শেষটা_সুন্দর #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৩১।

0
720

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৩১।

ভার্সিটি থেকে বের হতেই মেহুল পরিচিত গাড়ির সামনে পরিচিত মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। রাবীরকে এই সময় এখানে দেখে অবাক হলো সে। সে এগিয়ে গেল। রাবীরের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘আপনি এখানে?’

রাবীর তার দিকে চেয়ে ভালো ভাবে তার আপাদমস্তক পরখ করে বলল,

‘কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?’

মেহুল অবাক কন্ঠে বলল,

‘আপনি কী করে জানলেন?’

রাবীর ভ্রু কুঁচকে উল্টো প্রশ্ন করল,

‘আবার সাদরাজের সাথে দেখা করেছেন?’

‘না না, আমি ঠিক দেখা করিনি। দেখা হয়ে গিয়েছিল। আসলে আমি আজকে সিয়ামকে নিয়ে ঐ সংবাদপত্রের অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়েই আমার উনার সাথে দেখা হয়েছে। আর আপনি জানেন, উনি নিজের মুখে সবকিছু স্বীকার করেছেন। এই সবকিছু উনি করেছেন। এখানে সিয়ামের কোনো দোষ নেই। সব দোষ উনার।’

রাবীর গাড়িতে হেলান দিয়ে বসে বলল,

‘সেই সন্দেহ আমার আগেই হয়েছিল। তা, তারপর আপনারা কী করেছিলেন? রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন?’

‘সেই খবরও আপনার কাছে চলে গিয়েছে? কিন্তু, আপনার সেই গার্ডকে তো আজকে দেখলাম না। তাহলে আপনি এতকিছু জানলেন কী করে?’

‘গার্ড আপনার আশেপাশেই থাকে। আপনি হয়তো তাকে দেখেন না। সে ঠিকই অলওয়েজ আপনার খবরাখবর আমাকে দিয়ে যাচ্ছে। তা এবার সাদরাজের সাথে রেস্টুরেন্টে যাওয়াটা কবে বন্ধ করছেন?’

মেহুল চোখমুখ কুঁচকে বলে,

‘আপনি কি আমাকে সন্দেহ করছেন? আমি কি যেচে পড়ে উনার সাথে রেস্টুরেন্টে গিয়েছি নাকি? গিয়েছি তো ঠেকাই পড়ে। উনার পেট থেকে কথা বের করার জন্য। নাহলে আমার কি কোনো দরকার আছে, এমন একটা কুল, হ্যান্ডসাম হাজবেন্ড রেখে আমি ঐ সাদরাজের সাথে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার।’

রাবীর কিছুক্ষণ ওর দিকে চেয়ে থেকে জিজ্ঞেস করল,

‘আচ্ছা, বুঝলাম। তারপর কী কী কথা পেট থেকে বের করেছেন শুনি?’

‘বেশি কিছু না। তবে যতটুকু বুঝেছি, উনি যাইছেন আমার কানে আপনার নামে বিষ ঢালতে। আচ্ছা, ছেলেরাও কি মেয়েদের মতো কুটনামী করতে পারে?’

‘ছেলেরা না পারলেও রাজনীতিবিদরা সবই পারেন। আর ঐ ভদ্রলোকের কাছ থেকে আপনি দূরে থাকবেন। আর যেন উনার সাথে আপনাকে রেস্টুরেন্টে না দেখি।’

মেহুল মাথা হেলিয়ে বলল,

‘আচ্ছা।’

‘গাড়িতে গিয়ে বসুন। আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আমি কাজে যাব।’

________

‘স্যার, রাবীর খান এসব জানতে পারলে তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে দিবেন।’

‘ঐ রাবীর খানকে আমি ভয় পায় নাকি?’

অজ্ঞাত লোকটা ভয়ে ভয়ে বলল,

‘তাও স্যার, উনার পরিবারের কোনো মেয়ের দিকে কেউ চোখ তুলেও কখনো তাকাতে পারে না। সেখানে আপনি উনার ওয়াইফ…’

‘শাট আপ, রাবি শ। তুমি আমার পি.এ নাকি ঐ রাবীর খানের? ওর হয়ে তোমাকে এত উকালতি করতে কে বলেছে?’

