#আমার_ভাঙা_ক্যানভাসে (৮)
#তানজিলা_খাতুন_তানু
রুহি সম্পূর্ণ রেডি হয়ে জয়ের বাড়িতে গেল। দুজন একসাথেই কলেজ যাবে প্রতিদিনের মতোই। জয়ের মা দরজা খূলে রুহিকে হলুদ পরী হিসাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুগ্ধ হলেন,
– ‘আরে রুহু মা তোকে কি সুন্দর লাগছে দেখতে। সবসময়ে সিম্পল না থেকে একটু তো সাজতে পারিস কি মিষ্টি লাগছে তোকে।’
এত গুনগান শুনে রুহির লজ্জা লাগছে। আমতা আমতা করে বলল,
– ‘আন্টি জয় কোথায়?’
– ‘জয় তো আগেই বের হয়ে গেছে, কেন তোদের ওইখানে যায়নি?’
– ‘না।’
– ‘আমাকে তো বলল কলেজ চলে যাচ্ছে, আমি ভেবেছিলাম হয়তো তোকে নিয়ে কলেজ যাবে প্রতিদিনের মতো।’
রুহির মনটা খারাপ হয়ে যায়। জয় তো ওদের বাড়িতে যায়নি তাহলে কোথায় গেলে?
রুহি জয়কে ক্রমাগত ফোন করেই চলেছে কিন্তু ওর ফোন তোলার কোনো নাম গন্ধই নেই। রুহি মনখারাপ নিয়ে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রইল এই আশায় জয় ওকে এসে নিয়ে যাবে। রোদের তাপে ফর্সা মুখটা লাল বর্ন ধারন করেছে। রুহি তবুও জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ পর জয় কলব্যাক করল। রুহি খুশি হয়ে ফোনটা রিসিভ করল কিন্তু খুশিটা দীর্ঘস্থায়ী হলো না।
– ‘হ্যালো রুহি আমার একটু কাজ পড়ে গেছে রে তাই আমি কলেজ চলে এসেছি তুই প্লিজ একা চলে আয়।’
জয় কথাগুলো একদমে শেষ করে ফোনটা কেটে দিলো, রুহি বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করতে লাগল। এর আগে এইরকম ঘটনা কখনোই ঘটেনি, জয় আর রুহি সবসময়েই একসাথেই কলেজ যাতায়াত করে তাহলে আজকে কি হলো!
রুহা বিষন্ন মন নিয়ে কলেজে গেল, যদিও বা যাবার ইচ্ছা ছিল না কিন্তু এখন বাড়ি ফিরলেও সবাই নানা প্রশ্ন করবে রুহির ইচ্ছা নেই কারোর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে তাই বাধ্য হয়ে কলেজের দিকে পা বাড়াল।
তীব্র গরম, রোদের তাপের থেকেও বেশি জয়ের একা চলে যাওয়াটা রুহির কাছে বেশি কষ্টের। কই আগে তো এইরকম কখনোই করেনি আজকের মতো একটা দিনে জয় এইরকম করল কেন!
রুহি কলেজে আসার পর থেকে সকলের সাথেই দেখা হচ্ছে কিন্তু আসল মানুষটির দেখা পাচ্ছে না। দুটি চোখ শুধু তাকেই খুঁজে চলেছে, যার জন্য এতটা সুন্দর করে সাজল সেই মানুষটিই কোথায়?
– ‘কিরে রুহি কি খুঁজছিস এদিক ওদিক।’
– ‘জয় কোথায় রে।’
– ‘ঠিক জানি না। তবে ওইদিকে যেতে দেখেছিলাম।’
– ‘আচ্ছা তোর থাক আমি একটু আসছি।’
রুহি পা বাড়িয়ে চলে গেল। রুহির যাবার দিকে তাকিয়ে ওর এক বন্ধু বলল,
– ‘ওদের দুজনকে দেখলে মনে হয় ওদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের থেকে বেশি কিছু।’
– ‘হা সেটা আমার ওহ মনে হয়। দুজন দুজনের প্রতি কত কেয়ারিং যাই বলিস ওরা কাপল হলে কিন্তু মন্দ লাগবে না।’
কিছু কিছু কথা রুহির কানেও আসলো কিন্তু সেইদিকে পাত্তা না দিয়ে জয়ের খোঁজ করতে লাগল।
**
রুহির দুনিয়া থমকে গেল। জয়কে একটা অন্য মেয়ে জড়িয়ে ধরে আছে আর জয়ও। রুহি কি প্রতিক্রিয়া দেবে সেটা বুঝে উঠতে পারল না, এলোমেলো পায়ে এগিয়ে আসতেই একটা কথা শুনে মাথায় বিনা মেঘে ব’জ্রপাত হলো,
– ‘আই লাভ ইউ জয়।’
রুহির চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। সমানের দুজন যে একজোড়া কপোত কপোতি সেটা বুঝতে অসুবিধা হলো না। রুহি এলোমেলো কন্ঠে বলে উঠল,
– ‘জয়।’
রুহির কন্ঠস্বর শুনে দুজন দুইদিকে সরে দাঁড়ায়। জয় এলোমেলো হয়ে জিজ্ঞেস করে,
– ‘রুহি তুই এইখানে?’
– ‘কেন খুব কি অসুবিধা করে দিলাম।’
– ‘এইসব তুই কি বলছিস!’
