দাম্পত্য_জীবন #মেহু_আপু #পর্ব_২৬

0
199

#দাম্পত্য_জীবন
#মেহু_আপু
#পর্ব_২৬

তারা খান আকাশকে পুরা মাতাল দেখে চেম্বার থেকে বেড় করে।ব্যাকআপ পথ দিয়ে নিজের রুমে নিয়ে যায়।

নীলা ফোনে কথা বলে এসে আকাশকে দেখতে না পেয়ে ফোন দেয়। কিন্তু ফোন সুইচ অফ বলে। পরে রিয়াকে ডাক দেয় নীলা। রিয়া বলে না আপু আমি তো ভাইয়াকে শেষবার তোর সাথে দেখেছিলাম। নীলা আকাশকে সব জায়গায় খোঁজা শুরু করে কিন্তু কোথাও পায় না। এরপরে নীলা সবটা ঈশান, ইমরানকে বলে। ঈশান ও ইমরান ফোন দিলে ফোন সুইচ অফ বলে। সবাই মিলে পার্টি ইনজয় না করে আকাশকে পুরা অফিসে খোঁজে কিন্তু পায়না। উষশী বাড়িতে ফোন দেয় আকাশ বাড়ি ফিরছে কিনা কিন্তু বাড়ির লোক বলে কই আকাশ তো আসে নাই। খোঁজখোজি প্রচুর করেও আকাশকে কেউ পেলো না।

রাত বারোটা বেজে গেলো। সবাই পার্টি ইনজয় শেষ করে একেকজন বাড়িতে ফিরলো। নীলা এবার কাঁদা শুরু করলো, ঈশান এসে নীলাকে শান্তনা দেয়। এরপরে ইমরান কে বলে তুই তোর ভাবী আর রিয়াকে নিয়ে বাড়িতে ফির। আমি আর নীলা ঈশানকে নিয়ে বাড়ি যাবো।

আচ্ছা ভাবি চলেন। এরপরে ইমরান রিয়া আর উষশী কে নিয়ে চৌধুরী ম্যানশনে ফিরে। বাড়ির সকলেই ঘুমিয়ে গেছে। তাই ওরাও টিপি টিপি পায়ে নিজের রুমে ফিরলো। কারণ এখন কারো ঘুম ভেঙ্গে গেলে ওরা ক্যান ফিরে নাই তার কৈফিয়ত দিতে হবে।

নীলা আমরাতো অফিসের প্রত্যকটা চেম্বারের আনাচে কানাচে আকাশকে খুঁজলাম। আকাশ কোথাও নেই, আমাদের বিকল্প পদ্ধতি বেছে নিতে হবে।

কি পদ্ধতি বেছে নিবো ভাইয়া! ও তো ছোট বাচ্চা না! কোথাও গেলে আমাদের ফোন করে যাবেনা! আমার ক্যান জানি মনে হচ্ছে ও বিপদে আছে।

বিপদের কথা মাথায় এনো নাতো ভালো লাগেনা। আচ্ছা কাজের সূত্রে কোথাও গেলে তো আমাকে বলতো।

এরপরে আকাশকে সব জায়গায় খোঁজে না পেয়ে মার্কেটের অলি গলিতে খোঁজা শুরু করে কিন্তু কোথাও আকাশকে পায়না। রাত প্রায় তিনটা বেজে গেলো, তখন ঈশান বললো নীলা চিন্তা করিয়ো না! আগামীকাল সকালের মধ্যে ভাই না ফিরলে থানাতে স্টেপ নিবো। কারণ রাতটা আমাদের দেখা উচিত।

হুম ভাইয়া ঠিক বলছেন! কিন্তু আমার খুব টেনশন হচ্ছে সে যদি বিপদে পড়ে।

এরকম কিছু ভাবিয়ো নাতো, চলো বাড়ি ফিরি বাকিটা কাল ভাববো।

এরপরে নীলা আর ঈশান বাড়িতে ফিরে।
ঈশান রুমে যেয়ে দেখে উষশী অঘোরে ঘুমাচ্ছে তাই উষশীকে না ডেকে শুয়ে পড়ে ঈশান।

