শেষটা_সুন্দর #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৩০।

0
815

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৩০।

সংবাদপত্রের অফিসের ভেতরে ঢুকতেই মেহুল সাদরাজের সামনে পড়ে। সাদরাজকে এখানে দেখেই চমকে যায় সে। সাদরাজও হঠাৎ মেহুলকে দেখে থতমত খায়। কী বলবে বুঝতে পারে না। তাও সে মুখে মেকি হাসি এনে বলে,

‘মেহুল, আপনি এখানে?’

মেহুল ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলে,

‘জি, একটা কাজে এসেছি। আপনারও কি এখানে কাজ ছিল?’

‘হ্যাঁ? ওহ, হ্যাঁ হ্যাঁ। একটা কাজে এসেছিলাম। আচ্ছা, আপনি কেন এসেছেন?’

মেহুলের মনে এখন খটকা লাগে। সাদরাজ মোটেও সুবিধার লোক না। সন্দেহের খাতা থেকে তার নামটা একেবারেই বাদ দেওয়া যায় না। তাই সে সরাসরি বলল,

‘আসলে কিছুদিন আগে, আমাকে নিয়ে খবরের কাগজে একটা প্রতিবেদন লেখা হয়েছিল। আর এখানের একজন রিপোর্টার বলেছেন সেই প্রতিবেদন’টা নাকি আমাদের ভার্সিটিরই সিয়াম নামের একজন লিখতে বলেছে। কিন্তু, এই যে সিয়াম, সে কোনোভাবেই এটা স্বীকার করছে না। তাই এখন এই ব্যাপারটা ক্লিয়ার করার জন্যই আমরা তাকে নিয়ে এখানে এসেছি।’

সাদরাজ সঙ্গে সঙ্গেই মৃদু হেসে বলে,

‘যেখানে ও কিছু করেইনি সেখানে ও কেন সবকিছু স্বীকার করবে বলুন?’

মেহুল, রিতা আর সিয়াম তিনজনেই খুব অবাক হয়। মেহুল ভ্রু জোড়া আরো কুঁচকে বলে,

‘মানে? আপনি এসব কেন বলছেন?’

সাদরাজ তপ্ত শ্বাস ফেলে। মাথার ভেতরে কথা সাজায়। অতঃপর ধীর সুরে বলে,

‘আসলে মেহুল, এইসব কিছু আমি করেছি। সিয়াম না।’

মেহুল চেতে যায়। জিজ্ঞেস করে,

‘আপনি করেছেন মানে? রিপোর্টার কি তবে আমাদের মিথ্যে কথা বলেছেন?’

‘না, আসলে ঠিক মিথ্যেও না। আমিই রিপোর্টারের কাছে আমার নাম সিয়াম বলেছিলাম। যেন আমার পরিচয়টা গোপন থাকে। ভেবেছিলাম, এই খবরের পর আপনার অনেক উপকার হবে। আপনি খুব খুশী হবেন। তারপর না হয় কোনো একদিন আপনার কাছে গিয়ে বলব, এইসব কিছু আমি করেছি। আপনাকে এই বলে চমকে দিতে চেয়েছিলাম।’

মেহুল তখন প্রচন্ড রাগ দেখিয়ে বলে,

‘আর আপনার এসবের জন্য আমাকে কতকিছু ফেইস করতে হয়েছে সেই সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা আছে? আমার সম্পর্কে কিছু করার আগে আপনি আমাকে বলবেন না? আমার অনুমতি ছাড়াই সবকিছু করে ফেললেন? আপনার জন্য অযথা আমি সিয়ামকে এত কথা শুনিয়েছি। ওর আর আমার মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। আর আপনি এতদিনে আসছেন এইসব কিছু বলতে।’

সাদরাজ অনুনয়ের সুরে বলে,

‘আমি দুঃখিত। আমি জানতাম না আপনার সাথে এতকিছু যে হবে বা হয়েছে। আমি আপনার ভালোর কথা ভেবেই এসব করেছিলাম। আপনার গায়িকা হওয়া স্বপ্ন। তাই চেয়েছিলাম ছোট্ট একটা সাহায্য করতে পারি কিনা। আমার এই ব্যবহারে আপনার খারাপ লেগে থাকলে আমি সত্যিই আন্তরিকভাবে দুঃখিত। প্লিজ, আমাকে ক্ষমা করবেন। আর সিয়াম, আমি বুঝতে পারিনি আমার এই মিথ্যে পরিচয় যে আপনার উপরও এভাবে প্রভাব ফেলবে। আমি ইচ্ছে করে কিছু করেনি। তারপরও আমি দুঃখিত।’

