দাম্পত্য_জীবন #মেহু_আপু #পর্ব_২১

0
227

#দাম্পত্য_জীবন
#মেহু_আপু
#পর্ব_২১

তুমি এইরকম জঘন্য খেলাটা ক্যান খেলছো। কি দেইনাই তোমাকে, বাড়ি,গাড়ি,চাকরি সব গুলোর ব্যবস্থা করে দিলাম আমরা ___ শুকর বললো।

আমরা মনে করেছিলাম তুমি লোভের বশবর্তী হয়ে আগে যেসব অন্যায় করেছো। তোমাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিলে তুমি নিশ্চিত পরিবর্তন হবা। তোমাকে বিশ্বাস করে তোমার দেওয়া সব আঘাত অনায়াসে মাফ করে,আজকে আমরা এই প্রতিদান পেলাম ___ আজগর চৌধুরী বললো।

মেয়ের জামাই হয়েছো বলে, একের পর এক অপরাধ ক্ষমা করা আমাদের ভূল ছিলো। তোমাকে যদি আরো আগে জেইলে পুরতাম!তাহলে আজকে আমাদের পরিবারের, এই দিন দেখতে হতো না ___ শায়লা বললো।

বলো তুমি ক্যান এই কাজ করছো? কিসের লোভ তোমার এতো আজকে আমরা জানতে চাই ___ আর্জিনা চৌধুরী বললো।

জানিনা এই ছেলে ইতিপূর্বে আপনাদের কি কি ক্ষতি করেছে? কিন্তু আজকে আমি যা করেছি, এরপরে আমার কোনো ক্ষমা হয়না। তবুও আপনাদের যদি মনে হয়, আমাকে ক্ষমা করা উচিত। তাহলে অনুরোধ করবো আকাশ বাবুকে আপনারা ভূল বুঝবেন না। উনি আমার করা কাজে রেসপন্স করছিলো না, আমি উনাকে জোড় করে রেসপন্স করিয়েছিলাম। উনি নীলা ম্যাম কে খুব ভালোবাসে। মাতাল অবস্থায় উনি শুধু বারবার তার নাম নিচ্ছিলো। তাই বলবো নীলা ম্যাম এইরকম সুপুরুষ স্বামী পাওয়া ভাগ্যর ব্যাপার। সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিছু হয়নি তার। কিছু নষ্ট হয়নি আপনার স্বামীর। আপনি তাকে গোসল করিয়ে আমার সংস্পর্শ গুলো মুছে দিয়েন। এরপরে আমার সাথে কি হওয়া উচিত, সেইটা আপনারাই জানেন ___ শারমিন বললো।

আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে এইখানে লম্বা লম্বা ভাষণ চলছে। কোনো কাজের না, কিছু পান নাই। তাহলে ওইখান থেকে না পালিয়ে, সবটা নীলার কাছে স্বীকার করছেন কেনো?। এইটা নাকি বেশ্যা, বেশ্যারা এতো সাধাসিধা হয়। আজকে যদি আমার কিছু হয়। তোর কপাল খারাপ আছে রে বেশ্যা ___ হামজা মনে মনে বললো।

কি হলো তুমি চুপ কেনো? উনারা তো তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছো? উত্তর দাও আমার হাসবেন্ডের সাথে তুমি ক্যান এরকম করছো। আমার সুন্দর ব্যক্তিত্ব স্বামীর শরীরে কাঁদা লাগাইছো। তুমি মনে রেখো আজকে স্বয়ং আল্লাহ তালা এসে বললেও তোমাকে মাফ করবো না আমি। এর আগে অনেক পাপ ঢেকে পার পেয়েছো। তার জন্য সাহস এতবড় হয়েছে ___ নীলা বললো।

আমি কি বলবো, আমার বলার ভাষা নেই। ___ হামজা বললো

কি বলবে মানে, তুমি ক্যান আকাশের সাথে এরকম জঘন্য কাজ করলা। এর নিশ্চিত প্রপার কারণ তো আছে। সেই কারণ টা আমরা জিজ্ঞেস করেছি ___ শুকর বললো