নীলা কিছুতেই রুমে যেয়ে ঘুমে আচ্ছন্ন করতে পারছে না নিজেকে। শুধু বারবার মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছিলো আকাশ ক্যান এরকম করছে। নাকি সে বিপদে পড়লো এসব ভাবতে ভাবতে ফজরের আযান দিয়ে দিলো। তখন নীলা নামাজ শেষ করে, তার স্বামীর জন্য আল্লাহর কাছে দোআ চাইলো। হে আল্লাহ আমার স্বামী যেখানেই আছে তাকে সহীহ সালামতে রাখিয়েন। দ্রুত তাকে আমার ঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

আকাশের ঘুম ভেঙ্গে যায়।এরপরে চোখ খোলে দেখে চারদিকে অন্ধকার। আকাশের মাথা খুব ধরেছে, এরপরে অনুভব করে আকাশের বুকে কার জানি মাথা। আকাশ ভাবে নীলা বোধহয় তাই সে বউ বউ বলে ডাকা শুরু করে। তারার ঘুম ভেঙ্গে যায় আকাশের ডাকে। তারা ল্যাম্পপোস্টের সুইচ অন করে দেয়।
ল্যাম্পপোস্টের আলোতে তারার মুখ দেখে আকাশ অবাক হয়ে যায়। আকাশ দ্রুত উঠে পড়ে, এসব কি? আমি এখানে কেনো। আপনি আমার সাথে কি করেছেন?

আমি কি করবো তুমিতো আমাকে সারারাত জোড় করে এই কথা শেষ হওয়ার আগেই কেঁদে দেয় তারা।

এসব সত্যি হতে পারে না! আমি কখনো আপনার সাথে এরকম কিছু করতে পারিনা।

নিজেকে অর্ধনগ্ন দেখেও এ কথা কিভাবে বলো তুমি। আমি জানতাম তুমি মাতাল হয়ে আমার সাথে ওসব করছো জোড় করে। এরজন্য আমি ছবি তুলে রেখেছি দেখো।

আকাশ পিক তিনটা দেখে অবাক হয়। কারন একটা সেলফি পিক। আর বাকি দুইটা দুজনে অর্ধনগ্ন হয়ে শুয়ে রয়েছে, এমন পিক। এই দুইটা পিক দেখে আকাশ নিশ্চিত হয় তারার সাথে আরো কেউ আছে নাহলে তৃতীয় ব্যাক্তি ছাড়া এভাবে পিক তোলা সম্ভব না। আমি পিক দেখে নিজেকে জার্জ করবো কিভাবে ভাবলেন আপনি?

এরকম পিক দেখেও তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি আমার সাথে কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো।

আকাশ ভালোভাবে বুঝলো তার সাথে ফাঁদ পেতেছে তারা। নিজের শার্ট পড়ে নিয়ে, ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো সুইচ অফ! ফোনটা অন করে, তারাকে বললে আমাকে বাসায় ফিরতে হবে।

এসব কি বলছো তুমি? আমার সাথে সারারাত মাস্তি করে কিভাবে ভাবলা তোমাকে বাড়ি যেতে দিবো।

তাহলে কি চান আপনি? দেখেন আমার স্ত্রী আছে। আপনি যেহেতু বলছেন আপনার সাথে আমি ফিজিক্যাল হয়েছি তাহলে নিজেকে প্রটেট করার চেষ্টা করেন নাই কেনো।

অনেক করেছি তুমি ছাড়ো নাই। শুধু এই কথাটাই বলছিলেন আপনি যেই কথার জন্য আমিয়ো আর জোড় করি নাই। তুমি নাকি আমাকে ভালোবাসো! সেই ছোটবেলা থেকে আমাকে পেতে চাইছিলে এই কথাতে আমি নরম হয়ে গেছি।

সরি! এসব কিছুই আমার মনে পড়ছে না। তাই আমি চললাম।

তারা আকাশের হাত ধরে বলে! আমার সর্বনাশের কারণ তুমি। এখন যদি তুমি এসব কিছু অস্বীকার করো তাহলে আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়বো না।

কি করবেন আপনি?