সিয়াম বলল,

‘ঠিক আছে, ভাইয়া। সমস্যা নেই। আপনি তো ভালো করতে চেয়েছিলেন। হয়তো সঠিক ওয়েটা বুঝতে পারেননি। আমি কিছু মনে করেনি।’

সাদরাজ আবার মেহুলের দিকে তাকায়। মিইয়ে যাওয়া সুরে বলে,

‘আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না, মেহুল? আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি। প্লিজ, আমাকে ক্ষমা করে দিন।’

মেহুল কিছু একটা ভেবে বলল,

‘ইটস ওকে। আপনি আমার ভালো করতে গিয়ে আরো খারাপ করে ফেলেছেন। তবে ক্ষমা যখন চেয়েছেন তখন তো আর কিছু বলা যায় না। তবে ভবিষ্যতে দয়া করে আর এমন কিছু করবেন না।’

‘না না, একদমই না। ক্ষমা যখন করেই দিয়েছেন তখন ব্যাপারটাকে আরো সহজভাবে নেওয়ার জন্য আমরা কিন্তু একটা রেস্টুরেন্টে বসতে পারি। যদি আপনাদের কারোর কোনো আপত্তি না থাকে।’

রিতা আর সিয়াম সঙ্গে সঙ্গেই সম্মতি জানাল। মেহুল তাদের দিকে রাগী চোখে তাকালেও তারা তাকে পাত্তা দিল না। আর মেহুলও জানে সাদরাজ কেন এসব করছে। সাদরাজের পরবর্তী পদক্ষেপ জানার জন্য তাকে এখন তার সাথে ভালো একটা সম্পর্ক রাখতেই হবে। সেই ভেবে সেও শেষে সম্মতি দিল। তারপর সবাই গেল একটা কাছের রেস্টুরেন্টে। তবে সেখানে গিয়ে রিতা আর সিয়াম এক টেবিলে বসে পড়ে। আর মেহুল আর সাদরাজকে দিল অন্য এক টেবিলে। মেহুল তাদের এই কর্মকান্ড দেখে বাকরুদ্ধ। ওরা আলাদা কেন বসল, আশ্চর্য! মেহুল চোখ মুখ কুঁচকে তাদের দিকে চেয়ে আছে। সাদরাজ তখন জিজ্ঞেস করে,

‘ওরা কি রিলেশনে আছে?’

মেহুল তার দিকে চেয়ে জবাবে বলে,

‘জানি না।’

সাদরাজ মৃদু হেসে বলে,

‘এটা না জানলেও ওদের দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, ওরা একটু নিজেদের মতো সময় কাটানোর জন্যই আলাদা বসেছে। আর এমনটাও তো না যে ওরা আমাদের একটু স্পেস দেওয়ার জন্য আলাদা বসেছে। কারণ ,ওরা তো নিশ্চয়ই জানে আপনি বিবাহিত। তাই না?’

মেহুল বিরক্তির সুরে বলে,

‘জি।’

‘আচ্ছা, তো কী খাবেন বলুন।’

‘যা খুশি একটা অর্ডার দিন।’

সাদরাজ তখন নরম গলায় বলে,

‘আমার উপর রাগ এখনো কমেনি, তাই না?’

‘না, এখানে রাগের কী দেখছেন? আপনি যা অর্ডার দিবেন আমি তাই খাব। আমার আলাদা করে কোনো পছন্দ নেই।’

‘আচ্ছা, ঠিক আছে। তাহলে দুইটা থাই স্যুপ অর্ডার দিচ্ছি?’

‘ঠিক আছে।’

.

স্যুপ খেতে খেতে সাদরাজ জিজ্ঞেস করল,

‘আপনার হাজবেন্ড নিশ্চয়ই আমাকে চিনেন?’

মেহুল থমকে তাকায়। ভাবে কী জবাব দিবে, হ্যাঁ নাকি না। কিছুক্ষণ ভেবে বলে,

‘না তো। কীভাবে চিনবেন? উনার সাথে তো আপনার কখনো দেখাই হয়নি।’

‘আপনি তো নিশ্চয়ই আমার কথা উনাকে বলেছেন?’

‘না, ওভাবে কখনো বলা হয়নি।’

‘মানে উনি একদমই আমার সম্পর্কে কিছু জানেন না?’

‘না।’

সাদরাজ যেন এতে খুশি হলো। সে বলল,

‘ওহহ। সমস্যা নেই। একদিন অবশ্যই কথা হবে।’

মেহুল তার কথার ধরন বুঝতে পেরে হেসে বলে,

‘হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই হবে।’

সাদরাজ আরো কথা বাড়ায়। মেহুলের বাবার কথা জিজ্ঞেস করে। তার মা’র কথা জিজ্ঞেস করে। তার পড়াশোনা ব্যাপারে পরামর্শ দেয়। কথার ছলে তার কাছ থেকে তার বাড়ির ঠিকানা নেয়। তারপর জিজ্ঞেস করে,

‘আপনার গান গাওয়া নিয়ে কি আপনার হাজবেন্ডের আপত্তি আছে?’

