শতদলের_ভীরে #পর্ব_৪ #মুসফিরাত_জান্নাত

0
320

#শতদলের_ভীরে
#পর্ব_৪
#মুসফিরাত_জান্নাত

আকষ্মিক ঘটনায় বিহ্বল ঐশী।গাড়িতে তো তার বমি হয় না।তবে আজ কি হলো?লোকটা কি ভাবছে তাকে!মনে মনে বিরক্ত হয় ঐশী।যতসব অঘটন সব আজকেই ঘটতে হল?চোখ পিটপিট করে তাকায় সে।সাদাত তখনও অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।লোকটাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে কতোটা অসন্তুষ্ট সে।কেমন অস্বস্তি হয় ঐশীর।বার বার সময়টাকে পিছিয়ে দিতে ইচ্ছে করে।যে ইচ্ছায় কোনো অঘটন থাকবে না।পুরোটা জুরে থাকবে সচ্ছতা।কিন্তু চাইলেই কি আর সময় পিছানো যায়?সময় এগিয়ে চলে।সাথে এগোয় পথ।দুরত্ব খুব বেশি না হওয়ায় অচিরেই বাড়ি পৌঁছে যায় ওরা।ছয় তল ভবনের তিন নম্বর ফ্লোরে থাকে সাদাতের পরিবার।গাড়ির দরজা ঠেলে হন্তদন্ত করে ছোটে সাদাত।শরীরে যে অবস্থা তাতে ফরমালিটি মেইনটেইন করার সময় নেই।গোছল সেড়ে দ্রুত ফ্রেশ হতে হবে তাকে।তাছাড়া বমির গন্ধে নিজেই বমি করে বসবে।কারো সাথে কোন কথা না বলে সোজা নিজের ওয়াশরুমে যায় সে।ফ্যালফ্যাল করে সেদিকে তাকিয়ে থাকে ঐশী।তার শরীর পরিষ্কার।বমির ছিটেও লাগেনি কোথাও।পাশাপাশি তউক্ষনাৎ কুলি করে ফ্রেশ হয়ে নেয় সে।এ কারণে গাড়িতে বসতে অসুবিধা না হলেও অসহায় লাগছে তার।প্রচন্ড ছটফটে স্বভাবের মেয়েটার কি এক স্থানে বসে থাকতে মন বসে?

একটু পরেই কিছু মুরুব্বি গোছের মহিলার আগমন হয়।একটা ট্রেতে মিষ্টি ও পানি নিয়ে বউ নামনোর জন্য হাজির ওনারা।সাদাতের দাদীও উপস্থিত।সর্বপ্রথম তিনিই এক পিছ মিষ্টি ও পানি তুলে দেন নাতিবউ এর মুখে।এক হাত নিয়ে আঙুলে পুরে দেন খাঁজ কেটে ডিজাইন করা স্বর্নের রিং।এর পর একে একে কয়েকজনকে দিয়ে মিষ্টি মুখ করান।প্রথম নাতবউ বলে কথা।এটুক আপ্যায়ন না করলে চলে?
_______
প্রায় ঘন্টা খানেক হলো বাসর ঘরে বসে রয়েছে ঐশী।ভারী শাড়ি গহনা খুলে ফ্রেশ হওয়ার তীব্র ইচ্ছে জাগলেও উপায় নেই।ঘর থেকে এ বাড়ির মানুষজন সড়ছেই না যেন।এদিকে তীব্র গরমে ঘরের বাতাসও গরম হয়ে উঠছে।ঘেমে নেয়ে অতিষ্ঠ সে।একের পর এক মানুষ এসে জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছে তাকে।যা প্রচুর অস্বস্তিকর।ফর্মালিটির খাতিরে সেসব হজম করছে ঐশী।এ বাড়ির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে একমনে।ভিতরে ভিতরে কৈ মাছের মতো ছটফট করছে এদের হাত থেকে মুক্তি পেতে।আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছে একটু ফাঁকা সময়ের ব্যবস্থা করতে।আল্লাহ হয়তো শুনলেন ঐশীর প্রার্থনা।সাদাত ঘরে এলো।একে একে বেরিয়ে গেলো সকলে।হাঁফ ছাড়ে ঐশী।সাদাত কাছে এগোতে দ্রুত উঠে দাঁড়ায় ঐশী।দুই কদম পিছিয়ে যায় সাদাত।কল্পনায় আসে গতানুগতিক নিয়মে ঐশী হয়তো সালাম করবে তাকে।কিন্তু তার ধারণায় পানি ঢেলে মেয়েটি ড্রেসিং টেবিলের সামনে যায়।গা থেকে গহনার স্তুপ সড়াতে ব্যস্ত সে।ঘরের মধ্যে অন্য একটি কায়া যে হাতে উপহার নিয়ে বিষ্মিত বদনে চেয়ে রয়েছে তাতে ধ্যান দেওয়ার সময়ও যেন নেই।সব গহনা খুলে শাড়ী বদলাতে স্টেপ নেয় ঐশী।ঘরে যে একটা পুরুষ আছে সে খেয়াল নেই।বিষ্ময়ের চরমে সাদাত।নিজের উপস্থিতি জানাতে গলা খাকাড়ি দেয়।ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় ঐশী।বিরক্ত গলায় বলে,

