দাম্পত্য_জীবন #মেহু_আপু #বোনাস_পর্ব_২৫

0
226

#দাম্পত্য_জীবন
#মেহু_আপু
#বোনাস_পর্ব_২৫

ঈশান দৌড়ে আসে স্যাম্পল নিয়ে। আকাশকে বলে তারা খান আমাদের অর্ডার দিয়ে দিছে। তার পনেরো হাজার মাল কিছুক্ষণের মধ্যে ঢুকে যাবে। এই সময়ে সব ডিজাইনারকে ডিজাইন টা শিখাতে হবে।

আমার ডিজাইন কমপ্লিট আকাশ। তুমি এইটার ৩৬ টা কপি করার ব্যবস্থা করো। ভাইয়া তুমি সব ওয়ার্কারকে আকাশের চ্যাম্বারে ডাকো __ নীলা বললো।

ঈশান তখন ম্যানেজারকে কল করে চেম্বারে ডাকে। ম্যানেজার রুমে ঢুকলে ঈশান ৩৬ জন ডিজাইনার কে আবারো চ্যাম্বারে আসতে বলে। এই কথা শুনে ম্যানেজার ভয় খায়, সে বলে স্যার সময়ের মধ্যে হয়ে যাবে। চিন্তা করিয়েন না, ওরা কাজ করছে।
ঈশান রেগে যেয়ে ম্যানেজার ধমক দেয়। বেশি কথা বলেন কেনো যা করতে বলেছি তাই করেন।
ম্যানেজার ভয়ে ভয়ে চ্যাম্বার থেকে বের হয়ে পিওন কে বলে দেয় সব ডিজাইনার কে আকাশ স্যার চ্যাম্বারে যেতে বললো দ্রুত।

আকাশ ৩৬ টা কপি বের করলো। ঈশান প্রজেক্টর রেডি করলো। উষশী মনে মনে বললো এই নীলা এতো বুদ্ধিমতী আল্লাহ ক্যান আমার মাথায় বুদ্ধি দিলো না। ঈশান প্রজেক্টে কিভাবে পাঞ্জাবিতে নকশা বসাতে হবে তার সব কাল্পনিক কাজ তৈরি করে ফেললো।

পিওন যেয়ে সকল ডিজাইনার কে বললো আকাশ স্যারের চেম্বারে দ্রুত যেতে। সকল ডিজাইনার ভয়ে ভয়ে আকাশের চেম্বারে ঢুকলো। ডিজাইনার গুলা মনে মনে বলা বলি করলো এখনো তো আমাদের ডিজাইন কমপ্লিট হয় নাই, তাহলে স্যারকে আমরা কি দিবো?

সকল ডিজাইনার কে দেখে নীলা সবাইকে বললো কেমন আছো তোমরা সবাই। ডিজাইনার গুলো বললো ভালো আছি ম্যাডাম। আপনি কেমন আছেন?
হুম আমিয়ো ভালো আছি। আজকে তোমাদের এখানে ডাকার উদ্দেশ্য হলো, তোমরা ইতিমধ্যে অবগত হয়েছো আমাদের কোম্পানিতে নতুন বায়ারের আগমন হয়েছে। তিনি স্যাম্পল দেখে তৈরি করার পর কাজের অর্ডার দেয়। তোমরা কি এখনো স্যাম্পলের অর্ডার তৈরি করতে পেরেছো।

সকল ডিজাইনার না না বললো। সবাই চেষ্টা করছে।

আমি তোমাদের হয়ে এই কাজটি করে ফেলেছি। আমি একটি স্যাম্পল তৈরি করে ফেলেছি। বায়ার সেই স্যাম্পল দেখার পর অর্ডার আমাদের দিয়ে দিছে।

ডিজাইনার গুলো একে অপরের মুখ দেখে খুশি ফিল করতেছিলো।

শুনো আমি তোমাদের কোম্পানিতে কাজ পাইয়ে দিছি। কিন্তু আমার একার পক্ষে কি পনেরো হাজার মাল কমপ্লিট করা সম্ভব না। কারণ এতে সময় লাগবে। তোমরা ৩৬ জন যদি এবার মনোযোগ সহকারে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বুঝিয়ে নাও তাহলে তোমরাও তৈরি করতে সফল হয়ে যাবে।

সকল ডিজাইনার জ্বি ম্যাম বললো।

ভাইয়া ওদের সবটা বুঝিয়ে দেন। ঈশান এরপরে ল্যাপটপ অন করে, প্রজেক্টর মাধ্যমে
মাল্টিমিডিয়া অন করে সবাইকে বড় করে কাজ টা দেখালো কিভাবে ডিজাইন করতে হবে।

