দাম্পত্য_জীবন #মেহু_আপু #পর্ব_২০

0
223

#দাম্পত্য_জীবন
#মেহু_আপু
#পর্ব_২০

ড্রাইভার আকাশের কি হয়েছে? আর এই মেয়েটি কে? কি হলো ড্রাইভার কিছু বলছো না কেনো ___ আর্জিনা বললো।

আমি কিছু জানিনা ম্যাম, আমাকে নীলা ম্যাম স্যারকে আর এই মেয়েকে নিয়ে আপনাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো ___ ড্রাইভার বললো।

নীলা,রিয়া,উষশী,ঈশান,ইমরান কই? আকাশের এই অবস্থা করলো কে? তোমরা সবাই কই গো ড্রয়িং রুমে আসো। দেখো আকাশকে কারা জানি মাতাল করেছে ___ আর্জিনা বললো।

আজগর,শুকর,শায়লা আর্জিনার ডাকে ড্রয়িংরুমে দ্রুত আসলো। এসে আকাশের এই অবস্থা দেখে সবাই প্রশ্ন করলো ড্রাইভারকে, আকাশের এই অবস্থা কে করলো। ও তো কখনো ক্লোড ড্রিংস নেয় নি জীবনেও । মাতাল করলো কে? আমাদের ছেলেকে?

আমি কিছু জানিনা স্যার, বিকজ আমি গাড়ি নিয়ে নিচে ছিলাম, নীলা ম্যাম সবটা জানে ___ ড্রাইভার বললো।

এই মেয়ে তুমি কে? এখানে কি চাও? আর তুমি চৌধুরী ম্যানশনে আসছো মানে কিছুতো ঘটাইছো। এই ব্যাপারে তোমার হাত নাই তো ___ শুকর বললো।

আমতা আমতা করতে থাকলো শারমিন মুখ থেকে শুধু একটা কথাই উচ্চারণ করলো আমি আমি আমি।

নীলা দ্রুত গতিতে বাড়িতে ঢুকলো। তার পিছনে পিছনে সবাই ঢুকলো।

নীলাকে দেখে আর্জিনা চৌধুরী বললো এসব কি বউমা?

শারমিন আর আকাশকে ড্রয়িংরুমে দেখে চক্ষু কপালে উঠে হামজার। হামজা মনে মনে বলে আজকে আমি শেষ। কিভাবে এই মছিবত থেকে রক্ষা পাবো!

এই মেয়েটির নাম শারমিন। পেশায় একজন বেশ্যা ___ নীলা বললো

বেশ্যাদের তুমি আমাদের বাড়িতে আনছো ক্যান? ছি! ছি! আমাদের মান সম্মান রসাতলে গেলো ___ আর্জিনা বললো।

আমি যেহেতু আনছি কোনো কারণ নিশ্চয় আছে। আমার পুরো কথা শেষ করতে দিন সবাই। আপনাদের কাছে অনুরোধ রইলো আমি কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ কোনো প্রশ্ন করবেন না ___ নীলা বললো।

ভাইয়া যে এতোটা পরিমাণ ক্লোড ড্রিংস নিছে। তুই আমাদের একবারো তো বললি না ___ রিয়া বললো।

বলছি সবাইকে সবকিছু তার আগে কোনো প্রশ্ন না ___ নীলা বললো?

আর্জিনা চৌধুরী বললো, বাবা আমার ছেলে মাতাল হইছে তোমরা কেউ জানো না। শুধু নীলা জানে এ কেমন কথা। তোমরা কোথায় ছিলা সব?

মা আমি সবটা বলছি একটুখানি সময় দিন ___ নীলা বললো।

মেঝো বউ তুমি কি বলতে চাও? সবাই চুপ থাকো। মেঝো বউয়ের কথা শুনো সবাই। নিশ্চয়ই এমন কিছু হয়েছে ওখানে যা মেঝো বউ ছাড়া অন্য কেউ জানেনা ___ আজগর চৌধুরী বললো।

মনে মনে হামজা বললো আজকে বোধহয় সব শেষ। কেনো যে লোভ করতে গেলাম। নীলার হিংসা করতে গেলাম। এইটা কেমন মেয়ে নিজে তো কাজ করতে পারিস নাই, উল্টে সবটা স্বীকার করছে নীলার কাছে। কি হবে আমার এখন?