“ঘর থেকে বের হওয়া বাদ দিয়ে নির্লজ্জের মতো গলা খাকাড়ি দিচ্ছেন কেন?”

সাদাতের বিষ্ময় আরও কয়েক ধাপ বৃদ্ধি পায়।বলে কি মেয়ে?নিজেই নির্লজ্জের মতো শাড়ী বদলাতে নিয়ে তাকে ব্লেইম করছে!যথাসম্ভব নিজেকে ধাতস্থ করে জবাবে সে ছোট করে বলে,

“চেঞ্জ করার জন্য ওয়াশরুম ফাঁকা আছে।”

“আমি ওয়াশরুমে চেঞ্জ করতে পারব না।পুরো শাড়ী ভিজে নষ্ট হয়ে যাবে।আপনি বাইরে যান।”

তখন সাদাতের শরীরে বমি করে দেওয়ায় চটে আছে সে।তার উপর আবার সালাম না করে তাকে উপেক্ষা করেছে।আর এখন বেয়াদবের মতো ঘর থেকে বের হতে বলছে।মেজাজ তুঙ্গে ওঠে সাদাতের।রাগ মানুষের হিতাহিত জ্ঞান কমিয়ে দেয়।সাদাতও জ্ঞানশূন্যের মতো ঐশীর সাথে তর্ক লাগিয়ে দেয়।তার সুরে সুর মিলিয়ে বলে,

“সেটা আপনার সমস্যা,আমার না।আমাকে এই ঘর থেকে বের করার সাধ্য কারো নেই।”

বাঁকা হাসে ঐশী।দুষ্টুমি করে বলে,

“আচ্ছা, তাহলে আমিও এখানেই চেঞ্জ করছি।আপনি দেখুন।”

কথাটা বলে আঁচলে হাত দেয় সে।

“আস্তাগফিরুল্লাহ!”

চেঁচিয়ে ওঠে সাদাত।এক লাফে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।এক পশলা হাসে মেয়েটি।এমনটা করলে যে সাদাত বেরিয়ে যাবে সে ব্যপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত ছিলো সে।দরজা জানালা লাগিয়ে শাড়ী বদলে নেয় সে।ওয়াশরুমে গিয়ে গোছল সেড়ে ফেলে।এই গরমে বেশ আড়াম অনুভুত হয়।রাত বৃদ্ধিতে গরমের তেজ কমে গিয়েছে অনেক।হটাৎ দরজায় খটখট আওয়াজ হয়।ঘরে এসে দরজা খুলে উঁকি দেয় সে।গ্লাসে দুধ নিয়ে দাঁড়িয়ে তার ননদিনী।নাম সাথী।জোরপূর্বক স্মিত হাসে সে।ঐশীকে সালোয়ার কামিজ পড়া দেখে অবাক হয় মেয়েটি।এক হাতে ঠেলে ভিতরে ঢুকে বলে,

“ভাবি তুমি এসব কোথায় পেলে?”

একটু উশখুশ করে নতমুখে জবাব দেয় সে,

“বাড়ি থেকে আসার সময় লাগেজে তুলে নিয়েছিলাম।অনেক গরম তো,রাতে শাড়ি পড়ে ঘুম হতো না।তাছাড়া শাড়ি পরে অভ্যস্তও নই।”

এক গাল হাসে মেয়েটি।

“বাব্বাহ!বেশ চালাক তো তুমি।আমাদের মাথায় এতো বুদ্ধি ছিলো না।কষ্ট করে শাড়িই সামলাতে হয়েছে।তোমার সে অসুবিধা হবে না।কিন্তু মনে রেখো বাড়ির মুরুব্বিরা যেন না দেখে।সকাল সকাল খুলে ফেলবে কিন্তু।”

“আচ্ছা।”

মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় ঐশী।তার দিকে হাতে রাখা দুধের গ্লাস এগিয়ে দেয় সাথী।

“এই দুধটা ভাইয়াকে দিও।দাদুমনি দিয়ে পাঠালো। বিয়ের রাতে এটাই নিয়ম।”

ঐশীর পায়ের তলা শূন্য হয়ে যায়।চরম বিস্ফোরণ ঘটেছে যেন।সাদাত কে সে কীভাবে এটা দিবে!সে তো তার শিক্ষক!