সকল ডিজাইনার খুব খুশি। কারণ তারা ডিজাইনার একটু গাইডলাইন পেয়ে সবটাই যেনো বুঝে গেছে।

এরপরে আকাশ সবাইকে জেরক্স কপি গুলো হাতে দিয়ে বললো। এই কাজের জন্য আমাদের ২০ দিন সময় দিছে। তোমরা এতোটাই মনোযোগী হও যে যেনো ১৫ দিনের আগেই সবটা তৈরি করতে পারি।

সকল ডিজাইনার জেরক্স কপি নিয়ে আকাশের কথাতে হ্যা মিলালো।

এবার তোমরা নিজ নিজ ডেস্কে যেয়ে কাজ করতে পারো।

উষশী বললো এতো ট্যালেন্ড বউ থাকতে কিসের চিন্তা হয় তোমাদের। টেনশন করিয়ো না দুই ভাই।

তুমিয়ো তো নীলার কাছ থেকে কিছু টা বুদ্ধি নিতে পারো। খালি বসে বসে খেয়ে মুটকি হচ্ছো ___ ঈশান বললো।

আমাকে মুটকি বললা এই নীলা চলোতো এদের সাথে কথা বলবো না। আকাশ নীলাকে ইশারা করলো যাও তুমি আমরা কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি।

এরপরে নীলা আর উষশী বাড়ি চলে আসলো

ঈশান নিজের চেম্বারে গিয়ে কফি বানিয়ে আনতে বললো পিওনকে। কারণ এতক্ষণ থেকে যা ধকল গেলো।

আকাশ রেগে কটমটে ম্যানেজারকে ডাকলো। ম্যানেজার ভিতরে ঢুকলো। আপনাকে কোম্পানিতে কেনো রাখা হয়েছে নুরু স্যার। একজন ম্যানেজার হয়ে জীবনে দেখলাম না নতুন কোনো বায়ারের কাজ সূসম্পূর্ণ করতে পেরেছেন। সব কাজে যদি ঈশান আর আকাশ থাকে তাহলে আপনাকে বেতন দিয়ে রাখবো ক্যানো।
নুরু বললো স্যার আমিতো চেষ্টা করতেছিলাম কিন্তু আপনারা আমাকে তো সময় দিলেন না।
কত সময় লাগে তোমার? নতূন আরেকটা সূর্য উঠার অপেক্ষা করতাম। শুনুন নুরু সাহেব আর কত গা ভাসিয়ে চলবেন। এবারের কাজটি যেনো ১৫ দিনের আগে শিপমেন্ট করতে পারি। সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
জ্বি স্যার হয়ে যাবে।
প্রতিদিন টার্গেট থাকবে ১২০০ করে মাল
৩৬ জন ডিজাইনার একেক জন করে ৩৫ পিস কাজ করবে প্রতিদিন। যার হবে না তার ছুটি হবেনা। এভাবে কাজ করুন আর করতে না পারলে চাকরি ছেড়ে চলে যান।
পারবো স্যার।
আচ্ছা তাই যেনো হয়। প্রতিদিন টার্গেট আমি বুঝে নিবো তোমার কাছ থেকে কোনোদিন যদি দেখি ১ পিস কম আপনার চাকরি সেদিনেই শেষ। ওকে এবার আসতে পারেন।
নুরু সাহেবের মাথা ভর্তি টেনশন। সব ডিজাইনার কে যেয়ে আকাশ স্যারের কড়া নির্দেশ গুলো শুনালো। প্রত্যেকটা ডিজাইনার মহা মসিবতে পড়ে গেলো। সবাই কাজে সুন্দর করে মনোনিবেশ করলো।

আকাশ স্বতির হাসি দিলো। কারণ সে জানে নুরুকে কড়া হুমকি দিলো সময়ের মধ্যে সব কাজ হবে। তাই সে এসব করলো। এমন সময় চেম্বারে বায়ার তারা খানের আগমন। আকাশ তা দেখে বসতে বললো। ম্যাডাম কি খাবেন বলেন চা, না কফি।
কিছু চাইনা আকাশ তুমি আমার সাথে আননোনের মতো করছো ক্যান? আমরা দুজন দুজনকে খুব ভালো করে চিনি এরপরেও এইরকম বিহেভ আনএক্সপেক্সট।
পনেরো বছর এগিয়ে গেছে ম্যাম। এখন আপনি আমার কোম্পানির শুভাকাঙ্ক্ষী। আপনার সাথে তুমি তুমি করে কথা বলে বেয়াদপি করতে চাইনা ম্যাম।
তুমি যে আমাকে ভালোবাসতা সেসব শৈশবের স্মৃতি তোমার মনে পড়েনা।
শৈশব নিয়ে পড়ে থাকলে হবে ম্যাম এখন আমি যুবক। আমার স্ত্রী আছে ঘড়ে আমি তার ভালোবাসাতে আকৃষ্ট। তাই অতীতকে ভূলে গেছি।