আকাশকে ধরে নীলা সোফায় শুইয়ে দিলো। কারণ আকাশ নেতিয়ে পড়ছে ড্রাইভারের কাধে ঘুমুচ্ছিলো।এতক্ষণ থেকে এইখানে কি চলছে সবটাই তার অগোচরে রয়ে গেলো।এরপরে সবটা বলা শুরু করলো আমি রিয়া, ভাবী শরবত খাচ্ছিলাম। শরবত শেষ হয়েছে দেখে আকাশ শরবত আনতে যায়।সে আর আমাদের কাছে শরবত আনে নাই। শরবত রেখে দেয় টেবিলে, এরপরে হামজা ক্লোড ড্রিংস দিলো স্পষ্ট দেখলাম। আমিয়ো বাধা দেই নাই কারণ গ্লাসে যে পরিমাণ ক্লোড ড্রিংস ছিলো তা নেশা হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো না। আমরা সবাইকে সাপোর্ট দিচ্ছিলাম পার্টিতে। এমন সময় হামজা কারো ধাক্কায় তার ক্লোড ড্রিংসের সামান্য পরিমান, আমার শাড়িতে ফেলে দেয়। আমি তা পরিষ্কার করতে ওয়াশরুমে যাই। রিয়াকে বলি দেখিস তো আকাশকে।
বলেই দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে দেয় নীলা।

এরপরে কি হলো বউমা তুমি তো ওকে ক্লোড ড্রিংস নিতে দেখছিলে তবুও ওকে ওখান থেকে না সরিয়ে ওয়াশরুমে আগে গেলো ___ শায়লা বললো।

সেটাই যে আমার সর্বনাশের কারণ হবে তা যদি জানতাম। রিয়াকে না বলে নিজেই তাকে সড়াতাম। বাট আমার নিবুদ্ধির্তার কারণে আজকের এই অঘটন ___ নীলা বললো।

এরপরে কি হলো বউমা দ্রুত বলো ___ আর্জিনা বললো।

আমি ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখি আকাশ নেই। তা দেখে রিয়াকে প্রশ্ন করি তোর আকাশ ভাই কই? রিয়া বলে দেখ কোথাও আছে হয়তো ___ নীলা বললো।

সরিরে আপু আমি বুঝতে পারি নাই। আকাশ ভাই অতিরিক্ত ড্রিংস নিবে। আমি পার্টিতে মনোযোগ দিতে ব্যস্ত ছিলাম। আসলে ওইখানে ইমরান আর ঈশান ভাইয়াও ___ রিয়া বললো।

উষশী বললো রিয়া চুপ থাকো বাকিটা নীলাকে বলতে দাও। রিয়াকে থামিয়ে দেয় নাহলে আজকে দুভাইয়ের মান সম্মান ও শেষ হতো।

ঈশান আর ইমরান চোখা চোখি করে জোড় বাছা বাচলাম ভাই।

এরপরে কি হলো নীলা বউমা ___ শুকর বললো।

আকাশকে পার্টি স্থলে কোথাও না পেয়ে আমি অফিসের কক্ষে খুঁজতে থাকি? এরপরে আকাশকে আমি কনফারেন্স রুমে এই মেয়েটার সাথে অর্ধ নগ্ন অবস্থায় পাই।

এসব তুমি কি বললা বউমা? আমার ছেলে এসব কাজ করতে পারেনা। নিশ্চয় ভূল হচ্ছে তোমার ___ আর্জিনা বললো।

মা ও মাতাল ছিলো। এমন কিছু হওয়া স্বাভাবিক। আমিতো নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমার জামাই অন্য মেয়ের সাথে ছি!!

রিয়া বললো এখানে অন্য গল্পের আভাস পাচ্ছি আমি নীলাআপু। তুমি সবটা জানো সম্ভবত ক্লিয়ার করো আমাদেরকে।

আজগর চৌধুরী বলে ছি! আকাশকে আমার ছেলে বলতেও ঘৃণা লাগছে। গোলাপ ফুলের মতো সুন্দরী একটা বউ থাকতে এমন পেশার লিপ্ত মেয়েকে ডেকে এনে এসব করা।

আপনারা যেটা ভাবছেন সেটা ঠিক নয় বাবা। আমিয়ো সাময়িক সময় অবাক হয়ে গেছিলাম আপনাদের মতোন। নিজের চোখকে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। সাড়া পৃথিবীর আলো আমার কাছে আধার হয়ে ধরা দেয়। কিন্তু এমন সময় নিজের কানে কয়েকটা শব্দ আসে আমি নীলাকে ভালোবাসি। খুব খুব ভালোবাসি। এমন বাক্য পেয়ে আমার বুঝতে বাকি রইলো না। আকাশ মাতাল অবস্থায় আছে এবং শারমিনকে নীলা ভেবে ওর প্রতিটা কাজে রেসপন্স করছিলো। আমার স্বামীকে কেউ জোড় করে ফাঁসাতে চেয়েছিলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীলা 😟

আমি জানতাম আমার আকাশ এরকম কিছু করতেই পারেনা। এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না আমার টাকাওয়ালা ছেলে দেখে ওর পিছনে লেগে গেছো। তোমার বাবা মায়ের শিক্ষা কিরকম যে একটা মেয়েকে এরকম পেশায় লিপ্ত করেছে।