সামনে তাকিয়ে সাদাতের উপস্থিতি দেখে সে।বিষ্মিত সাথী একবার সাদাতের দিকে ও একবার ঐশীর দিকে তাকায়।দুজনেই গোছল করেছে।তবে কি দুধটা নিয়ে আসতে দেরী করলো সে?

সাথীর অভিব্যক্তি দেখে সাদাতের রাগ বাড়ে।গম্ভীর গলায় বলে,

“যেমনটা ভাবছিস বিষয়টা তেমন নয়।আর তোর আনা দুধ তুই খা।”

সাথীর চোখ চরকগাছ।এটা কি বলে তার ভাই।বিয়ে করে মাথা গেলো নাকি!রাগের চোটে সাদাতের মাথা হয়তো সত্যি এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো।ধমক দিয়ে সে সত্যি সত্যি সাথীকে গ্লাসের দুধটুকু খাওয়ার আদেশ দেয়।ভাইয়ের রাগ সম্পর্কে বেশ ভালোভাবে অবগত সাথী।কড়া আদেশে ভয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে গ্লাস ফাঁকা করে।মাথা কিছুটা ঠান্ডা হয় সাদাতের।গম্ভীর গলায় বলে,

“এবার চলে যা।নতুন বর বউয়ের ঘরে দুধ নিয়ে যাওয়ার আগে এটা মাথায় রাখিস।”

ছাড়া পেয়ে হাঁফ ছাড়ে সাথী।দ্রুত পায়ে চলে যায় সে।ভয়ার্ত চোখে এসব দেখে ঐশী।বিড়বিড় করে বলে,

“ঐশীরে তোর কপাল শেষ।এ কোন বাঘের থাবায় পড়লি তুই?দুধ নিয়ে আসার শাস্তি যদি এতো হয় তবে তোর করা ভুল তো অনেক।কোনটার শাস্তি আগে পাবি তুই?কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত হ তুই।”

ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় সাদাত।দৃঢ় কন্ঠে বলে,

“উল্টাপাল্টা চিন্তা ও বেয়াদবির শাস্তি এমনই হওয়া উচিৎ।তাই না বলেন?”

ভ্যাবলাকান্ত মার্কা হাসি দেয় ঐশী।তখনের সেই তেজ আর নেই।ভেজা বিড়ালের ন্যায় মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।বাঁকা হাসে সাদাত।আবারও বলে,

“বেয়াদবি করলে কাওকে ছাড় দেওয়া উচিৎ নয়।সে যতো কাছের লোক হোক না কেন।পাছে মাথায় চেপে বসে।ঠিক না?”

মাইনকা চিপায় পড়ে আবারও বোকা হাসে ঐশী।সায় দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো বুদ্ধি পায় না।আবারও সে মাথা নাড়ায়।

“একদম তাই।”

সরু চোখে তাকায় সাদাত।আগাগোড়া ঐশীকে দেখে বলে,

“আমাদের বোধহয় আগে কোথাও দেখা হয়েছিলো।তাছাড়া আপনার কণ্ঠটা অনেক পরিচিত লাগছে কেন?”

“আগে কোথায় দেখা হয়েছে, সেটা জানলে আপনি আশি ভোল্টেজের শক খাবেন।”

আনমনে বলে ঐশী।আশ্চর্য হয় সে।

“মানে?”

“ক..কি..কিছুনা।”

দ্রুত বিছানার একপাশে চলে যায় ঐশী।বালিশে মাথা দিতে যাবে তার আগে কানে বাজে সাদাতের কন্ঠস্বর,

“সত্যি করে বলেন কে আপনি?”

বুকের মাঝে ধক করে ওঠে ঐশীর।এতো সময় তো না চিনে সাদাত ফর্মালিটি দেখিয়েছে।চেনার পর তো ফর্মালিটি নাও দেখাতে পারে।এ লোকের বিশ্বাস নেই।সকালে সবার সামনে কান ধরে গুনে দশবার উঠবস করিয়েছে।এখন কি শাস্তি দিবে কে জানে।তবে উত্তরে কি বলবে সে?

সাদাতের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তার দিকে।আবারও মৃদু গর্জন তোলে সাদাত,

“কারো প্রশ্নের উত্তর না দেওয়াও চরম বেয়াদবি।এতোটাও বেয়াদব হবেন না যেন…।
ভয়ে সিটিয়ে যায় ঐশী। কাঁপা গলায় জবাব দেয়,

” আ..আমি ঐ..ঐশী।আপনার ভার্সিটির কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট এর স্টুডেন্ট।”

চলবে
৩য় পর্বঃ
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/826609912394116/?mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here