আমি এই পিক গুলো ভাইরাল করবো। আর বলবো মিঃ আকাশ চৌধুরী আমাকে রেফ করেছে। ধর্ষণের অভিযোগ দিবো তোমার নামে। একবার ভাবোতো এই কেচে পড়লে তোমার ক্যারিয়ার, কোম্পানির কি হাল হবে। বাইরের লোক তোমার নাম কুৎসিত কথা বলবে। সমাজ তোমাকে ধর্ষণ কারী হিসাবে চিনবে। তোমার স্ত্রী তোমাকে ছেড়ে যাবে। তোমার বাসার লোক তোমাকে বের করে দিবে। আকাশ চৌধুরীর ক্যারিয়ার,মান সম্মান, কোম্পানি, স্ত্রী, বাবা-মা, ভাই ভাবি সব রেপুটেশন হাড়াবা। সর্বশেষ তোমার স্থান কারাগার হবে।

আকাশ ধ*প করে বসে পড়ে। এরপরে তারাকে বলে কি চান আপনি । ক্যানো এসব করছেন আমার সাথে।

আমি চাই তুমি তোমার স্ত্রী কে তোমার লাইফ থেকে বের করে দাও? এরপরে আমাকে বিয়ে করো।

না এটা হতে পারেনা! আমি নীলাকে খুব ভালোবাসি! পারবো না নীলাকে ছেড়ে দিতে।

তুমি কি করবা আমি এসব জানিনা! সর্বশেষ চাই তুমি যদি তোমার রেপুটেশন বাঁচাতে চাও। নীলাকে তোমার ছাড়তেই হবে! আর যদি তা না করো আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পথ বেছে নিবো।

আকাশ এই কথা শুনে অনেকক্ষণ নীরব থাকে! এরপরে বলে আমাকে কিছুদিনের সময় দেন।

কতদিন সময় লাগবে তোমার আমি তোমাকে ০৪ দিনের বেশি সময় দিতে পারবো না। এরমধ্যে নীলাকে ছাড়তে হবে। আমাকে বিয়ে করতে হবে। কারণ আমার সব কিছু তুমি উজাড় করে ভোগ করছো গতরাতে !

আকাশ এরপরে চলে যায় তারার কাছ থেকে। নিজের বাড়ির দিকে রওনা হয়।
মনে মনে শুধু এই কথাটাই ভাবার চেষ্টা করছে কাল রাতে কি আদৌও তারার সাথে ও এরকম করেছিলো। কিছুতেই মনে পড়ছে না আকাশের শুধু আকাশের এই কথা মনে পড়ছে ক্লোড ড্রিংস নেওয়ার সাথে সাথে আকাশ একটা ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। পরে ভোররাতে তারার রুমে নিজেকে আবিষ্কৃত করে।

আকাশ বাড়িতে ফিরে খুব সকাল বেলা তখন বাড়ির কেউ উঠে নাই। তাই খুব সহজেই নিজের রুমে যেতে পারলো। যেয়ে দেখে নীলা ঘুমায় নাই বিছানায় মাথা হেলে ফ্লোরে বসে আছে।
নীলাকে এইভাবে দেখে আকাশ প্রশ্ন করে ঘুমাও নাই কেনো?
সারারাত কই ছিলে? ফোন বন্ধ করে রাখছিলা কেনো? কত খুঁজেছি তোমাকল পাই নাই। সেই যে আমি ফোনে কথা বলতে গেলাম এসে দেখি তুমি নাই। বলো কোথায় ছিলা সারারাত।

আকাশ কি বলবে কিছু ভাবতে পারলো না! কারণ মাথা ভর্তি টেনশন আকাশের। তাই সে খিটমিটে বললো যেখানে ছিলাম খুব ভালো ছিলাম।

তুমিতো ভালো ছিলা ঠিক আছে! আমাকে কি একটিবার বলা যেতো না নীলা আমি এইখানে আছি তুমি টেনশন করিয়ো না।

এই তুমি বেশি কথা বলবানা তো। এখান থেকে যাও তুমি।

ও সারারাত খোঁজ পাবোনা কোথায় ছিলা। প্রশ্ন করতেই ঝাড়ি দিবা এটা কোন স্বভাব তোমার। তুমিতো এরকম ছিলানা।

উফফ নীলা প্যাম্পার করা বন্ধ করবে আমার সামনে! এখান থেকে যাওতো তুমি তোমার মুখটা সহ্য হচ্ছে না বলেই ব্লেজার টা নীলার গায়ে ফিক দিলো।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here