শারমিন এবার হু হু করে কেঁদে দেয়।

মা এসব কাজে ও একটা পুতুল। ওকে কেউ টাকার লোভ দেখিয়ে এরকম কাজে আসক্তি করে। আসলে ওর বাবা মা কেউ নেই ছোটবেলা থেকে অনাথ। খেতে পারতোনা। জীবনে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ও এরকম পেশা বেছে নেয়।

শারমিন এবার মুখ খোলে। বাকিটা আমি বলছি। আসলে আমি ছোট থেকে জীবিকার পথ হিসাবে এই পেশাকে বেছে নিয়েছিলাম। অনেকের দরজায় দরজায় ঘুরছি কেউ কাজ/ভাত দিতো না। ভিক্ষা করে বছর দুয়েক চলতাম। কিন্তু আস্তে আস্তে সবাই ভিক্ষা দিতে চাইতো না আমাকে, ভিক্ষার বদলে সবাই আমাকে ভোগ করার প্রস্তাব দিতো । প্রস্তাবে রাজি থাকতাম না বলে টানা ৩ দিন ভিক্ষা পাই নাই। খাবারের জন্য দারস্থ হলে সবাই টাকা চাইতো নাহলে ভোগ করতে চাইতো আমার দেহটাকে ।একদিন ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে এক হোটেলে যাই খাবার চাইতে । ওইখানে হোটেলের মালিক আমাকে শর্ত দেয় খাবার দিতে পারি, যদি আমি তার চাওয়া পাওয়া পূরণ করতে পারি। তার চাওয়া ছিলো আমার দেহ ভোগ করা। সেদিন খাবারের ক্ষুধা সহ্য করতে না পরে ১২ বছর বয়সে ৪০ বছরের লোকের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দেই। সেদিন আমার পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে আসে। চারদিকে শুধু ঝাপসা দেখতেছিলাম, মাথা ঘুরতেছিলো। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছিলো, মুখ দিয়ে শুধু গোঙানি আওয়াজ। সেদিন নরপশু টা আমার দেহটা চীড়ে চীড়ে খেয়েছিলো। ব্যাথা ছিলো ৩ দিন স্থায়ী এতোটাই ব্যাথা দিয়েছিলো সে। এরপর থেকে নিজের নষ্ট শরীর টা জীবিকার তাগিদে সব নরপশুর হাতে বিলিয়ে দিয়েছি। আসলে এই পৃথিবীতে যার বাব – মা নাই সেই বুঝে জীবন নিয়ে বাঁচার লড়াই কতোটা যুদ্ধ তারজন্য। এখন আপনারাই বলুন আমি বেশ্যা হয়েছি বাব-মায়ের জন্য নাকি অভাব আমাকে এই পথে দাড় করিয়েছে।

আই আ্যাম সরি। আসলে আমাদের সমাজে বেশ্যাদের খারাপ চোখে দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু তাদের যে বেশ্যা হয়ে উঠার পিছনে কোনো কাহিনী লুকায়িত থাকে তা আজ জানলাম। আমাকে মাফ করে দিয়ো। কিন্তু তুমি আমার ছেলের পিছনে লেগেছো ক্যানো? কে তোমাকে এই কাজের জন্য টাকা অফার করে ___ আজগর চৌধুরী বললো?

আমার কুঠিরে একদিন এই হামজা নামের লোকটি যায়।

এসব কি বলছেন আপনি? কবে গেলাম আপনার কাছে। আর আমি বেশ্যাদের কুঠিরে যাবো ক্যানো ___ হামজা বললো?

এখন চিনবেন না ভালো করেই জানি, কিন্তু আজ আমাকে দমিয়ে রাখতে পারবেন না। আসলে জীবিকার তাগিদে এতোটাই অন্ধ হয়েছিলাম! যে এক বোনের সংসার ভাঙ্গতে বসেছিলাম। সেদিন এই লোকটি আমার কাছে প্রস্তাব দেয়। আমি যদি আকাশ বাবুকে ফাঁসিয়ে দিতে পারি, তাহলে সে আমাকে ০৫ লক্ষ্য টাকা দিবে। আমি তার দেওয়া কথা বিশ্বাস না করাতে সে আমাকে ২ লক্ষ্য টাকার চেক দিছে। এই নেন চেকবকু টা।

চেকবুক টা দেখে আজগর চৌধুরী বললো এটাতো তোমারই জামাই, তোমার সাইন করা চেক।

আসলে বাবা আমাকে মাফ করবেন, আমি এই কাজটা করেছি। 😟

চলবে,,,

[গঠনমূলক মন্তব্য করবেন সবাই! আপু আপনাদের সবার ইনবক্স চেক করার অনুরোধ রইলো🙏 ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here