লোকটা ঢোক গিলে বলল,

‘না মানে স্যার, আমি আপনার কথা ভেবেই বলছিলাম।’

‘আমার কথা তোমাকে ভাবতে হবে না। আমাকে নিয়ে ভাবার জন্য আমি একাই যথেষ্ট। তুমি গিয়ে চেক করো আগামী বুধবার আমার কোনো জরুরি কাজ আছে কিনা। সেদিন কোনো কাজ না থাকলে আমি অন্য কাজে বেরুব। যাও, এখনই গিয়ে দেখো।’

‘আচ্ছা, স্যার।’

লোকটা বেরিয়ে সাদরাজের কেবিনের দিকে যায়। সাদরাজ তখন তার রকিং চেয়ারে চোখ বুজে বসল। সেই সময় একজন বয়স্ক লোক তার রুমে প্রবেশ করেন। তিনি খাটের এক কোণে বসে বলেন,

‘কতদূর আগালি, বাবা?’

সাদরাজ চোখ বুজা অবস্থাতেই জবাব দেয়,

‘অনেকটাই এগিয়েছি, বাবা। ঐ মেয়েকে একবার হাতে নিতে পারলেই আমার কাজ হয়ে যাবে।’

‘রাবীর এখনও কিছু জানে না?’

‘না।’

‘সাবধানে থাকিস। ও জানলে কিন্তু তোর সেই হাত কেটে আমার কাছে এসে রেখে যাবে।’

সাদরাজ তখন দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ওকে আর আমি সেই সুযোগ দিব না, বাবা। ওর প্রাণ ভোমড়া যখন আমার হাতে চলে আসবে তখন ও এমনিতেই ঠুকরে ঠুকরে মরে যাবে।’

এই বলে সাদরাজ কুৎসিত ভাবে হাসে। তার হাসির সাথে তখন তার বাবাও তাল মেলান।

________

‘লোকটা এখনো কিছু স্বীকার করেননি, অফিসার?’

‘না।’

‘আশ্চর্য! এত মার খাওয়ার পরও সে কিছু বলছে না কেন?’

অফিসার তখন চিন্তিত সুরে বললেন,

‘আমার কি মনে হয় জানেন তো, লোকটার নিজের প্রাণের মায়া নেই। ওর মনে অন্য কিছু একটা নিয়ে ভয় আছে। ওর যদি নিজের প্রাণের মায়া থাকত, তবে ও এতক্ষণে সব বলে দিত। যে ওকে দিয়ে এসব করিয়েছে, সে নিশ্চয়ই তাকে অন্য কিছুর ভয় দেখিয়েছে।’

রাবীর খানিক ভেবে বলল,

‘আমি একটু উনার সাথে দেখা করতে চাই।’

‘আচ্ছা, আপনি বসুন। আমি তাকে আনছি।’

অফিসার ভেতরে গিয়ে লোকটাকে নিয়ে এলেন। লোকটি ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছে না। শরীরে যে তার এইটুকুও শক্তি নেই সেটা তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। চোখ মুখ ভীষণ কালো হয়ে আছে। শরীরের বিভিন্ন জায়াগায় ছোপ ছোপ দাগ। লোকটাকে রাবীরের সামনে বসানো হলো। সে চেয়ারে বসে ধুলছে। অফিসার তাকে ধমক দিয়ে বললেন,

‘সোজা হয়ে বসো।’

লোকটি খুব কষ্টে সোজা হলো। রাবীরের দিকে চেয়েই সে কেঁদে বলতে লাগল,

‘আমি কিছু জানিনা। বিশ্বাস করুন, আমি সত্যিই কিছু জানি না।’

রাবীর ঠান্ডা গলায় বলল,

‘আপনি সবকিছুই জানেন। ইচ্ছে করেই কিছু বলছেন না। আচ্ছা, আপনার বিয়ে হয়েছে? বউ বাচ্চা আছে?’

