মুচকি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

“আল্লাহ তোকে অন্তত এক টুকরো হলেও সুখ দিক মা। যেমন আমাকে দিয়েছে তোর রূপে। দেখিস তুই ঠিক সুখী হবি আয়ু।”

আব্বার কথায় আমিও হাসলাম। নিজের বাবার এমন হাসি মাখা মুখ, এমন দোয়া, এগুলোর জন্য দুদিনের ইচ্ছে জলাঞ্জলি দেওয়া অপরাধ বলে মনে হয় না আমার। তাছাড়া আমি তো এটাও জানিনা দুপুর আমাকে আদৌ বিয়ে করবে কি না। তারচেয়ে আব্বার কথাই রাখি।

বিকেলের দিকে আপা আর দুলাভাই ওদের ছেলে আরবকে নিয়ে এসে পড়লো। আমি ভেবেছিলাম আপা বোধহয় একটু হলেও শুধরোবে। কিন্তু না। সেটা দেখছি অসম্ভব। আমার আপা বাড়িতে পা রেখেই নিজের বাচ্চা ছেলের সব কাজ আমাকে ধরিয়ে দিয়ে পাড়া বেড়াতে বেরোলো। দুলাভাই তো আগেই আব্বার সাথে বাজারে চলে গেছেন তাই আর কেউ কিছু বলবেও না। আম্মা তো কখনোই না। অগত্যা আমাকেই আরবকে রাখতে হলো। একটা মেয়ে অগোছালো, উড়নচন্ডী হয় মানলাম কিন্তু একটা মা কীভাবে এরকম হয়? আমার আপার দ্বারাই বোধহয় এসব সম্ভব।

সকাল থেকে বাড়িতে তোড়জোড় চলছে। বিকেলে ছেলের বাড়ি থেকে লোক আসবে। আম্মা রান্নাবান্না নিয়ে প্রচুর ব্যাস্ত। সেই সাথে আমিও সাহায্য করে যাচ্ছি। আপা ছেলে কোলে নিয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফুপু আর মিনালও এসে পড়েছে। মিনা আপার কি একটা পরীক্ষা তাই আসতে পারেনি। এরপরে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। আমাকে ফুপু একটা শাড়ি পড়িয়ে বসিয়ে রেখেছে। বললাম এত আগে পড়বো না, আসুক তারপর না হয় পড়ি। কিন্তু না আমার কথা শুনলেন না। ফুপু এটা সেটা বলে বুঝাচ্ছে তার মধ্যে আব্বা ঘরে এলো। আমি, ফুপু দুজনেই চাইলাম আব্বার দিকে। মুখ চোখ ফ্যাকাসে লাগছে কেমন। কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলাম কি হয়েছে।

“ছেলে তার মামাকে আনতে গিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে এক্সিডেন্ট করেছে। আল্লাহর রহমতে বেশি কিছু না হলেও পায়ে বেশ ব্যথা পেয়েছে। আজ আর তারা আসবে না। দুদিন পরে আসবে।”

আব্বার কথা কর্ণগোচর হওয়া মাত্রই আম্মা, আপা শুরু করে দিলেন কীর্তন। ছেলের এক্সিডেন্ট নাকি আমার জন্য হয়েছে। মানে আসলেই? এখানেও আমার দোষ?

চলবে…?

[আস্সালামুআলাইকুম। কেমন আছেন সবাই?
আচ্ছা আমি আসলেই গল্প দেরি করে দিই? অধিকাংশ দিনই ২৪ ঘন্টা হবার আগে আগে গল্প দিয়ে দিই তারপরেও যদি আপনারা এরকম বলেন তবে কেমন লাগে বলুন!🙂 যাই হোক ধন্যবাদ পাশে থেকে এত ভালোবাসা দেওয়ার জন্য🖤।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here