আমি যদি এখন কারণটা বলি আপনারা কি আমাকে মাফ করবেন। কখনো করবেন না তাহলে এসব বলে কথা বাড়িয়ে কি হবে ___ হামজা বললো।

একটুয়ো অনুসূচনা নেই তোমার মধ্যে । তুমি কারণটা বলে দেখো তুমি ক্ষমার যোগ্য কিনা সেইটা আমরা ভাববো ___ আজগর বললো।

আমি চেয়েছিলাম নীলার সাথে আকাশের সেফারেশন হোক। কারণ এই নীলা একদিন আমাকে ছেড়ে দিয়েছিলো। সে আমার সাথে প্রতারণা করেছিলো। সেই প্রতরণার প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলাম এভাবে। আমি নীলাকে দেখাতে চেয়েছিলাম আকাশের চরিত্র খারাপ। আর শারমিনের সাথে আকাশের ঘনিষ্ঠ হতে দেখলে নীলা আকাশ কে ছেড়ে যাবে এই ভাবে এসব কাজ করেছিলাম ___ হামজা বললো।

বাবা নিখুঁত প্লান বলা চলে। এক্ষুনি মেঘকে ফোন করো। ওর জানা উচিত ওর ঠকবাজ জামাই কোন খেলায় মেতে উঠেছে। নাহলে পরে এই ছেলে ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে আমাদের মেয়েকে আমাদের থেকে পর করে নিবে ___ শায়লা বললো।

উষশী মেঘকে ফোন দেয়। মেঘ ফোন রিসিভ করলে দ্রুত মেঘকে এই বাড়িতে আসার আহ্বান জানায় উষশী। মেঘ বলে জরুরি তলব কারো কিছু হয়েছে। উষশী বলে তোমাকে তো আর এমনি এমনি ডাকছি না নিশ্চয় কোনো কারণ আছে দ্রুত আসো। মেঘ বলে হ্যা আসছি।

জানিনা বাবা-মা আপনারা ওর সাথে কি করবেন? কিন্তু আমি আজকে একটা কথা ক্লিয়ার জানাই। আজ যদি ও পার পেয়ে যায় আমি আর আপনাদের বাড়িতে থাকবো না। কারণ এসব অপরাধীদের সঙ্গে এক ছাঁদে বসবাস করা মুশকিল । ও বারবার এরকম ভূল করবে আর আপনারা মাফ করবেন বারংবার। হয় আজ আমি থাকবো নাহলে আপনাদের মেয়ে জামাই। আরেকটা কথা বলতে চাই ও আপনাদের মেয়ে জামাই বলে বারবার পার পেয়ে যাবে এটা হতে পারেনা। সেদিন আমার পরিবারের সাথে যেরকম বর্বর কাহিনী রচিত হয়েছে। সেই জায়গায় আপনারা থাকলে পারতেন ওকে এভাবে মাফ করতে। সেদিন খুব করে চেয়েছিলাম ওকে আপনারা সাজা দিবেন। কিন্তু আপনারা উল্টো ওখে রাজ্য ও রাজকন্যা দুটোই হাতে তুলে দিয়েছেন। রিয়ার জায়গায় যদি মেঘ থাকতো আপনারা তাহলে কি পারতেন মেয়ের অপরাধী কে এভাবে ছেড়ে দিতে। এই ছেলের কারণে যে আমাদের ২২ বছর লালন পালন করেছে আজকে আট দিন হয়ে গেলো এখনো আমাদের দুই বোনের সাথে কথা বলে নাই। দেখুন তাহলে কতোটা অভিমান রয়েছে ওনার মনে, পারবেন আপনারা সবটা ঠিক করে দিতে।

আর হামজা তুমি আমার নামে ভূল অপবাদ দিবানা। প্রতারণা আমি না তুমি করেছো? এইটা সবাই জানে।