লোকটা হুট করেই চেয়ার থেকে ধপ করে পড়ে নিচে বসে পড়ল। রাবীরের পা আঁকড়ে ধরে বলল,

‘আমার বউ বাচ্চার কিছু করবেন না, স্যার। যা শাস্তি দেওয়ার আমাকে দিন। ওদের কিছু করবেন না। ওরা নিষ্পাপ।’

রাবীর যেন এবার কিছু আন্দাজ করতে পারে। সে লোকটাকে টেনে তুলে চেয়ারে বসায়। নরম সুরে বলে,

‘আজ যদি আপনি মারা যান; তাহলে আপনার বউ বাচ্চার কী হবে? কে দেখবে ওদের? আপনি ছাড়া ওদের দায়িত্ব কে নিবে? আর কেউ আছে আপনার পরিবারের?’

লোকটা মাথা নাড়িয়ে না বলল। রাবীর অতঃপর বলল,

‘তাহলে তো ঐ মানুষগুলোর জন্য আপনার বেঁচে থাকাটা খুব জরুরি। আর আপনার কি মনে হয়, আপনি এভাবে মিথ্যে বলে বেঁচে যেতে পারবেন? কখনোই না। মিথ্যে বললে আপনি কখনোই বাঁচতে পারবেন না। যতই নাটক করেন না কেন, আপনাকে ঠিক মরতে হবেই। আর আপনি মরলে তো আপনার ফ্যামিলিও মারা পড়বে। এবার চিন্তা করে দেখুন, কী করবেন। সত্যি বলে নিজেকে আর নিজের পরিবারকে বাঁচাবেন, নাকি মিথ্যে বলে গোটা পরিবারকে সাথে নিয়ে মরবেন?’

লোকটার চেহারা যেন এখন আরো ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তার চোখে মুখে ভীষণ ভয়। গলা কাঁপছে। চোখের পাতা মিটমিট করছে। লোকটি কাঁপা স্বরে বলল,

‘আমি কিছু জানি না। আমার বউ বাচ্চাকে আপনারা ছেড়ে দিন।’

‘আপনার বউ বাচ্চার কিছু হয়নি। ওরা সুরক্ষিত। আপনি কেবল আমাদের কথার সঠিক জবাব দিন তাহলেই হবে।’

‘না না, তাহলে ওরা আমার বউ বাচ্চাকে মেরে ফেলবে। আমি সত্যিই কিছু জানি না।’

রাবীর ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস কলল,

‘কারা আপনার বউ বাচ্চাকে মেরে ফেলবে?’

লোকটার হুঁশ আসে। সে বিব্রত সুরে বলে,

‘জানি না। আমি কিচ্ছু জানি না।’

রাবীর কতক্ষণ চুপ করে বসে থাকে। লোকটা যেন বিরবির করে কী বলছে। ভয়ে কাঁপছে সে। সবকিছু একটু স্বাভাবিক হওয়ার পর রাবীর বলল,

‘দেখুন, সাদরাজ চাইলেও আপনার বউ বাচ্চার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। ওদেরকে আলাদা ভাবে সুরক্ষা দেওয়া হবে। আমি প্রয়োজনে পুলিশ পাঠাব ওদের জন্য। ওদের আমি কিচ্ছু হতে দিব না। আমি প্রমিস করছি। আপনি শুধু আমাকে সত্যিটা বলুন প্লিজ। সত্যিটা জানা আমার জন্য খুব জরুরি।’

লোকটি কিছুই বুঝল না। সে আগের মতো করেই বলতে আরম্ভ করল,

‘না না, ওরা আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলবে। আমি কিছু জানি না। সত্যিই কিছু জানি না। কিচ্ছু না।’

রাবীর খুব চেষ্টার পর অবশেষে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘এভাবে হবে না। অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।’

চলবে…

(সামনে ঈদ। আর ঈদের পরেই মিড শুরু। মূলত সামনের দুই তিন সপ্তাহ আমি ভীষণ ব্যস্ত থাকব। গল্প রেগুলার দিতে পারব কিনা জানি না। তবে সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব রেগুলার দেওয়ার। তাই প্লিজ কেউ এই নিয়ে দুঃখ পাবেন না। আমি চেষ্টা করব…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here