#শতদলের_ভীরে
#পর্ব_৫
#মুসফিরাত_জান্নাত
ঐশীর পরিচয় শুনে সাদাত আকাশ থেকে পড়ল যেন।দুই কদম ছিটকে পিছু সড়ে সে।বিনা বজ্রপাতেও বাংলা সিনেমার মতো ঢাস ঢাস শব্দ শুনতে পায়।ঐশীর অবস্থা তার চেয়েও করুণ।তার ভয়ে ঢিপ ঢিপ করা হৃদস্পন্দনের আওয়াজ বজ্রপাতকেও হার মানাবে। সাদাতের বদন দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে বিস্ফোরণ হবে এখন।ভয়ে দুই আঙুলে কান চেপে ধড়ল সে।তরতর করে রাগ বাড়ে সাদাতের।চেহারা ভয়ংকর।রাগে,ক্ষো’ভে কপালে অনামিকা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে চেপে ধড়ল।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“শেষমেষ কিনা আপনার মতো একটা বেয়াদব,অসভ্য,উগ্র,লম্পট, ইডিয়ট মেয়ে আমার কপালে জুটলো!এ জীবনে হয়তো বিশাল কয়টা পাপ করেছিলাম।আল্লাহ জানে কোন পাপের শাস্তি এটা।”
ভয়ে চোখমুখ কুঁচকে ফেলে ঐশী।এখন কি বাংলা সিনেমার অত্যাচারী স্বামীর মতো এই লোক তাকে ফ্লোরে ঘুমাতে বলবে?সারা বাড়ি চিৎকার করে বলবে, এই মেয়ের সাথে সংসার করা সম্ভব না?নাকি ভিলেনদের মতো নেশা পানি করে এসে তাকে উড়া ধুরা মা’রবে?অথবা মাতাল হয়ে তাকে…।নাহ, আর কিছু ভাবতে পারে না ঐশী।এসবের কোনোটাই তার জন্য কল্যানকর হবে না।এছাড়া সে যে ভয় পেয়েছে এটাও প্রকাশ করা যাবে না।নতুবা এই লোক পেয়ে বসবে।তাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবে।মনে মনে বিড়বিড় করে ঐশী,
“রিল্যাক্স ঐশী।ভয় পাওয়ার বান্দী তো তুই নস।তবে এই লোককে ভয় পাওয়ার কি হল?সাহস কর।ভয় পেলে চলবে না।এই লোক যদি বুনো ওল হয় তো তবে তুই বাঘা তেঁতুল।এটা প্রমান করে ছাড়।”
পিটপিট করে চোখ মেলে সে।তার সামনে দাঁড়ানো পুরুষটির চোখে মুখে স্পষ্ট বিরক্তি।নিজেকে ধাতস্থ করতে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে লোকটি।এই অবস্থায় কি বলা উচিৎ ভেবে পায় না ঐশী।দুই কানে আঙুল গুঁজে রাখায় সাদাতের বলা সব কথা স্পষ্ট শুনতে পায় নি।নিজের উপর নিজেরই রাগ হয় ঐশীর।তখন ওনার বলা কথাগুলো শুনলে না হয় একটা চরম জবাব দিতে পারতো।শেষবাক্যটা সে শুনেছে শুধু।এখন তার অবশ্যই কিছু বলা উচিৎ।তাছাড়া সে যে বাঘা তেঁতুল এটা প্রমান হবে না।কয়েক ডিগ্রি টেম্পার বাড়িয়ে আওয়াজ তোলে ঐশী,
“পাপ যেহেতু করে ফেলেছেন শাস্তি তো পাবেনই।এখন যদি বাংলা সিনেমার হিরো অথবা ভিলেনের রোল প্লে করার আশা করেন,তো সে আশায় গুড়ের বালি।আমি বাংলা সিনেমার নায়িকার মতো মিনমিন করা মেয়ে নয়,যে ওসব মেনে নেব।আপনি যদি বুনো ওল হন তো আমি বাঘা তেঁতুল।আমার সাথে লড়ে ফায়দা পাবেন না।কিন্তু আমি ভাবছি, আমি আবার কি পাঁপ করলাম যে আপনার মতো কাঠখোট্টা,বদমেজাজী,হাঁপানী রুগী কপালে জুটলো?”
আগুনে ঘি ঢালার মতো কথা।সাদাতের উত্তপ্ত মস্তিষ্ক ছ্যাৎ করে ওঠে।
“আমাকে কোন দিক থেকে এজমা রুগী মনে হয়?”
কপট তেজ দেখিয়ে ঐশীর জবাব,
“হাঁপানী না থাকলে এরকম করে শ্বাস ফেলে কেও?”