– ‘মেয়েটা কে জয়।’
– ‘তোকে আমি সব বলছি শোন আমার কথাটা।’
জয় রুহির দিকে এগিয়ে আসতে গেলে রুহি এক পা পিছিয়ে গিয়ে বলল,
– ‘খবরদার কাছে আসবি না। এই মেয়ে তোমার সাথে জয়ের সম্পর্ক কি? তুমি কি জয়কে ভালোবাসো!’
জয় বুঝল পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, তাই নাসরিনকে বলল,
– ‘নাসরিন তুমি এখন যাও। আমি পরে তোমার সাথে কথা বলছি।’
– ‘ওকে।’
নাসরিন চলে যেতে জয় রুহিকে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগল কিন্তু রুহি তো বোঝার পাত্রী নয়, কিছুতেই বুঝতে চাইছে না। জয়ের কোনো কথা না শুনেই বেড়িয়ে যায়।
এলোমেলো বি’ধ্বংস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে নিজের সমস্ত সাজ খুলে ফেলে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ে,
– ‘কেন এইরকম করলি জয়, কেন!’
২দিন কেটে যায়। রুহি জয়ের সাথে কোনোরকমের যোগাযোগ করেনি সু’ক্ষ্মভাবে এড়িয়ে গেছে, বিষয়টা নিয়ে জয়ের মনেও একটা অভিমান জমা হয়েছে।
রুহি কলেজে আসতেই ওর বন্ধু বলল,
– ‘কিরে তোর এই অবস্থা কেন?’
– ‘কিছু না একটু শরীর খারাপ ছিল।’
– ‘তুই তো দুইদিন আসিসনি আর এইদিকে অনেক কিছু ঘটে গেছে।’
– ‘কি?’
– ‘জয় তো প্রেম করছে, নাসরিন বলে একটা মেয়ের সাথে। আর সেই বিষয়টা কলেজের সবাই জেনে গেছে। ওরা তো এখন হিট কাপল।’
রুহি রাগে গা জ্ব’লে যাচ্ছে না পারছে সহ্য করতে আর না পারছে কিছু বলতে চুপচাপ কথাগুলো গিলে চলেছে। তখন পাশ থেকে আরেক বন্ধু বলল,
– ‘কিন্তু ভাই নাসরিন মেয়েটা না ঠিক সুবেদার নয়, এর আগেও কয়েকটা প্রেম করেছে না জানি জয় কি দেখে প্রেম করতে রাজি হয়েছে।’
কথাটা রুহির মাথায় গিয়ে লাগল। জয় ওর ছোটবেলার বন্ধু কখনোই ওর খারাপ চাইবে না তাই সিদ্ধান্ত নিলো নাসরিনের আসল খবর বার করেই ছাড়বে। ফ্রেন্ডদের সাহায্যে রুহি নাসরিনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে নাসরিন প্লে গার্ল টাইপ মেয়ে, বয়ফ্রেন্ড বদলানো রোজকার স্বভাব। রুহি নিজের সমস্ত অভিমান সরিয়ে রেখে জয়ের কাছে নাসরিনের বিষয়ে কথাটা বলতে যায় আর সেইখানেই সমস্যা বাদে।
– ‘জয় তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।’
– ‘কি তাড়াতাড়ি বল।’
– ‘জয় তুই নাসরিনকে ভালোবাসিস!’
– ‘সবটা তো জানিসই তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছি কেন?’ (বিরক্ত হয়ে)
– ‘কিন্তু জয় তুই এইটা কি করলি, রিলেশন যাবার আগে আমাকে একটাবার বললি না। আর কাকে ভালোবাসবি সেটা কি একটু দেখে নিবি না।’
জয় এমনিতেই প্রচন্ড চিন্তিত ছিল তারউপরে রুহির এইসব কথাবার্তা শুনে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে রাখতে পারল না। বিরক্ত হয়ে বলল,
-‘দ্যাখ রুহু তুই আমার ফ্রেন্ড, ফ্রেন্ডের মতোই থাক আমি কার সাথে প্রেম করবো, কাকে ভালোবাসব সবটাই আমার পার্সোনাল বিষয়। এইসব বিষয়ে তুই একদম নাক গলাস না।’
রুহি আহত কন্ঠে বলল,
– ‘জয় তুই একবার আমার পুরো কথাটা শোন।’
– ‘এইসব বিষয়ে কিছু বললে আমি ভুলে যাবো তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড।’ (ক্ষিপ্ত হয়ে)
রুহির চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। জয়ের এই পরির্বতন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। যে ছেলেটা রুহিকে ছাড়া কিছুই বুঝত না, আজকে সেই রুহিকে এতটা কঠিন স্বরে নয় দিচ্ছে। সত্যি মানুষ কতটা বদলে যায়! রুহি নিজের চোখের পানিটা মুছে নিয়ে বলল,
– ‘ঠিক আছে তোর যেটা ইচ্ছা সেটাই করিস। তবে মনে রাখিস এই দিনটার জন্য তুই একদিন অনেক আফসোস করবি।’
রুহি কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়। আর বাকি অংশটা তো আমাদের জানাই। অল্প বয়সে ছেলে মেয়েদের মাঝে আবেগ বেশি থাকে, আবেগের বশবর্তী হয়ে অনেক সময়েই তারা অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নেই। রুহি ও নিজের বন্ধু ও ভালোবাসার মানুষটির ওইরকম ব্যবহার মেনে নিতে পারেনি, জয়ের শেষ কথাটাকে ধরে বাড়ি ছেড়েছিল। আর এখনো সেই কথাটাকে ধরেই অভিমান করে আছে।
#চলবে…
এইবার আপনাদের মত কি দোষটা কার ছিল?