‘না।’

‘তাহলে আপনার প্রতিবেদন প্রকাশ পাওয়ার পর আপনাকে প্রবলেম কেন ফেইস করতে হয়েছে?’

‘আমার শাশুড়ি মা চান না আমি গান গাই।’

সাদরাজ তখন স্যুপের বাটিতে চামচ নাড়াতে নাড়াতে বলে,

‘আজকাল অমন টিপিক্যাল টাইপ শাশুড়ি আছেন নাকি? আজকালকার শাশুড়িরা হবে মর্ডান। তারা গান নাচ সবকিছুতেই ছেলের বউদের পারমিশন দিবেন। এই যেমন আমার মা, উনি তো আমার বড়ো ভাইয়ের বউকে নাচ শেখার অনুমতি দিয়েছেন। উনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আমার ভাবির নাচ দেখেন। আর আজকালকার শাশুড়ির তো এমনিই হওয়া উচিত, তাই না?’

মেহুল খুব ভালো মতোই বুঝতে পারছে সাদরাজ কী চাইছে। তাই সে তার কথার সাথে তাল মিলিয়ে বলে,

‘একদমই তাই। এইজন্যই আমার শাশুড়িকে আমার একদমই পছন্দ হয়না। নেহাতই একটা ভালো জামাই পেয়েছি, নাহলে এই বিয়ে কে মানতো।’

সাদরাজ যেন এবার আরো সুযোগ পেয়েছে। সে বলে,

‘ভালো জামাই যখন পেয়েছেন, তখন জামাইকেই বলুন না, শাশুড়িকে রাজি করানোর জন্য। উনার মা নিশ্চয়ই উনার কথা ফেলতে পারবেন না।’

‘হ্যাঁ, উনি বলেছেন কথা বলবেন। এখন বাকিটা উনার ইচ্ছা।’

‘চিন্তা করবেন না, রাজি হয়ে যাবে।’

‘জি, দোয়া করবেন।’

‘অবশ্যই। আর আমার কার্ডটা তো আপনার কাছে আছেই। যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে কল দিবেন। আমি আপনার জন্য সবসময়ই ফ্রি।’

মেহুল তখন মিনমিনিয়ে বলল,

‘তা তো দেখছিই।’

সাদরাজ জিজ্ঞেস করল,

‘কিছু বললেন?’

‘না না, কিছু না। আজ তাহলে উঠি। অন্য কোনোদিন আবার কথা হবে।’

‘চলুন তাহলে আপনাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি।’

‘না, আমি তো এখন বাসায় যাব না। ভার্সিটিতে যাব। আপনি নিশ্চিন্তে আপনার গন্তব্যে যান। আমি একাই বাসায় ফিরতে পারব।’

‘আচ্ছা, ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেজ।’

‘জি, আল্লাহ হাফেজ।’

মেহুল এবার সিয়াম আর রিতার টেবিলের সামনে গিয়ে কর্কশ সুরে বলে,

‘পুরো রেস্টুরেন্ট খাওয়া হয়ে গেলে এবার চল।’

রিতা বলল,

‘হ্যাঁ হ্যাঁ, চল।’

রিক্সায় উঠেই মেহুল প্রচন্ড রাগ দেখিয়ে বলল,

‘তুই সিয়ামকে পছন্দ করিস, তাই না?’

রিতা লজ্জা পায় বোধ হয়। অন্যদিকে চেয়ে মাথা ঝাঁকায়। যার অর্থ, “হ্যাঁ।” মেহুল রাগে কী করবে বুঝতে পারছে না। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

‘তুই বেস্টফ্রেন্ড এর নামে কল ঙ্ক। এছাড়া আর আমার কিছু বলার নেই।’

চলবে…

(গল্পটা যাদের কাছে খুব ঝামেলার মনে হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, ঝামেলা তো আমিই লাগিয়েছি তাই না? তাহলে ঝামেলাগুলো আমিই সলভ করব। আমার কোনো গল্পই হয়তো এত ঝামেলার না। যেহেতু এই প্রথম এত ঝামেলা নিয়ে লিখছি [আপনাদের ধারনা মতে] তখন সেই ঝামেলার নিষ্পত্তি আমিই করব, ওকে? সো, নো টেনশন, ডু ফুর্তি। এন্ড হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here