“হুম ফেলে।আপনার মতো ভাইরাস যার জীবনে প্রবেশ করেছে সে কখনো সুস্থ ভাবে শ্বাস ফেলতে পারে না।এজমার ভাইরাসের চেয়েও ভয়ংকর আপনি।”
ঐশীকে হেয় করে কথাগুলো বললেও দমে যাওয়ার পাত্রী সে নয়।কোমরে ওড়না গুঁজে জবাব দেয়,
“আফসোস!এমন একটা ভাইরাসকে নিজের জীবনে প্রবেশ করিয়েছেন তার থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার চিন্তা করলেও আপনার ঘুম হারাম হয়ে যাবে মিস্টার সাদাত সরকার।আপনি নিশ্চয়ই এখন ফেসবুকের গল্পের হিরোদের মতো আমাকে বিয়ের পরদিন ডিভোর্স দিবেন ভাবছেন?কিন্তু রিয়েল লাইফে তা হবে না।নূন্যতম ছয় মাস সময় লাগবে।আর এই ছয় মাসে আপনার জীবন তেজপাতা করে ছাড়ব।হুহ!”
কথাটা বলে একটু ভাব নিতে যায় ঐশী।সাদাতের দিকে মুখ রেখে ধপ করে বালিশে মাথা দিতে যেয়ে খাটের শেষাংশের শূন্যস্থানে মাথা এলিয়ে দেয়।ঠাস করে উল্টে পড়ে যায় বিছানার ওপাশে।বাঁকা হাসে সাদাত।ঐশীই হয়তো একমাত্র ব্যক্তি যে বাসর রাতে সালোয়ার কামিজ পড়েও পরে যায়।তাও আবার বরের সাথে পাঞ্জা নিতে যেয়ে।লজ্জায় দুই হাতে মুখ চেপে ধরে ঐশী।মনে মনে বলে,
“ঐশীরে কামডা করলি কি?নিজের মান সোলেমান আর রাখলি না।কে বলেছিলো তোকে ভাব নিতে?গেলি তো উল্টে পড়ে।শেয়াল হয়ে বাঘের সাথে লড়তে যেয়ে লেজ কে’টে ফেললি।এখন ওই চিতা বাঘের সামনে মুখ দেখাবি কেমনে?”
লজ্জায়,অপমানে নুইয়ে থাকে ঐশী।কিছু সময় নিরবে হেসে ঐশীর দিকে এক হাত বাড়িয়ে দেয় সাদাত।
“উঠে পড়ুন বাঘা তেঁতুল।আমি কিছু দেখিনি।”
ঐশী ঠায় শুয়ে থাকে।লজ্জায় জমিন ফাঁক হওয়ার মতো অবাস্তব প্রার্থনা করে।সাদাত বোঝে মেয়েটা কতো লজ্জা পেয়েছে।সদ্য বিবাহিত ভেজা চুলের স্নিগ্ধ এক রমনীকে লজ্জায় মেঝেতে লুটানোর দৃশ্যটা চোখে হারায় সাদাতকে।মোহনীয় এই দৃশ্যের কাছে ঐশীর সকল অপরাধ ফিকে হয়ে যায়।কে জানে?ঐশীর এই আকর্ষণীয় রুপের জন্যই হয়তো তার উপর রাগ ধরে রাখতে পারে না সাদাত।থুবড়ে পড়ে থাকা রমনীকে আচমকা পাঁজাকোলে তুলে নেয়।বিছানায় শুইয়ে দেয়।দুষ্টু হেসে ঐশীর মুখশ্রীতে হালকা ফু দেয় সে।সামনে ঝুঁকে পড়া চুলগুলো মৃদু আন্দোলিত হয়।মোহগ্রস্ত কন্ঠে পুরুষটি বলে,
“অন্যের জীবন তেজপাতা করার আগে নিজেকে পাঁকা রাধুনি হতে হয় বাঘা তেঁতুল।তাছাড়া নিজের রান্না নিজেই হজম করতে পারবেন না।”
প্রতিবাদ স্বরুপ কিছু একটা বলতে অধর ফাঁকা করে ঐশী।কিন্তু তাকে থামিয়ে দেয় ফোনের রিংটোন।এই অসময়ে সাদাতের ফোন বেজে ওঠে।স্ক্রিনে তাকিয়ে রাকিবের নাম দেখে কল পিক করে সে।ওপাশ থেকে ভাসে এক পুরুষালী কন্ঠ,
“কিরে শা*, বিয়ে করলি তা জানতেও পারলাম না।”
“এবনরমালের বাচ্চা!না জানলে বললি কেমনে বিয়ে করছি?”