নীলার একথা শুনে অবাক হয়ে যায় রিয়া। তারমানে আমাদের এসব কাহিনীর পিছনে সম্পূর্ণ টা হামজা ভাইয়ার কাজ। তুই এসব জেনেও আমাকে একবারো বলিস নাই। হু হু করে কেদে দেয় রিয়া 🥺

কাঁদিস না তোকে বলিনাই কারণ তুই ভেঙে পড়তি। তোর অপরাধী মুক্ত হয়ে ঘুরছে এইটা ভেবে। আজকে ওকে সবাই মাফ করলে আমরা দুবোন অন্য পথে হাটবো ___ নীলা বললো।

ব্যাচ বউমা অনেক বড় কথা বলে ফেলেছো। হ্যা সেদিন আমরা ভূল করেছিলাম বলে আজকেও সেই ভূল করবো তুমি এটা ভাবলে কি করে? মেঘ আসুক বাকিটা তুমি একাই দেখতে পারবা ___ আর্জিনা বললো।

মেঘ বাড়িতে ঢুকে সবাইকে এক জায়গায় দেখে অবাক হয়। সোফায় আকাশকে শুয়ে থাকতে দেখে আরো বেশি অবাক হয়। আকাশ ভাইয়ার কি হয়েছে ও শুয়ে আছে। তোমরা এভাবে দাড়িয়েই আছো ক্যান? এই মেয়েটি কে? তাহলে কি আমার অনুমান ঠিক?

কিসের অনুমান করছো জানিনা। তবে তোমার মা তোমাকে সবটা বলছে ___ শুকর বললো।

এরপরে মেঘকে সবটা বললো শায়লা।

হামজা ফাঁদ পাতলো মনে মনে মেঘকে যে করেই হোক ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতে হবে।

মেঘ এসব কথা শুনে খিকখিক করে হাসতে থাকলো। আমি জানতাম এরকম কিছুই হয়েছে, এমনি এমনি তো আর আমাকে এইভাবে ডেকে পাঠাও নাই তোমরা। ক্যান এরকম করলা হামজা? কি ক্ষতি করেছে আমার পরিবার তোমার? যার জন্য বার বার আমার পরিবারকে বিপদে ফেলছো!

শুনো এরা যা বলছে সবটাই ঠিক। এসব আমি যা করেছি সবটাই ইনোসেন্টলি। সিরিয়াসলি আমাকে বিশ্বাস করো আমি বুঝে শুনে এসব কাজ করি নাই। আমাকে মাফ করো।

তোমাকে বারবার আমার পরিবার মাফ করে, করেছে ভূল। আর সবচাইতে চরম ভূল তুমি ঠকিয়ে বিয়ে করেছো জেনেও তোমার সাথে আমার সংসার করা। তুমি আর আমাকে ইমোশনালি আঘাত করতে পারবেনা। তোমার এসব ডায়লগে এখন আমার বমি পায় হামজা। বলেই দুই গালে দুইটা ঠা*স ঠা*স করে চ*ড় দেয়।

চড় দুইটা দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়।

তুমি আমাকে মারলে। তুমি জানো তুমি কতবড় পাপ করছো! স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত, তুমি সেই বেহেশতোকে চ*ড় দিলা। তুমি জাহান্নামে যাবা মেঘ।

স্বামী যদি বার বার স্ত্রীর দুর্বলতার সুযোগ নেয় তাহলে সেই স্বামীকে চ*ড় দিয়ে মনে করে দেওয়া উচিত। তার স্ত্রী আসলপ দুর্বল নয়। বাবা আমি আর একে টলারেট করতে পারছিনা আমি জানতাম এরকম কিছু হয়েছে। তাই আমি আমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সব নিয়ে এসেছি এই বাড়িতে। জানি আমার ভূলের ক্ষমা হয়না বড়বাবা, বাবা কিন্তু আমি এই প*শু*টার সাথে আর সংসার করতে চাইনা। তোমাদের কাছে কি আমার এটুকু জায়গা হবেনা। সেই ঘরের কোণে আমি শুধু পড়ে থাকবো। হাতজোড় করে কান্নাজড়িত কন্ঠে মেঘ একথা বলে।