সে কি আমার চেয়েও সুন্দরী।

সে আমার চোখে সেরা সুন্দরী কারণ সে আমার বিপদে আপদে সবসময় পাশে থেকেছে। সে আমাকে ভালোবাসে প্রচুর আমিয়ো তাকে। তাই অতীত মনে করে তার সাথে আমি প্রতারণা করতে চাইনা ম্যাম।

বাই দ্যা ওয়ে তোমার এই কথা খুব ভালো লাগলো। আমাদের দেখা না হলে খুব ভালো হতো আকাশ। সেসব স্মৃতি গুলো এতদিন আবছা আবছা ছিলো আজকে দেখা হওয়ার সব মনে পড়তেছে। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আকাশ। একদম সুদর্শন পুরুষ মেয়েরা যেরকম জামাই চাই তুমি সেই টাইপ।

ও আচ্ছা এতদিন পর আপনি আমার রুপের প্রেমে পড়লেন। কিন্তু ম্যাম এসব কথা আর বলিয়েন না আমাকে। আমার এসব কথা শোনা পাপ।সম্পর্ক টা কাজের জায়গা পযর্ন্ত স্থায়ী থাকুক।

তারা খান আকাশের চেম্বার থেকে বের হয়ে যায় নিজের চেম্বারে বসে আকাশকে শুধু মনে মনে কল্পনা করছে।

১৫ দিন হয়ে গেলো তারা খানের সব অর্ডার কমপ্লিট করে ফেলেছে প্রত্যেকটা ডিজাইনার। সব মালের প্যাকিং শেষ। তারা খান ৬০ পিস মাল চেক করে ডিফেক্ট না পেয়ে পাস দিয়ে দেয়। মাল গুলো সিপমেন্ট হয়ে যায় ইংল্যান্ডে। তারা খান যেহেতু ২০ দিনের জন্য কোম্পানিতে এসেছে তাই তার আরো ৫ দিন থাকার ডেট রয়ে গেছে। তাই সে ইংল্যান্ডে ফিরলো না।

আর এই ১৫ দিনে তারা খান আকাশকে নানা অঙ্গ ভঙ্গিতে কাছে পাওয়ার আক্ষাংখা প্রকাশ করেছিলো কিন্তু আকাশ কিছুতেই সেদিকে পাত্তা দেয় নাই।

প্রত্যেকটা ডিজাইনার তাদের দায়িত্ব নিখুঁত ভাবে পালন করার জন্য কোম্পানি থেকে নাইট ক্লাব পার্টির আয়োজন করা হয়েছে।

সেই পার্টিতে নীলা, উষশী,রিয়া, তিনভাই অংশগ্রহণ করে।
সেই পার্টিতে ক্লোড ড্রিংসের আয়োজন করা হয়েছে। সবাই নিজ নিজ কোমলদ্রব্য উপভোগ করছিলো।
নীলার ফোন বেজে উঠে ফোন ধরার জন্য আকাশকে বলে তুমি এইখানে থাকো আমি মায়ের সাথে কথা বলে আসছি।
আকাশকে চেয়ারে একা বসে থাকতে দেখে, তারা খান ক্লোড ড্রিংস নিয়ে আকাশকে সাধে।
কিন্তু আকাশ নীলাকে কথা দিয়িছিলো সে কখনো ক্লোড ড্রিংস নিবেনা। তাই সে কিছুতেই নিচ্ছিলো না। কিন্তু বাকি সকল স্টার্ফ আর ওয়ার্কার দেখছিলো। তারা অপমানিত বোধ ফিল করছিলো তা দেখে আকাশ ক্লোড ড্রিংস টা নেয়। নুরু ম্যানেজার এসে বলে চিয়ার্স। তখন আকাশ ক্লোড ড্রিংস দুই ঢোক খেয়ে আবার সম্পূর্ণ টা শেষ করে। তারা খান আকাশকে মাতাল দেখে ধরে ধরে তার চেম্বারে নিয়ে আসে।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here