“সেটা তো সাদের পোস্ট দেখে জানলাম।তুই তো কিপ্টা, খাওয়ানোর ভয়ে জানাস নাই।”
চেতে যায় সাদাত।দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
” তাও ছ্যাচড়ার মতো কল দিছস।”
“চেতোস কেন ভাই।তোর হাডুডু খেলায় কি ব্রেক দেওয়াইছি নাকি?ব্রেক দেওয়াইলে চেতা স্বাভা..।”
“কল কাট বেয়াদব।”
খট করে লাইন কেটে দেয় সে।ঐশীর সামনে এমন টপিক নিয়ে কথাটা ওঠানো বিব্রতকর।হটাৎ কিছু নোটিশ করে।সাদের পোস্ট?তারমানে সাদ তাকে ট্যাগ দিয়েছে।তবে কি ঐশীকেও ট্যাগ দিয়েছে?তাহলে তো ভার্সিটির সবাই জেনে যাবে বিয়ের ব্যাপারটা।টিচার হয়ে স্টুডেন্টকে বিয়ে করার মতো নিচু খবর ছড়িয়ে গেলে তার রেপুটেশনের ফালুদা হয়ে যাবে।তড়িঘড়ি করে লাইন কেটে দেয় সে।ফেসবুকে লগ ইন করে দেখে যা ভাবনা সেই কাজ।সাদ ঐশীকে ট্যাগ না করলেও তাকে ট্যাগ করে পোস্ট দিয়েছে।সাথে ঐশী ও সাদাতের বিয়ের ছবি এড করা।ঘাম ছুটে যায় সাদাতের।ভার্সিটির কারো নজরে পড়ার আগেই পোস্টটা ডিলিট দেওয়া দরকার।তাছাড়া কারো সামনে মুখ দেখাতে পারবে না তারা। সাদকে কল দেয় সে।অগোছানো পা ফেলে চলে যায় করিডোরে।গম্ভীর স্বরে কথা বলে কারে সাথে।কি নিয়ে কথা হচ্ছে জানে না ঐশী।কেবলমাত্র সেদিকে তাকিয়ে থাকে।তপ্ত শ্বাস ছাড়ে সে।প্রথমে একটু বিব্রত হলেও হাত ঝাড়া দেয়।আপনমনে বলে,
“এই বাঘের খাবলা খাওয়ার চেয়ে না হয় একটু আছাড়ই খেয়েছিস।এতে আহামরি কিছু হয় নি তোর।হেরে গিয়েছিস কিন্তু ঠকে যাস নি।লোকটা তোকে শাস্তি দিতে ভুলে গেছে।ইয়াহু,কতো চালাক তুই।এক আছাড়ে রাগ ভুলাই দিছস।”
সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ ধরে আসে ঐশীর।পাঁচ মিনিটের ব্যবধানেই ঘরে ঢোকে সাদাত।ঘুমন্ত অবস্থায় ঐশীকে বেশ নিষ্পাপ লাগে।মায়াবী ওই মুখের দিকে কিছু সময় চেয়ে থাকে সাদাত।মনে মনে ভাবে, মেয়েটা যদি তার চেহারার মতেই মিষ্টি স্বভাবের হতো,তবে কি খুব ক্ষতি হতো?হয়তো হতো না।কিন্তু তা হয় নি।মেয়েটার বয়স হলেও সভ্য হয়ে ওঠেনি।এমন ইমম্যাচিউর মেয়েকে সে তার জীবনে চায় নি।অথচ এক অলুক্ষনে ঝড় তার জীবনে এই মেয়েটিকে জুড়ে দিয়েছে।যাকে সে চাইলেও কখনো বিতারিত করতে পারবে না।সারা জীবন পার করতে হবে এই কন্যার সাথে।জীবনের সব পাওয়া হয়তো মন মতো হয় না।ঐশীও তার জীবনের তেমনই এক পাওয়া।বুক চি’রে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস।কিছুটা ইতস্তত করে বিছানার অপর সাইডে শুয়ে পরে সে।
চলবে
কালকে ব্যস্ততা ও অসুস্থতার দরুন গল্প দিতে পারি নি।এ জন্য দুঃখিত।সামনে ইদ তাই ব্যস্ততা বেশি।আজকের পর্বটা একটানা লিখেছি।ভাবার অবকাশ পাই নি।খাপছাড়া হলে মানিয়ে নিবেন।সামনের পর্ব থেকে গোছালো হবে ইনশাআল্লাহ।হ্যাপি রিডিং।