ছেলেমেয়েরা ভূল করে। সেই ভূল শুধরানোর সুযোগ প্রত্যক বাবা মা দেয়। আর আমিয়ো সেই সুযোগ হামজাকে দিয়েছিলাম মা। কিন্তু ও শুধরানোর না। তোমার জায়গা ঘরের কোণে না মা সবসময় আমাদের বুকে। ___ আজগর বললো

মেঘ তার দুই বাবাকে জড়িয়ে ধরে।

হামজা কোনো উপায় না পেয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তা দেখে মেঘ পুলিশকে ডাক দেয়। পুলিশ এসে হামজার হাতে হাতকরা পড়ায়। মেঘ বলে কি ভাবলা তুমি পার পেয়ে যাবা। সঙ্গে করে পুলিশ আগে থেকেই নিয়ে এসেছি। শুধু ভিতরের ড্রামাটার কাহিনী শুনার জন্য ওনাদের বাইরে রেখে এসেছিলাম।

তুমি এটা ঠিক করলা না মেঘ তোমাকে পস্তাতে হবে। নিজের স্বামীর হাতে হাতকড়া পড়াইছো মনে রেখো।

আরে যা পা*পী কোথাকার। তুই কি করবি? অনেক আগে আমার এসব করা উচিত ছিলো! তাহলে তুই এতো সুযোগ পেতি না।

আজকের এই অপমান আমার মনে থাকবে। বলে দিলাম এক মাঘে কোনোদিন শীত যায়না। আমারো একদিন আসবে সুযোগ তখন বুঝিয়ে দিবো।

পুলিশ বলে এই চল! এতো কথা বলিস ক্যান? পুলিশ হামজাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায় লকাপে।

মেঘ সবার কাছে আবারো মাফ চায়। বিশেষ করে রিয়া নীলার কাছে। রিয়া, নীলা বলে আমরা ভাবতেও পারিনাই তুমি এতোবড় স্টেপ নিবা। তুমি ভেঙ্গে পড়ো না নীলা এই চৌধুরী পরিবার তোমার সাথে আছে।

মেঘ বলে কিযে বলো না তোমরা এক পা*পী*র জন্য আমি কেনো কষ্ট পাবো। ওর এসব সাজা আরো আগে দেওয়া উচিত ছিলো।

নীলা বলে ধন্যবাদ মেঘ।

আমি এবার তাহলে আসি। আমাকে আপনারা মাফ করবেন ___ শারমিন বললো।

আর্জিনা, শায়লা বলে উঠলো আজ থেকে তুমিয়ো আমাদের মেয়ের মতো। তোমাকে আমরা আর ওই জীবনে যেতে দিবো না তুমি আজকে এখানে থাকো।

আমি এখানে থাকতে পারবো না। আর আপনারা আমাকে মেয়ে বলেছেন এটাই অনেক। আমি আকাশ বাবুর সামনে থাকতে পারবো না এসবের পর।

এরপরে নীলা আকাশের প্যান্ট থেকে ওয়ালেট বের করে চেকবুক বের করে, সাইন করে দিলো শারমিনকে। যতো লাগে বসিয়ে নিয়ো। আর শুনো সাধারণ লাইফ লীড করো।
তোমাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিবো আমরা কথা দিলাম।

শারমিন কিছুতেই চেকবুক হাতে নিতে চাইলো না সবাই তাকে বুঝিয়ে দিয়ে হাতেদিলো। শারমিন চেকবুকটা হাতে নিয়ে দ্রুত ওই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলো লজ্জিত হয়ে।

এরপরে আকাশকে ধরে ধরে ঈশান আর ইমরান নীলার রুমে নিয়ে যায়।

চলবে,,,,

[ গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, হামজার জন্য কিরকম লাগছে?আর কোরবানির শুভেচ্ছা রইলো সবার কাছে। ভালোভাবে মার্কেট করেন সকলেই ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here